Sunday, 21 February 2016

Black Gold - Holly Seed

‘কালো সোনা’ চাষে রেকর্ড

তানজিমুল হক : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:20 Feb 2016   08:27:03 PM   Saturday   
পেঁয়াজ বীজ খেত পরিচর্চায় ব্যস্ত কৃষক

পেঁয়াজ বীজ খেত পরিচর্চায় ব্যস্ত কৃষক

তানজিমুল হক, রাজশাহী : গ্রামের নাম দমদমা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের ছবির মতো সুন্দর এ গ্রাম। গ্রামটি ঘেঁষে ফসলি মাঠ। আর মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু সাদা ফুলের হাতছানি।  থোকায় থোকায় ফুটে থাকা পেঁয়াজের সাদা এ ফুলের ভেতরই যেন লুকিয়ে আছে কালো বর্ণের সোনা!

স্থানীয় চাষিরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজ বীজের যে চড়া দাম, তাতে পেঁয়াজ বীজ চাষ যেন সোনা চাষ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিবছর এখানকার চাষিরা পেঁয়াজ বীজ চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ।

চলতি মৌসুমেও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। গোদাগাড়ীতে এতো বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ অতীতে আর কখনই হয়নি। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৮৭৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। যেখানে গত বছর চাষ হয়েছিল শুধু ৮৭৫ একর জমিতে। এর আগের বছর চাষ হয়েছিল আরো কম।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, পুরনো চাষিদের লাভ দেখে প্রতিবছরই বহু কৃষক পেঁয়াজ বীজ চাষে ঝুঁকছেন। ফলে এখানে পেঁয়াজ বীজের চাষ প্রতিবছরই রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিষয়টি এমন- জমির দিক বিবেচনায় কৃষকরা প্রতিবছর তাদের নিজের গড়া রেকর্ডই ভাঙছেন। আর অত্যন্ত লাভজনক এ চাষে প্রতিবছরই লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।’

দমদমা মাঠে ১৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন কৃষক মাহবুব হোসেন। তিনি বলছিলেন, লাভজনক হওয়ায় গত কবছর ধরেই তিনি পেঁয়াজ বীজের চাষ করে আসছেন। এতে তিনি দারুণভাবে লাভবান হচ্ছেন। তার কাছে পেঁয়াজ বীজ চাষ যেন বীজের চাষ নয়, এ যেন ‘কালো সোনা’ চাষ!

উপজেলা সদরের মেডিক্যাল মোড় এলাকায় ৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছেন মামুন নামে স্থানীয় এক যুবক। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় বীজের উৎপাদন হয় ৭০ থেকে ৯০ কেজি। বাজারে এক মণ বীজের দাম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষে কমপক্ষে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়।

মহিষালবাড়ি সাগরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নানও পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছেন ৮ বিঘা জমিতে। তিনি জানান, গোদাগাড়ীতে যেসব বীজের চাষ হয়েছে তা স্থানীয়ভাবে ‘তাহেরপুরী’ জাত হিসেবেই পরিচিত। ঠিকমতো পরিচর্যা করলে এ বীজের অঙ্কুরোদম ৯০-৯৬ ভাগ। এ কারণে বাজারে ভারতীয় বীজের চেয়ে এ বীজের চাহিদা অনেক বেশি। উৎপাদন হলে বীজ কোম্পানিগুলো এখানে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে এই বীজ কেনার জন্য।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীজ চাষ কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন বীজ কোম্পানিগুলো গোদাগাড়ীর বীজ চাষিদের ‘দাদনে’ টাকা দিচ্ছে। এই টাকা দিয়ে চাষিরা বীজ ক্ষেতের সঠিক পরিচর্যা করছেন। তবে উৎপাদন শেষে সে সময়ের বাজারদর অনুযায়ী পেঁয়াজের বীজ দিয়েই সেসব কোম্পানির ঋণ পরিশোধ করতে হবে চাষিদের। এতে দাম কিছুটা কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বর্তমানে ‘দাদনের’ টাকা বিনিয়োগ করে খেতের সঠিক পরিচর্যা করতে পেরে খুশি এখানকার চাষিরা।

পেঁয়াজ বীজ চাষের সার্বিক দিক নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তফিকুর রহমান বলেন, লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় প্রতিবছরই পেঁয়াজ বীজ চাষ বাড়ছে। সঠিক পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগও চাষিদের সর্বাত্মক সহায়তা করে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূেেল থাকায় বীজের উৎপাদনও খুব ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/তানজিমুল হক/রিশিত

No comments:

Post a Comment