Wednesday, 24 February 2016

Letter from M Gandhi to Hitler


হিটলারকে লেখা মহাত্মা গান্ধীর চিঠি.

জুয়েল রানা : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:25 Feb 2016   08:46:01 AM   Thursday   ||   Updated:25 Feb 2016   10:11:15 AM   Thursday
হিটলারকে লেখা মহাত্মা গান্ধীর চিঠি
জুয়েল রানা : মানবতার শত্রু অ্যাডলফ হিটলারের কাছে মানবতাবাদী মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধ ধোপে টেকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না করার জন্য নাৎসি বাহিনীর জনককে একগুচ্ছ চিঠি দিয়েছিলেন ভারতের জাতির জনক মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী)। অহিংসতা, অসাম্প্রদায়িকতার জন্য গান্ধী যখন বিশ্বজুড়ে নন্দিত, তখন জাতের বড়াই ও হিংসায় কাতর ফুয়েরার তামাম দুনিয়ায় যুদ্ধের দামামা বাজানোর পায়তারায় লিপ্ত। তাকে থামাতে চেয়েছিলেন মহৎ আত্মার (মহাত্মা) গান্ধী। কিন্তু তাকে পাত্তাই দেননি হিটলার।

হয়তো অনেকেরই জানা নেই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু না করার আহ্বান জানিয়ে মহাত্মা গান্ধী ১৯৩৯ ও ১৯৪০ সালে তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারকে একগুচ্ছ চিঠি লিখেছিলেন।

হিটলারকে যেমন যুদ্ধ শুরু না করে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার জন্য আহ্বান জানান তেমন একই সঙ্গে ব্রিটিশ জনগণের প্রতি আহ্বান রাখেন অহিংস পন্থায় জার্মানি ও ইতালির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানোর জন্য! তিনি এমনও বলেন, যদি জার্মানি আক্রমণ করে তবুও যেন তারা অহিংস পন্থা ত্যাগ না করে।

হিটলারে্র উদ্দেশে মহাত্মা গান্ধী বলেন, ‘অহিংস পন্থা এমনই একটি পন্থা যেখানে হেরে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই, সে যদি আপনি আপনার দাবি আদায় না করতে পারেন, তবুও! কিন্ত সহিংস পন্থায় ‘হয় মারো নয় মরো’! আপনি এখানে অর্থ ব্যয় করবেন, বিজ্ঞানের কলাকৌশল ব্যবহার করবেন ধবংস করার উদ্দেশ্যে! আজ যদি এই যুদ্ধে ব্রিটেন হেরেও যায়, তবুও কোনো একজন আপনার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবে এবং আপনার আবিষ্কৃত অস্ত্র আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে। মানুষ হত্যা করে আপনি আপনার জাতির জন্য এমন কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করছেন না যাতে করে পরের প্রজন্ম আপনাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। বরং আপনি তাদের মাথা নিচু করে দিচ্ছেন।’

হিটলারকে লেখা গান্ধীজীর একটি চিঠির সম্পূর্ণ অংশ নিচে তুলে দেওয়া হলো-

প্রিয় বন্ধু!

আমি আপনাকে সৌজন্যের খাতিরে বন্ধু সম্বোধন করছি না। আমি আপনার শত্রু নই। আমি আমার জীবনের ৩৩ বছর ব্যয় করেছি ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির প্রচেষ্টায়। আমি আশা করি, আপনার জানার সেই আগ্রহ আছে যে, সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে। আপনার মাতৃভূমির প্রতি যে ভালোবাসা ও মমত্ব তাতে আমাদের কোনো অবিশ্বাস নেই এবং আমরা এ-ও বিশ্বাস করি না যে, আপনি একজন দানব, যা আপনার প্রতিপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে রটিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আপনার কিছু লেখা ও বক্তব্য এবং আপনার কাছের লোকেদের দেওয়া আপনার সম্পর্কে মন্তব্য আমার মতো যারা শান্তিতে বিশ্বাসী তাদের কাছে আপনাকে দানব রূপে উপস্থাপন করছে। যেমন- চেকস্লোভাকিয়ার ওপর আপনার চালানো নির্যাতন, পোল্যান্ডের নারীদের ধর্ষণ এবং ডেনমার্কের ওপর আগ্রাসন আপনার প্রতি এই ধারণারই জন্ম দিচ্ছে। আপনার নিষ্ঠুরতা দেখে মনে হচ্ছে, এই সমস্ত কাজকে আপনি ধর্ম বলে জ্ঞান করেন। কিন্তু আমি শৈশব থেকে শিখে এসেছি, যে কর্ম মানুষকে কষ্ট দেয় তা ধর্ম হতে পারে না। ফলে আমি এক্ষেত্রে আপনার সাফল্য কামনা করতে পারছি না।

কিন্তু আমরা দুই জাতিই একটি জায়গায় এক। আর তা হলো- আমরা দুজনই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। মাত্রার ভিন্নতা থাকলেও আমরা আমাদের নিরাপত্তার খাতিরেই ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্ত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও আমরা কিন্তু ব্রিটিশ জনগণকে আমাদের শত্রু বলে মনে করি না। আমরা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু ব্রিটিশদের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে মারতে চাই না বরং অসহযোগের মাধ্যমে তাদের শাসনকে অচল করে দিতে চাই। অসমর্থনের এই প্রক্রিয়ায় শাসকদের একেবারেই নাস্তানাবুদ করে ফেলা যায়। কারণ প্রতি কাজেই জনগণ তাদের অসহযোগিতা করে যাবে।

শাসকরা হয়তো আমাদের জমি, আমাদের শরীরের ওপর বল প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু আমাদের মনের ওপর জোর খাটাতে পারবে না। তারা সমগ্র ভারতবাসীকে হত্যা না করে তাদের দিয়ে আর কাজ করিয়ে নিতে পারবে না। কারণ ভারতীয় জনগণ এখন অহিংসভাবে মরতেও প্রস্তুত কিন্ত ব্রিটিশদের সামনে হাঁটু মুড়ে দাঁড়াবে না। আমি আপনাকে বলব, আমার কথা বিশ্বাস করুন, কারণ বিগত ২০ বছরে এমন ভারতীয় প্রচুর তৈরি হয়েছে। আমরা ব্রিটিশ শাসনকে ছুঁড়ে ফেলতে চেষ্টা করছি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে সে আন্দোলন এখন তুঙ্গে। এবং এটি সম্ভব হয়েছে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেই।

ব্রিটিশরা অনেক সংগঠিত। আর আপনি তাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন। ফলে এটা দেখার বিষয় কারা বেশি সংগঠিত? আমরা তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও আমাদের স্বাধীনতার জন্য জার্মানদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি না, অসিংস পদ্ধতিই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। কিন্তু আপনি সহিংসতার পন্থা নিচ্ছেন! আপনি এখানে অর্থ ব্যয় করবেন, বিজ্ঞানের কলাকৌশল ব্যবহার করবেন ধবংস করার উদ্দেশ্যে! আজ যদি এই যুদ্ধে ব্রিটেন হেরেও যায়, তবুও কোনো একজন আপনার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াবে এবং আপনার আবিষ্কৃত অস্ত্র আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে। মানুষকে হত্যা করে আপনি আপনার জাতির জন্য এমন কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করছেন না যাতে করে পরের প্রজন্ম আপনাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। বরং আপনি তাদের মাথা নিচু করে দিচ্ছেন।

আপনি জানেন কিছুদিন আগে আমি একটি আপিল করেছিলাম। ব্রিটিশ জনগণ সেটা মেনে নিয়েছে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। আমি আপনাকেও পরামর্শ দেব- কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক আদালতে আপনি আপনার অভিযোগ তুলে ধরুন! সেখান থেকেই ফয়সালা হবে কে সঠিক আর কে ভুল! আজ কোটি কোটি ইউরোপীয় মুক্তির জন্য ছটফট করছে। তারা শান্তি চায়। আপনার দেশের জনগণও শান্তি চায়। আপনি তাদের কথা শুনুন! আমার এই বক্তব্য মানয়ীয় মুসোলিনি সাহেবকেও পৌঁছে দেবেন! তার কাছেও আমার একই নিবেদন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রাসেল পারভেজ

No comments:

Post a Comment