পৃথিবীতে আরো একটি বড় উল্কার পতন
গোবিন্দ তরফদার : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:24 Feb 2016 05:37:17 PM Wednesday || Updated:24 Feb 2016 06:51:11 PM Wednesday

ঘটনাটি ঘটে ১৪:০০ ইউটিসি ৬ ফেব্রুয়ারিতে, যখন একটি উল্কা বাতাসে ৬২০ মাইল (১,০০০কি.মি) বেগে ব্রাজিল উপকূলের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়।
এই বিস্ফোরণে ১৩,০০০ টন টিএনটি সমতুল্য পরিমানের শক্তি নির্গত হয়েছে, যেটা কিনা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমাতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমায় ব্যবহৃত শক্তির সমান।এই ঘটনাকে সবচেয়ে বড় ঘটনা বলা যায় ২০১৩ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
কারণ ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার চেলিয়াবিংক্সে যে উল্কাপাত ঘটেছিল সেটা ছিল ভয়াবহ রকমের ভয়ংকর মর্মান্তিক একটি ঘটনা। এই দূর্ঘটনায় প্রায় ১,৬০০ এর অধিক মানুষ আহত হয়েছিল।
উল্কাটি ৪১,৬০০ এমপিএইচ গতিবেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আছড়ে পড়ে এবং প্রায় ১৮ মিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করে। ধ্বংসাবশেষ বেশিরভাগটাই একটি স্থানীয় চেবারকুল নামক হ্রদের মধ্যে ছিটকে পড়ে।
ফিল প্লেইট এর মতানুযায়ী, ‘চেলিয়াবিংক্স উল্কা ৫০০,০০০ টন টিঅ্যান্ডটি শক্তির অধিকারি ছিল। যেটা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া উল্কাপাতের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ছিল’।
সদ্য ঘটে যাওয়া উল্কাপাত এর প্রভাব সমুহ পর্যালোচনা করে প্লেইট তার ব্লগে গভীরভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সে তুলনায় এটা খুবই ছোট ছিল। এমনকি এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকে জানতে পারেনি বিরল এই ঘটনাটি সম্পর্কে।
‘এটা একটি জনবহুল এলাকায় ঘটেছে, কিন্তু তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে মানুষজন কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, কারণ ঘর বাড়ির জানালাগুলো থর থর করে কেঁপেছিল কিছুক্ষন।’
প্লেইট অনুমান করেন যে, সাম্প্রতিকতম উল্কার বিস্ফোরক শক্তি প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিটার প্রশস্ত হবার সম্ভাবনা ছিল।
প্লেইট আরো বলেন, ‘এসব ঘটনা সারা বছর গড়ে বেশ কয়েকবার ঘটেই। যেগুলো বেশিরভাগই মানুষের দৃষ্টির বাইরেই থাকে।’
তবে এটা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে। নাসা প্রায় ১২,৯৯২ এর মত নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট আবিষ্কার করেছে। যেগুলো আমাদের সৌরজগতে নিজস্ব কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এদের কক্ষপথ আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথের খুবই কাছে। আনুমানিক ১,৬০৭ গ্রহাণুকে বিপদজনক গ্রহাণু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্যাসাডেনার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে নাসার নিয়ার আর্থ অবজেক্ট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক, পল চোডাস বলেন, ‘কোনো একটি গ্রহাণু অথবা মহাজাগতিক কোনো বস্তু পৃথিবীর জন্য ক্ষতির কারণ হবে, এমন কোন চাক্ষুষ প্রমান নেই। আগত এক শতাব্দীতে আমাদের পরিচিত মহাজাগতিক বস্তুগুলোর কোনোটিও আমাদের পৃথিবীর তেমন কোনোরুপ ক্ষতি করতে পারবে না। মানে আঘাত হানবেনা।’
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অনুযায়ী, এই ধরনের একটি গ্রহাণু ২০১৩টিএক্স৬৮, যেটা পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করে। কিন্তু এই গ্রহানুর পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভাবনা খুবই কম। না করার সম্ভাবনা বেশি।
দুই বছর আগে ১০০ ফুটব্যাপী একটি গ্রহাণু আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা যখন এটা পৃথিবীর কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ওই বছর ৫ মার্চ ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটে। তিমি মাপের স্পেস শিলা শুধু ১১,০০০ মাইল (১৭,০০০ কিলোমিটার) পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছে, যা চাঁদ থেকেও পৃথিবীর প্রায় ২১ গুণ কাছে।
নাসার মতে এই দুরুত্বটা ঠিক না। তাদের মতে এটা পৃথিবীর ৯ মিলিয়ন মাইল (১৪ মিলিয়ন কিমি)দূরে দিয়ে অতিক্রম হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আগামি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তে ক্ষুদ্রাকৃতির একটা গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা ১-হতে-২৫০ মিলিয়নেরও কম।
২০৪৬ এবং ২০৯৭ সালে ফ্লাইবাস এর প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীতে তবে সম্ভাবনা অনেক কম আছে।
পল কোডাস বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে তিনটি ফ্লাইবাস ডেট আছে সংঘর্ষের জন্য, তবে এতে উদ্বেগের তেমন কোনো কারণ নেই, সংঘটনের সম্ভাবনা খুবই কম।’
তবে ২০১৩টিক্স৬৮ আকারের একটি গ্রহাণু যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে এটা সম্ভবত চেলিয়াবিংক্স ঘটনা শক্তির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শক্তিসম্পন্ন একটি বিস্ফোরণ উৎপন্ন করবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ
No comments:
Post a Comment