Saturday, 20 February 2016

Discover new cell in brain

মস্তিষ্কের বিশেষ স্নায়ুকোষ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

গোবিন্দ হালদার : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:20 Feb 2016   09:40:59 AM   Saturday   ||   Updated:20 Feb 2016   01:29:53 PM   Saturday
মস্তিষ্কের বিশেষ স্নায়ুকোষ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোবিন্দ হালদার : আমরা সামাজিক জীব। সেই গুহা যুগ থেকে আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে থাকা শুরু করেছিলাম নিজেদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার লক্ষ্যে। সেই তখন থেকে আমরা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরতে শিখি। আমরা আমাদের মাঝে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলি নিজের অজান্তেই।

ভাবছেন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পাতায় এ পরিবেশ পরিচিতি সমাজের সেই পুরনো কথাগুলো কেন লিখছি। একটু পরেই বুঝতে পারবেন।

কিছু মার্কিন বিজ্ঞানী স্মরণকালে প্রথমবারের মত এক বিস্ময়কর বিষয় আবিষ্কার করেছেন। তারা আমাদের মস্তিস্কের এমন একটি অংশ খুঁজে পেয়েছেন যেটা কিনা আমাদের একা থাকার সময়ে যেসকল অনুভুতি আসে সেগুলো প্রকাশে সহায়তা করে।

অবশ্য এই পরিক্ষা চালানো হয়েছিল ইঁদুরের ওপর। মস্তিষ্কের পিছন দিকে যে অংশে এই স্নায়ুকোষ পাওয়া গেছে তাকে ডর্সাল রেফ নিউক্লিয়াস (ডিআরএন) বলা হয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই কোষগুলো আমাদের একা না থাকার জন্যে উদ্বুদ্ধ করে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) স্নায়ুবিজ্ঞানী কে টয়ে বলেন, ‘আমাদের জানা মতে এই প্রথম কেউ একজন নিঃসঙ্গতা নির্দেশক কোষের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এতে করে আমাদের এই বিষয় নিয়ে বিশদভাবে পড়াশোনা করার লক্ষ্যে একটা নতুন যাত্রা শুরু করার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করবে।’

এই আবিষ্কারটা আসলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যখন আমরা এটা জানতে পারবো যে, আমাদের মস্তিক কিরুপ আচরণ করে আমাদের পারস্পারিক মেলবন্ধনের মুহূর্তে তখন এটা আমাদের জন্যে আরও বেশি সহজ হবে এটা জানতে, নিঃসঙ্গতা এবং একাকীত্ব কীভাবে আমাদের সামাজিক আচরণগুলোকে প্রভাবিত করে।’

গবেষক জিলিয়ান ম্যাথিউজ বলেন, ‘পারস্পারিক যোগাযোগ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্যে তা আমরা মনোবিজ্ঞানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আর এটা তারাই বেশি করে অনুভব করেন যারা কিনা একা থাকেন।’

গবেষকরা প্রথম ড্রাগ টেস্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় পশুপাখিদের মধ্যে নিঃসঙ্গতার অনুভুতিকে জাগানোর ক্ষেত্রে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল ইঁদুরের ওপরে। যখন ইঁদুরগুলো একা ছিল তখন একটা সুদৃঢ় সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল ডিআরএন অঞ্চলের নিউরনগুলোর মধ্যে। কিন্তু যখন ইঁদুরগুলোকে যখন একসঙ্গে রাখা হয়েছিল তখন এই ডিআরএন নিউরনগুলো নিস্ক্রিয় ছিল। কিছুক্ষণ একসঙ্গে থাকার পর এই নিউরনগুলো পুণরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।

ডিআরএন নিউরনে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। এই আলোর বিচ্ছুরণের পরিমান অনেকটা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশিত হয় নিঃসঙ্গ এবং একত্রিত অবস্থায় থাকা ইঁদুরগুলোর ডিআরএন নিউরনে।

টয়ের মতে, ‘নিঃসঙ্গতা এবং সমাজবদ্ধতার অনুভুতি প্রকাশে প্রস্তাবিত এই সকল নিউরনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে একা থাকার পরে যখন সে সমাজে একসঙ্গে থাকা শুরু করে তখন তার মাঝে এক অনাবিল আনন্দঘন অনুভুতির সঞ্চার হয়, সামাজিকভাবে পারস্পারিক মেলবন্ধনের একটা জোয়ার তার মাঝে কাজ করে। ইঁদুরের ওপর যে অভিযোজিত এবং বিবর্তনের সংরক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রয়োগ করা হয়েছে, এতে করে আমরা মনে করি যে, নিউরনগুলো আমাদের সামাজিকভাবে একত্রিত হয়ে থাকার ব্যাপারে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে।’

টয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকটি প্রাণীর সামাজিক অভিজ্ঞতা এক নাও হতে পারে। যদি আপনি প্রভাবশালী ইঁদুর হন তাহলে হয়ত আপনার সামাজিক পরিবেশকে অনেক ভালো লাগতে পারে। আর যদি আপনি নিম্ন স্তরের ইঁদুর হন এবং আপনাকে রোজ রোজ কোনো না কোনো কারণে মারধর করা হচ্ছে তাহলে হয়ত আপনার কাছে এই সমাজ ব্যবস্থাকে ভালো নাও লাগতে পারে। আপনি সমাজে থেকেও নিজেকে একা ভাবতে থাকবেন।’

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস এর একজন নিউরোলজিস্ট ও মনোবিজ্ঞানী, যিনি কিনা এই গবেষণা সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, আল্কিনো সিলভার মতে, ‘একাকীত্বের ওপর যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে এতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের একটি ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে এবং এগুলো আমাদের সামাজিক ইন্দ্রিয়গুলোর পরিসীমা বুঝতে অনেক সহায়তা করবে, এমনকি সামাজিক উদ্বেগ এবং অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারসহ আরও অনেক জটিল সব বিষয় সমূহের রহস্য উন্মোচিত হবে।’

অবশ্যই, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিস্কে ডিআরএন নিউরোনের একই রকম প্রভাব চিহ্নিত করতে না পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি না, যে তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে তা ইঁদুর প্রজাতির বাইরেও প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এটা ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য একটি সম্ভাবনাময় গবেষণা ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।

সিলভার মতে, ‘এই ধারণাটা আসলে কিছুটা কাব্যিক এবং আকর্ষণীয় যে, আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান আমাদের মানবাত্মার একদম গভীরে প্রবেশ করার লক্ষ্যে একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। এই গবেষণায় আমরা আরও একটি মজার বিষয় আবিষ্কার করতে পেরেছি আমাদের মানুষের মধ্যে যেসকল অনুভুতি, নিঃসঙ্গতা কাজ করে সেগুলো কিছুটা চেনা আকৃতিতে আমাদের থেকে দূরবর্তী স্তন্যপায়ী প্রাণী ইঁদুরের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ

No comments:

Post a Comment