Saturday, 20 February 2016

Lily vs majnu

যে কারণে লায়লিকে পায়নি মজনু

কাজী আশরাফ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:19 Feb 2016   05:02:47 PM   Friday   ||   Updated:19 Feb 2016   07:42:02 PM   Friday
যে কারণে লায়লিকে পায়নি মজনু
কাজী আশরাফ : কালজয়ী প্রেমকাহিনী লায়লি-মজনু। অসাধারণ এই প্রেমকাহিনীর আছে অসংখ্য সংস্করণ। তবে মূল কাহিনী প্রায় সব জায়গাতেই এক। ভিন্নতা শুধু কাহিনীর উপাদানে। কাহিনীর সব সংস্করণেই নায়ক-নায়িকার মাঝে দুস্তর ফারাক। এবং বেশির ভাগ কাহিনীতে নায়ক রাজপুত্র এবং কবি নায়িকা এক বেদুইন সর্দারের মেয়ে। আর লক্ষ্য করার মতো বিষয়টি হচ্ছে, মজনু তার ‘মজনু’ নামে যুগে যুগে দুনিয়াজুড়ে আলোচিত হলেও অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন ‘মজনু’ তার আসল নাম নয়। কয়েস (কায়েস) বিন ওমর নামের প্রাচীন আরবের বিখ্যাত এক কবি তিনি। তার জীবনের প্রেমকাহিনীর ছায়া থেকেই এর জন্ম। যাই হোক, লায়লির প্রেমে উন্মাদ হয়েছিলেন বলেই তার আরেক নাম মজনু (মজনু বা মাজনুন নামের অর্থটাও কিন্তু তাই- প্রেমন্মাদ।) এমনকি নির্ভরযোগ্য বেশ কিছু সংস্করণে নায়কের নাম ‘কয়েস’ই রাখা হয়েছে।

সংক্ষেপে লায়লি-মজনুর কাহিনী এ রকম- ছেলে কয়েসকে নিয়ে একটি সরাইখানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন আল বাহরামের রাজ্যচ্যুত সুলতান অমর-বিন-আব্দুল্লাহ। সে সময় কয়েসের মন দেওয়া-নেওয়া হয় সর্দার আল মাহদির কন্যা লায়লির সঙ্গে। কয়েসের সব কবিতাই ছিল তার প্রাণপ্রিয় লায়লিকে নিয়ে। সুযোগ পেলেই সে কবিতা শোনাতে ভুলত না প্রিয়তমাকে। লায়লির ছিল মাত্রাতিরিক্ত পশুপ্রেম। লায়লির পোষা কুকুরটির নাম ছিল ‘ওজজা’। জিন্দান নামের আদরের একটি হরিণও ছিল লায়লির। অচিরেই কয়েস- লায়লির প্রেমের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় বুরিদানের বদমাশ বাদশা নওফেল।

শিকারী নওফেলের তীরবিদ্ধ হয়ে মারা যায় জিন্দান। শোকে মুহ্যমান লায়লি অভিশাপ দেয় অবিবেচক নওফেলকে। এভাবেই নওফেল প্রথম দেখে লায়লিকে এবং মরিয়া হয়ে ওঠে অসামান্য রূপসী লায়লিকে পাওয়ার জন্য। শাহজাদা কয়েস আর লায়লির বিয়ের সব আয়োজন যখন সু-সম্পন্ন, দরবার কক্ষে যখন বসেছে শাদির মাহফিল তখন কোথা থেকে ছুটে আসে লায়লির প্রিয় কুকুর ওজজা। প্রেয়সি লায়লির জন্য ব্যাকুল কয়েস বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ‘এই মুখে তুই লায়লির পদচুম্বন করেছিস’ বলে চুমু খেয়ে বসে ওজজার মুখে। সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। সবাই বলতে থাকে শেষ পর্যন্ত বিয়ের আসরে বসে কুকুরের মুখে চুমু।

এ যে বন্ধ পাগল! এ ঘটনায় বেঁকে বসেন বাদশা স্বয়ং। ফলে বিয়ে ভেঙে যায়। তখন বাধ্য হয়ে শাদির মাহফিল থেকে ফিরতি পথ ধরে অপমানিত কয়েস। উপায় না দেখে সওদাগর আল মাহদি রাজি হয়ে যান কুচক্রী নওফেলের সঙ্গে লায়লির বিয়ে দিতে। এদিকে ভগ্ন হৃদয় কয়েস নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মরুভূমিতে। ফুলশয্যার দিনে অবিশ্বাস্যভাবে ফলে যায় লায়লির দেওয়া অভিশাপ। নিজের হাতে পান করা শরবতের বিষক্রিয়ায় মারা যায় নওফেল। কুকুর ওজজাকে নিয়ে অন্ধকার রাতে পালিয়ে যায় লায়লি। প্রিয়তম কয়েসের ডাক ভেবে মরীচিকার পেছনে হন্য হয়ে ছুটতে থাকে সে। রাতে মরুভূমির লু হাওয়া মরুঝড় সাইমুমে রূপ নেয়। পরদিন পথচলতি কাফেলা বালির স্তূপের নিচে আবিষ্কার করে লায়লি, কয়েস আর কুকুর ওজজার লাশ।

সেদিন বিয়ের আসরে লায়লি প্রেমে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কুকুরকে চুমু না খেলে এই প্রেমকাহিনীর ইতিহাস অন্যরকমও হতে পারত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/তারা

No comments:

Post a Comment