Saturday, 31 December 2016

To memory Bangladesh 2017

বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হবে ২০১৭

ফজলে আজিম : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:01 Jan 2017   08:09:57 AM   Sunday   ||   Updated:01 Jan 2017   11:14:33 AM   Sunday
বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হবে ২০১৭
প্রাচ্য জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী এ বছর বৃহস্পতি গ্রহ কন্যা ও তুলা রাশিতে অবস্থান করবে। শনি অবস্থান করবে বৃশ্চিক ও ধনু রাশিতে। রাহু সিংহ রাশি থেকে কর্কট রাশিতে প্রবেশ করবে। বছরজুড়ে মঙ্গল গ্রহ মীন থেকে তুলা রাশিতে পরিভ্রমণ করবে।

এ বছর মঙ্গলগ্রহ বক্রি হচ্ছে না। অন্যান্য সার্বিক গ্রহাবস্থান থেকে ধারণা করা হচ্ছে ২০১৭ সাল বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে স্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কেমন যেতে পারে ২০১৭ সাল
দেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ণ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক ধরনের নীরব বিপ্লব দেখা যাবে। প্রশাসনিক কাজকর্মের গতি আগের চেয়ে বাড়বে। তবে কর্মক্ষেত্রে সনাতন ধারণার পেশাজীবীদের সঙ্গে সাধারণের মতৈক্য দেখা যেতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহিতা বাড়তে পারে।

রাজনীতি : সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিরোধীদলের সমর্থন থাকবে। বিরোধীদলের উর্ধ্বতন নেতাকর্মীর সঙ্গে দলীয় বৈঠক ফলপ্রসু হতে পারে। রাজনৈতিক আলোচনায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব ও উসকানিমূলক কথাবার্তার ফলে জনসাধারণের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ তৈরি হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারকে নিজ অবস্থানে কঠোর ও যোগাযোগে দক্ষতার প্রমাণ দিতে হতে পারে।

সরকারের বিপক্ষে বিরোধী দলের নীরব আন্দোলন ও জনসংযোগ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের পেশাগত পদোন্নতি ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির ফলে আন্দোলন খুব বেশি জমে উঠবে না। সরকারি চাকুরির নিয়োগে কিছু অসৎ লোকের দুর্নীতি সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

পররাষ্ট্র : বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক ভালো যাবে। এছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। শিল্প ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর অনেক দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। এক বা একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে। পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন আর্থিক ও উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স ও রাজস্ব আদায়ে বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।  আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জটিলতা আগের চেয়ে কমতে পারে। বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়তে পারে।

Astrology

যোগাযোগ : দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে চলমান অনেক কাজ এ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ কার্যকর না হলে বাংলাদেশ বিমানের লোকসানের পাল্লা ভারী হতে থাকবে। এভিয়েশন খাতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট দেখা যেতে পারে।

শিক্ষা : শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ কোনো নীতিমালা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে। উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

সীমান্ত পথে অপরাধ প্রবণতা : বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে সরকারকে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রয়োজনিয়তা দেখা দেবে। সীমান্তপথে গোপনে অবৈধ পণ্যের বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষ করে মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষীদের আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে।

জীবনমান : বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীদের জন্য বছরটি হবে প্রত্যাশা পূরণের বছর। সবশ্রেণীর মানুষেরই কমবেশি উপার্জন বাড়বে। উচ্চশিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বেকারত্বের হার কমবে। জীবনমান আগের চেয়ে উন্নত হবে। ভোজনরসিক মানুষদের চাহিদা মেটাতে রেস্টুরেন্ট ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবসা জমজমাট হবে।

ক্রীড়া : ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকবে। অতীত কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন দলে লক্ষ্যণীয় সংযোজন ও বিয়োজন হতে পারে।

অপশক্তির সক্রিয়তা : অগ্নি রাশি মেষে ইউরেনাস প্রবেশের ফলে অপশক্তি উত্থানের চেষ্টা করতে পারে। বায়ু রাশি কুম্ভে নেপচুন ও কেতুর অবস্থান ও শনির দৃষ্টি বিনিময় সম্পর্ক তথ্যপ্রবাহে নিত্যনতুন কৌশলের সূচনা করতে পারে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বছরের শুরু থেকেই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রয়োজন হবে।

আইনশৃঙ্খলা : দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের আশংকা রয়েছে। এতে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে শংকা দেখা দিতে পারে। গোপন শত্রুতার জের ধরে গুপ্ত হত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রেম ও পরকীয়ার জের ধরে নানা ঘটনার ফলে প্রায়ই সংবাদমাধ্যম সরগরম থাকবে।

চিকিৎসা : চিকিৎসাখাতে সরকারকে আরো কঠোর নজরদারি আরোপ করার প্রয়োজনিয়তা দেখা দেবে। ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা, কমিশন বাণিজ্য এসব নিয়ে জনমনে ক্ষোভ বাড়তে পারে। চিকিৎসক সংকট ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে অঞ্চলভেদে চিকিৎসা বিভ্রাটের  আশংকা রয়েছে। সরকারের প্রজ্ঞাপূর্ণ নীতিমালা ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অধিকাংশ সমস্যারই উত্তোরণ ঘটবে বলে আশা করা যায়।

সবমিলিয়ে ২০১৭ সাল বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন কারণে স্মরণীয় বছর হয়ে থাকবে।

লেখক : অ্যাস্ট্রলজার অ্যান্ড সাইকিক কনসালটেন্ট। কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রলজার্স সোসাইটি, ঢাকা।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

New year New book

চারদিকে ঝকঝকে নতুন বইয়ের সুবাস

ইয়ামিন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:01 Jan 2017   09:08:08 AM   Sunday   ||   Updated:01 Jan 2017   11:07:16 AM   Sunday
চারদিকে ঝকঝকে নতুন বইয়ের সুবাস
আবু বকর ইয়ামিন : নতুন বছর। প্রথম দিন। নতুন ক্লাসে ওঠা সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যের নতুন বই। সারা দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে একযোগে শুরু হয় বিতরণ।

সারা দেশের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ কোমলমতি শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার নতুন বই। নতুন বইয়ের উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে বিরাজ করছে ম-ম গন্ধে ভরা ঝকঝকে নতুন বইয়ের সুবাস।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাধ্যমিকের বই উৎসবে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে রাজধানীর ৩১টি স্কুলের ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। দেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এ উৎসব পালিত হচ্ছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।

এ বছর প্রথমবারের মতো নিজের ভাষার বই তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২৪ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থীর হাতে। প্রথমবারের মতো ব্রেইল বই পাচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গত বছরের মতো এ বছরও দিবসটিকে পৃথকভাবে পালন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। এ বছরেই প্রথম প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাদরী) শিক্ষার্থীদের মঝে আট ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

এর আগে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় গণভবনে ২০১৭ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরে সর্বমোট বিতরণ করা পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ১২৮টি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়ামিন/সাইফুল/এএন

love = income/expenditure not

আয়-ব্যয় সম্পর্কের ভিত্তি যেন না হয়

রাজিব হোসেন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   10:40:18 PM   Saturday   
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

লাইফস্টাইল ডেস্ক : সংসারে টাকা গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে দরকারি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে উপার্জন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। মানে, সম্পর্কের প্রথম থেকেই আপনার আয় কতটা, কীভাবে সংসার চলবে, কতটা খরচ করবেন, সবটাই আলোচনা করে নিন। সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কের জন্য এই অভ্যাসটা থাকা খুবই জরুরি।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীতে বেশিরভাগ সম্পর্কেই আয় নিয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই। নিজের গুরুত্ব কমে যাওয়ার ভয়েই অনেকে এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চান না। তাতেই আরো সমস্যা বাড়ে। সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়।

* প্রথম থেকেই উপার্জন নিয়ে স্বচ্ছ থাকা খুব দরকার। আপনি মাস গেলে কত টাকা উপার্জন করেন, সেটা জানার অধিকার যেমন আপনার সঙ্গীর আছে, তেমন সে কতটা আয় করছে সেটাও জেনে নেওয়া দরকার। আর প্রথম দিন থেকে সেটা নিয়ে সত্যি কথা বলে দেওয়া দরকার। একবার সত্যি কথা বলাটা অভ্যাস হয়ে গেলে আর অসুবিধা হবে না। কিন্তু একবার মিথ্যা বললে, সত্যিটা আর বলা হয়ে উঠবে না কোনোদিনই।

* দিনের শুরুতেই টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে আয় ব্যয়ের হিসাব করাটা কাজের কথা নয়। কারণ, যদি আলোচনা দীর্ঘ হয়, তাহলে ঘুমের ঘোরে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভবনা থেকে যায়। সকালে উঠে এই নিয়ে আলোচনা করলে নানা রকম সুবিধা আছে। সকালে, মস্তিষ্ক অনেক পরিষ্কার থাকে। তখন ঠাণ্ডা মাথায় এ নিয়ে আলোচনা করা যায়। আয় ব্যয় নিয়ে কথা বলার সময় তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখাও খুব দরকার। রেগে গেলে বা বেশি চিন্তা করলে অকারণে সম্পর্কে সমস্যা বাড়বে।

* মনে রাখবেন, আয় সম্পর্কের একটি দিক মাত্র। কোনো সম্পর্কেই আয়কে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। সত্যি কথা বলতে, আয় বিষয়টি কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই মূল বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। বরং, এটিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়ার ততটাই গুরুত্ব দিন। আয় নিয়ে বেশি কথা বলার দরকার নেই। যতটা বলার ততটাই বলুন। মনে রাখবেন, এটা কোনো ব্যবসায়ীক বোঝাপড়া নয়।

* এক ধরনের চিন্তা করা দরকার। হ্যাঁ, আপনারা দুটো মানুষ। আপনাদের চিন্তাও আলাদা। কিন্তু টাকা খরচের বিষয়টি নিয়ে চিন্তার দিক থেকে একই বিন্দুতে পৌঁছে যাওয়া দরকার। হতে পারে আপনার সঙ্গী খেলা, সিনেমা, ঘোরাফেরা বেশি পছন্দ করেন। তার সেই শখকে গুরুত্ব দিন। দরকার পড়লে সেই জন্যও কিছুটা খরচ রেখে দিন। তাতে, দুজনেই খুশি থাকবেন অনেকটা।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

Export fair star from 1-31st jan 2017


রোববার থেকে শুরু বাণিজ্য মেলা

নাসির : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   04:36:56 PM   Saturday   ||   Updated:31 Dec 2016   04:54:44 PM   Saturday
রোববার থেকে শুরু বাণিজ্য মেলা
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও নতুন বছরের প্রথম দিন (রোববার) থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। এটি মেলার ২২তম আসর।

মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।

আগামীকাল রোববার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন।

শনিবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর মেলায় বাংলাদেশসহ অংশ নিচ্ছে ২১টি দেশ। এগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, নেপাল, হংকং, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ভিয়েতনাম ও ভুটান।

তিনি আরো জানান, মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়ার, সংরক্ষিত, বিদেশি, সাধারণ মিনি, সংরক্ষিত মিনি, প্রিমিয়ার মিনি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ান, সাধারণ ও প্রিমিয়ার স্টল, ফুড স্টল, রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরির ৫৮০টি স্টল থাকবে। থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন।

এ ছাড়াও থাকবে একটি ই-শপ, দুটি শিশু পার্ক, তিনটি রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক চিকিৎসা, মা ও শিশু কেন্দ্র। বিনোদনের জন্য মাঠের মধ্যে ফুলের বাগান ও এটিএম বুথ।

মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব, আনসার এবং বেসরকারি সিকিউরিটি ফোর্সসহ ১৪০টি সিসি ক্যামেরা।

মন্ত্রী আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পণ্যের সঙ্গে ভোক্তাদের পরিচিত হওয়ার সুযোগ বাড়ে। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎপাদকদের মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ যোগায় এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

বাণিজ্য মেলায় ২০১০ সালে ২২ কোটি ৮৬ লাখ, ২০১১ সালে ২৫ কোটি, ২০১২ সালে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ, ২০১৩ সালে ১৫৭ কোটি ও ২০১৪ সালে ৮০ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ৮৫ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। এবার আরো বেশি রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

এবার বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ করা হবে।

বাণিজ্য মেলা আয়োজনের জন্য পূর্বাচলে ৬০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখানে আগামী তিন বছরের মধ্যে চীনা সরকারের সহযোগিতায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। সেখানে সারা বছর বিভিন্ন মেলা আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/নাসির/রফিক

Smart card enter into Bangladesh

স্মার্টকার্ডের যুগে বাংলাদেশ

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   03:04:13 PM   Saturday   ||   Updated:31 Dec 2016   03:11:43 PM   Saturday
স্মার্টকার্ডের যুগে বাংলাদেশ
হাসিবুল ইসলাম মিথুন : ২০১৬ সালে নাগরিকদের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্মার্টকার্ডের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। গত ২ অক্টোবর আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজের ‘স্মার্টকার্ড’ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এর বিতরণ শুরু হয়।

ওই দিন প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট কার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয়। এই স্মার্টকার্ড ভবিষ্যতে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

এর পরের দিন থেকে প্রথমে ঢাকার উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ড ও ঢাকা দক্ষিণে রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারের মাঝে পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ডকার্ড বিতরণ শুরু হয়।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ছয় ধাপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৭১০টি, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৪র্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি, ৫ম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৬ষ্ঠ ধাপে ৪জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেখান থেকে বেশকিছু বাদ দিতে হয়। যেগুলোতে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশ্নবিদ্ধ ইসি: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটে লড়াই করেন। কিন্ত প্রায় ৬শ ইউপির বিষয় নিয়ে সব মহল থেকেই ইসির সমালোচনা ওঠে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ : এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে ৩৪৬ টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়েছিল। তফসিল ঘোষণার পর থেকে শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ পর্যন্ত এ নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয় ১১৬ জন। আহত হয় প্রায় ১০ হাজার। যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড : ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে ২২০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

দুই আসনে উপ-নির্বাচন : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি ও ব্যবহারিক দিক, নির্বাচনে ব্যবহারের উপযোগিতা, সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি পর্যালোচনার জন্য ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটিতে একজন উপদেষ্টা, একজন আহবায়ক, একজনকে সদস্য সচিব করে বাকিদেরকে সদস্য করা হয়েছে।

বুয়েটের সহযোগিতায় ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আংশিক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম চালু হয়। পাঁচ বছরের মাথায় সেগুলোর কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে।

ইসিতে নতুন সচিব : ৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে উপ-নির্বাচন করে ইসি। ১৮ জুলাই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।
গত ১১ মে ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মৃত্যুবরণ করায় এবং গত ২ মে ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মজিবুর রহমান ফকির মৃত্যুবরণ করায় আসন দু’টি শূন্য হয়।

মশাল দ্বন্দ্ব : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ‘মশাল’ প্রতীক নিয়ে দলটির দুই পক্ষ কমিশনের দারস্থ হয়। গত ১২ মার্চ সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে শিরীন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে দুই ভাগ হয় জাসদ। হাসানুল হক ইনু ও শিরীনের কমিটির পাশাপাশি পাল্টা কমিটি গঠন করেন মইনুদ্দিন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান এবং তাদের অনুসারীরা। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ১৩ এপ্রিল ইনু-শিরীন নেতৃত্বাধীন জাসদকে মূলধারা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ২৮ এপ্রিল তাদের মশাল প্রতীক দেয় নির্বাচন কমিশন।

পাঠ্যপুস্তকে আরো নির্বাচনী তথ্য অন্তর্ভুক্ত : পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে নির্বাচনী তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেসব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়টি নেই সেগুলোতে নতুন করে তথ্য সংযোজন এবং যেসব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ইতোমধ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর সাথে নতুন তথ্য যোগ করার চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইভিএম তৈরির উদ্যোগ: বিদায়ী বছরে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) তৈরির উদ্যোগ নেয় কমিশন। আর এ জন্য ১৯ সদস্যের ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়।

নতুন সচিব : ইসির প্রস্তাবিত নতুন সচিবালয়ে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ডিরেক্টর মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সফলতা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় সাধুবাদ পেয়েছে ইসি। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২২ ডিসেম্বর। নির্বাচনে কোন ধরণের সহিংসতা ও অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরণের অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেষ বেলায় ইসি সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এ কৃতিত্ব তাদের দিতে হয়।

জেলা পরিষদ নির্বাচন : বছরের একদম শেষে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্দলীয় এই নির্বাচনে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি। শুধু

আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে লড়াই করতে হয়েছে অনেক জেলায়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে ২১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৬/মিথুন/শাহনেওয়াজ

2016 gone

কালের গর্ভে আরেকটি বছর

শাহ মতিন টিপু : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   01:05:58 PM   Saturday   ||   Updated:31 Dec 2016   02:34:47 PM   Saturday
সূর্যাস্ত

সূর্যাস্ত

শাহ মতিন টিপু : ৩১ ডিসেম্বর। এই বছরের শেষদিন আজ। আজকের দিনটি পার হলেই হারিয়ে যাবে  গত একবছর ধরে দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারটির গুরুত্ব। সেখানে ঝুলবে আরেকটি নতুন ক্যালেন্ডার।

আজকের দিনটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরেকটি বছর। স্মৃতির খেরোখাতা থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মুছে শুরু হবে নতুন বছর। অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী এই বিদায়ী বছর। নানা ঘটনা প্রবাহে আলোচিত ইংরেজি ২০১৬ সাল। সেইন্ট গ্রেগরি প্রবর্তিত ক্যালেন্ডারের হিসাবে এখন সামনে সমাগত ২০১৭।

সময় এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১৬-এর প্রথম দিনটিকে বরণ করা হয়েছিল, সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে?

বিদায়ী বছর প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দোলাচলে নিয়েছে অনেক কিছু। তারপরও নতুন বছরের নতুন সূর্যালোকিত দিনের প্রতি অসীম প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা মানুষের মনে। নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন। চোখের সামনে এসে দাঁড়ায় ধূসর হয়ে আসা গল্পগাঁথার সারি সারি চিত্রপট। কখনো বুকের ভেতর উঁকি দেয় একান্তই দুঃখ-যাতনা। কখনো পাওয়ার আনন্দে নেচে উঠে হৃদয়। এ বছরটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে আমাদের জীবনে, এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।

‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা পেতে চায় সবাই। নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি থেমে গিয়ে প্রিয় স্বদেশ যেন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

বিদায়ী বছরে ভাল খবর যেমন ছিল, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও কম ছিল না । দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রেই  বিষ্ময়কর সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বেই বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ আসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দারিদ্র্যমুক্তির সাফল্য দেখতে বিশ্বব্যাংকপ্রধানও বাংলাদেশ সফর করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে। বেশ কয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদন্ডও কার্যকর করা হয়েছে। এতে জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে যেমন আমাদের মর্যাদা বেড়েছে, তেমনি শহীদ পরিবারগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছে। কিছুটা হলেও মোছন হয়েছে জাতির গ্লানি। সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে অবনতির চিত্র লক্ষণীয়।

দুর্নীতি, দলীয়করণ, আমলাতোষণ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকান্ড এখন পূর্বাপেক্ষা বেড়েছে। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই মতৈক্য। সংকোচিত হয়ে গেছে গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রগুলোও। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও অনেকের কাছে উপহাসের হয়েছে। তবে, নাসিক নির্বাচন আশার আলো জ্বেলেছে। দেশস্বার্থে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক ঐক্য দরকার। তা এমন যে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ফিরে আসুক গণতন্ত্রের সুস্থ ধারা, সুসংবাদ বয়ে আনুক সবার জন্য।

২০১৬ সালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ছিল স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন ছাড়াও হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি দলেরই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বছরের শেষ দিকে এসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসেছে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো। যা দেশে গণতন্ত্রের চর্চার পথে নতুন আশার আলো।

বছরজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল জঙ্গিবাদ। সারা বিশ্বে যখন জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেখানে এর বিষবাষ্প থেকে মুক্ত ছিল না বাংলাদেশও। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠীর বর্বরতা ও হত্যাকাণ্ড অবাক করেছে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে।

এ বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত ছিল,  সেটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। সারা বিশ্বের আলোচিত এই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা কারণে বিতর্কিত এই প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে কী কী প্রভাব পড়বে তার হিসাব-নিকাশ চলছে এখনও।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭.১১ শতাংশ হওয়ার ঘোষণা আসে ২০১৬ সালে। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিও সরেনি আলোচনা থেকে। অর্থনীতিতে স্বস্তির পরশ যেমন ছিল, তেমনি ছিল দুশ্চিন্তার কারণও।  মোটা দাগে বলতে গেলে বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেকগুলো সূচক স্থিতিশীল ছিল। অর্থনীতির যেসব সূচক সরাসরি সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে, সেসব সূচকের বেশ কয়েকটি স্বস্তিদায়কই ছিল । ২০১৬ সালটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্যও ছিল খুব ভালো বছর। রাজস্ব আদায় হয়েছে নিজস্ব কৌশলমতোই।  ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে স্বাভাবিকভাবে। এর ফলে সারা বছরই রাজস্ব আদায়ের গতি ভালো ছিল।

কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতি-গোষ্ঠীরা সেখানকার সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং দমন-নিপীড়নের মুখে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রেবেশ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লীতে হামলার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সব শেষ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে আগুন তুলেছে মানবিকতার নতুন প্রশ্ন।

২০১৬ সালে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ৫০০ স্কুল-কলেজকে বেসরকারি থেকে সরকারিকরণ। সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও রয়েছে একটি বিশাল অর্জন। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আমাদের পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ। এই উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

এত কিছুর পরও এ দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবন নানা সমস্যার আবর্তে জর্জরিত। সমস্যা যেমন আছে গ্রামে, তেমনি আছে শহরতলি বা নাগরিক জীবনে। সব সমস্যাকে মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায়, এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে কী ভুল ছিল তা শুধরে নিয়ে নতুন পথচলা শুরু হবে ২০১৭ সালে। নতুন বছর নিয়ে আসবে নতুন কিছুর বারতা। এই কামনা এ দেশের সব মানুষের।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/টিপু

jargon talk of salary and wages

বেতন আলোচনায় যে কথাগুলো বলা উচিত নয়

মোখলেছুর রহমান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:30 Dec 2016   08:20:36 AM   Friday   ||   Updated:30 Dec 2016   12:56:27 PM   Friday
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : বর্তমানে চাকরি যেন একটি সোনার হরিণ। চাকরির বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, বেতন নির্ধারণ।

বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত থাকে না। মূলত ইন্টারভিউ টেবিলেই বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। ইন্টারভিউ টেবিলে চাকরিদাতা এবং চাকরি প্রার্থী ছোট্ট একটি আলোচনার মাধ্যমে বেতন নির্ধারণ করে থাকেন।

এক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর চেষ্টা থাকে আলোচনার মাধ্যমে তার বেতনটা কতটা বেশি উচ্চতায় উঠানো যায়। আবার চাকরিদাতার অভিপ্রায় থাকে কত কম বেতনে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকে তারা বেছে নিতে পারেন।

তাই ইন্টারভিউ টেবিলে হওয়া বেতন নিয়ে আলোচনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এটি একটি শিল্প। এ শিল্পে যে যত বেশি পারদর্শী দিনশেষে তারাই জয়ী হয়।

তবে বেতন নিয়ে আলোচনারও কিছু নিয়ম-নীতি আছে, যা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য মেনে চলাটা অত্যাবশ্যকীয়। বেতন নিয়ে আলোচনায় যে ২২টি কথা চাকরি প্রার্থীদের কখনোই বলা উচিত হয়, তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ১০টি পরামর্শ প্রকাশ করা হয়েছিল। আজ শেষ পর্বে থাকছে আরো ১২টি পরামর্শ।

‘আমি মনে করি...’
‘আমি মনে করি...’, ‘হয়তো’, ‘হতে পারে’ কখনই বেতন নিয়ে আলোচনায় এ ধরনের অনিশ্চিত শব্দ ব্যবহার করবেন না। ব্লগিং৪জবস ডটকম এর সম্পাদক এবং এক্সসেপশনাল এইচআর এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসিকা মিলার বলেন, সর্বদা অসংশয়ে কথা বলুন।

‘আমি নূন্যতম বেতন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক’
এটি একটি মারাত্বক ভুল। আপনি তাদের সর্বনিম্ন প্রস্তাব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এটা বলার মানে হতে পারে যে, আপনি সেই নূন্যতম বেতনেই পাবেন।

‘দুঃখিত’
নিজের ওপর আস্থা রাখুন। রায়ান কান নামের একজন ক্যারিয়ার কোচ বলেন, আপনি যদি আপনার মূল্যটা অনুধাবন করতে পারেন এবং আপনি কোম্পানিকে কি দিতে পারবেন তা জানা থাকে, তাহলে সেখানে আরো বেশি বেতনের দাবী করে আপনার ক্ষমাপ্রার্থী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

‘সস্তা/ মন্দ/ ভয়ানক’
বেতনের পরিমান শুনে এই কথাগুলো বলা উচিত নয়, কেননা তা নিয়োগকর্তার কাছে অসম্মানজনক মনে হতে পারে। এতে নিয়োগকর্তা তাদেরকে সম্মান দেখানোর অভাবের কারণে আপনাকে সেখানে কাজ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

‘কিন্তু আমি বেশি মূল্য পাওয়ার যোগ্য’
ইন্টারভিউ টেবিলে বেতন নিয়ে আলোচনায় আপনি অবশ্যই আপনার মূল্যটা নিয়োগকর্তাকে অনুধাবন করাতে চাইবেন। কিন্তু এটি এমনভাবে উল্লেখ করার চেষ্টা করুন যেন তারা আপনাকে অহংকারী মনে না করে। সফল মানুষেরা অহংকারী না হয়েও এই সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সক্ষম।

‘আপনার আমাকে মূল্যবান নাও মনে হতে পারে, কিন্তু...’
এটা বলা মোটেও ঠিক নয়। মিলার বলেন, বেতন নিয়ে আলোচনায় আপনি হয়তো সরাসরি দেখাতে চান যে আপনি যোগ্য ও দলের জন্য একজন মূল্যবান সদস্য হতে পারেন, কিন্তু তা আপনাকে করতে হবে সংক্ষেপে ভদ্রতার সঙ্গে।

‘ন্যায্য শোনাচ্ছে’
এটা ন্যায্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। সফল মানুষেরা তাদের ক্ষেত্র, পেশা এবং কর্মক্ষেত্রের প্রতিযোগিতামূলক বেতনের একটি শক্তিশালী জ্ঞান নিয়ে আলোচনায় ঢোকেন। ‘ন্যায্য শোনাচ্ছে’ এ ধরনের কিছু শব্দ মাঝে মাঝে অবশেষে অন্যায্য হয়ে উঠে যদি আপনি আপনার যুক্তি তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন।

‘চলুন শুরু করা যাক’
আপনি নিশ্চিতভাবেই শুরুতেই একটি খারাপ ধারণা তৈরি করতে চাইবেন না। তাই আলোচনা শুরু করতে তাড়া দিবেন না। একটি ইতিবাচক এবং মনোরম মনোভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসতে চেষ্টা করুন।

‘এই পরিমান বেতন না পেলে, আমার জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে’
আপনি হয়ত সত্যিই একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইন্টারভিউ টেবিলকে এর থেকে উত্তরণের জায়গা হিসেবে বেছে নিবেন না। এতে কিন্তু নিয়োগকর্তার মনে হতেই পারে আপনি তাদের আবেগের তাড়িত করে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছেন।

‘আমি শুধু একটি উচ্চতর বেতন চাই’
সবাই চায় তার বেতনটা অনেক বেশি হোক। তবে কখনও কখনও এই কৌশলটি কাজে নাও লাগতে পারে। তার মানে এই নয় আপনি আপনার আলোচনা থামিয়ে দিবেন। আপনি আপনার বেতনের বাইরেও বর্ধিত ছুটি, শিক্ষাগত সুযোগ বা অতিরিক্ত সুবিধা পেতে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন।

‘বেতন বৃদ্ধি না করলে আমি প্রস্থান করব’
যদি আপনি মনে করে করেন যে, পর্যাপ্ত পরিমান আপনাকে বেতন অফার করা হচ্ছে না, তবে অন্যান্য সুযোগের জন্য চারপাশে খোঁজাটা সম্পূর্ণই যৌক্তিক। কিন্তু বেতন বৃদ্ধি না করলে আমি এখনই প্রস্থান করব, এ ধরনের হুমকিমূলক বিবৃতি দেয়া কখনই উচিত নয়।

‘আমি জানি না’
ইন্টারভিউ টেবিলে বেতন নিয়ে আলোচনায় এ ধরনের কথা উচ্চারণ করলে বিপরীত পাশে বসা লোকজন ছোঁ মেরে এর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। আলোচনার টেবিলে আলাপ করার সময়  শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী হতে ভুলবেন না।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার

পড়ুন :  বেতন আলোচনায় যে কথাগুলো বলা উচিত নয় (পর্ব-১)


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

বেতন আলোচনায় যে কথাগুলো বলা উচিত নয় (পর্ব-১)

মোখলেছুর রহমান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:23 Dec 2016   09:01:23 AM   Friday   ||   Updated:29 Dec 2016   10:25:23 PM   Thursday
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : বর্তমানে চাকরি যেন একটি সোনার হরিণ। চাকরির বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, বেতন নির্ধারণ।

বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত থাকে না। মূলত ইন্টারভিউ টেবিলেই বেশিরভাগ চাকরির বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। ইন্টারভিউ টেবিলে চাকরিদাতা এবং চাকরি প্রার্থী ছোট্ট একটি আলোচনার মাধ্যমে বেতন নির্ধারণ করে থাকেন।

এক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর চেষ্টা থাকে আলোচনার মাধ্যমে তার বেতনটা কতটা বেশি উচ্চতায় উঠানো যায়। আবার চাকরিদাতার অভিপ্রায় থাকে কত কম বেতনে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীকে তারা বেছে নিতে পারেন।

তাই ইন্টারভিউ টেবিলে হওয়া বেতন নিয়ে আলোচনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এটি একটি শিল্প। এ শিল্পে যে যত বেশি পারদর্শী দিনশেষে তারাই জয়ী হয়।

তবে বেতন নিয়ে আলোচনারও কিছু নিয়ম-নীতি আছে, যা একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য মেনে চলাটা অত্যাবশ্যকীয়। বেতন নিয়ে আলোচনায় যে ২২টি কথা চাকরি প্রার্থীদের কখনোই বলা উচিত হয়, তা নিয়েই এ প্রতিবেদন। আজকে প্রথম পর্বে থাকছে ১০টি।

১. ‘আমি রাজি’ (প্রথম অফারেই)
মনে রাখবেন এটি একটি আলোচনা যেখানে মূলত দুই পক্ষ বেতন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবেন। রায়ান কান নামের একজন ক্যারিয়ার কোচ বলেন, ‘বেতনের প্রথম প্রস্তাবেই হ্যাঁ বলে আরো আলোচনার পথটিকে বন্ধ করে দিবেন না, যেখানে সুযোগ রয়েছে আরো আলোচনা করার।

২. ‘আমি এত প্রত্যাশা করছি’
কখনো বেতনের প্রথম সংখ্যাটি যেন আপনার মুখ থেকে বের না হয়। কখনই বলবেন না আমি এত প্রত্যাশা করছি। এটা একটা ভয়ানক কৌশল।

কান বলেন, সবচেয়ে ভালো কৌশল হল নিয়োগকর্তার মুখ থেকেই প্রথম বেতনের সংখ্যা বের হতে দেওয়া। এতে আপনি জানতে পারবেন তারা আপনাকে কত বেতন প্রস্তাব করল এবং এতে আপনিও সেখানে থেকে দরাদরি করে আপনার বেতনটা বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন।

৩. ‘যে বেতনের কথা বলেছেন সেটা কি ফিক্সড?’
কখনই এটা বলবেন না বা এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে নিয়োগকর্তা আঘাত পান এমনকি যদিওবা আপনার কাছে মনে হচ্ছে যে, যে বেতন তারা প্রস্তাব করেছেন তা হাস্যকর। সফল প্রার্থীরা এক্ষেত্রে তা মোকাবেলা করে থাকে।

৪. ‘আমার কাছে আরো অনেক লাভজনক অফার আছে’
এমনকি আপনার কাছে সত্যিই এরকম কোনো অফার থেকে থাকলেও  ইন্টারভিউ টেবিলে বেতন নিয়ে আলোচনায় তা ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এতে নিয়োগকর্তা আপনাকে অফারটি ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ জানাতে পারেন এবং তখন যদি প্রমাণিত হয় যে আপনি শুধু শুধু ধমকি দিয়েছেন তখন মুখ রক্ষা করাই কঠিন হবে।

৫. ‘না’
প্রথমেই ‘না’ বলবেন না। আলোচনায় আপনাকে নমনীয় হতে হবে এবং পাল্টা প্রস্তাব প্রদান করতে হবে যখন দেখবেন যে কোনো প্রস্তাব আপনার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিন্তু কখনই প্রথমে ‘না’ শব্দটি বলবেন না। কান বলেন, না বলার মাধ্যমে মূলত আপনি দ্রুত আপনার হাতে থাকা অফারটি দেয়ার দরজাই বন্ধ করে দিচ্ছেন।

৬. ‘এটাই আমার শেষ প্রস্তাব’
এই বাক্যাংশটি হুমকির মতো শোনায় এবং এটি সাধারণত আলোচনার পথটাই বন্ধ করে দেয়। এইচআর বিশেষজ্ঞ স্টিভ কেইন বলেন, আপনি যদি এরকম কোনো চাহিদার কথা বলেন যা নিয়োগকর্তা দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয় তাহলে আলোচনার পথটাই বন্ধ হয়ে যাবে।

৭. ‘আমি জানি এই কথাটি হয়ত শুনে একটু উচ্চাভিলাষী মনে হতে পারে, কিন্তু...’
আপনার কথাটি যতটাই যুক্তিপূর্ণ হোক না কেন কখনই এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে কোনো অনুরোধ করা ঠিক নয়।

৮. ‘আমি বেতন জিজ্ঞাসা করাটা অপছন্দ করি, কিন্তু...’
এটা ঠিক যে, আরো বেশি অর্থের জন্য জিজ্ঞাসা করাটা সহজ কোনো পদ্ধতি নাও হতে পারে। কিন্তু ‘এটা বলতে আমি অপছন্দ করি’- এটি একটি ফ্ল্যাট আউট মিথ্যা কথা। এছাড়াও এটি আলোচনা বন্ধ করার জন্য সত্যিই একটি ভয়ঙ্কর উপায়।

৯. ‘আমার প্রয়োজন...’
আপনার কখনোই এরকম বলা ঠিক হবে না যে, আমার এত টাকা প্রয়োজন কারণ আমার খরচ বেশি বা ঋণ রয়েছে। টেলর বলেন, ইন্টারভিউ টেবিলে ব্যক্তিগত বিষয় আনবেন না, এটি আপনার মেধা ও কাজের সম্পর্ক।

১০. ‘আমি শুনেছি আপনি অন্য একজকে এত অফার করেছেন এবং আমি কঠোর পরিশ্রমী’
কখনই বেতন নিয়ে আলোচনায় এরকম কোনো গল্প জুড়ে দিবেন না, স্পষ্টভাবে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না। এটি একটি অপেশাদারী আচরণ এবং শুধু অসফল মানুষ তা ব্যবহার করে।

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

planet to planet way to come

বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝে গ্রহাণু এল যেভাবে

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   02:00:53 PM   Saturday   ||   Updated:31 Dec 2016   02:33:30 PM   Saturday
বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝে গ্রহাণু এল যেভাবে
অহ নওরোজ : সূর্য থেকে ৭৭৮.৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি। সূর্য থেকে অবস্থানের দিক থেকে এটি সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ।

বৃহস্পতির আগে থাকা বাকি চারটি গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গলের সূর্য থেকে দূরত্ব যথাক্রমে ৫৭.৯, ১০৮.২, ১৪৯.৬ ও ২২৭.৯ মিলিয়ন কিলোমিটার। এই দূরত্বগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর গ্রহগুলো অবস্থান করছে। এ হিসাবে সূর্য থেকে বৃহস্পতির ৭৭৮.৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব অত্যন্ত বেশি বলে মনে হয়।

মঙ্গল ও বৃহস্পতি দুই গ্রহের মধ্যে বেশি দূরত্বের বিষয়টি সর্বকালের অন্যতম সেরা জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলারের চোখে ধরা পড়েছিল। তাই তিনি ১৫৯৬ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থ দ্য কসমোগ্রাফি মিস্ট্রি-তে লিখেছিলেন, ‘মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝখানে আমি একটি গ্রহ রাখতে চাই। আমি খুঁজে না পেলেও ভবিষ্যতে হয়তো এখানে কিছু আবিষ্কৃত হবে। এই বিশাল জায়গায় অবশ্যই কিছু থাকার কথা।’

পরবর্তীকালে বড় বড় বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী দূরবীন কিংবা টেলিস্কোপ দিয়েও এই শুন্য স্থানে নতুন কোনো গ্রহ আবিষ্কার করতে পারেননি। তবে কেপলারের কথা একেবারেই বৃথা যায়নি। গ্রহের বদলে এই স্থানটিতে সন্ধান মিলেছে প্রায় লাখ খানেক গ্রহাণুর। যেগুলো গ্রহের মতোই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু গ্রহাণু আসলে কি?

‘গ্রহাণু’ শব্দটিকে সম্প্রসারণ করলে দেখা যায়-গ্রহের অণু থেকে গ্রহাণু হয়েছে। মূলত এভাবেই শব্দটির উৎপত্তি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা এককালে পুরো একটি গ্রহ সত্যিই এখানে ছিল। কিন্তু কোনো ধূমকেতুর আঘাতে কিংবা অন্য কোনো কারণে গ্রহটি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল বলেই তার টুকরোগুলো অর্থাৎ গ্রহাণুগুলো আলাদা আলাদা হয়ে গ্রহের মতোই সূর্যকে নিয়মিতভাবে প্রদক্ষিণ করে চলছে।

আমরা জানি, ১৯৯৪ সালের ১৬ জুলাই বৃহস্পতির সঙ্গে ‘শুমেকার লেভি’ নামক একটি ধূমকেতুর সংঘর্ষ হয়, গ্যালিলিয় নভোযান দৃশ্যটি ধারণও করে। তবে ধূমকেতুটি আকারে ছোট হওয়ায় বৃহস্পতির বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়নি। সুতরাং ধূমকেতুর কিংবা অন্যকোনো মহাজাগতিক কিছুর আঘাতে কোনো গ্রহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। যে কারণে গ্রহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গ্রহাণুর উৎপত্তি বিষয়টাকেই অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছেন।

বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের মাঝখানে প্রথমবারের মতো কোনো বস্তুর সন্ধান মেলে ১৮০১ সালের ১ জানুয়ারি। ইতালিতে অবস্থিত সিসিলির পালোরমে মানমন্দিরের অধ্যক্ষ গিসেপ্পি পিয়াৎসি এদিন এমন একটি তারার সন্ধান পান যার চলন ঠিক তারার মতো নয়। এরপর তিনি এই তারার চলন পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। পিয়াৎসির পর্যবেক্ষণ-লব্ধ তথ্য নিয়ে হিসাব কষে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ গাউস ঘোষণা করেন, এটি আসলে কোনো তারা নয়, এটি একটি গ্রহ।

এরপর গ্রিক দেবি ডিমিটারের রোমান নাম অনুসারে পিয়াৎসে এই গ্রহটির নাম দেন ‘সিরিস’। সূর্য থেকে সিরিস-এর দূরত্ব ৪৩ কোটি ৩২ লাখ কিলোমিটার। সূর্যের চারিদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৪.৬ বছর। কিন্তু গ্রহটির ব্যাস ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশ অনেক কম। সুতরাং বিজ্ঞানীরা একে গ্রহের মর্যাদা দিতে নারাজ হলেন। এদিকে সিরিস-এর ওই একই অঞ্চলে ১৮০২ সালের মার্চে আবিষ্কৃত হল আরেকটি ক্ষুদ্রাকৃতির গ্রহ। এর নাম দেওয়া হল ‘পালাস’। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে আবিষ্কৃত হল এরূপ আরো দুইটি গ্রহ- ‘জুনো’ ও ‘ভেস্তা’। এবারও এদের গ্রহ নামটি খারিজ করে দেওয়া হল। বলা হল আসলে এরা গ্রহ নয় বরং গ্রহের অনু বা খণ্ডাংশ। সেখান থেকেই এর নাম হল গ্রহাণু।

অতঃপর পর্যায়ক্রমে আবিষ্কৃত হতে লাগলো আরো গ্রহাণু। যেমন-হেবে, ফ্লোরা, মেতিস, আইডিএ, হাইজিয়া, ইরোস, ভিক্টোরিয়া, ইউজিনিয়া, এগেরিয়া, থেটিস, ফরচুনা, বেল্লোনা, ফিদেস সহ আরো অনেক গ্রহাণু। বর্তমানে এই সংখ্যা দু হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, আমাদের সৌরজগতের কিছু বড় বড় গ্রহের যেমন চাঁদ আছে, তেমনি কিছু গ্রহাণুরও চাঁদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ১৯৯৩ সালে ১৯ মাইল বিস্তৃত ‘আইডিএ’ নামক গ্রহাণুর একটি ছোট উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে যার নাম রাখা হয় ‘ড্যাক্টেইল’। এর বিস্তীর্ণতা প্রায় ১ মাইলের মতো। এরপর ১৯৯৯ সালে ৮ মাইল বিস্তীর্ণ একটি উপগ্রহ আবিষ্কার হয়, এর নাম রাখা হয় ‘পেটিট প্রিন্স’। এই উপগ্রহটি প্রায় ১৩৫ মাইল বিস্তীর্ণ গ্রহাণু ইউজিনিয়াকে-কে প্রদক্ষিণ করে। ২০০০ সালে ৯০ মাইল বিস্তীর্ন গ্রহাণু পুলকোভার’র উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয় যার বিস্তৃতি প্রায় ৯ মাইল। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২ ডজনেরও বেশি গ্রহাণুর উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহাণুদের মধ্যে বৃহত্তম হল সিরিস। এর ব্যাস ৬৮৩ কিলোমিটার। তারপর রয়েছে ভেস্তা, এর ব্যাস ৫৯২ কিলোমিটার। এই গ্রহাণুটি আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে রয়েছে। যে কারণে একমাত্র এই গ্রহাণুটিকেই পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায়।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে ‘সিরিস’-এ বিভিন্ন প্রাণীর যে ধরনের গল্প আমাদের কল্পনার সঙ্গী হয়ে একটি নতুন জগৎ তৈরি করে আসলে সেই ‘সিরিস’-এ জীবন কি, কোনো ছিটেফোঁটা বায়ুমণ্ডলও নেই, যা কোনো জীবন তৈরির ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এবং এত ছোট মহাকাশীয় বস্তুতে বায়ুমণ্ডল সম্ভবও নয়। আসলে গ্রহাণুগুলো আয়তনে এতই ক্ষুদ্র যে, এদের সবাইকে একত্র করলে আমাদের চাঁদের সমান হওয়াটাই কঠিন। তবে ছোট হলে কি হবে গ্রহের মতোই নিয়িমিতভাবেই নিজ অক্ষের চারিদিকে পাক খেতে খেতে সূর্যকে আবর্তন করে বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝে থাকা এই গ্রহাণুগুলো। তবে বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝেই শুধু গ্রহাণুর অস্তিত্ব নাকি সীমাবদ্ধ নয়। নেপচুন-প্লুটোর পরে লাখ লাখ গ্রহাণু দ্বারা সমস্ত সৌরজগৎ পরিবেষ্টিত বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। তবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝে থাকা এই গ্রহাণুগুলো নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে নাসা ‘নিয়ার’ নামক একটি মহাকাশযান প্রেরণ করে। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মহাকাশযানটি ‘ইরোস’ নামক একটি গ্রহাণুতে নামে। এবং এটিই ছিল গ্রহাণুতে কোনো মহাকাশযানের অবতরণ। এর আগে ২০০০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মহাকাশযানটি প্রায় ১ বছর ধরে ইরোসকে প্রদক্ষিণ করে। তবে এরপরে শুধুমাত্র গ্রহাণুর উদ্দেশে আর কোনো মহাকাশযান প্রেরণ করা হয়নি। ভবিষ্যতে হয়তো কখনো গ্রহাণুর উদ্দেশে প্রেরণ করা হবে নতুন কোনো মহাকাশযান আর তখন হয়তো আমরা এদের সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পারবো।

তথ্য সহায়তা:
* দ্য কসমোগ্রাফিকাম মিস্ট্রি: জোহানেস কেপলার
* লস্ট প্রিয়ডিক কমেট: এম ম্যায়ার
* তারার দেশে হাতছানি: আবদুল্লাহ আল মুতী
* সূর্যের বন্দী: শঙ্কর সেনগুপ্ত
* অ্যাস্ট্রয়েডস: নাসা, জেট প্রপালশন ল্যাবরোটারি, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০।

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে: ‘সূর্য থেকে আলো সৃষ্টির রহস্য’।

পড়ুন: * নক্ষত্র যেভাবে সৃষ্টি হয়

* সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে

* ধূমকেতুর আবর্তন ও সৃষ্টিকাহিনি

* সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ ও তার আদ্যোপান্ত

* একেবারেই আলাদা কক্ষপথ যে গ্রহের

 http://www.risingbd.com/%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%B9%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9D%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%81-%E0%A6%8F%E0%A6%B2-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87/220061

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

নক্ষত্র যেভাবে সৃষ্টি হয়

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:29 Nov 2016   07:57:15 AM   Tuesday   ||   Updated:29 Nov 2016   11:57:59 AM   Tuesday
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

অহ নওরোজ : রাতের আকাশে কে না তাকিয়েছে। জ্বলজ্বল করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকবিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকার আনন্দ সবাইকেই আলোড়িত করে। এসব আলোকবিন্দুর মধ্যে কোনোটি মিটমিট করে জ্বলে আবার কোনোটি স্থির হয়ে জ্বলে।

মিটমিট করা এইসব আলোকবিন্দুকে তারা, স্টার কিংবা নক্ষত্র বলা হয়- এরা নিজে নিজে জ্বলে। আর স্থির আলোকবিন্দুকে বলা হয় গ্রহ বা প্ল্যানেট- এরা নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত হয়। তবে গ্রহ থেকে তারার আলোর প্রতি আগ্রহ সবারই একটু বেশি থাকে। কোটি কোটি বছর ধরে তারা কিভাবে একই উজ্জ্বল্য ধরে রেখে জ্বলে আর কিভাবেই তাদের সৃষ্টি এই নিয়ে যুগযুগ ধরে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই।

প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বহু মানুষই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। সময়ে সময়ে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীও এর বিভিন্ন উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে নানা মতবাদও প্রচলিত হতে দেখা গেছে। তবে সবকিছু পেরিয়ে আজকের অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র সৃষ্টির রহস্য নিয়ে একটি মতে উন্নীত হতে পেরেছেন।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা হল- নক্ষত্রের উদ্ভব আসলে অন্ধকারে নিমগ্ন জমাটবাধা ঠাণ্ডা নীহারিকা থেকে। নীহারিকা হচ্ছে, মহাকাশের ব্যাপক ব্যাপক অঞ্চল নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্তৃত বস্তুপুঞ্জ। নক্ষত্রের মতো নীহারিকার মধ্যেও রয়েছে শতকরা ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ হাইড্রোজেন, শতকরা ২০ থেকে ৪৫ ভাগ হিলিয়াম এবং বাকি ৫ ভাগ অন্যান্য মৌলিক পদার্থ।

নীহারিকার হাইড্রোজেন হিলিয়াম প্রভৃতি গ্যাস এবং অন্যান্য গ্যাসীয় পুঞ্জসমূহ একত্রিত থাকা অবস্থায় সর্বক্ষণ অশান্ত বাতাসের মতো আন্দোলিত হতে থাকে। বস্তুত বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত বাষ্পীয় পদার্থের স্বাভাবিক ধর্মই হল আন্দোলিত হওয়া। এ ধরনের আন্দোলন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও হয়ে থাকে। আর এই আন্দোলন চলতে চলতে একসময় গ্যাসীয় বস্তুপুঞ্জে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। আর এই ঘূর্ণি থেকেই সৃষ্টি হয় তারা বা নক্ষত্র।

কিভাবে এই ঘূর্ণি থেকেই নক্ষত্রের জন্ম হয় তা বিশদভাবে বলা যেতে পারে। মূলত যখন বাতাস আন্দোলিত হতে হতে একসময় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে একাধিক ঘূর্ণি সৃষ্টি হয় তখন নীহারিকার প্রতিটি ঘূর্ণিকে কেন্দ্র করে তার চারপাশের বস্তুপুঞ্জ আকৃষ্ট হয়ে জমা হতে থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে তখন মাধ্যাকর্ষণ বল সাহায্য করে। এর ফলে ঘূর্ণিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্যাসীয় এইসব বস্তুপুঞ্জের সমাবেশ ঘটতে থাকে। একাধিক ঘূর্ণি এক হয়ে আসলে প্রথমে ছোট একটি কেন্দ্র গঠিত হয় এবং একটি গোলকের সৃষ্টি হয়।

নীহারিকায় এই ধরনের গোলকের আবির্ভাব বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই দূরবীন দিয়ে দেখতে পেরেছেন। এরপর গোলকের আকৃতিতে আসলে প্রথমে এটি ছোট থাকলেও ক্রমেই অভিকর্ষ বল চাঙ্গা হয়ে উঠলে সেই বলের প্রভাবে মহাবিশ্বে ছিটিয়ে থাকা আরো বেশি বস্তুকণা গোলকটির ভেতরে এসে সামিল হয়। এবং এইসব বস্তুকণার চাপে গোলকটি যতই সঙ্কুচিত হতে থাকে ততই তার ভেতরের চাপ ও তাপ বাড়তে থাকে। এভাবে বিশাল আয়তনের গোলকটি যখন সঙ্কুচিত হতে থাকে তখন তার ভেতরে যে তাপের সৃষ্টি হয় তা সত্যিই অপরিমেয়। প্রথম পর্যায়ে তাই তাপমাত্রা ১.২৫ থেকে ১.৫ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এরুপ বিপুল তাপমাত্রার কারণে গোলকের কেন্দ্রস্থলে পারমাণবিক বিক্রিয়া শুরু হয় এবং হাইড্রোজেন পরমাণু মিলিত হয়ে হিলিয়াম পরমাণু গঠন করে।

inner

হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে হিলিয়াম পরমাণু সৃষ্টির সময় প্রচুর পরিমাণে শক্তি মুক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে এই শক্তি মুক্ত হওয়ার ফলে বস্তুপুঞ্জের ভেতরমুখী চাপ এবং হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে নিঃসৃত বহির্মুখী শক্তির চাপ গোলকটিতে একটি সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করে। এভাবে গোলকটি একটি স্থিতিশীল নক্ষত্রে পরিণত হয় এবং ক্রমাগত তেজ বিকিরণ করতে থাকে। নক্ষত্রের এই তেজ কিংবা আলোকরশ্মি বিকিরণ উৎসারিত হয় মূলত হাইড্রোজেন থেকে।

নক্ষত্র স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছানোর পর হাইড্রোজেন পরমাণু হিলিয়ামে পরিণত হওয়ার সময় নক্ষত্রের এই আলো তৈরি হয়। নক্ষত্র বহুকাল ধরে এরূপ স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। আমাদের সূর্যে এখন এই ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা চলছে।

বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু সূর্য্যিমামা ইতোমধ্যেই তার প্রায় অর্ধেক হাইড্রোজেন জ্বালানি পুড়িয়ে ফেলেছে। এবং আগামী তিনশ কোটি থেকে পাঁচশো কোটি বছরের মধ্যে সূর্যের সব জ্বালানি শেষ হয়ে আসবে। আমাদের সৌরজগতে সূর্যে বস্তুর পরিমান সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন- সমগ্র সৌরজগতে সর্বমোট যে পরিমান বস্তু আছে তার ৯৯.৮৭ শতাংশ রয়েছে সূর্যে, আর মাত্র ০০.৩ শতাংশ রয়েছে সৌরজগতের বাকি সব সৃষ্টিতে। এই জ্বালানি শেষ হয়ে আসলে সূর্য আরো স্ফিত হয়ে বুধ শুক্র পৃথিবী এমনকি মঙ্গলকেও গ্রাস করে ফেলতে পারে। এছাড়া বিশেষ অবস্থায় পৌঁছে একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। তারপর থেকেই সূর্যের সংকোচন অবস্থা চলবে। এবং সংকোচিত হতে হতে সূর্য একসময় শীতল ও আলোকহীন হয়ে পড়বে।

বিশদ গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের ধারণা- নীহারিকা থেকে নক্ষত্র সৃষ্টি হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ একসময় শীতল এবং আলোকহীন হয়ে পড়াই নক্ষত্রের ধর্ম। তাদের ধারণা মহাবিশ্বের সকল বস্তুই রিসাইকেল প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এবং এটি নিয়মিত ঘটে চলেছে।

তথ্য সহায়তা:
* রিলেটিভিটি : দ্য স্পেশাল অ্যান্ড দ্য জেনারেল থিওরি-আলবার্ট আইনস্টাইন
* মহাকাশের ঠিকানা- অমল দাশগুপ্ত
* সৌরজগৎ-সুব্রত বড়ুয়া
* তারার দেশের হাতছানি- আবদুল্লাহ আল-মুতী
* সূর্যের বন্দী- ড. শঙ্কর সেনগুপ্ত

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে : সৌরজগৎ সৃষ্টি যেভাবে
 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:04 Dec 2016   01:03:47 PM   Sunday   ||   Updated:04 Dec 2016   08:04:03 PM   Sunday
সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে
অহ নওরোজ: সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে সূর্যকে নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত ছিল। কেউ বলত সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে আবার কেউ বলত পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারিদিকে। কে কাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এর মূল রহস্য বের হতে বেশ সময় লেগেছে।

এখন সমগ্র পৃথিবীর মানুষ জানে যে, আমরা অর্থাৎ আমাদের বাসস্থান পৃথিবী বা আর্থ সূর্যের চারদিকে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে নিজের চারদিকেও ঘুরছে। সূর্যের চারদিকে ঘুরতে এর সময় লাগে ৩৬৫ দিন আর নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে সময় লাগে মাত্র ২৪ ঘণ্টা।

মোটামুটি কে কাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এটা আবিষ্কার করার আগ পর্যন্ত মানুষের কাছে সৌরজগতের সৃষ্টি সম্পর্কিত ধারণা ছিল প্রাথমিকের থেকেও একদম নবিশি পর্যায়ে। অনেকেই বলত সকল তারকা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘরে। কিন্তু যখন থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান ‘পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারদিকে’ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল, তখন থেকে সৌরজগৎ নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন ধরনের আলোড়ন ধীরে ধীরে পুঞ্জিভুত হতে শুরু করে।

আর এসময় থেকেই সৌরজগৎ সৃষ্টি কিভাবে হল এটা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দাড় করান। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই রহস্য নিয়ে এক মতে উপনীত হলেও সৌরজগতের সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে গেলে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বেশ কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতবাদও জানার প্রয়োজন রয়েছে। এতে করে এই সম্পর্কে খুব সহজেই পরিস্কার ধারণা পাওয়া সম্ভব।

সৌরজগতের জন্ম-রহস্য সম্পর্কে ফরাসি গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী পিয়েরে লাপ্লাস সর্বপ্রথম ১৭৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মাথা ঘামান। সে সময়ে এই সৃষ্টি সম্পর্কিত তার মতবাদটি বেশ প্রচারিত হতে দেখা যায়। যদিও এর আগে ১৭৫৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী কান্ট ও অনেকটা একই ধরনের মতবাদ প্রচার করেন। তবে লাপ্লাসের মতবাদটি প্রচারিত হওয়ার পর দুই মতবাদের মিশ্রণরূপ বিশদভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সমর্থন পায়। যে কারণে সৌরজগতের সৃষ্টি সম্পর্কিত এই তত্ত্বটিকে কান্ট-লাপ্লাস নীহারিকাবাদও বলা হয়।

গত পর্বে আমরা জেনেছিলাম নক্ষত্রের সৃষ্টি  সম্পর্কে। এই তত্ত্বে বিজ্ঞানীদ্বয়ের ধারণা নক্ষত্রের সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় মধ্যে সৌরজগৎ সৃষ্টি। তাদের তত্ত্ব অনুসারে অনুসারে সূর্যের আদি বস্তুপুঞ্জের উত্তপ্ত নীহারিকা থেকেই সৌরজগতের সৃষ্টি।

এই তত্ত্ব অনুসারে- বিশাল হালকা গ্যাসীয় বস্তুপুঞ্জ ঘূর্ণিতে ঘুরতে ঘুরতে একসময় মাঝখানের ঘন বস্তুপিণ্ডটি আদি সূর্যের আকারে রূপ নেয়। এরপর গ্যাসীয় বস্তুপুঞ্জ ক্রমে ঠাণ্ডা হতে শুরু করে এবং সঙ্কুচিত বস্তুপুঞ্জের আকারে ছোট হয়ে আসে। ফলে কৌণিক ভরবেগের নিত্যটা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ঘোরার বেগ বাড়তে থাকে এবং প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকায় নীহারিকাপুঞ্জ মসুরদানার মতো কিছুটা চ্যাপ্টা আকারের হয়ে দাড়ায়, আর ঘোরার বেগ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তার বিষুব অঞ্চলের কেন্দ্রাতিগ শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এই কেন্দ্রাতিগ শক্তি কেন্দ্রাভিগ মহাকর্ষের সমান হয়ে দাঁড়ানোর পর বাইরের একটি খোলস সংকোচনশীল বস্তুপুঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে তারপর আরো সঙ্কচনের ফলে অনুরুপভাবে পর পর বস্তুপুঞ্জের আরো কিছু খোলস পৃথক হয়ে যায়। এই খোলসগুলো পরে ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বাঁধতে শুরু করে আর তাদের আগেকার ঘূর্ণনের ফলেই এরা গোলাকৃতি লাভ করে। এসব গোলাকৃতি সঙ্কুচিত বস্তুপিণ্ড অবশেষে সূর্যের চারদিকে গ্রহ উপগ্রহের রূপ লাভ করে।

INNER_solar

উনিশ শতকের শেষদিক পর্যন্ত লাপ্লাসের এই মতবাদই ছিল সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রধান মতবাদ। কিন্তু ক্রমেই এই মতবাদের দুর্বল দিকগুলো বিজ্ঞানীদের কাছে ধরা পড়তে শুরু করে। যেমন লাপ্লাসের হিসেবে সূর্যের চারিদিকে ঘুরন্ত গ্যাসপুঞ্জের মধ্যে যেকোনো ব্যাসার্ধরেখায় বস্তুকণার আপেক্ষিক স্থানচ্যুতি ধরা হয়নি। গাণিতিক দিক থেকে ভৌত বাস্তবতার বিবেচনায়, এ ত্রুটির কারণেই লাপ্লাস বাইরের দিকের গ্যাসকণা আর ভেতরের দিকের গ্যাসকণার তুলনামূলক গতির বিষয়টি সম্পর্কে ভুল ধারণা করেছিলেন। লাপ্লাসের ধারণা সত্যি হলে সবগুলো গ্রহ উপগ্রহই তাদে কক্ষপথে ঘোরার সময় নিজের অক্ষের ওপর সামনের দিকে ঘুরবে আর উপগ্রহরা তাদের চলার বেগ পাবে প্রধাণত গ্রহের ঘোরার বেগ থেকে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহ নিজের অক্ষের চারিপাশে যে বেগে ঘরে তার উপগ্রহ ফোবস মঙ্গলের চারপাশে ঘরে তার তিনগুণ বেগে। ইউরেনাসের উপগ্রহরা তার চারপাশে ঘরে সামনের বা পেছনের দিকে নয়, কক্ষের সাথে সমকোণে। আবার নেপচুন বৃহস্পতি ও শনির কোনো কোনো উপগ্রহ ঘরে উল্টো দিকে, অর্থাৎ গ্রহ ঘোরার বিপরীত দিকে। তাছাড়া কেন্দ্রাতিগ শক্তির টানে সূর্য থেকে বস্তুপুঞ্জ বের হয়ে যাওয়ার জন্য সূর্যের চারপাশে তাদের ঘোরার বেগ আজকের তুলনায় বহুগুণ বেশি হওয়ার কথা কিন্তু এই গতি তাদের কখনোই ছিল না।

এইসব বিভিন্ন দুর্বল দিক ধরা পড়ায় লাপ্লাস-কান্ট মতবাদটি তার জনপ্রিয়তা হারায়। ব্রিটিশ গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী জেমস জিনস ১৮১৬ সালে লাপ্লাসের তত্ত্বটি খন্ডন করে সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। তার মতে, দূর অতীতে সূর্যের তুলনায় অনেক বড় একটি নক্ষত্র সূর্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার আকর্ষণের সূর্যের বস্তুপুঞ্জের সামান্য একটি অংশ (সমগ্র সৌরজগতে সর্বমোট যে পরিমান বস্তু আছে তার ৯৯.৮৭ শতাংশ রয়েছে সূর্যে, আর মাত্র ০০.৩ শতাংশ রয়েছে সৌরজগতের বাকি সব সৃষ্টিতে, সুতরাং একে সামান্য বলা চলে) খণ্ড খণ্ড আকারে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই বিচ্ছন্ন বাষ্পীয় অংশটি পড়ে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে জমাট বেঁধে গ্রহ উপগ্রহে পরিণত হয়।

কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তত্ত্বটি তার প্রাণ হারায় কারণ সূর্যের দেহ থেকে যদি বস্তুপুঞ্জ ছিটকে গিয়েই থাকে তাহলে তাদের তো সূর্যের কাছেই থাকার কথা, বাস্তবে সূর্যের যা ব্যস তার তুলনায় বৃহস্পতি গ্রহের দূরত্ব প্রায় ৫০০ গুণ আর নেপচুনের ৩০০০ গুণ আর আমাদের ছায়াপথ গালাক্সিতে ১০০ কোটি নক্ষত্রের একটি করে গ্রহমণ্ডল রয়েছে আমাদের সৌরজগতের মতোই সুতরাং এই বিরল ঘটনা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে গ্রহ উপগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব না। যে কারণে জিনসের তত্ত্বটি আর টেকেনি।

এরপর ১৯৪৩-৪৪ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফোন ভাইতস্কার ও সোভিয়েত গণিতবিদ অটোশিট প্রায় একই সময়ে পৃথক পৃথকভাবে একই ধরনের মতবাদ প্রচার করেন। বহু পরীক্ষানিরীক্ষার পর সৌরজগতের সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের মতবাদটি বর্তমানে প্রমাণিত এবং সু-প্রতিষ্ঠিত। তাদের দুজনেরই মতে- সম্ভবত শীতল গ্যাসপুঞ্জ ও ধূলিকণা সমন্বিত এক নীহারিকা থেকেই আদিকালে সৌরজগতের উৎপত্তি হয়েছিল। এদিক থেকে তত্ত্বটি লাপ্লাসের তত্ত্বের সংশোধিত রূপ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এই তত্ত্বটি সৌরজগতকে সম্পূর্ণ যুক্তিতর্ক দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নানা দেশের আরো অনেক বিজ্ঞানী এই মতের সমর্থন করেন এবং নানাভাবে এই মতটির বিকাশ সাধন করেন।

তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন, মার্কিন জ্যোতির্বিদ জিরাড কয়পার, রসায়নবিদ হ্যারল্ড উরে, ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল, প্রখ্যাত সুইডিশ পদার্থবিদ হান্স আলফভিন। বলা চলে খুতিনাটি বিষয়ে কমবেশি মতপার্থক্য থাকলেও বিজ্ঞানীরা এই মতবাদকে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য বলে স্বীকার করেছেন।

এই মত অনুসারে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে শীতল আদি বস্তুকনিকাপুঞ্জ থেকে। নিরন্তর গতিশীল বস্তুকণা এই বিশাল গ্যাসীয় সমাবেশ সৃষ্টি করেছিল ছোট বড় নানা আকারের অসংখ্য ঘূর্ণি বা আবর্ত। সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিটিতে বস্তুকনিকা সংহত ও একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় আদি সূর্যের কেদ্রস্থল। এবং এক কেন্দ্রের চারপাশে বস্তুকণা জড় হয়ে গড়ে তোলা নানা আকারের শীতল আদি গ্রহপিণ্ড। শীতল সূর্যে সংকোচন ও তেজময় বিকিরণ অর্থাৎ হাইড্রোজেন ভেঙ্গে হিলিয়াম তৈরি সময় আলো তৈরি হয়েছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণনের সময় তৈরি হয়েছে প্রচুর তাপ। যার ফলে সূর্যের অন্য গ্রহগুলো উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এবং যে ঘূর্ণিগুলো থেকে গ্রহ সৃষ্টি হয়ে সেগুলোর মূল ঘূর্ণির বাইরেও ক্ষুদ্র ঘূর্ণি থাকায় সেগুলো থেকে উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আর সূর্যের কাছে থাকার ফলে তাপ বেশি পাওয়া এবং সূর্য যখন তাপ বিকিরণ করতে শুরু করে তখন সূর্যের ছাড়া পাওয়া শক্তি ও পদার্থকণা এক বিপুল শক্তিশালী সৌরবায়ুর সৃষ্টি করেছিল যার প্রভাবে গ্রহগুলোর উপরিভাগ থেকে হাইড্রোজেন সহ বিভিন্ন হালকা গ্যাস আরো ঘন হয়ে যায়। এর তাপ ও সৌরবায়ুর ফলেই সূর্যের কাছের গ্রহ বুধ, শুক্র,পৃথিবী ও মঙ্গলের ঘনত্ব বেশী এবং তারা পাথুরে। অন্যদিকে বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস, নেপচুনের ঘনত্ব কম এবং তারা গ্যাসীয়।

এই মতে বলা হয়- প্রাথমিকভাবে নীহারিকার ঘূর্ণি থেকে সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ তৈরি হওয়ার পর সূর্যের আকর্ষণে এরা ক্রমানুসারে সূর্যের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং যে যত কাছে আসে তত উত্তপ্ত হতে থাকে। এই উত্তাপের ফলে গ্রহগুলো আয়নিত হয়ে যায় এবং বৈদ্যুতিক বিকর্ষণের ফলে সূর্য থেকে প্রতিহত হয়ে ভর ও ব্যাসার্ধ অনুসারে প্রত্যেকে একটি নির্দিষ্টই সীমানায় গিয়ে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। এবং নিজের দিকে ঘূর্ণি থেকে নিজের দিকে ঘোরার শক্তির পাশাপাশি সূর্যের দিকে ঘোরা শুরু করায় একটি স্থিতিশীল ঘূর্ণনঅবস্থা প্রাপ্ত হয়। উপগ্রহের ক্ষেত্রে ঠিক এই ঘটনা ঘটে। তারা সূর্য থেকে গ্রহের গ্রহণ করা তাপের কারণে বিকশিত হয়ে নির্দিষ্ট সীমানায় ঘুরতে থাকে। এর ফলে নিয়মিত একটি স্থানকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান একটি জগতের সৃষ্টি হয়। যাকে সৌরজগৎ বলা হয়। কোন ছায়াপথের প্রায় এক লক্ষ তারকার মধ্যে অন্তত এমন একটি তারকা পাওয়া যায় যার এমন একটি করে জগত রয়েছে। আমাদের সূর্যের নাম অনুসারে সূর্যের এই জগতের নাম দেওয়া হয়েছে সৌরজগৎ।

তথ্য সহায়তা:
* রিলেটিভিটি : দ্য স্পেশাল অ্যান্ড দ্য জেনারেল থিওরি-আলবার্ট আইনস্টাইন
* মহাকাশের ঠিকানা- অমল দাশগুপ্ত
* সৌরজগৎ-সুব্রত বড়ুয়া
* তারার দেশের হাতছানি- আবদুল্লাহ আল-মুতী
* সূর্যের বন্দী- ড. শঙ্কর সেনগুপ্ত

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে : ‘ধূমকেতুর আবর্তন এবং সৃষ্টিকাহিনি’।

  রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

ধূমকেতুর আবর্তন ও সৃষ্টিকাহিনি

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:09 Dec 2016   07:59:58 AM   Friday   ||   Updated:11 Dec 2016   01:35:16 PM   Sunday
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

অহ নওরোজ : গ্রহ উপগ্রহ ও গ্রহাণুপুঞ্জ ছাড়াও সৌরজগতে রয়েছে ধূমকেতু ও উল্কা। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ আকাশে ধূমকেতু দেখে আসছে। তখন আকাশে ধূমকেতু দেখাকে অশুভ সংকেত মনে করা হতো। তখন মনে করা হতো সামনে বড় রকমের যুদ্ধ কিংবা মড়ক অপেক্ষা করছে।

কিন্তু যুগে যুগে ধূমকেতু নিয়ে মানুষের একাধিক রকমের জল্পনা কল্পনা ও কুসংস্কার পাল্টেছে। মানুষ এখন ধূমকেতুর আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছে। সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কার করতে পেরেছে ধূমকেতুর সৃষ্টিকাহিনি।

ধূমকেতু হল ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। এটি শুধুমাত্র সৌরজগতে দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি ক্ষুদ্র বরফাবৃত সৌরজাগতিক বস্তু যা সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করার সময় কখনো কখনো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং তখন আমরা তাকে দেখতে পাই। ধূমকেতুর ওপর সূর্যের বিকিরণ ও সৌরবায়ুর প্রভাবের কারণে এমনটি ঘটে।

ধূমকেতু মূলত বরফ, ধূলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে কণিকার একটি দুর্বল মিলনে তৈরি হয়ে থাকে। দেখতেও কিছুটা অদ্ভুত রকমের। এর সামনে রয়েছে গোলাকার মাথা আর পেছনে উজ্জ্বল লেজ। অতি দীর্ঘ একটি ডিম্বাকার পথে এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।

ধূমকেতুর আকার বেশ মজার। একটি ধূমকেতু প্রস্থে মাত্র কয়েকশ মিটার থেকে দশ কিলোমিটার এবং দৈর্ঘ্যে কয়েকশ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

কিছু কিছু ধূমকেতু সূর্যের খুব নিকট দিয়ে বারবার পরিভ্রমণ করার কারণে উদ্বায়ী বরফ ও ধুলা হারিয়ে ছোট গ্রহাণুর মতো বস্তুতে পরিণত হয়। এবং সেখান থেকে কখনো কখনো নীহারিকার সৃষ্টি হয়- যা থেকে আবার কখনো নক্ষত্রের সৃষ্টিও হতে পারে।

ধূমকেতুর আবর্তনের বেশ কিছু ধরন মানুষ ইতোমধ্যেই আবিষ্কার করতে পেরেছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে অধিকাংশ ধূমকেতুই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে গ্রহের মতো বৃত্তাকার পথে নয় বরং উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার পথে। আর এতে করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ধূমকেতুর অনেক সময় লেগে যায়। এ সময় একশো বছর থেকে কয়েক লাখ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যে কারণে মানুষ সম্প্রদায়ের স্বল্পায়ু থাকায় নিয়মমাফিকভাবে এইসব ধূমকেতুর আবর্তন মানুষের হিসাবের মধ্যেই রাখা কষ্টকর হয়ে যায়।

কারণ মাত্র এক হাজার বছরের মধ্যে মানুষের একটি সভ্যতার সমাপ্তি ঘটে যেতে পারে। যে কারণে ধূমকেতু আবর্তনের এই হিসাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করে নিয়ে যাওয়াটাও অনেক চ্যালেঞ্জের এবং এখনো পর্যন্ত একমাত্র হ্যালির ধূমকেতু ছাড়া সেটা বিশদভাবে সম্ভব হয়নি। কারণ হ্যালির ধূমকেতুটি অপেক্ষাকৃত অনেক কম সময়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৭৬ বছর।

মাত্র ৭৬ বছর পর পর এটি নিয়মিতভাবে পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়। ১৬৮২ সালে বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি একটি উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখতে পান। তারপর তিনি সেটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলেন ধূমকেতুটি প্রতি ৭৬ বছর পর পর পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়। তার এই ভবিষ্যতবাণীর পর নথিপত্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্ন শ্রুতিগল্প এবং শিলালিপি সহ বিভিন্ন কিছুর ওপর বিষদ গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন মানুষ হ্যালির ধূমকেতু দেখে প্রথমবারের মতো সেই তথ্য সংরক্ষণ করে রেখেছিল ২৪০ খ্রিস্টপূর্বে।

এরপর ব্যাবিলনে এই একই রকম দেখতে ধূমকেতুটি দেখা গিয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৩ সালে। তারপর খ্রিস্টপূর্ব ৮৭ সালে পুনরায় ধূমকেতুটি দেখে ব্যাবিলন এবং চীনারা। গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে ধূমকেতুর নাম হ্যালির ধূমকেতু রাখা হয়েছে সেটিই নিয়মিত ভাবে প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পর পর পৃথিবীর আকাশে দেখা যায় এভাবে দেখা যায়। পৃথিবীতে আবির্ভাবের অনেক পরে মানুষ হিসাব করতে শিখেছে বলে এই ধূমকেতুর হিসাব মানুষ অনেক পরে থেকে রেখেছে। ১৬৮২ সালে ধূমকেতুটি দেখার পর হ্যালি বলেন আগামী ৭৬ বছর পর ধূমকেতুটি আবার পৃথিবীর আকাশে ফিরে আসবে। এরপর যখন ১৭৮২ সালে ধূমকেতুটি আবার যথাসময়ে দেখা যায় তখন সাড়া পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। ৭৬ বছর পর পর ১৮৩৫ ও ১৯১০ সালে ধূমকেতুটি দেখা যায়। এরপর সর্বশেষ ধূমকেতুটি দেখা যায় ১৯৮৬ সালে, বাংলাদেশ থেকেও কয়েক ঘণ্টার জন্য দেখা গিয়েছিল ধূমকেতুটি। সেবারের হ্যালির ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ করেছিল পাঁচটি অনুসন্ধানী মহাকাশযান। এগুলোর মধ্যে ছিল দুটি জাপানী, দুটি রুশ এবং একটি ইউরোপীয়।

রুশ মহাশূন্যযান ভেগা-১ ধূমকেতুটির সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছিল ৬ মার্চ ১৯৮৬ সালে। এরপর ভেগা-২ এর সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছায় ৯ মার্চ। ইউরোপীয় মহাশূন্যযান গিমটো ধূমকেতুটির মাথা থেকে প্রায় ৬০৫ কিলোমিটার দূরে পৌঁছেছিল ১৩-১৪ মার্চ তারিখে। মানুষের হিসাবে এ পর্যন্ত ২৯ বার নিয়মিতভাবে পর্যায়ক্রমে দেখা গিয়েছে এই ধূমকেতুটি। সে অনুসারে আগামী ২০৬১ সালে আবারো দেখা যাবে হালির ধূমকেতুটি। যারা সে পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাদের কতই না সৌভাগ্য!

যা হোক, ১৯৮৫ সালে মহাকাশযানের মাধ্যমে হ্যালির ধূমকেতুর সবকিছু বিশ্লেষণের পর পাওয়া যায় ধূমকেতুর আসলে নিজস্ব কোনো আলো নেই। এর ভেতর আছে জমাটবাঁধা বরফ, গ্যাস, ধূলিকণা, উল্কাপিণ্ড। ধূমকেতুর এই সমস্ত পদার্থ সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় বলেই ধূমকেতুর গ্যাসপুঞ্জ ও ধূলিকণাকে উজ্জ্বল দেখায়। এজন্য সূর্যের আলো এর ওপর সরাসরি না পড়া পর্যন্ত এটা দেখা যায়না।

হ্যালির ধূমকেতুর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। উপবৃত্তাকার পথের ধূমকেতু নিয়মিত হয়ে থাকে। তবে উপবৃত্তাকার ছাড়াও অধিবৃত্তাকার পথের ধূমকেতু আকাশে দেখা গিয়েছে। এগুলো অনিয়মিত হয়ে থাকে।

শৌখিন জাপানী জ্যোতির্বিদ ইউজি ইয়াকুতাকা ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে একুইলা ও সিগনাসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন। এটির নাম দেওয়া হয় সি/১৯৯৫ ওয়াই-১। ১৯৯৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে মাত্র ২৮ কোটি কিলোমিটার দূরে আরো একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তিনি। মাত্র ৬ সপ্তাহ এটি খালি চোখে দেখা যায়। ইয়াকুতাকার নামানুসারে ধূমকেতুটির নাম রাখা হয় ধূমকেতু হায়াকুতাকা।

এই শতকের শেষ উজ্জ্বল ধূমকেতু র নাম হেল-বপ। ১৯৯৫ সালের ২৩ জুলাই আমেরিকার নিউ ম্যাক্সিকো শহরের এলেন হেল এবং অ্যারিজোনার স্টানফিল্ড-এর টমাস বপ এটি আবিষ্কার করেন। দুজনের নামকরণে এটির নামকরণ করা হয় হেল-বপ।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- ধূমকেতু নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এতো কৌতূহল এবং বিশ্লেষণ কেন। এতে কি লাভ। আসলে বিজ্ঞানীরা প্রথম থেকেই মনে করতেন ধূমকেতুতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। এবং অন্যসব গ্রহ উপগ্রহ থেকে একেবারে স্বতন্ত্র রকমের কক্ষপথ থাকায় ধূমকেতু নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

প্রাচীনকালে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধারণা করতেন এমন ভিন্ন ধরনের কক্ষপথে আবর্তিত হওয়ার কারণে পৃথিবীর সঙ্গে যদি কোনো বড় ধূমকেতুর সংঘর্ষ হয় তাহলে আমাদের কি হবে! এদিকে গ্রহের সঙ্গে ধূমকেতু সংঘর্ষের ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটে যাওয়ার কারণে ধূমকেতু আরো বেশি পর্যবেক্ষণের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষের এই ঘটনাটা ঘটেছিল বৃহস্পতি গ্রহের সঙ্গে।

১৯৯৩ সালে ২৩ মার্চ ইউজিন শুমেকার, তার স্ত্রী ক্যারোলিন শুমেকার এবং ডেভিড লেভি নামক এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী পালামোর মানমন্দিরে বসে আবিষ্কার করেন একটি নতুন ধূমকেতু। এটার নাম দেওয়া হয় ‘শুমেকার-লেভি-৯’। এটি ছিল সূর্যের কক্ষপথ থেকে বিচ্যুতি ঘটা একটি ধূমকেতু। বৃহস্পতির কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় বৃহস্পতির আকর্ষণে সে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এপ্রিল মাসে পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেল এটি বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। শুরু হল অবিরাম নিবির পর্যবেক্ষণ। এই কাজটি চলছিল মার্সডন প্রপালশন ল্যাবরোটরি থেকে। অনেক গাণিতিক হিসাবের পর মার্সডন থেকে ঘোষণা করা হয় ‘শুমেকার লেভি-৯’ ধূমকেতুটি ২১ খণ্ড হয়ে আছড়ে পড়বে বৃহস্পতির ওপর।

অবশেষে ১৯৯৪ সালের ১৬ জুলাই ঘটলো সেই ঘটনা। সত্যিই ২১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ধূমকেতুটি আছড়ে পড়লো বৃহস্পতির বুকে। এবং এই পতিত হওয়ার বেগ ছিল ৬০ কিলোমিটার/সেকেন্ড। শেষ খণ্ডটির পতনদৃশ্য ধারণ করে গ্যালিলিয় নভোযান।

ভবিষ্যতে পৃথিবীর ওপর যদি এমন কোনো অমানিশা নেমে আসে তাহলে আমরা কি পারবো সেটা থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে? প্রশ্ন রয়েই যায়- আর ক্রমেই বেড়ে চলে বিজ্ঞানীদের আকাশ ভাবনা...।

তথ্যসূত্র:
* হ্যালি কমেট অন ব্যাবিলন ট্যাবলেট : ইয়াও এইচ হাংগার
* লস্ট প্রিয়ডিক কমেট : এম ম্যায়ার
* মহাবিশ্বের উৎস সন্ধানে : শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
* সৌরজগৎ : সুব্রত বড়ুয়া
* তারার দেশের হাতছানি : আবদুল্লাহ আল-মুতী
* সূর্যের বন্দী : ড. শঙ্কর সেনগুপ্ত

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে: ‘সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ও তার আদ্যোপান্ত’।

পড়ুন :  * নক্ষত্র যেভাবে সৃষ্টি হয়

* সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ ও তার আদ্যোপান্ত

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:23 Dec 2016   09:10:39 AM   Friday   ||   Updated:31 Dec 2016   01:44:33 PM   Saturday
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ ও তার আদ্যোপান্ত
অহ নওরোজ : আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহের সংখ্যা একটি। চাঁদ নামেই এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে যেমন প্রতিনিয়ত ঘূর্ণনশীল তেমনি সৌরজগতের আরো অনেক গ্রহ রয়েছে যাদেরকে কেন্দ্র করে একটি চাঁদ নয় একাধিক চাঁদ ঘূর্ণয়মান।

যেমন মঙ্গলের দুইটি উপগ্রহ বা চাঁদ রয়েছে। এছাড়া শনির ৬২টি, ইউরেনাসের ২৭টি, নেপচুনের ১৪টি, প্লুটের ৫টি এবং বৃহস্পতির ওপর সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী এ গ্রহের মোট ৬৭টি চাঁদের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সৌরজগতের এইসব চন্দ্র সমূহের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় কে? পৃথিবীর চাঁদ নাকি অন্য গ্রহের কোনো চাঁদ? এই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।

বেশ কিছুদিন পূর্বেও ধারণা করা হতো, শনির উপগ্রহ টাইটানই সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ। কারণ টাইটানই একমাত্র উপগ্রহ যার ঘন আবহাওয়ামণ্ডল রয়েছে এবং সেটা আয়তনে বিশাল। বিজ্ঞানীদের মতে, টাইটান এতই শীতল যে, এখানের গ্যাস কণিকার চঞ্চলতাও কম। ফলে কিছু গ্যাস কণিকা আটকে পড়েই এই ঘন আবহাওয়া মণ্ডলের সৃষ্টি করেছে। এর বায়ুমণ্ডলের ৯৯ শতাংশই হচ্ছে নাইট্রজেনে ভরপুর। আয়তনে টাইটান বুধ গ্রহের থেকে বেশ কিছুটা বড়।

কিন্তু গ্রহের ব্যাসার্ধ মাপার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর জানা গেল টাইটান নয়, বৃহস্পতির উপগ্রহ গ্যানিমিড-ই হল সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ। ব্যাসার্ধে টাইটান গ্যানিমিডের কিছুটা ছোট। এই উপগ্রহটি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন জ্যোতির্বিদ্যার জনক হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। তবে তিনি শুধু গ্যানিমিড-ই নয়, ১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে সর্বপ্রথম তার দূরবীনের সাহায্যে একসঙ্গে আবিষ্কার করেছিলেন বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ। তিনি পরের রাতে উপগ্রহ চারটির ওপর পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন উপগ্রহ চারটি বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান।

এই চারটি উপগ্রহই বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। বাকি তিনটি হল- আইও, ইউরোপা এবং ক্যালিস্টো। তবে গ্যালিলিও আবিষ্কার করলেও এই উপগ্রহটির নামকরণ করেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ সাইমন মেরিয়াস। গ্রিক পুরাণের দেবতা জিউসের প্রেমিকের নামে গ্যানেমিড নামকরণ করা হয়।

গ্যানিমিড হল বৃহস্পতির তৃতীয় উপগ্রহ। সৌরজগতের অন্য উপগ্রহের তুলনায় গ্যানিমিড একটি বৈশিষ্টের কারণে সবচেয়ে আলাদা। কারণ গ্যানিমিডই হল সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যেটিতে গ্রহের মতো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিদ্যমান। মূলত এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকার কারণে গ্রহকে কেন্দ্র করে উপগ্রহ ঘূর্ণয়মান এবং এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণেই সমগ্র সৌরজগৎ একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমে কোটি কোটি বছর ধরে একইভাবে ঘূর্ণয়মান।

গ্যানিমিডের ব্যাস ৫২৬৮ কিলোমিটার। এই ব্যাস হিসেব করলে দেখা যায় এই উপগ্রহটি বুধ গ্রহের থেকে প্রায় ৮% বড় এবং সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানের থেকে ২% বড়। আয়তনে এই উপগ্রহটি প্লুটো গ্রহ থেকেও বড়। মহাকাশযান পায়োনিয়ার-১০ এর সবচেয়ে কাছে গিয়ে (প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার) যে তথ্য প্রেরণ করে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই উপগ্রহটির পৃষ্ঠ সম্পূর্ণরূপে পাথুরে পাহাড়ে ভরপুর। এই পাহাড়ে সালফারের পরিমান বেশি। এসব পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে জমাট পানির অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। ১৯৭৯ সালে মহাকাশযান ভয়েজারের পাঠানো ছবিতে এই দৃশ্য সর্বপ্রথম দেখা যায়। তবে এর ভূ-অভ্যন্তরে যে পরিমান পানি রয়েছে তার পরিমান পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল সমুদ্রের মিলিত পানির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

শুধু পানিই নয় গ্যানিমেডের ভূ-অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমানে গলিত তপ্ত লোহাও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই লোহাই গ্যানিমিডের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মূল রহস্য। উপগ্রহটিতে অক্সিজেনের হালকা বায়ুমণ্ডলও বিদ্যমান।

গ্যানিমিডের কক্ষপথ বৃহস্পতি থেকে প্রায় ১০৭০৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর কক্ষপথ সামান্য উৎকেন্দ্রিক। এটি প্রতি সাত দিন তিন ঘণ্টায় বৃহস্পতিকে একবার ঘুরে আসে। এদিকে এই সময়ের মধ্যে আইও চারবার এবং ইউরোপা দুইবার বৃহস্পতিকে ঘুরে আসে।

moon

সবমিলিয়ে রহস্যমণ্ডিত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় এই চাঁদ। আগামীতে বৃহস্পতির নতুন রহস্য উন্মোচন এবং গ্যানিমিডের নতুন সব তথ্যের খোঁজ পেতে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০২২ সালে বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে ‘জুপিটার আইসি মুন এক্সপ্লোরার’ শিরোনামের একটি মহাকাশযাত্রার ঘোষণা ইতোমধ্যেই দিয়েছে। সে সময় গ্যানিমিড সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য আবিষ্কার হবে কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়।

তথ্যসূত্র:
* গ্যালিলি গ্যালিলিও- এডওয়ার্ড কার্লোস, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা।
* রিসার্স অন গ্যানিমিড- নাসা
* সৌরজগৎ-সুব্রত বড়ুয়া
* মহাবিশ্বের উৎস সন্ধানে- শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
* এ কোয়ান্টাম অব কসমলোজি- লি স্মোলিন

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে : ‘একেবারেই আলাদা কক্ষপথ যে গ্রহের’

পড়ুন: * নক্ষত্র যেভাবে সৃষ্টি হয়

* সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে

* ধূমকেতুর আবর্তন ও সৃষ্টিকাহিনি


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

একেবারেই আলাদা কক্ষপথ যে গ্রহের

অহ নওরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:27 Dec 2016   02:34:19 PM   Tuesday   ||   Updated:27 Dec 2016   03:12:47 PM   Tuesday
একেবারেই আলাদা কক্ষপথ যে গ্রহের
অহ নওরোজ : ঘুরছে সৌরজগতের সবকিছু। গ্রহরা যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে তেমনি উপগ্রহরাও ঘোরে গ্রহকে কেন্দ্র করে।

নিজের অক্ষের চারপাশে মঙ্গল যে বেগে ঘোরে, উপগ্রহ ফোবস মঙ্গলের চারপাশে ঘোরে তার থেকে তিনগুণ গতিবেগে। ইউরেনাসের উপগ্রহরা তার (ইউরেনাসের) চারপাশে ঘোরে সামনের বা পেছনের দিকে নয়, ইউরেনাসের কক্ষের সঙ্গে সমকোণে। আবার নেপচুন, বৃহস্পতি ও শনির কোনো কোনো উপগ্রহ ঘোরে গ্রহের নিজ অক্ষের ঘূর্ণনের ঠিক উল্টো দিকে।

ঘোরে স্বয়ং সূর্যও, নিজ অক্ষের ওপর পাক খেতে খেতে সমস্ত সৌরমণ্ডল নিয়ে মহাশূন্যের ভেতর দিয়ে সেকেন্ডে ১৯.২ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে সে। শুধু তাই নয়, নক্ষত্র সৃষ্টির জন্যও নীহারিকার ভেতর ঘূর্ণনের প্রয়োজন প্রধানতম বিষয়। যে কারণে মহাজাগতিক বস্তুর ঘূর্ণন ও তার কক্ষপথ ওই বস্তুর ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়গুলোর একটি। 

সৌরজগতের সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে একটি নিয়মিত ধরনের কক্ষপথে। এই কক্ষপথগুলো মোটামুটি বৃত্তাকার ধরনের হয়। সূর্য থেকে গ্রহের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে এসব কক্ষপথ বড় কিংবা ছোট হয়ে থাকে।

তবে সকল গ্রহের কক্ষপথ বিবেচনা করলে সৌরজগতের সবচেয়ে বিস্ময়কর কক্ষপথের গ্রহ হল প্লুটো। কারণ সৌরজগতের অন্যসকল গ্রহের মতো বৃত্তাকার পথে এটি সূর্যকে পরিভ্রমণ করে না। প্লুটের কক্ষপথ অত্যন্ত হেলানো এবং অনেক বেশি উপবৃত্তাকার। যে কারণে সৌরজগতের সবচেয়ে দূরতম এই গ্রহটি নিজ কক্ষপথের ওপর দিয়ে  সূর্যকে পরিভ্রমণ কালে মাঝে মাঝে নেপচুনের কক্ষপথ পার হয়ে নেপচুন এবং ইউরেনাসের কক্ষপথের মধ্যে চলে আসে। তখন সূর্য থেকে নেপচুনের তুলনায় প্লুটোর দূরত্ব কম হয়ে যায়।

এই ভিন্ন ধরনের কক্ষপথ হওয়ায় আবিষ্কারের প্রথম থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে গ্রহটিকে নিয়ে এক প্রকার বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানী হয়েল এবং আরো অনেকে জ্যোতির্বিদ ধারণা করতেন, প্লুটো আসলে আদিতে নেপচুনের একটি উপগ্রহ ছিল। পরে কোনো কারণে নেপচুনের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে স্বাধীনমতো সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে এবং একটি গ্রহে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু ১৯৭৮ সালের ২২ জুন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জ্যামস ক্রিস্টি প্রথমবারের মতো প্লুটোর উপগ্রহ ‘শ্যারন’কে আবিষ্কার করার পরে এটিকে বিজ্ঞানীরা গ্রহ হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। প্লুটো আবিষ্কারের প্রায় অর্ধশত বছর পর এই ঘটনা ঘটে।

লোয়েল মান মন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ ১৯৩০ সালে একটি মহাকাশীয় বস্তুপিন্ড হিসেবে এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করেন। আবিষ্কৃত এই মহাকাশীয় বস্তুপিন্ডটিকে রোমক মৃত্যু ও প্রেতলোকের দেবতার নামে গ্রহ হিসেবে নামকরণ করা হয় প্লুটো। পুরাণ মতে, প্লুটো হচ্ছে নিম্নতর জগতের দেবতা। সে স্যাটার্ন বা শনির পুত্র, জুপিটার বা বৃহস্পতি ও নেপচুনের ভাই এবং প্রসপারপাইনের স্বামী।

আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্লুটো সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত হতো। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন গ্রহের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করার পর প্লুটো তার গ্রহত্ব হারায়। নতুন সংজ্ঞার আওতায় বামন গ্রহ হিসেবে অভিহিত করে প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়।

pluto_top
প্লুটোর কক্ষপথ

প্লুটো নিজ কক্ষপথে প্রতি সেকেন্ডে ৪.৬৭ কিলোমিটার বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে প্লুটোর সময় লাগে ২৪৮ বছর বা ৯০,৫৬০ দিন। নিজের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৬ দিন ৭ ঘণ্টা ১২ মিনিট। সূর্য থেকে প্লুটোর গড় দূরত্ব প্রায় ৫৯১ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস প্রায় ৫৯১০ কিলোমিটার। আয়তনের হিসাবে পৃথিবীর চাঁদ লুনার তুলনায় এটি বেশ ছোট।

সূর্য থেকে প্লুটোয় আলো পৌঁছাতে সময় লাগে ৫.৫ ঘণ্টা। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, গ্রহটি সম্পূর্ণ বরফ এবং পাথরে পাহাড়ে ভরপুর। প্লুটোর তাপমাত্রা খুবই কম। এর ওপরিভাগের তাপমাত্রা অধিকাংশ সময় প্রায় -২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। তবে মাঝে মাঝে নেপচুন থেকে সূর্যের কাছে চলে যাওয়ার কারণে এর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। প্লুটোতে নাইট্রোজেন, কার্বন মনো- অক্সাইড এবং মিথেনের খুবই হালকা বায়ুমণ্ডল বিদ্যমান।

তবে ১৯৮৯ সালে ভয়েজার-২ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বিজ্ঞানীদের দাবী, এর বায়ুমণ্ডলে ট্রাইটনের মতো অন্য গ্যাসের তুলনায় কার্বন মনো-অক্সাইড পরিমাণই সবচেয়ে বেশি।

প্লুটোর চাঁদের সংখ্যা পাঁচটি। আয়তন অনুসারে এগুলো হল- চ্যারন, স্টায়েক্স, নিক্স, কারবেরাস এবং হাইড্রা। চ্যারন আয়তনে প্রায় প্লুটের অর্ধেক হলেও অন্য উপগ্রহগুলো খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির।

২০০৫ সালের ১৫ মে হাবল টেলিস্কপের সাহায্যে ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিয়নের ‘নিউ হরিজন মিশন’ এর মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় নিক্স এবং হাইড্রা। ২০১১ সালের ২৮ এবং ২০১২ সালের ২৬ মে আবিষ্কৃত হয় কারবেরাস এবং স্টায়েক্স। সবমিলিয়ে ভিন্নধর্মী এক জগৎ প্লুটোর।

এদিকে ভিন্নধর্মী কক্ষপথ হওয়ার কারণে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ নীতির ওপরে ভিত্তি করে ভবিষ্যতে নেপচুনের সঙ্গে প্লুটোর কোনো সংঘর্ষ হবে কিনা সেটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যে কারণে এই গ্রহকে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ‘নিউ হরিজন স্পেসক্র্যাফট’ নামে একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত যানটি প্রায় ৬.২৫ জিবি তথ্য প্রেরণ করেছে যাতে মহাকাশের নতুন নতুন কিছু তথ্য বেরিয়ে আসছে। আগামীতে বিজ্ঞানীরা এই গ্রহ সম্পর্কে আর কোনো নতুন তথ্য কিংবা এর রহস্যময়ী কক্ষপথ সম্পর্কে কিছু জানতে পারবেন কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়।

তথ্যসূত্র:
* প্লুটো ফ্যাক্ট শিট– ডেভিড আর উইলিয়ামস, জুলাই ২৪ ২০১৫, নাসা।
* দ্য প্লুটো সিস্টেম: ইনিশিয়াল রেজাল্টস ইটস এক্সপ্লরেশান বাই নিউ হরিজন (পৃষ্ঠা ২৪৯-৩৫২)
* প্লুটো ক্লোজ আপ- মারসিয়া ডান, এপি নিউজ, জুলাই ১৪ ২০১৫
* এ কোয়ান্টাম অব কসমোলজি- লি স্মোলিন
* এক্সপ্লোরিং আওয়ার ইউনিভার্স অ্যান্ড আদারস- মারটিন রিস

মহাকাশ নিয়ে রাইজিংবিডির বিশেষ আয়োজনে আগামী পর্বে থাকছে : ‘বৃহস্পতি ও মঙ্গলের মাঝে গ্রহাণু এল যেভাবে’

পড়ুন: * নক্ষত্র যেভাবে সৃষ্টি হয়

* সৌরজগতের সৃষ্টি যেভাবে

* ধূমকেতুর আবর্তন ও সৃষ্টিকাহিনি

* সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ ও তার আদ্যোপান্ত



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

dotbangla domain started .....

ডটবাংলা বাংলাদেশের বিজয়’

সাইফুল : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Dec 2016   01:24:14 PM   Saturday   ||   Updated:31 Dec 2016   03:09:14 PM   Saturday
‘ডটবাংলা বাংলাদেশের বিজয়’
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডটবাংলা ডোমেইনকে বাংলাদেশের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘ডটবাংলা বাংলাদেশের বিজয়। দেশের সব মানুষের বিজয়। মুক্তিযুদ্ধে, ভাষা আন্দোলনে শহীদদের বিজয়।’

শনিবার দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডটবাংলা ডোমেইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডটবাংলা ডোমেইন গড়ে তুলতে যারা পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ডটবাংলা ডোমেইনের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।’

এর আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২১ ডিসেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে চিঠি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

গত অক্টোবরে ইন্টারনেট করপোরেশন অব অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারসের (আইসিএএনএন) বোর্ড সভায় ডটবাংলা ডোমেইন বাংলাদেশকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ডোমেইন পেতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এবং সিয়েরা লিওন সরকারও আবেদন করেছিল।

ডটবাংলা চালুর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাইবার পরিসরে বাংলা ভাষার ব্যবহার হবে। মানুষ বাংলাদেশকে এখন আরো ভালো করে চিনবে, জানবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে। এখন ভার্চ্যুয়াল জগতেও বাংলা ভাষার আধিপত্য বাড়বে।

ডটবাংলা ডোমেইনের আনুষ্ঠানিকতা শুরুটা হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডটবাংলার জন্য আইসিএএনএনে অনলাইনে আবেদন করেন। বাংলাদেশের আবেদনের পর সংস্থাটি বাংলা ভাষাকে মূল্যায়ন করে। ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনালাইজড ডোমেইন নেইমে (আইডিএন) লেখার ভাষা হিসেবে বাংলার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায় বাংলাদেশ। এরপর ইন্টারনেট অ্যাসাইনড নাম্বারস অথরিটির (আইএএনএ) অনুমোদনও মেলে।

বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডটবাংলা ডোমেইন পেতে গ্রাহককে যেতে হবে বিটিসিএলের ওয়েবসাইটে (www.btcl.com.bd) বা এর কার্যালয়ে। ওয়েবসাইটে সহজেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করে ডটবাংলা পাওয়া যাবে। এতে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ও শর্ত দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া কল সেন্টার নম্বর ১৬৪০২-এ কল করে সাহায্য নেওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডটবাংলায় ডোমেইন পাওয়া যাবে ১ হাজার টাকায়। এ টাকা বছরপ্রতি ৫০০ টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে এককালীন পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ডোমেইন নিতে হলে প্রথমেই দুই বছরের ফি দিতে হবে। বিটিসিএলের ১৪৫তম বোর্ড সভায় ডটবাংলা ডোমেইনের এ মূল্য নির্ধারণ অনুমোদন করা হয়েছে। এতে বিশেষ শব্দের ডোমেইনের ক্ষেত্রে ফি ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ ডোমেইনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, কোম্পানি ও সংস্থাকে। মেয়াদ শেষে ডোমেইনের নবায়ন ফি দিতে হবে বছরপ্রতি ৫০০ টাকা। মেয়াদ শেষে নবায়নের ক্ষেত্রে এক মাস ও তিন মাস সময়ের বিলম্বে ৫০০ ও ১ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। আর তিন মাসের মধ্যে নবায়ন না করলে ডোমেইন হারাতে হবে। কেউ ডোমেইন বিক্রি করলে তাতে মালিকানা পরিবর্তনের ফি রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ডোমেইন কেনার সময় যদি কেউ একসঙ্গে পাঁচ বছর ও ১০ বছরের ফি পরিশোধ করেন, সে ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/সাইফুল/এএন