Thursday, 24 December 2015

Christmas Tree Discover

যেভাবে এল ক্রিসমাস ট্রি

অগাস্টিন সুজন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:24 Dec 2015   05:29:24 PM   Thursday   ||   Updated:24 Dec 2015   05:55:21 PM   Thursday
অলংকরণ: অপূর্ব খন্দকার

অলংকরণ: অপূর্ব খন্দকার

অগাস্টিন সুজন : ক্রিসমাস ট্রি সাজানো বড়দিনের একটি বিশেষ অঙ্গ। আপেল, পাখি, মোমবাতি, ঘুঘু, মাছ, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়।

ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এই গাছেই বিভিন্ন রংয়ের আলোক সজ্জা আর বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়। এছাড়া ঝাউ জাতীয় গাছও ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি সত্যিকারের হতে পারে আবার সেটি কৃত্রিমও হতে পারে।

ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক।

বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেওয়ার শুরু কীভাবে হয় তার লিখিত কোনো দলিল নেই। এ নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন গল্প। এমন একটি গল্প হলো রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হলো। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’। তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ক্রিসমাস ট্রি।

আরেকটি গল্প এ রকম : একদিন এক গরিব শিশু কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেওয়ার অনুরোধ করল এক গির্জার মালিকে। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল। ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ক্রিসমাস ট্রি।

আরেকটি খ্রিষ্টান লোক বিশ্বাস অনুসারে, ক্রিসমাস ট্রির ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে জার্মানির গেইসমার শহরের এক সাধু বনিফেস এর সঙ্গে। সেইন্ট বনিফেস (৬৭২-৭৫৪ সালে) একটি প্রাচীন ওক গাছের মূলে একটি দেবদারু জাতীয় ফার গাছের বেড়ে ওঠা দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি এটাকে যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

তবে এ নিয়ে যত গল্পই থাকুক না কেন, বড়দিন উদ্যাপনে ক্রিসমাস ট্রির প্রচলন আদি খ্রিষ্টানদের দ্বারা হয়নি। যে রোমানরা গাছের উপাসনা করত, তারাই পরে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে এই ঐতিহ্য ও আচার পালন বড়দিনের সঙ্গে সংযুক্ত করে। প্রাচীন সভ্যতায় বার্ষিক উৎসবে গাছ সাজানোর জন্য একটা আলাদা রীতি চালু ছিল। মিসরীয়রা শীতকালীন উৎসবে তালজাতীয় গাছকে সাজাত। তারা মনে করত, সুচালো পাতার এ গাছ বসন্তের সজীবতা নিয়ে আসবে। মিসরীয়দের মতো রোমানরাও গাছ সাজাত।

ইউরোপের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর শুরুটা। ১৫ শতকে লন্ডনের প্রতিটি বাড়ি ও গির্জা আইভিলতা দিয়ে সাজানো হতো। তাদের বিশ্বাস ছিল, আইভিলতার পাতা পৃথিবীতে যিশুর আগমনের প্রতীক।
আধুনিক ক্রিসমাস ট্রি সাজানোরও প্রথা চালু হয় জার্মানিতে। ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী জার্মান রাজপুত্র অ্যালবার্ট প্রথম ক্রিসমাস ট্রি সাজান। ১৮৪১ সালের ক্রিসমাসে উইন্ডসর প্রাসাদে অনেকটা পারিবারিকভাবেই ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। আর এভাবেই নিজের দেশের রীতি ইংল্যান্ডে চালু করেন অ্যালবার্ট। তিনি ক্রিসমাস ট্রি বিভিন্ন বিদ্যালয় ও সামরিক চৌকিতেও পাঠিয়ে দেন।

জার্মানরা ক্রিসমাস ট্রি সাজাত ফল, চকোলেট, মিষ্টি জাতীয় খাবার, রঙিন কাগজ দিয়ে। মূলত তাদের রীতিতেই এখনকার ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়ে থাকে। তবে আজকাল যে প্রথায় ক্রিসমাস ট্রি সাজান সেটি অবশ্য বেশি দিনের পুরোনো নয়। এই প্রথাটির প্রচলন করেছিলেন মার্টিন লুথার। স্বর্গোদ্যানের ‘ট্রি অফ লাইফ’ এর চিহ্ন হিসেবে এই প্রথার প্রচলন করেন তিনি।

ক্রিসমাস ট্রির সঙ্গে মোমবাতির জ্বালানোর প্রথা শুরু হয়েছিলো ১৮ দশকের শেষদিকে। জার্মানির রাইনল্যান্ডের প্রটেস্টানদের কাছে থেকে এই প্রথার শুরু হলেও রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও এটি ছড়িয়ে পড়ে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের এক সহকর্মী এডওয়ার্ড জনসন ১৮৮২ সালে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজান। তিনি ছোট ছোট ৮০টি বাল্ব ব্যবহার করেছিলেন।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সন্ধার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিসমাস ট্রি আরো আগে সাজানো হয়। জার্মানিতে এটা ঐতিহ্য অনুসারে ২৪ ডিসেম্বরে সাজানো হয় এবং ৭ জানুয়ারি খুলে ফেলা হয়। ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এটি ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখা হয়।

 
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ডিসেম্বর ২০১৫/অগাস্টিন সুজন/ফিরোজ
note: can take help from google for translate  Bangla to English 
 

No comments:

Post a Comment