Thursday, 26 May 2016

Manbooker award

ম্যান বুকার জয়ী দ্য ভেজিটারিয়ান পাঠ ও মূল্যায়ন

সাইফ বরকতুল্লাহ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:22 May 2016   07:50:09 AM   Sunday   ||   Updated:22 May 2016   03:32:52 PM   Sunday
হ্যান ক্যাং ও দ্য ভেজিটারিয়ান গ্রন্থের প্রচ্ছদ

হ্যান ক্যাং ও দ্য ভেজিটারিয়ান গ্রন্থের প্রচ্ছদ

সাইফ বরকতুল্লাহ :  এ বছর (২০১৬) আন্তর্জাতিক ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছে উপন্যাস দ্য ভেজিটারিয়ান। উপন্যাসটি লিখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ঔপন্যাসিক হান ক্যাং(৪৫)। তিনি ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হান সিউং-ওন ঔপন্যাসিক। তার ভাই হান ডং রিমও লেখক। হান ক্যাং ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরীয় সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। তার লেখালেখির শুরু কবিতা এবং ছোটগল্প দিয়ে। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প সংকলন ‘লাভ অব ইয়েওসা’। প্রকাশিত উপন্যাসগুলো হলো- আ কনভিট্কস লাভ, ফ্রুটস অব মাই উওম্যান, দ্য ব্ল্যাক ডিয়ার, ইওর কোল্ড হ্যান্ড, দ্য ভেজিটেরিয়ান, ব্রিদ ফাইটিং, গ্রিক লেসনস।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক হিসেবে পরিচিত হ্যান ক্যাং। পুরস্কার পাওয়ার পর দ্য ভেজিটারিয়ান  উপন্যাসটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, `আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এমন এক নারী, যিনি মানব চরিত্রের অন্ধকার দিক থেকে নিষ্কৃতি পেতে উদ্ভিদে রূপান্তরিত হতে চান। এই বর্ণিল উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষ হওয়ার জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি।`

হ্যান ক্যাং বলেন, দ্য ভেজিটারিয়ান উপন্যাসটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। যার কোনোটি আমার পড়া হয়নি। যখন বইগুলো আমি দেখতাম, তখন আমার ভেতরে ভীতি কাজ করত এই ভেবে যে, এগুলোর মধ্যে আমার নাম ও ছবি আছে। কিন্তু আমি সত্যিই জানতাম না, বইগুলোর মধ্যে কী ছিল। কিন্তু বইটি যখন ইংরেজিতে অনুদিত হলো, তখন আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। আমি ডেবোরার অনুবাদ এবং তার প্রযুক্ত টীকা ও প্রশ্নগুলো পড়ে ফেললাম। এরপর ডেবোরার সঙ্গে আমার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তিনি আমার কাছে যেসব বিষয়ে জানতে চাইতেন এবং আমার কিছু প্রশ্ন নিয়ে তার সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ শুরু হলো। কখনো কখনো আমি পুরো পৃষ্ঠা এক লাইনে পাঠাতাম। এ লাইনগুলোও ছিল খুব সংক্ষিপ্ত এবং মজার। ডেবোরার সঙ্গে ই-মেইল আদান-প্রদানও ছিল আনন্দের।

হ্যান ক্যাং (ডানে) এবং ডেবোরা স্মিথ, হাতে বিজয়ী উপন্যাস গ্রন্থ দ্য ভেজিটারিয়ান

ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই প্রথম পুরস্কারের অর্থ লেখক ও তার অনুবাদকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থটি অনুবাদের তিন বছর আগে কোরিয়ান ভাষা শিখতে শুরু করেন ব্রিটিশ লেখক ডেবোরা স্মিথ। ১৯৮৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, `এই প্রথম কোনও গ্রন্থ অনুবাদ করেছি এবং তার জন্য স্বপ্নাতীত সাফল্য ও সম্মান পেলাম।`

ডেবোরা স্মিথ আরো বলেন, এ উপন্যাসটি ছিল আমার প্রথম অনুদিত গ্রন্থ। আমার কোনো ধারণা ছিল না কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় কাজটি (অনুবাদের কাজ) সম্পন্ন করব। দিনের পর দিন আমি একাই কাজটি করে গেছি। জীবনের অধিকাংশ সময় আমি পড়ার পেছনে ব্যয় করেছি। কিন্তু ভাষান্তর ও ইংরেজি ভাষার মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। স্নাতকোত্তর শেষ করার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, একটি ভাষা শিখব যাতে আমি সাহিত্যের অনুবাদক হতে পারি। কারণ আমি জানতাম দেশে সমসাময়িক সাহিত্যের ছড়াছড়ি রয়েছে কিন্তু তা থেকে আমি কিছুই পড়িনি, কারণ কোনো অনুবাদ ছিল না। এরপরও টুইটারে আমার পরিচয়ে নিজেকে অনুবাদক হিসেবে উল্লেখ করি। এরপর অনুবাদের জন্য দি ভেজেটারিয়ান বেছে নিয়ে প্রকাশকের কাছে দেই। এই প্রকাশক আমাকে অনুবাদ করতে বলেছিলেন। যখন আমি কাজ শুরু করি, তখন লেখক-অনুবাদকের সম্পর্ক কী তা আমার জানা ছিল না। আমি এর স্পর্শেও ছিলাম না, না জানতাম হান কাংয়ের বলা ইংরেজির ধরন। কিন্তু আমি অগ্রসর হলাম এবং পুরো বইটি অনুবাদ করে ফেললাম। লেখা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের তালিকা করলাম এবং অপেক্ষায় রইলাম।

তবে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সমালোচক ড্যানিয়েল হ্যান একটু ভিন্নভাবে উপন্যাসটির মূল্যায়ন করেছেন। যা উপন্যাসটির লেখক হ্যান ক্যাংয়ের জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। ড্যানিয়েল হ্যান বলেন, `বইটির তিন খণ্ড জুড়ে সমাজের সবচেয়ে অপরিবর্তনশীল কয়েকটি কাঠামোর অসহনীয় চাপ পাঠক মনকে বিচলিত করে তোলে। এই উপাদানগুলি হল চাহিদা ও আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানগত কর্মপদ্ধতি, যা একে একে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়।` ম্যান বুকার নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান বয়েড তংকিন বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী ও মৌলিক’।

তথ্যসূত্র : গার্ডিয়ান, এএফপি, বিবিসি ও ইন্ডিপেনডেন্ট


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৬/সাইফ বরকতুল্লাহ

Poet kazi Nazrul Islam evergreen in history

এই সময় এবং কবি নজরুল

সাইফ বরকতুল্লাহ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:25 May 2016   08:25:49 AM   Wednesday   ||   Updated:25 May 2016   10:41:02 AM   Wednesday
এই সময় এবং কবি নজরুল
সাইফ বরকতুল্লাহ :  তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/ সেকি মোর অপরাধ?/ চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী/ বলে না তো কিছু চাঁদ, কিংবা চেয়ো না সু নয়না আর চেয়ো না/ এ নয়ন পানে/ জানিতে নাহিকো বাকি সই ও আঁখি/ কি যাদু জানে, অথবা মোর প্রিয়া হবে এস রানী/ দেব খোঁপায় তারার ফুল- এ গানগুলো শুনে আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। রোমান্টিক কবি।

আবার বিদ্রোহী কবিতা পড়ে তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তবে বিদ্রোহী কিংবা প্রেমের কবি যাই বলি না কেন, তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। গভীরভাবে তার লেখা গান, ছোটগল্প, কবিতা বিশ্লেষণ করলে মাটি ও মানুষের জীবনচিত্রই পাওয়া যায়। নজরুল শুধু মাটির কাছাকাছি ছিলেন না, নজরুল লেটোর দলে গান গাইতেন। পালা রচনা করতেন।

নজরুল দেখিয়েছেন বাঙালির সংস্কৃতিতে সবাই এক। বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম। বাঙালির ভেতরে যে পৌরাণিক পুরাণ ও যে লৌকিক পুরাণ বিদ্যমান, তা নিয়ে তিনি একত্র করতে চেয়েছেন। তিনি একসঙ্গে হিন্দু-মুসলিম মিলে যে পুরাণের সৃষ্টি করেছেন, তা আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনন্য উদাহরণ। আধুনিক বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবি। একমাত্র নজরুলের কবিতায়ই ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের একটি সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মুসলমান কবিদের মধ্যে নজরুলই প্রথম শ্যামা সংগীত রচনা করেন। তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারায় ভাষার মাধ্যমে কবিতা-গানে তিনি যে বিদ্রোহ ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বাংলা সাহিত্যে বিরল।

নজরুলের বিচিত্র সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে গভীর বিস্ময়-উদ্রেকী ঘটনা। নজরুলকে চেনার মধ্য দিয়ে আমরা মূলত বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী সৃষ্টিকে অনুধাবন করতে সক্ষম হই। আবেগকে শিল্পের মধ্য দিয়ে কী করে সমষ্টির অঙ্গীকারে রূপান্তর করা সম্ভব, সাহিত্যে নজরুল ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে জনগণমনচিত্তকে প্রবলভাবে আলোড়িত করার ক্ষেত্রে নজরুলের অবদান বিস্ময়ের জন্ম দেয়। যেমনটি আমার ‘কৈফিয়ত’ কবিতায় কবি নিজেই উচ্চারণ করেছেন, ‘প্রার্থনা করো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস/ যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ!’  

নজরুল বৈপ্লবিক উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনমানুষের সংগ্রামকে কবিতা, গদ্য ও গানে ভাস্বর করেছেন অখণ্ড মানবতার প্রতি গভীর বিশ্বাস, ভালোবাসা ও শিল্পিত অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। ‘জাতের বজ্জাতি’ কবিতায় বলেছেন- ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাল জালিয়াত খেলছ জুয়া/ ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া/ হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি, ভাবলি এতেই জাতির জান/ তাই তো বেকুব করলি তোরা এক জাতিকে একশ খান।’  

অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। নজরুল বলেছেন, ‘আমি আমার জন্মক্ষণ থেকে আমার অস্তিত্বকে খুঁজে ফিরছি। যখন আমি বালক, তখন ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার কান্না আসত- বুকের মধ্যে বায়ু যেন রুদ্ধ হয়ে আসত।… অই আকাশটা যেন ঝুড়ি, আমি যেন পাখির বাচ্চা, আমি অই ঝুড়ি চাপা থাকব না- আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ আজ এই সময়ে আমরা এমন অবস্থার মধ্যে বিরাজমান, যেখানে নজরুলের এই অভিভাষণ যেন তারই স্পষ্ট উচ্চারণ।

এ জন্যই হয়তো কবি তরুণ সমাজকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই আমাদের সময়ে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানেই অন্যায় হচ্ছে, সেখানেই নজরুল প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্যই নজরুল প্রাসঙ্গিক। কেননা তিনি তো নিজেই বলেছেন- ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নাহি কিছু মহিয়ান।’ কিংবা ‘আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম বনভূমি রণিবেনা।’

তবে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ‘বাংলাদেশ’ কবিতায় বলেছেন, ‘এই দেশের মাটি-জল ও ফুলে-ফলে যে রস, যে সুধা নাহি ভূমণ্ডলে। এই মাটির বুকে হেসে খেলে সুখে ঘুমাবো এই বুকে স্বপ্নাতুর’। এ জন্যই বলা যায়, এই সময়ে নজরুল প্রাসঙ্গিক।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৬/সাইফ বরকতুল্লাহ/এএন

Thursday, 5 May 2016

Money bag and weight

মানিব্যাগ যে কারণে ভারী হওয়া উচিত নয়

মনিরুল হক ফিরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:04 May 2016   08:00:53 AM   Wednesday   ||   Updated:04 May 2016   12:06:38 PM   Wednesday
মানিব্যাগ

মানিব্যাগ

মনিরুল হক ফিরোজ : সকল পুরুষই তার মানিব্যাগটি প্যান্টের পেছনে পকেটে রাখেন। কিন্তু মানিব্যাগে কী শুধু টাকা রাখেন?

প্রশ্নটির উত্তরে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, অধিকাংশই বলবেন ‘না’। কারণ মানিব্যাগে টাকার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কাগজ, ভিজিটিং কার্ড, ডেবিট বা্ ক্রেডিট কার্ড, কুপনসহ প্রভৃতি কিছু রাখা হয়। ফলে মানিব্যাগ হয়ে যায় ভারী বা মোটাসোটা।

আর এই মোটা বা ভারী মানিব্যাগ কিন্তু প্যান্টের পেছনের পকেটে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ। হয়তো বলবেন, এটা আর নতুন কী? কারণ পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ পিক-পকেট অর্থাৎ চুরি হয়ে যেতে পারে। ফলে টাকার পাশাপাশি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হারানোর ঝুঁকি থাকে।

হ্যাঁ, এই ঝুঁকি তো থাকেই। কিন্তু তার পাশাপাশি নতুন আরেকটি ঝুঁকির বিষয়টি এবার জেনে নিন। আর তা হচ্ছে, মোটা মানিব্যাগ পেছনের পকেটে রাখাটা স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।

নিউইয়র্কের একদল চিকিৎসক হাফিংটোন পোস্টকে জানিয়েছেন, মোটা মানিব্যাগ শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট করে। পিঠ, ঘাড়, যৌনাঙ্গের পাশ্ববর্তী অঞ্চল, নিতম্বে বিরুপ প্রভাব ফেলে মোটা বা বেশি ওজনের মানিব্যাগ।

চিকিৎসকরা বলেন, মোটা মানিব্যাগ পকেটে থাকা অবস্থায় তার ওপর বসে থাকলে, তা শরীরের সামঞ্জস্য বা ভারসাম্য নষ্ট করে বিশেষ করে নিতম্ব এবং যৌনাঙ্গের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে বিরুপ প্রভাব ফেলে।

নিউইয়র্কের ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কাইরো প্র্যাকটিক কলেজের ক্লিনিকাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ক্রিস গুড তো আরো বেশি ভয়ানক তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মোটা মানিব্যাগে ওপর বসে থাকা হলে শিরদাঁড়ায়ও চাপ পড়ে। শিরদাঁড়া ধীরে ধীরে বেকে যেতে পারে। পিঠ ব্যাথা শুরু হতে পারে। পাশাপাশি নানা স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে সোজা হয়ে বসার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারেন। যা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে পক্ষাঘাতের দিকে।

সুতরাং মানিব্যাগ বেশি ভারী বা মোটা না করাটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। পাশাপাশি মানিব্যাগ সহ বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন। বসার সময় মানিব্যাগ হাতে বা টেবিলে রেখে দিন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৬/ফিরোজ

st martin and small island for tourism

ছেঁড়াদ্বীপে ২০ বছর

জুয়েল রানা : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:04 May 2016   06:18:33 PM   Wednesday   ||   Updated:05 May 2016   01:10:31 PM   Thursday
ছেঁড়াদ্বীপে ২০ বছর
|| জুয়েল রানা ||

‘এখানে দুজনে নিরজনে
সাজাবো প্রেমেরও পৃথিবী
পাখি শোনাবে যে গান,
সুরে ভরিয়ে দেবে প্রাণ
ফুল দেবে ছড়িয়ে সুরভী’

দেশের সর্বদক্ষিণের স্থান ছেঁড়াদ্বীপ। এক খণ্ড স্বর্গের মতো এই দ্বীপে দাঁড়িয়ে পরস্পরের সঙ্গে এমনি ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন সালমান শাহ ও মৌসুমী! ১৯৯৩-৯৪ সালে ‘অন্তরে অন্তরে’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল ছেঁড়াদ্বীপে। আর সেই ছবিতে গানে গানে সালমান-মৌসুমী একে অপরকে কথা দিয়েছিলেন সেখানে ঘর বাঁধার। তারা কথা রাখেননি! শালমান শাহ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ১৯৯৬ সালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর মৌসুমীরও সময় হলো না।

কিন্ত সেই ঘর বাঁধার কথা হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছিলেন আরেকজন। সালমান শাহ যখন ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন, তখন নিজের পরিবারকে নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপে স্বপ্নের পৃথিবী গড়লেন তাদের একজন ভক্ত হোসেন আলী! শুধু ভালোবেসে পরিবার নিয়ে নির্জন দ্বীপে বসতিই গড়লেন না, চালু করলেন নিজের প্রিয় নায়িকার নামে রেস্টুরেন্ট ‘হোটেল মৌসুমী’! ২০ বছর ধরে ছেঁড়াদ্বীপে এক এবং একমাত্র রেস্টুরেন্ট!

হোসেন আলীর আদি নিবাস সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়াতে। সেখান থেকে সে তার স্ত্রী ও পুত্র সাদ্দামকে নিয়ে চলে আসেন ছেঁড়াদ্বীপে। দিনের অর্ধেক সময় ছেঁড়াদ্বীপ থাকে বিচ্ছিন্ন। আর বছরে ৭ মাস থাকে সভ্য দুনিয়া থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন! এমন এক শৈলপ্রান্তরে সে বছরের পর বছর ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, এ যেন আরেক রবিনসন ক্রুসো!

কেয়া গাছের খুঁটি আর কেয়া পাতার ছাওনি মোড়া ঘর হোসেন আলীর। পর্যটকদের জন্য চিপস, বিস্কিট আর বহুদূর থেকে আনা মিষ্টি পানি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসতো সে প্রথম দিকটায়, এরপর বিভিন্ন প্রকার মাছ আর শুঁটকি ভর্তা দিয়ে লাঞ্চ! অমন খোলামেলা আর নির্মল পরিবেশে মৌসুমী হোটেলের যেন কোনো খাবার যেন অমৃত! সদা হাস্যজ্জ্বল মানুষটি ৪ ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে রেখে ২০১৩ সালে মারা যান। তাঁর সাথে আসা ৮ বছর বয়সী বড় ছেলে সাদ্দাম এখন ২৭ বছরের যুবক। তার হাতেই এখন সংসার আর বাবার রেখে যাওয়া মৌসুমী হোটেলের দায়িত্ব।


হোটেল মৌসুমীতে লেখক ও তার বন্ধুরা

বর্তমানে মাছের সাথে যুক্ত হয়েছে বাড়িতে পালা মুরগি আর ছাগল! ঘণ্টা দুয়েক সময় দিলেই হোসেন আলীর স্ত্রী আপনাদের রেঁধে খাওয়াবে ভাত, মাছ, মুরগি, শুঁটকি ভর্তা, ডাল জনপ্রতি ২০০ টাকার মধ্যে! আরো আগে খেতে চাইলে ফোন করে আগেই অর্ডার দিয়ে যেতে পারেন তবে ঝালের ব্যাপারটি একটু বলে নেবেন! আমরা তিনবার বলেছিলাম ঝাল কম দিতে, ওরাও বলেছিল ব্যাপারটা ওদের মাথায় আছে, তারপরও খাওয়ার সময় আমাদের ত্রাহি অবস্থা!

হোসেন আলীর স্ত্রী রাঁধেন ভালো, তবে তার চেয়ে বড় কথা অমন ঝলমলে প্রাকৃতিক পরিবেশে খাওয়ার সুযোগ আপনি হয়তো জীবনে খুব বেশি পাবেন না! চেয়ার-টেবিলে বসে খেলেও আমাদের বনভোজনই মনে হয়েছে বেশি।

সাদ্দাম জানালো, ৫ মাস তাদের ব্যস্ততা থাকে আর বাকি ৭ মাস প্রায় অবসর। এই সময় সে ঢাকা যায়, কিছু টুকটাক কাজ করে। তবে এবার সে পর্যটন মৌসুম শেষ হলে তাবলিগের চিল্লায় যাবে। তার স্বপ্ন ছেঁড়াদ্বীপে একটা রিসোর্ট তৈরি করা! যাতে পর্যটকরা এখানে রাতে থেকে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে আর তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়!



আপনারা যারা সেন্টমার্টিন হয়ে ছেঁড়াদ্বীপ যেতে চান, তাদের জন্য যাওয়ার রুটটি সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি! ফকিরাপুল বাস স্ট্যান্ড থেকে সেন্টমার্টিন পরিবহণ, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীনলাইন পরিবহণে সরাসরি টেকনাফ যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে নন এসি-৯০০ টাকা, এসি-১৬০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত।

কেয়ারী সিনবাদ বা অন্যান্য নৌযানের টিকিটও ঢাকা থেকেই কিনতে পারবেন রিটার্ন টিকিটসহ ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। অনেকে আগে থেকে সেন্টমার্টিনে হোটেল, লজ রিজার্ভ করে যায় কিন্ত আমার পরামর্শ হলো খুব রাশ আওয়ার না হলে ওখানে গিয়ে হোটেল বুক করুন। ওখানে কয়েকশ হোটেল-রিসোর্ট আছে, দেখে শুনে থাকতে পারবেন আর সেটা সাশ্রয়ীও হবে। যারা ছেঁড়াদ্বীপে গিয়ে দুপুরে খেতে চান, তারা সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেতে পারেন। সাদ্দামের ফোন নম্বর ০১৮১৫০৬৭৬৪০।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মে ২০১৬/রাসেল পারভেজ/তারা