কেমন হবে ৫জি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক? (শেষ পর্ব)
মো. রায়হান কবির : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:15 Feb 2016 12:26:27 PM Monday

বিশেষ করে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের যে গতি তাতে ৫জি’র গতির ধারণা দিলে আপনি তাকে জোকস ভাববেন। কারণ আমাদের দেশে ইন্টারনেটের গতি মাপা হয় কেবিপিএস থেকে সর্বোচ্চ এমবিপিএসে। আর ৫জি’র জন্যে যে গতি ধারণা করা হচ্ছে তা জিবিপিএস!
সম্প্রতি নকিয়া (যদিও তারা বর্তমানে মোবাইল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত কাজে তারা এখনও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত) এক ঘোষণায় দাবি করেছে তারা ইতিমধ্যেই ৫জি নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এবং তাদের এই কাজের বিস্তারিত তারা এই মাসের শেষে ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’ এ ঘোষণা দেবে।
নকিয়ার এক মুখপাত্র বলেন যে, তারা ৫জি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন এবং ৫জি’র জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও তারা নিয়ে রাখছেন। তার ভাষায়, ফাইভ জি’র গতি হবে বর্তমানের ৪জি’র তুলনায় ১ হাজার গুণ! হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েননি, এটা ১ হাজার গুণ বেশি স্পিড দিতে নাকি সক্ষম। অর্থাৎ নকিয়ার ধারণা যদি সত্যিই বাস্তবে রুপ নেয় তবে উন্নত বিশ্ব ৫জি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৩০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড গতি পাবে!
সুতরাং আমাদের সুপার হিরো অনন্ত জলিলের মতো অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে এই গতি দিয়ে। তবে নকিয়ার মতে এই গতি পেতে কিছু প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হতে পারে। কারণ এ গতি পেতে হলে তরঙ্গকে বাধাহীন ভাবে চলতে দিতে হবে। পৃথিবীতে অবস্থানকারী গাছ, বাড়ি-ঘর, উঁচু স্থাপনা এই দ্রুতগতিকে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এই মানের গতি পেতে হলে অপারেটর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করতে হতে পারে প্রচুর পরিমানে টাওয়ার। তা সেটা একটু ছোট সাইজেরই হোক না কেন।
এই উচ্চগতির ডাটা ট্রান্সফারের জন্যে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারের দূরত্ব যত কম হবে ততোই এর গতি বেশি হবে। নকিয়া দাবি করেছে তারা ৫জি’র ৩০ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পেয়েছে ল্যাবে। আর তাদের দাবি মতে যেহেতু ল্যাবে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাই এই উচ্চগতি পাওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে পেতে হলে অনেক বেগ পোহাতে হবে। প্রথমত, টাওয়ার লাগবে অনেক। এবং এই টাওয়ারগুলো বসাতে হবে প্রায় সকল উঁচু স্থাপনা বা বিল্ডিং-এ।
সুতরাং এটাও দেখার বিষয়, আসলেই কি সবাই তাদের বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসাতে দেবে? আর যদি দেয়ও তবে এর রেডিয়েশনের মাত্রা কেমন হবে? প্রাকৃতিক পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব কতটুকু? প্রাণীকুল বা উদ্ভিদের জন্যে এই টাওয়ারগুলো কতটা নিরাপদ? তাই ল্যাবের এই গতি বাস্তবের সঙ্গে অনেক পার্থক্য সৃষ্টি করবে। অনেক গবেষক অবশ্য বলেছেন, এই গতি বর্তমানের ৪জি’র তুলনায় ১০-১০০ গুণ হতে পারে। এটাও বা কম কি! উন্নত বিশ্বের ৪জি’র গতিও যথেষ্ট। সেই নিরিখে ৫জি’র ১০-১০০ গুণ স্পিডও কিন্তু অকল্পনীয়।
তবে বিজ্ঞানীরা অবশ্যই একটি বাস্তবিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করবেন এই উচ্চ গতির ডাটা ট্রান্সফারের জন্যে এটা আশা করা যায়। কেননা এই ওয়্যারলেসের যুগে তার ছাড়া ইন্টারনেটের জন্যে যদি টাওয়ারের ‘জাল’ বোনা হয় তবে তা সত্যিই বেমানান হবে। অন্তত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে। তাই আশা করা যায় এই প্রচুর সংখ্যক টাওয়ারের একটা বিহিত হবে।
যেহেতু এই ৫জি ইন্টারনেটের জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অনেকটা সময়, তাই ধরে নেয়া যায় একটি উন্নত প্রযুক্তি আসবে যেটা হবে পরিবেশবান্ধব এবং বাস্তব সম্মত।
এবার আসা যাক এই গতি কি কাজে লাগানো হবে?
ইউরোপ-আমেরিকায় অলরেডি মনুষ্যবিহীন গাড়ি চলছে। কিছুদিন আগে ড্রাইভারবিহীন বাসও উদ্বোধন হয়েছে। ফলে এইসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ আরও সুচারুভাবে করা হবে। তাছাড়া এই কাজের সঙ্গে যুক্তরা আশা করছেন উচ্চগতির এই ইন্টারনেট সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। তারা মনে করেন, গাড়ি চালনায় আরও দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হবে ইন্টারনেটের এই গতি সাহায্যে। ভিডিওর ক্ষেত্রে আরও যুগান্তকারী ঘটনা ঘটবে। দূরে অনুষ্ঠিত কোনো কনসার্ট বা স্টেডিয়ামের খেলা আপনার স্মার্টফোনে দেখা যাবে রিয়েল টাইমে। এখন যেটা দেখা যায় সেটা রিয়েল টাইম হলেও সেকেন্ডের কিছু হেরফের থাকে। তখন মাল্টি কাস্টিং ভিডিও সিস্টেমের সাহায্যে একবারে রিয়েল টাইম ভিডিও দেখা যাবে আপনার মোবাইলেই! তাছাড়া খুব সহজেই ডাউনলোড করা যাবে থ্রিডি বা ফোরকে মুভি। এমনকি এইটকে রেজুলেশনের মুভিও স্ট্রিমিং ছাড়াই দেখা যাবে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে আসবে আরও বিপ্লব। বর্তমানে অনেক সার্জারিতে ডক্টরদের সাহায্য করছে অনেক রোবট। তখন এসব রোবটের ব্যবহার আরও দক্ষতার সঙ্গে করা যাবে। এবং দূর থেকেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাদেরকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যাবে। শাহরুখ খানের রা ওয়ান সিনেমার কথা মনে আছে? নিশ্চয়ই ভাবছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাতায় হঠাৎ বিনোদন এল কেন? রা ওয়ান সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয়েছে ভার্চুয়াল ভিলেনের সঙ্গে গেমসে ফাইট করা যায়। ঠিক তেমনি ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মাস্ক’ এর সাহায্যে আপনি গেমসে ফাইট করতে পারবেন। এমনকি তাদের (ভিডিও গেমসের ক্যারেক্টার) সঙ্গে করতে পারবেন হাই-ফাইভ! এটাই হচ্ছে ৫জি’র কামাল।
নকিয়ার ভাষ্য মতে, আপনি এই গতির ইন্টারনেট পেলে ভার্চুয়াল জগতের একজন নাগরিক বনে যেতে পারেন। তাদের সঙ্গে করতে পারবেন যোগাযোগ, এমনকি ভার্চুয়ালি তাদের সব আচার-আচরণে আপনিও সাড়া দিতে পারবেন! তবে এসব কিছুই নির্ভর করছে অনেক যদি কিন্তুর ওপর। তারপরেও স্বপ্ন দেখতে বাঁধা কোথায়? যে হারে বিজ্ঞান এগিয়ে চলেছে তাতে সব ধারণাই হয়তো কোনো একদিন সম্ভব হতে পারে। আমরাও আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় থাকি সেই বাধাহীন গতির জন্যে, যেখানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বিজ্ঞান ও তার প্রযুক্তি।
পড়ুন: কেমন হবে ৫জি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক? (পর্ব-১)
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ
No comments:
Post a Comment