Sunday, 28 February 2016

Top 10 Earth quack in History


ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রার শীর্ষ দশ ভূমিকম্প

শামীমা নাসরিন রিপা : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:25 Feb 2016   12:04:55 AM   Thursday   ||   Updated:25 Feb 2016   10:10:30 AM   Thursday
ইতিহাসের সর্বোচ্চ মাত্রার শীর্ষ দশ ভূমিকম্প
শামীমা নাসরিন রিপা : ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে, তখন ভূ-কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই হল ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৩ এর কম হলে আমরা সাধারণত টের পাই না। আবার ৭ এর বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে ৭-এরও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের নজির রয়েছে। চলুন জানার চেষ্টা করি ‘মাত্রার’ দিক দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের শীর্ষ দশ ভূমিকম্প সম্পর্কে।

১) পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পটি হয় ১৯৬০ সালের ২২ মে, চিলিতে। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার  এই ভূমিকম্পে  চার হাজার ৪৮৫ জন মানুষ মারা যায়; আহত হয় আরো অনেকে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়। এর প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে চিলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয়, এই সুনামির ৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জাপান আর ফিলিপাইনের উপকূলীয় অঞ্চল। মারা যায় প্রায় ১৭০ জন।

২) ১৯৬৪ সালের ২৮ মার্চ। আলাস্কার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে ৯ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প ‘প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড’। এর ফলে আনকোরেজ এলাকায় এবং প্রান্তবর্তী দ্বীপের বর্ধিত অংশে প্রচুর ভূমিধস হয়। এতে সৃষ্ট সুনামির ৬৭ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসে মারা যায় প্রায় ১২৮ জন মানুষ। ক্ষতি হয় লাখ লাখ টাকার সম্পদ। মাছ ধরার এবং ব্যবসার প্রায় ৬০ শতাংশ উপকরণ ও যন্ত্রাংশ হারায়।

৩) মাত্রার দিক দিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভূমিকম্পটি ঘটে ২০০৪  সালের  ২৬ মার্চ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ১। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় আঘাত হেনেছিল এটি। এই ভূমিকম্পে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট আর মায়ানমারের টেকটনিক প্লেটের মধ্যকার সংঘর্ষে সৃষ্ট সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এশিয়া আর পূর্ব আফ্রিকার প্রায় ১৪টি দেশ। ইন্দোনেশিয়ার দুই লাখ ২৭ হাজার ৮৯৮ জন মানুষের মৃত্যু ও  নিখোঁজ হয়। পাশাপাশি এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ হয় ঘরছাড়া।

৪) ১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর কামচাটকায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্র ছিল আগ্নেগিরির অগ্নুৎপাতের উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন রাশিয়ান উপদ্বীপের কাছে। এতে হতাহতের খবর শোনা না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।

৫) ১৮৬৮ সালের ১৩ আগস্ট পেরুতে ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে আঘাত হানে ১৬ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস। এর কম্পন বলিভিয়ার লাপাজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিনে উৎপন্ন হওয়া এই ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামির প্রকোপ লক্ষ করা যায় হাওয়াই দ্বীপেও। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যায় এতে।

৬) ১৭০০ সালের ২৬ জানুয়ারি। ঘটনাস্থল আমেরিকার উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল। এখানে আঘাত হানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প। ভ্যানকোভার দ্বীপের কাছাকাছি বসবাসরত আদিবাসী মানুষদের কাছ থেকে জানা যায় যে, এই ভূমিকম্পে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কীভাবে ধ্বংস হয়ে যায় পুরো পেঞ্চানা বে উপজাতি। এই ভূমিকম্পের প্রভাবে পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি জাপানেও ভয়াবহ সুনামি আঘাত হেনেছিল।

৭) চিলির বায়ো বায়ো এলাকায় ৮ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল ২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে। এর প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ৫২১ জন মারা যায়। আহত হয় ১২ হাজারের মতো। আর ঘরছাড়া হয় ওই অঞ্চলের ৮ লাখ বাসিন্দা।

৮) ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ইকুয়েডরের উপকূলীয় এলাকায় ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর ফলে সৃষ্ট সুনামিতে মধ্যআমেরিকা থেকে সানফ্রান্সিসকো পর্যন্ত পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। এতে আনুমানিক ৫০০ থেকে ১৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রথম কম্পনের পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হাওয়াইয়ের সব নদীর স্রোত রহিত হয়ে পরে। ১২ ঘণ্টা পর সে স্রোত ভয়ানক বন্যায় রূপ নেয়।

৯) ১৭৫৫ সালের ১ নভেম্বর লিসবনে আঘাত হানে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং এর থেকে সৃষ্ট সুনামি ও অগ্নিকা-ে লিসবনের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। উত্তর আফ্রিকা, ফ্রান্স ও ইতালির উত্তরাংশেও এই কম্পন অনুভূত হয়।

১০) ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট তিব্বতের রিমাকে কেন্দ্র করে উৎপন্ন হয়েছিল ৮ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল তিব্বতে হলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভারতের আসাম। সেখানকার ৭০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সুবানসিরি নদীর বাঁধ ভেঙে ৭ মিটার উঁচু ঢেউয়ে প্লাবিত হয়েছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম। শুধু তাই নয়, এই ভূমিকম্পের ফলে ইংল্যান্ড ও নরওয়ের লেকগুলোতেও পানির দোলন লক্ষ করা গিয়েছিল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রিপা/রহমান


No comments:

Post a Comment