লুকায়িত শত শত ছায়াপথ আবিষ্কার
গোবিন্দ তরফদার : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:14 Feb 2016 04:24:48 PM Sunday || Updated:14 Feb 2016 04:56:03 PM Sunday

কিছুদিন আগেও আমরা জানতাম যে আমাদের একটাই ছায়াপথ আছে। এর বাইরে কি আছে নাকি আদৌ কিছু আছে কিনা এসব নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছিল বিশ্বের সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাঝে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিরলস পরিশ্রম করে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ছায়াপথের ভর এবং মিল্কি ওয়ের স্টার ডাস্টের সাহায্যে একটা নতুন সংযোগ পথ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এটা আবিষ্কার করার ফলে মিল্কি ওয়ে দ্বারা লুকানো আরও শত শত ছায়াপথের খোঁজ পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৮৮৩টি নতুন ছায়াপথ আবিষ্কৃত হয়েছে। যেগুলো প্রতিনিয়ত অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করছেন সিএসআরও পারকেস রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে। যদিও এই লুকায়িত ছায়াপথগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাতে কি ভাবতেই তো ভালোলাগে আমরা এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে একা নই, আমাদেরও প্রতিবেশী আছে।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে আন্তর্জাতিক রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী গবেষণা কেন্দ্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানী লিস্টার এস্টেভেলে স্মিথ বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই, মিল্কি ওয়ে অত্যন্ত সুন্দর একটি বিষয়, আর আমাদের ছায়াপথ নিয়ে পড়াশুনা করাটাও অনেক মজার একটি কাজ। কিন্তু এই মিল্কি ওয়ে আরও অনেক ছায়াপথ দৃশ্যমান হতে বাঁধা দিচ্ছে।’
নতুন যে ছায়াপথগুলো আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো যে জায়াগায় অবস্থান করছে তাকে ‘জোন অব অ্যাভয়ডেন্স’ বলা হয়। কারণটা খুবই সাধারণ আমরা সেই জায়গাগুলো গ্রহ আর নক্ষত্র দ্বারা সৃষ্ট মিল্কি ওয়ের জন্য দেখতে পারিনা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন শত শত বছর ধরে, যে কিভাবে সেই লুকায়িত অদৃশ্যমান ছায়াপথের অস্তিত্ব প্রমান করা যায়। পারকেস রেডিও টেলিস্কোপ যন্ত্র এই পরিশ্রম এর অবসান ঘটিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয় এর গবেষক রেনই ক্রান কর্টেঅয়েগ বলেন, ‘আমরা অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছি, কিন্তু শুধুমাত্র রেডিও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা তারকারাজির পুরুস্তরের পুরোভূমি দেখতে সফল হয়েছি। একটা ছায়াপথে গড়ে প্রায় ১০০ কোটি নক্ষত্র থাকে, তাই মিল্কি ওয়ের পিছনে লুকায়িত আরও কত নতুন ছায়াপথ এর অস্তিত্ব আছে তা আমাদের অজানা।’
জোন অব অ্যাভয়ডেন্স- এ যে বিপুল পরিমান মহাজাগতিক ভরের সমাহার আছে, যা বিজ্ঞানীদের সেই জায়গাটা নিয়ে গবেষণা করতে অনেক সহায়তা করেছে। এই জায়গাটাকে অনেকে ‘দ্য গ্রেট অ্যাট্রাক্টর’ হিসেবেও বলে থাকেন। কারণ এটা একটা রহস্যময়ী জায়গা যা বিজ্ঞানীদের আরও শত শত মিল্কি ওয়ে খুঁজতে আগ্রহ জুগিয়ে যাচ্ছে।
এই যে নতুন একটা পথ আবিষ্কার হয়েছে এটা মিলিয়ন বিলিয়ন সূর্যের মহাকর্ষীয় বলের কারণে হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। ঠিক ১৯৭০ সালের দিকে এরকম একটা ঘটনা তখনকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছিল এবং এই যে নতুন তথ্য আবিষ্কার হল তা আশা করা যায় একটা নির্ভরযোগ্য সমাধান দিতে সহায়তা করবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।
এস্টেভেলে স্মিথ বলেন, ‘আমরা আসলে বুঝতে পারছিনা মিল্কি ওয়েতে এই মহাকর্ষীয় ত্বরণ এর কারণ কি, আর কোথা থেকে এই মহাকর্ষীয় ত্বরণের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এটা জানতে পেরেছি যে এখানে অনেক বড় বড় ছায়াপথের সমাহার আছে যাকে আমরা ক্লাস্টার এবং সুপারক্লাস্টার বলতে পারি। আর আমাদের সমগ্র মিল্কি ওয়ে এটাকে কেন্দ্র করে ২ মিলিয়ন কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিবেগে ঘুরছে।’
সমগ্র লুকায়িত ছায়াপথকে ঘিরে গবেষকরা বেশ কিছু সংখ্যক স্ট্রাকচার খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো তাদের অনেক সহায়তা করবে দ্য গ্রেট অ্যাট্রাক্টর এর পিছনে লুকায়িত যে শক্তি কাজ করে তার রহস্য উদ্ঘাটনে। গবেষকদের এই আবিষ্কার সমূহ নথিবদ্ধ করা হয়েছে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে। যার মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে তিনটি ছায়াপথ কেন্দ্রীকরণ পর্যায়ক্রমে এনডব্লিউ ওয়ান, এনডব্লিউ টু, এনডব্লিউ থ্রি, নতুন দুইটি ছায়াপথগুচ্ছ যথাক্রমে সি ডব্লিউ ওয়ান এবং সি ডব্লিউ টু এর বর্ননা।
এবিসি-কে এস্টেভেলে স্মিথ, স্টুয়ার্ট গ্যারিকে বলেন, ‘মিল্কি ওয়ের পিছনে আমরা যা দেখতে পাই তা অনেকটাই আমাদের মহাবিশ্বের মতই। কিন্তু এই অঞ্চলের ছায়াপথের ঘনত্ব অন্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় একটা মহাকর্ষীয় টান এর সৃষ্টি করে এবং এই মহাকর্ষীয় টান আমাদের অঞ্চলের পাশাপাশি নিকটবর্তী সকল ছায়াপথের ওপর প্রভাব ফেলে।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ
No comments:
Post a Comment