Rat urine in new diseases
ইঁদুরের মূত্রে মানুষের নতুন রোগ
আরিফ সাওন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Jan 2016 02:46:29 PM Sunday || Updated:31 Jan 2016 03:30:16 PM Sunday

বর্ষাকালে এই রোগ বেশি ছড়ায়। ইঁদুরের মূত্র পানিতে মিশে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ল্যাপ্টোস্পাইরা রোগ দেখা দেয়। এই রোগে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি ৭০ শতাংশ। সম্প্রতি নরসিংদীতে এই রোগে দুজন মারা গেছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিতকরণ সেমিনারে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান। রোববার সকালে ‘বাংলাদেশে খাদ্যবাহিত রোগ নিরীক্ষণ কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্ত’ বিষয়ক এ সেমিনার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শুধু ইঁদুরের মূত্র নয়, গবাদিপশু, কুকুর-বাঁদুড়ের মূত্র থেকেও এই রোগ ছড়ায়। তবে বেশি ছড়ায় ইঁদুরের মূত্র থেকে। ইঁদুর সারা বছরই এই রোগ ছড়ায় কিন্তু কখনো নিজে এই রোগে আক্রান্ত হয় না। সে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। এটাকে খাদ্যবাহিত রোগ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, ইঁদুরের মূত্র পানিতে বা খাবারে মিশলে এবং তা পেটে গেলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘জ্বর, সর্দি ও কাশি এই রোগের লক্ষণ। পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকে এই রোগ ভালো হয়ে যায়। জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে এত দিন এই রোগ সম্পর্কে বুঝতে পারা যায়নি। এখন গবেষণায় ধরা পড়েছে।’
তিনি বলেন, এতে অনেক সময় কিডনি আক্রান্ত হয়। ফলে কিডনিসংশ্লিষ্ট অনেক রোগ এ থেকে হতে পারে। আবার জন্ডিস হতে পারে। কিডনি আক্রান্ত বা জন্ডিস হলে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। নরসিংদীতে যারা মারা গেছেন তারা এ রোগ থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, খাদ্যবাহিত রোগ নির্ণয়ের জন্য ২০ মাস ধরে ১ হাজার ১৬টি স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এর মধ্যে দেখা যায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান
তিনি বলেন, খাদ্যবাহিত রোগ দিন দিন বাড়ছে। খাবারের মাধ্যমে এসব রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এ ক্ষেত্রে খাবারের ব্যাপারে খুবই সচেতন হওয়া দরকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জিকা ভাইরাস সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা বড় কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। এটি মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু জাতীয়। এই রোগে মৃত্যু নেই। মানুষ অল্প সময়ে ভালো হয়ে যায়। তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য সমস্যা রয়েছে। সন্তান পেটে থাকতে এই রোগ হলে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহযোগিতায় ‘Improving Food Safety In Bangladesh Project’ এর আওতায় ‘খাদ্যবাহিত রোগ নিরীক্ষণ’ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও আইসিডিডিআরবি এতে সহযোগিতা করছে।
দেশের ১০টি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে রোগের কারণ নির্ণয়, ওয়েব বেজড সমন্বিত রোগ নিরীক্ষণ, সেলফোন বেজড রোগ নিরীক্ষণ ও খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় এবং সমপোযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে আইসিডিডিআরবি।
এই কার্যক্রমের আওতায় ডায়রিয়া রোগীর মল পরীক্ষার মাধ্যমে কলেরা, ই-টেক, স্যালমোনেলা (টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড), শিজেলা জীবাণু শনাক্ত করা হচ্ছে। আর জ্বর ও জন্ডিসের রোগীদের রক্তে যথাক্রমে লেপ্টোস্পাইরা সালমোনেলা এবং হেপাটাইটিস এ/ই শনাক্ত করা হচ্ছে।
১ হাজার ১৬টি স্যাম্পলের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ হেপাটাইটিস ‘ই’ শনাক্ত করা হয়েছে বলে সেমিনারে উল্লেখ করা হয়।
পরীক্ষার প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইঁদুরের মূত্রবাহিত রোগ ল্যাপ্টোস্পাইরা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানী ঢাকাতেই বেশি। যে ১০টি হাসপাতাল থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, তার মধ্যে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১২টি স্যাম্পলের মধ্যে ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। দ্বিতীয় অবস্থানে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল। সেখানে ২১৫টি স্যাম্পলের মধ্যে আক্রান্ত ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল। সেখানে ২৭০টি স্যাম্পলের মধ্যে আক্রান্ত ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৬/আরিফ সাওন/শাহনেওয়াজ/এএন
No comments:
Post a Comment