Thursday, 24 December 2015

Christmas father came - The way

যেভাবে এল সান্তা ক্লজ বা ক্রিসমাস ফাদার

অগাস্টিন সুজন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:24 Dec 2015   02:53:16 PM   Thursday   ||   Updated:24 Dec 2015   03:13:59 PM   Thursday
শিশুদের সঙ্গে সান্তা ক্লজ, ছবি: অপূর্ব খন্দকার

শিশুদের সঙ্গে সান্তা ক্লজ, ছবি: অপূর্ব খন্দকার

অগাস্টিন সুজন : বড়দিনের অন্যতম এক চরিত্র সান্তা ক্লজ। শিশুদের কাছে সান্তা ক্লজ দারুণ জনপ্রিয়। তার পোশাক বাহারি। প্রচলিত ধারণা হলো সান্তা ক্লজ বড়দিনের আগের রাতে শিশুদের জন্য উপহারের ডালি নিয়ে আসেন।

বড়দিনের সকালে শিশুরা ঘুম থেকে উঠে ঘরে (বেশিরভাগ সময় বিশেষত ইউরোপে চিমনির পাশে) রাখা ঝুড়িতে সান্তা ক্লজের রেখে যাওয়া উপহার নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের শিশুরা ক্রিসমাসের আগের দিন দরজার বাইরে মোজা ঝুলিয়ে রাখে। ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের শিশুরা ক্রিসমাসের আগের দিন ঘরের বাইরে জুতো রেখে দেয়। সান্তা ক্লজ এগুলোতে উপহার রেখে যান।

আসলে সান্তা ক্লজ হলো একটি মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি। কালের পরিবর্তনে অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনির মতো সান্তা ক্লজও বর্তমানে এই রূপ পেয়েছে। বাস্তবতা হলো শিশুরা যখন ঘুমিয়ে থাকে মা-বাবা বা আত্মীয়-স্বজন তাদের ঘরে উপহার রেখে দেন। সকালে শিশুরা ঘুম থেকে উঠে সান্তা ক্লজ উপহার দিয়ে গেছে বলে খুশিতে মেতে ওঠে।

সান্তা ক্লজকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলে সান্তা ক্লজকে বলা হয় তোমতার, সুইজারল্যান্ডে সেন্ট লুসি, ইতালিতে লা বেফানা, গ্রিসে সেন্ট বার্সিল, পোল্যান্ডে ফাদার ফ্রস্ট ইত্যাদি।

বর্তমানে আমরা যে সান্তা ক্লজ দেখি, তার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সান্তা ক্লজ হলো সেইন্ট নিকোলাসের ডাচ উচ্চারণ। সেইন্ট নিকোলাস ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেন। নিকোলাস একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় বিশপ ছিলেন। ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত নিসিয়া কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ছিলেন নিকোলাস। ৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি তিনি মারা যান। ১০৮৭ খ্রিষ্টাব্দে একদল নাবিক নিকোলাসের অস্থি তুরস্ক থেকে ইতালির বারির একটি মঠে নিয়ে যান। মঠটি ছিল একটি দেবীর, যিনি শিশুদেরকে নানা উপহার দিতেন বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করতেন। নিকোলাস ওই দেবীর জায়গা দখল করেন। ভক্তরা প্রতিবছর ৬ জানুয়ারি নিকোলাসের প্রয়াণদিনে একে অন্যকে উপহার দিতেন।

নিকোলাসের খ্যাতি খুব দ্রুত ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। জার্মান এবং সেল্টিকরা তখন ওডেনের উপাসনা বা এবাদত করত। এই ওডেন ছিলেন থর, ব্যালডার ও তিউর বাবা। ওডেনের ছিল লম্বা সাদা দাড়ি এবং তিনি প্রতিবছর শরতের এক সন্ধ্যায় আকাশ থেকে ঘোড়ায় চড়ে নেমে আসতেন। নিকোলাস ধীরে ধীরে ওডেনের জায়গা দখল করেন। তার যে রূপ দাঁড় করায় সেটা হলো বড় সাদা দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ, যিনি ভারী শীতের পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান।

১৮০৯ সালে ঔপন্যাসিক ওয়াশিংটন আরভিন (রিপ ভ্যান উইঙ্কেল ও দ্য লিজেন্ট অব স্লিপি’র জন্য বিখ্যাত) নিকারবকার হিস্ট্রি নামে ডাচ সংস্কৃতির ওপর একটা ব্যঙ্গরচনা (স্যাটায়ার) লেখেন। সেখানে তিনি একাধিকবার সেইন্ট নিকোলাসের ডাচ নাম ‘সান্তা ক্লজ’-এর উল্লেখ করেন, যিনি বড় সাদা দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ এবং ভারী শীতের পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান।

খুব দ্রুতই খিষ্টধর্মানুসারীরা নিকোলাসকে একজন সেইন্ট হিসেবে গ্রহণ করেন এবং প্রচার করেন যে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ নিকোলাস ঘরে ঘরে বাচ্চাদের জন্য উপহার রেখে যান। ১৮২২ সালে ড. ক্লেমেন্ট মুর সান্তা ক্লজকে নিয়ে একটা কবিতা লেখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন সান্তা ক্লজ ঘরের চিমনি দিয়ে প্রবেশ করে শিশুদের ঝুড়িগুলো উপহারে পূর্ণ করে দেন।

ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে যখন নৌবাণিজ্যের প্রসার হল, তখন নাবিকরা এই সান্তার গল্প বয়ে নিয়ে গেলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, অচিরেই তার নাম হল ‘ফাদার ক্রিসমাস।’ পরে ওলন্দাজ অভিবাসীরা এই লোককথাকে আমেরিকায় নিয়ে গেলেন, তাদের ‘সিন্টার-ক্লাস’ হয়ে গেলেন সান্তা ক্লজ। বিশাল খেলনা-শিল্প রঙবেরঙের বিজ্ঞাপন করে উত্সবের মহিমা বাড়িয়ে তুলল।

বর্তমান সময়ে সান্তা ক্লজের যে ছবি দেখা যায়, তার স্রষ্টা চিত্রকর টমাস ন্যাস্ট। তিনি ‘হারপার উইকলি’র জন্য দুই হাজারেরও বেশি সান্তা ক্লজের কার্টুন এঁকেছিলেন। তার আঁকা সান্তা ক্লজের ছবিই বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

দুনিয়া জুড়ে বাণিজ্য এবং ধর্ম অনেক সময়েই হাতে হাত মিলিয়েছে। ১৯৩১ সালে কোকাকোলা নিয়ে আসে টকটকে লাল, বিশাল ‘কোক সান্তা’ বিজ্ঞাপন, আজও ক্রিসমাসের সময় যা অতিপরিচিত। এভাবেই গোটা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়েছে ‘জিঙ্গল বেলস’।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ডিসেম্বর ২০১৫/অগাস্টিন সুজন/ফিরোজ

No comments:

Post a Comment