বিবাহবিচ্ছেদ এড়ানোর ১০ উপায়
শামিমা নাসরীন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:01 Feb 2016 01:41:27 PM Monday || Updated:01 Feb 2016 01:48:34 PM Monday

মডেল: আফরি এবং সনি, ছবি: অপূর্ব খন্দকার
কেউ যদি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করে তাহলে তাকে ভাবতে হবে সন্তান জন্মের পর জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। আনন্দ ও সুখের সঙ্গে সঙ্গে কি কি দায়িত্ব পালন করতে হবে সেসব বিষয়ে ভাবতে হবে। একইভাবে যদি সঙ্গীকে ছেড়ে যাওয়ার বা তালাক দেওয়ার চিন্তা করেন তাহলেও ভাবতে হবে বেশ কয়েকটি বিষয়।
মোটকথা দাম্পত্য জীবনকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে আপনি সুখী ও সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কীভাবে দাম্পত্য জীবনকে দীর্ঘ ও বিচ্ছেদ এড়িয়ে চলা যায় তার কিছু উপায় জানা যাক।
নিজেকে ফিটফাট রাখা: সব সময় নিজেকে ফিটফাট রাখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার সঙ্গী যে ধরনের কাপড় পরা পছন্দ করেন সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে নিজের আরামের বিষয়কেও মাথায় রাখতে হবে। পোশাক নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনার পোশাকের কারণে যেন সঙ্গীর মন খারাপ না হয়। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
সঙ্গীর প্রশংসা করা: কখনো সঙ্গীকে অপমানজনক কথা বলা যাবেনা। সেটা গোপনে হোক বা কারো সামনেই হোক এ ধরনের আচরণ বা মনোভাব দূর করতে হবে। ছোট বড় যেকোনো কাজেই গঠনমূলক মন্তব্য করা প্রয়োজন যাতে সঙ্গী কাজে উৎসাহ পায়। সঙ্গীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও কাজে উৎসাহী করে তোলে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে হবে।
নিয়মিত সময় দেওয়া: আপনি যত ব্যস্তই থাকুন না কেনো সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশার জন্য একান্ত সময় বের করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট হলেও সঙ্গীকে একান্তে সময় দেওয়া উচিত। ব্যস্ততার কারণে সারাদিন সময় দিতে না পারলে অন্তত রাতের খাবার সময় আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে পারেন। সব সময় একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। আবার সঙ্গীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনি কীভাবে ভাবেন সেগুলো তাকে জানাতে পারেন। এতে অপনার প্রতি তার শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে।
পছন্দমতো সময় কাটানো: দুজন দুজনকে সময় দেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন নিজেদের পছন্দ মতো আলাদা সময় কাটানোও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় দুজনের পছন্দ এক রকম হবে- এমনটা নাও হতে পারে। তাই একে অন্যের পছন্দকে মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা করতে হবে। যেমন একজনের গান শুনতে ইচ্ছে হলে তাকে গান শুনতে বা খেলাধুলা করতে ইচ্ছে হলে সে সুযোগ দিতে হবে। নিজের পছন্দ কখনোই আপনার সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার সম্পর্কে ফাটল ধরবে। কারণ প্রত্যেকের নিজস্ব পছন্দ ও শখ থাকে। প্রকৃতপক্ষে যদি দুজনের পছন্দ ও অপছন্দ আলাদা হয় তাহলে আগ্রহ বেশি হয়।
সঙ্গীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হওয়া: সফল ও সুখী হওয়ার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হল বন্ধুত্ব। দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে কাটবে তখনই যখন আপনি আপনার সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করবেন, একে অপরকে ভালোভাবে জানবেন, বুঝবেন। সঙ্গীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আপনার সঙ্গী তার সব গোপন বিষয়গুলো সহজেই আপনার কাছে প্রকাশ করবে। এক অপরের সঙ্গ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে এবং ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশ করতে হবে।
সঙ্গীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালোবাসা: আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনার কী ধরনের ব্যবহার আশা করছে তা বুঝতে হবে। কোন ধরনের কথা শুনতে পছন্দ করে সেসব বুঝে আচরণ করতে হবে। তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ সেভাবেই করতে হবে যেভাবে সঙ্গী খুশি হয়। অাপনার পছন্দ কিন্তু তার পছন্দ নয়, এমন উপহার দেওয়ার দরকার নাই। সঙ্গী যা পছন্দ করে সেটাই তাকে দিতে হবে। আবিষ্কার করুন সঙ্গী কোন জিনিসের প্রতি আগ্রহী। অথবা কোন ধরনের কথা বা কাজ বেশি পছ্ন্দ করে। কখনো তার পছন্দ বা অপছন্দকে তাচ্ছিল্য করবেন না।
সঙ্গীর কাছে বিশ্বস্ত হওয়া: সব সময় মনে রাখতে হবে বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী একটি প্রতিশ্রুতি। যদি আপনি দাম্পত্য জীবনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চান তাহলে এই কথাটা মনে রাখতে হবে। বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য হল দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে বড় শর্ত।
ঘরে একসঙ্গে কাজ করা: কখনোই ঘরের কাজে একজনকে চাপ দেওয়া উচিত না। কোনো কাজকেই একজনের জন্য নির্দিষ্ট করে না দিয়ে দুজনে মিলে করলে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকে। যদি এমনও হয় আপনার স্বামী বা স্ত্রী চাকরি করে না। তাই বলেই ঘরের সব কাজ সে একাই করবে বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়। সব সময় আপনার সঙ্গীকে রান্না ও ঘরের কাজে সহযোগিতা করবেন। এতে দুজনের সম্পর্ক আরো গভীর হবে। পাশাপাশি সন্তানদের দেখা ও তাদের সময় দেওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক: বিয়ে বিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ হল শারীরিক সম্পর্ক ও অর্থ। সুতরাং এ দুটি ক্ষেত্রে যত্নবান ও সতর্ক থাকা উচিত। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় সুখী পরিবারের জন্য বড় বিষয়। সংসারে অভাব সম্পর্কে ফাটল ধরায়। পাশাপাশি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সঙ্গীকে সন্তুষ্ট করা দাম্পত্য সুখের অন্যতম চাবিকাঠি। যেসব দম্পতি শারীরিক সম্পর্কে সুখী নয় তাদের বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং দাম্পত্য জীবনেও তারা অসুখী থাকে।
ভালোবাসি বলা: কোনো কারণে হঠাৎ কখনো আপনার মনে হতে পারে এখন আপনি সঙ্গীর মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতি দেখতে পাচ্ছেন না। একইসঙ্গে এটা সৃষ্টি করা দরকার। এমন মুহূর্তে সেই তিনটি মধুর শব্দের সহযোগিতা নেন। ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ মাত্র তিনটি শব্দ কিন্তু তিনটি শব্দের ক্ষমতা অনেক বেশি। তাকে বারবার বলুন এবং এমন কিছু ইঙ্গিত দেন যাতে সঙ্গী মানসিকভাবে চাঙ্গা ভাব অনুভব করে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শামিমা/ফিরোজ
No comments:
Post a Comment