Sunday, 21 February 2016

Toursim Heaven

যেন স্বর্গের ছোঁয়া

জুয়েল রানা : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:20 Feb 2016   12:21:52 AM   Saturday   ||   Updated:21 Feb 2016   01:53:58 PM   Sunday
যেন স্বর্গের ছোঁয়া
জুয়েল রানা : পৃথিবীতে এমন কিছু শহর ও নগর আছে, যেখানে গেলে স্বর্গের ছোঁয়া পাওয়া যায় যেন!

কিন্তু ঢাকা শহরে বসে বিশ্বের ঝাঁ-চকচকে শহরগুলোর খোঁজ খবর করাটা যেন খানিকটা ‘আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নেওয়া’র মতো। ধূলি-ধোঁয়া আর নর্দমার উপচে পড়া পানি, যানজটের মধ্যে পড়ে আমাদের নাগরিক প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখন চলুন না বাস্তবে না হোক ভার্চুয়ালি দেখে আসি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাস আর পানীয় জলে সমৃদ্ধ শহর।

ফ্রেইবুর্গ, জার্মানি
ফ্রেইবুর্গ হচ্ছে ফুল, পাখি, গাছপালা আর পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক অপূর্ব শহর। এর পানি ও বায়ূ খুবই নির্মল ও স্বাস্থ্যকর। এর পরিবেশ রক্ষায় শহর পরিচালনা পরিষদ এবং সরকারের রয়েছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।


হনুলুলু, হাওয়াই
হনুলুলু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের রাজধানী। এটি খুবই পরিচ্ছন্ন নগরী। এর দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আর চারিদিকে সবুজের মাখামাখি এই শহরকে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের অবসর যাপনকেন্দ্রে পরিণত করেছে। শহর কর্তৃপক্ষ শতকরা ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি আর ৯০ শতাংশ নির্মল বাতাসের গ্যারান্টি দিয়ে থাকে।


ক্যালগারি, কানাডা
ছোটবেলায় একটা কৌতুক শুনতাম- ক্লাসে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করছেন, কানাডা কোথায়? এক ছাত্র উত্তর দিল- স্যার লাস্ট বেঞ্চে! (কানা ছেলেটি অর্থে কানাডা)। এমন প্রতীকী অর্থে যদি বলি তাহলে কানাডা আসলে ক্যালগারিতে। এটি কানাডার অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর এবং তেল ও গ্যাস খনির কেন্দ্রবিন্দু।

শহর কর্তৃপক্ষ এখানে একটি পানি শোধনাগার বসিয়েছে, যা প্রতিদিন ১ ট্রিলিয়ন লিটার পানি বিশুদ্ধ করতে পারে। এ শহরের অন্যতম আকর্ষণ হলো- এর প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। যেন কল্পনায় আঁকা শহর।
 

ইফরান, মরক্কো
মরক্কোর মধ্যাঞ্চল তামাজিঘত অঞ্চলে অবস্থিত ইফরান পৃথিবীর অন্যতম ঝকঝকে তকতকে শহর। এর পানি ও বাতাস শতভাগ বিশুদ্ধ! এটি একটি স্কি সেন্টারও বটে। শহরটির উন্নত জীবনধারা ও শুভ্র প্রকৃতি সারা বিশ্বের পর্যটকদের এখানে টেনে আনে। মনে হয়, স্বর্গীয় দূতরা এখানে বসবাস করেন।
 

কোবে, জাপান
জাপান তো এরইমধ্যে তার উন্নত ও আধুনিক জীবনমানের জন্য পৃথিবীজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে। জাপান সত্যিকার অর্থে কতটা উন্নত তার প্রমাণ দেয় এই কোবে শহর। এটি তার অধিবাসীদের শতভাগ বিশুদ্ধ পানি, বাতাস ও উন্নতমানের নাগরিক সুবিধা দিয়ে আসছে। ওসাকার পার্শ্ববর্তী এ শহরটি আধুনিক নির্মাণের দিক দিয়েও এগিয়ে। একটি শহরের এত রূপ- যেন চোখের পলক পড়ে না।


মেনিয়াপলিস, যুক্তরাষ্ট্র
মেনিয়াপলিস মিসিসিপি নদীর দুই ধার দিয়ে গড়ে ওঠা এক পরিচ্ছন্ন নগরী। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সুন্দর নগরীও বটে। এটি অর্থনৈতিকভাবে ও কারিগরিকভাবে উন্নত শহর।


কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা যেখানে বিবেচ্য, সেখানে ডেনিশ এই নগরীটি কারো চেয়ে কম নয়। উন্নত পরিবেশের পাশাপাশি এই শহরের রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গৌরব। স্বর্গের যে বর্ণনা পাই আমরা, কিছুটা মিলে যায় যেন তার সঙ্গে।


ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের এই শহরটি অতিমাত্রায় জনবহুল হলেও এটি তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সারা বিশ্বের পর্যটিকদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। শহরটির রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক দৃশ্য আর আধুনিক স্থাপত্য নিদর্শন।

ওয়েলিংটন নগর এলাকাটি হলো উত্তর আইল্যান্ডের দক্ষিণাংশের প্রধান জনবহুল এলাকা। নগর এলাকা প্রধান চারটি অংশে বিভক্ত। প্রথমটি ওয়েলিংটন সিটি। ওয়েলিংটন হারবার-এর প্রান্তে শহরটির সবচেয়ে জনবহুল অংশ যেখানে শহরের অর্ধেক লোক বাস করে। দ্বিতীয়টি পরিরুয়া সিটি। পরিরুয়া হারবার-এর প্রান্তে অবস্থিত। এ ছাড়া লোয়ার হার্ট সিটি এবং আপার হার্ট সিটি একত্রে হার্ট ভ্যালি নামে পরিচিত।


হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড
আপনি যদি আদর্শ পরিবেশ আর বিশুদ্ধ বাতাস পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে হেলসিংকি যেতে হবে। ফিনল্যান্ডের রাজধানী এই শহরটি তার স্থানীয় অধিবাসী আর দুনিয়াব্যাপী পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক আবহাওয়া ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়ে বসে আছে। হেলসিংকির পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুনাম পৃথিবী জুড়ে।


বার্ন, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন। শহরটি আরে নদীর বাঁক দিয়ে তিনদিকে বেষ্টিত একটি উঁচু শৈলান্তরীপের ওপর অবস্থিত। শহরের পুরাতন এলাকাগুলোকে পথচারীদের ভ্রমণের জন্য পরিবর্তিত করা হয়েছে এবং এখান থেকে আল্পস পর্বতমালার অসাধারণ সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বার্ন শহরে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার লোকের বাস। এটি জনসংখ্যার দিক থেকে সুইজারল্যান্ডের পঞ্চম বৃহত্তম শহর।

পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর হলো বার্ন। যেন ঈশ্বরের হাতে বানানো। শহরটির বাতাস ও পরিবেশ খুবই স্বাস্থ্যকর। সরকার বার্নের রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনামুক্ত রাখতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।


শেষে একটি কথাই বলতে হয়- স্বর্গ আমাদের কল্পনাতে ঘুরে পাঁক খেলেও পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে কল্পিত সেই স্বর্গের ছোঁয়া আমরা পাই। কিন্তু ঈশ্বর নিজে আবির্ভূত হয়ে সেই ছোঁয়া যে দিয়ে যান না, তা আমরা জানি। মানুষ ইচ্ছা করলেই পারে তার নগরকে সাজিয়ে রাখতে- পরিপাটি জীবনের ব্যবস্থা করতে। এক্ষেত্রে অর্থের চেয়ে ইচ্ছাশক্তিই বেশি দরকার।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রাসেল পারভেজ/নওশের  

No comments:

Post a Comment