Tuesday, 29 December 2015

Most Dangerous Graveyard

 Most Dangerous Graveyard

পৃথিবীর ভয়ংকর আট কবরস্থান

সাদিয়া ইসলাম : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:30 Dec 2015   12:25:48 AM   Wednesday   ||   Updated:30 Dec 2015   10:27:55 AM   Wednesday
ছবির কোলাজ

ছবির কোলাজ

সাদিয়া ইসলাম : কেউ বলেন ভূত আছে, কেউবা অতিপ্রাকৃতিক কোনো কিছুর অস্তিত্বকেই স্বীকার করতে চান না। তবে যারা ভূতে বিশ্বাস করেন তারা প্রায় সকলেই একমত যে সমাধিস্থানই ভূতদের বসবাসের অন্যতম স্থান। সঙ্গত কারণে কবরস্থানের কথা শুনলেই মানে জাগে ভয়, আতঙ্ক আর শরীর ছমছমে অনুভূতি। প্রেতাত্মাদের ভয়ে অনেকেই এ স্থানটি এড়িয়ে চলেন। একান্তই যদি কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হয় তখন অনেকেরই বুক কাঁপে দুরুদুরু। কি জানি কি হয় এমন আতঙ্ক পেয়ে বসে তাদের। মৃত্যুর পর মানুষের এ শেষ ঠিকানা ঘিরে কালে কালে তৈরি হয়েছে বহু সাহিত্য, রুপকথা। কবরস্থানের অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ে হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র, নাটক, সিরিজ।

তবে কবরস্থানে সত্যিই কোনো ভূত থাকে কিনা সেই অনুসন্ধান নামার আগে চলুল জেনে নিন পৃথিবীর এমন কিছু কবরস্থানের কথা যেগুলো সম্পর্কে ভয়ঙ্কর সব ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে।

সেইন্ট লুইস সিমিট্রি
কবরস্থানে মানুষ কেন আসে? ভাবছেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন? সমাধিস্থানে তো মানুষ আসে মৃতদের সমাধি দিতেই। হ্যাঁ! কথাটা ঠিক। কিন্তু সেইন্ট লুইস সিমিট্রির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক অতটা সত্যি নয়। প্রতি বছর বেশকিছু পর্যটক এখানে আসেন এবং কেবল এ কবরস্থানটি পরিদর্শন করতে। নিউ অরলিন্সে অবস্থিত এই সিমিট্রি বা কবরস্থানে রয়েছে বিখ্যাত ভুডু বা জাদু-টোনার রানী মেরি লিভ্যুও এর সমাধি। মৃত্যুর পরেও এই জাদুকর নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে এমনটাই বিশ্বাস স্থানীয়দের। সেই বিশ্বাস থেকেই এখনও অনেকে কোনরকম সমস্যায় পড়লে সোজা চলে যায় সেইন্ট লুইস সমাধিস্থানে।



সেখানে যাওয়ার পর মেরি লিভ্যুর সমাধির গায়ে টোকা দিয়ে জানান দেয় তাদের আগমনের। কেননা কথিত আছে, টোকা মারলেই নাকি যেকোন সমস্যার সমাধান দিতে কবর থেকে বাইরে চলে আসেন জাদুকর!

চামুলা সিমিট্রি
মেক্সিকোর দক্ষিণ চিয়াপিস রাজ্যের সান জুয়ান চামুলার অন্যতম আকর্ষণী স্থান হচ্ছে এই চামুলা সিমিট্রি। ভাবছেন, কবর তো কবরই! তাতে আবার আকর্ষণের কি আছে? কথাটা ঠিক যে কবরস্থানের মৃত দেহ ছাড়া আকর্ষণের তেমন কিছুই নেই। তবে বাকী সব কবরস্থান থেকে আলাদা চামুলা সিমিট্রির আকর্ষণের জায়গাটা হচ্ছে এর ইতিহাস। ১৯৬০ সালে এইখানে ক্যাথোলিক চার্চ নির্মানের কথা ছিল। কিন্ত প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের ভেতরেই চার্চের যাজক চলে যান। সেই থেকে একেবারেই নিরব পড়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে অবশ্য অন্য গ্রাম থেকে কিছু যাজক এসে মৃতদের সৎকারের কাজ করে দিয়ে যান তবে সেটাও খুবই বিরল।



সচরাচর স্থানীয় জনগণদের ভিতরে কেউ কেউ মৃত মানুষকে কবর দেন চার্চের সামনে। যদিও কখনো কোন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি এই চার্চ থেকে, তবুও দিনকে দিন কবরের সংখ্যা এখানে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে চার্চের চারপাশে ছড়ানো মৃত মুরগীর রক্তাক্ত দেহ। আরকিছু না হলেও এই মৃতদেহ দেখেই ভয় পান হঠাৎ চামুলা চার্চে পা রাখা মানুষেরা।

ডাইনীর কবরস্থান
কবরস্থান বা সমাধিক্ষেত্র এমনিতেই ভয়ের। তারওপর সেটা যদি হয় ডাইনীর কবস্থান তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা? ভাবছেন বানিয়ে বলছি? একদম না। আর সেটা যদি পরীক্ষা করতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে অনেক অনেক দূরে  টেনেসেতে। বাস্তবেই টেনেসের ব্রাদারটন পাহাড়ের রোড থেকে বেশ খানিকটা দূরে নির্জন প্রকৃতির ভেতরে রয়েছে ডাইনীর কবরস্থান বা উইচেস গ্রেভইয়ার্ড। কাগজে কলমে এর নাম স্ট্যাম্পস সিমিট্রি হলেও লোকেদের কাছে ডাইনীর কবরস্থান হিসেবেই পরিচিত বেশি। এর কারণ হচ্ছে এখানকার কবর বা সমাধিগুলোর উপরে থাকা অদ্ভূত অদ্ভূত সব জিনিসপত্র। কখনো সেটা তারকাখচিত চিহ্ন, কখনো তাঁবু বা ভিন্ন ভাষায় কাটাকুটি লেখা।



শুধু তাই নয়, ডাইনীর কবরস্থানের ভেতরে রয়েছে অনেক অনেক পশু বলি দেওয়ার প্রমাণ। ফলে ভূতুড়ে কবর আর বলি দেওয়া পশুর হাড় একসঙ্গে মিলে ভূতুড়ে কবরটিন চারপাশে তৈরি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর আবহ।

স্টুল সিমিট্রি
কানসাসের ডগলাস কাউন্টিতে অবস্থিত এই সিমিট্রিতে আরো অনেক সমাধিস্থলের মতনই রয়েছে প্রেতাত্মা থাকবার গুজব। কিংবা কে জানে, হয়তো সত্যিই ভূত রয়েছে এখানে! কথিত আছে এই সমাধিস্থলের ভেতরে বিশেষ করে চার্চের পাশে খারাপ শক্তিদের উপস্থিতি বোঝা যায় প্রকাশ্যেই।



শুধু তাইই নয়, ক্ষতিকারক আত্মার পাশাপাশি স্টুল সিমিট্রিতে রয়েছে নরকে যাওয়ার রাস্তাও। এই সমাধিস্থল থেকে সোজা নরকে চলে যাওয়া যায় বলে কথিত রয়েছে। হন্টেড আমেরিকা ট্যুরসের এ স্থানটিতে শয়তান তার হারিয়ে যাওয়া পূজারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতো বলেও উল্লেখ করা হয়।

ওল্ড জিউস সিমিট্রি
একটা কবরে ঠিক কতগুলো মানুষ আঁটতে পারে? আপনি হয়তো এর উত্তরে বলবেন, এক কবরে তো একজনকেই কবর দেওয়া হবে কেবল। কিন্তু না। আর সব সমাধিক্ষেত্রে এমনটা উত্তর হলেও সেটা এই ওল্ড জিউইশ সিমিট্রির জন্যে নয়। চেক রিপাবলিকের প্রাগের ভেতরে জোসেফভ নামক একটি স্থানে অবস্থিত এই সমাধিক্ষেত্রটির ভেতরে যে ঠিক কতটি কবর রয়েছে এবং প্রতিটি কবরে যে ঠিক কতগুলো পরত দিয়ে একের পর এক মানুষ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। মনে করা হয় এখানকার ১২,০০০ পাথর সম্বলিত মোট ১,০০,০০০ টি কবর রয়েছে।



যেগুলোকে ঘিরে প্রতিনিয়তই জন্মেছে নানারকম গা শিউরে ওঠা গল্প। ১৫ শতাব্দীর আগে তৈরি হওয়া এই সমাধিক্ষেত্রটির পরিচিতি রয়েছে ভূত আর অতিপ্রাকৃত ঘটনার আধার হিসেবেও।

কাপুচিন কাটাকম্বস
ভাবুন তো এমন এক সমাধিক্ষেত্রের কথা যেখানে মৃত মানুষগুলো কবরের ভেতরে নয়, রয়েছে বাইরে! শুনতে অদ্ভূত হলেও সিসিলির পোলিরমো শহরের কাপুচিন কাটাকম্বসে রয়েছে উন্মুক্ত স্থানে পরে রয়েছেন মৃত মানুষের মমি।



এই মমিগুলোর গায়ে পরিপাটি কাপড়ও পড়ানো। তাদের বসবার স্টাইলটাও একদম জীবিতদের মতন, যাদের শুধু জীবনটাই নেই। ১৬ শতাব্দীতে তৈরি হওয়া এই সমাধিস্থলে বর্তমানে প্রায় ৮,০০০ টি মৃত মানুষের মমি রয়েছে।

রিসারেকশন সিমিট্রি
ব্লাডি মেরিকে চেনেন? বিখ্যত ব্লাডি মেরির সমাধিটি রয়েছে ইলিনয়সের এই সমাধিস্থলে। প্রায়ই ব্লাডি মেরিকে নিজের সমাধি থেকে উঠে আসতে দেখা যায় বলে দাবী করেন স্থানীয়রা।



কখনো মেরি আসেন ছোট কোন বাচ্চার বেশে। সমাধির উপরে বসে কাঁদতে থাকে তিনি। আবার কখনো মন ভালো থাকলে নাচতেও দেখা যায় তাকে!

গ্লাসনেভিন সিমিট্রি
ডাবলিনের এই সমাধিস্থানটিকে ঘিরে রয়েছে ভূতুড়ে এবং একই সঙ্গে বেদনাদায়ক একটি সত্যি। সেবার নিজের প্রভুভক্ত কুকুরকে ছেড়ে একেবারের জন্য অন্য দুনিয়ায় চলে যান ক্যাপ্টেন জন ম্যাকনেইল বয়েড। তার সমাধি তৈরি হয় গ্লাসনেভিনে। আর সমাধি নির্মানের পরপরই সেখানে একেবারের মতন থিতু হয়ে যায় মনিবের প্রভুভক্ত কুকুরটি। এরপর আর শত চেষ্টাতেও কোনো কিছু খাওয়ানো কিংবা ঐ স্থান থেকে নড়ানো যায়নি তাকে।



ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কুকুরটি। তবে আজ অব্দি মনিবকে ভোলেনি সে। প্রায়ই কুকুরটির আত্মাকে দেখা যায় মনিবের কবরের কাছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৫/রাশেদ

No comments:

Post a Comment