আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বছরের আলোচিত খবর
আবু হোসেন পরাগ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:24 Dec 2015 02:58:09 PM Thursday || Updated:27 Dec 2015 01:22:14 PM Sunday

অন্যান্য
সবকিছুর মতো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের পঞ্জিকাবর্ষ থেকে অতিক্রান্ত হলো আরও একটি
ক্রীড়াবর্ষ। কালের আবর্তে একটি বছর হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি মাঠ ও মাঠের
বাইরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ও তার রেশ। ২০১৫ সালে দেশের বাইরের
ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে সেসব
আলোচিত ঘটনা রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য গ্রন্থনা করেছেন আবু হোসেন পরাগ।
দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড :
ওয়ানডে ক্রিকেট দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ডটা হয়েছে এ বছরই। বছরের
শুরুতেই রেকর্ডটি গড়েন এবি ডি ভিলিয়ার্স। জানুয়ারিতে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট
ইন্ডিজের বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে মাত্র ৪৪ বলে ১৪৯ রানের বিস্ফোরক এক
ইনিংস খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। নিউ ওয়ান্ডারার্সে
স্টেডিয়ামে সেদিন চার-ছক্কার বৃষ্টি ঝরিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ফিফটি
ছুঁয়েছিলেন মাত্র ১৬ বলে আর সেঞ্চুরি ৩১ বলে। ডি ভিলিয়ার্স ভেঙে দেন
নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসনের করা ৩৬ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড। এ ছাড়া
প্রোটিয়া অধিনায়ক ছুঁয়েছিলেন রোহিত শর্মার এক ইনিংসে ১৬ ছক্কার রেকর্ডও।
সেদিন ডি ভিলিয়ার্স তো সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনে নেমে। তার আগে দুই উদ্বোধনী
ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো ও হাশিম আমলাও ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল
ফিগার। আর এই তিনজনের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ
করেছিল ২ উইকেটে ৪৩৯ রান।
রেকর্ডময় বিশ্বকাপ :
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বসেছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। যৌথভাবে
আয়োজক ছিল দুই প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। নিজেদের মাঠে
প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপাটাও ঘরে
তুলেছিল অস্ট্রেলিয়াই। রানবন্যার এই বিশ্বকাপ দেখেছে বেশ কয়েকটি রেকর্ড।
বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি, টানা চার সেঞ্চুরি, দ্রুততম
ফিফটিসহ বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে এই বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে টানা চার
সেঞ্চুরি রেকর্ডটা গড়েন কুমার সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে
ক্রিকেটেই টানা চার সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কেউ-ই। সাঙ্গাকারা এই রেকর্ড
গড়ার শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশকে দিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে হার না মানা ১০৫
রানের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও অপরাজিত ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রানের পর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্কেও
ম্যাজিক্যাল ফিগার ছুঁয়ে অনন্য রেকর্ডটি গড়েন লঙ্কান গ্রেট।
বিশ্বকাপের আগের দশ আসরে কোনো ব্যাটসম্যান
যেটি করে দেখাতে পারেননি সেই ডাবল সেঞ্চুরি এবারের বিশ্বকাপে দুবার দেখেছে
ক্রিকেটবিশ্ব। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের ইনিংস খেলে
বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং-দানব
ক্রিস গেইল। সেদিন ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন এই বাঁহাতি। যা ওয়ানডে
ক্রিকেটে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও। আর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে
ডাবল সেঞ্চুরি করেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল। খেলেন অপরাজিত ২৩৭
অতিমানবীয় এক ইনিংস।
বিশ্বকাপে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন
ব্রেন্ডান ম্যাককালাম। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বলে ফিফটি পূর্ণ
করেন কিউই অধিনায়ক। এ ছাড়া দ্রুততম ১৫০ রানের (৬৪ বলে) রেকর্ড গড়েন এবি ডি
ভিলিয়ার্স। বিশ্বকাপ তো বটেই ওয়ানডে ক্রিকেটেই দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড
এটি। এই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিরও রেকর্ডও হয়েছে। এই আসরে মোট ৩৮টি সেঞ্চুরি
দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৪টি সেঞ্চুরি
হয়েছিল। বিশ্বকাপটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্যও। নিজেদের বিশ্বকাপ
ইতিহাসে এবারই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে টাইগাররা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের
প্রথম সেঞ্চুরিও আসে এই আসরেই। তাও আবার একটি নয়, টানা দুটি সেঞ্চুরি করে
নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে
ক্রিকেটে পুরো বছরই স্বপ্নের মতো কেটেছে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের।
ওমানের ইতিহাস : এশিয়ার
নতুন দেশ হিসেবে ক্রিকেটে উঠে আসছে ওমান। এ বছর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে
নতুন অধ্যায় রচনা করেছে দেশটি। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছে ওমান। এই প্রথম ক্রিকেটের কোনো বিশ্ব আসরে খেলবে
তারা। যা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য এক অর্জনই বটে।
সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি :
ব্যাটসম্যানদের জন্য এ বছরটা ছিল বেশ পয়মন্ত। বছরের শুরু থেকেই ওয়ানডে
ক্রিকেট রানবন্যায় ভেসেছে। তাই তো এই প্রথমবারের মতো এক বছরে সেঞ্চুরির
সেঞ্চুরি দেখেছে ওয়ানডে ক্রিকেট। বিরল এই রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে
বাংলাদেশের নামও। আরো স্পষ্ট করে বললে মুশফিকুর রহিমের নাম। নভেম্বরে
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিকের করা সেঞ্চুরিটিই ছিল এ বছর ওয়ানডে ক্রিকেটের
শততম সেঞ্চুরি।
টেস্ট ক্রিকেটে গোলাপি অধ্যায়ের শুরু :
টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে অনেক রংই দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। তবে গত
নভেম্বরে যেটা দেখেছে, সেটা রীতিমতো বিপ্লব! প্রথম কোনো টেস্ট খেলা হয়েছে
লাল বল ছাড়া। প্রথম কোনো টেস্ট খেলা হয়েছে দিবারাত্রির। গত ২৭ নভেম্বর
অ্যাডিলেড ওভালে ইতিহাসের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল দুই
প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আর খেলা হয়েছে গোলাপি বলে। যেখানে
লাঞ্চ সেশন বলেও কিছু ছিল না, চা-বিরতির পর একেবারে ডিনার সেশন। ইতিহাস গড়া
ম্যাচটি অবশ্য তিন দিনেই জিতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দিন দিন টেস্ট
ক্রিকেটে দর্শকশূন্যতা বেড়ে যাচ্ছে। টেস্টে দর্শক ফিরিয়ে আনতেই তাই
দিবারাত্রির টেস্টের এই বৈপ্লবিক চিন্তা।
ব্রেন্ডান ম্যাককালামের ইতিহাস :
২০০৪ সালে হ্যামিল্টনে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। ১১ বছর
পর সেই হ্যামিল্টনেই অনন্য এক ইতিহাস গড়েছেন নিউজিল্যান্ডের এই
ব্যাটসম্যান। যে রেকর্ড আবার টেস্ট ইতিহাসেই প্রথম! অভিষেক থেকে সবচেয়ে
বেশি টানা টেস্ট খেলার রেকর্ড এখন তারই। গত ১৯ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এই রেকর্ড গড়েন ম্যাককালাম। অভিষেক থেকে এটা তার
টানা ৯৯ টেস্ট। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে (৯৮ টেস্ট)। এবার
অভিষেক থেকে টানা শততম টেস্ট খেলার অপেক্ষায় কিউই অধিনায়ক।
রাইজিংবিডি/২৪ ডিসেম্বর ২০১৫/আমিনুল/ইয়াসিন/পরাগ/শামীম
No comments:
Post a Comment