গোপালগঞ্জের শুঁটকির কদর দেশজুড়ে
বাদল সাহা : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:23 Dec 2015 04:24:51 PM Wednesday

জেলার চান্দারবিল, বড়বিল, উজানীর বিল, মধুমতি নদী, ঘাঘরনদী ও কুমার নদসহ রয়েছে অনেক ছোট-বড় জলাভূমি, খাল, নদী, কুয়া। যা দেশীয় মাছ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।
জেলার উৎপাদিত শোল, টাকি, বাইন, খলিসা, পুঁটি, টেংরা, ভেদা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করে এলাকার লোকজন জীবিকা নির্বাহ করছে। শুঁটকি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে জেলার জলিরপাড়, কলিগ্রাম, বানিয়ারচর, রাহুথর, সাতপাড়, গোলাবাড়িয়ায় গড়ে উঠেছে শুঁটকি কেনাবেচার কেন্দ্র ও আড়ৎ। তবে নদী ও বিল থেকে অপরিকল্পিতভাবে ও ডিমওয়ালা মাছ আহরণ করায় কমে গেছে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন।
জানা গেছে, আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এই ছয় মাস শুঁটকি তৈরির মৌসুম। আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বিলে জেলেদের জাল, বড়শি, আলোধারায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে এবং পৌষ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত বিলের কুয়া বা পুকুরগুলোতে সেচ দিয়ে মাছ ধরা হয়। আর এই মাছের সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় এখানকার শুঁটকি তৈরিতে।
বাকি মাছ চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে এবং কিছু মাছ বিক্রি হয় স্থানীয় হাটবাজারে। শুঁটকি তৈরির মৌসুমে পুরুষদের পাশাপাশি এখানকার মহিলারাও হয়ে পড়ে কর্মব্যস্ত।
মাছ বাছাই, মাছ কাটা-ধোয়া, শুকানো এবং ঘরে তোলার কাজ নারীরাই করে থাকে। শুঁটকি মৌসুমে এলাকার টেকেরহাট বন্দর, রাজৈর, জলিরপাড়, বানিয়ারচর ও সাতপাড়ের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও কর্মতৎপরতা বেড়ে যায় অনেক গুণ।
প্রতি মণ শুটকি ১৮-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এখানে শুঁটকির পাশাপাশি মাছের তেলও উৎপাদিত হচ্ছে যা শুঁটকি প্রসেসিং ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হওয়ায় গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বিল এলাকায় শতাধিক শুঁটকি খোলা গড়ে উঠেছে। এসব খোলা থেকে জেলার গোলাবাড়িয়া, সাতপাড়, জলিরপাড় এবং ভাঙ্গারহাট এলাকায় প্রায় ২৫টি আড়তে সরবরাহ করা হয়।
এখানকার শুঁটকি মাছ কিনতে স্থানীয় ফরিড়া-দালাল ও এজেন্টদের সহায়তায় সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, কিশোরগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার পাইকাররাও তা কেনার জন্য ভিড় জমান এ আড়ৎগুলোতে।
বানিয়ারচরের অমল বাড়ৈ জানান, প্রাকৃতিক মাছ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় শুঁটকির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। তবে ব্যাংক লোন বা ঋণ পেলে ব্যবসায়ে প্রসার ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা।
উজানীর শুঁটকি ব্যবসায়ী গোবিন্দ লাল বলেন, এখানকার শুঁটকির মান খুব ভালো। যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার মিঠাপানি শুঁটকি মাছ রফতানি করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী আশরাফ আলী হাওলাদার জানান, এক মৌসুমে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ শুঁটকি তৈরি করেন। সোলাই পুঁটি ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, বাইন ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা এবং চুঁচড়া ২৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করা হয়। প্রতি মণ পুঁটি শুঁটকি করার পর বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকা দরে। বাইন ২৪ হাজার টাকা এবং চুঁচড়া ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়।
রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৩ ডিসেম্বর ২০১৫/বাদল সাহা/মুশফিক
No comments:
Post a Comment