Saturday, 30 January 2016

How zika virus spread

How zika virus spread 

যেভাবে জিকার বিশ্বব্যাপী বিস্তার

আফিফা খাতুন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:31 Jan 2016   12:01:05 AM   Sunday   ||   Updated:31 Jan 2016   12:49:33 PM   Sunday
এডিস এজিপ্টির কামড়ে এশিয়াতে জিকার আগমন প্রায় ৪০ বছর আগে। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

এডিস এজিপ্টির কামড়ে এশিয়াতে জিকার আগমন প্রায় ৪০ বছর আগে। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

আফিফা খাতুন : জিকা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে ১৯৪৭ সালে। আফ্রিকার দেশ উগান্ডায়। ওই দেশে জিকা নামে একটি বন আছে। সেই বনেই বানরের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া গিয়েছিল। এ কারণেই এর নাম রাখা হয়েছে জিকা ভাইরাস। ১৯৫২ সালে এ নামকরণ করা হয়। আফ্রিকার আরেকটি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভাইরাস হলো ইবোলা, যার ছোবলে ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের নাম রাখা হয়েছিল কঙ্গোর নদী ইবোলার নামে।

লক্ষণ ও সমস্যা
আক্রান্ত প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজনের দেহে জিকা লক্ষণ হিসেবে ধরা দিতে পারে। অর্থাৎ আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসটি অপ্রকাশিত থাকে। যাদের বেলায় প্রকাশিত হয়, তাদের গায়ে জ্বর আসে। এছাড়া ত্বকে ছিটেফোটা দাগ, ঘা দেখা যায়। চোখে প্রদাহ হতে পারে, অর্থাৎ চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে, লাল হয়ে যেতে পারে। মাংসপেশী ও গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। মাথা ব্যথা হতে পারে। হুটহাট মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে, স্নায়ুর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। সবচেয়ে ক্ষতি হয় যদি গর্ভবতী মা জিকায় আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে তার শিশু মারাত্মক জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুটির মাথা থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। এতে শিশুটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়াসহ প্রাণহানিও ঘটতে পারে। ছোট মাথা নিয়ে শিশুর জন্ম হওয়াকে মাইক্রোসেফালি বলা হয়।

জিকা যেভাবে ছড়ায়
মূলত এডিস এজিপ্টি মশার কামড়ে জিকা ভাইরাস এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়। এশিয়ায় এডিস অ্যালবোপিক্টাস মশার মাধ্যমেও জিকা ছড়ায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ অঞ্চলে ‘টাইগার মশা’ নামে পরিচিত মশাটি সত্যিই দায়ী কি না কিংবা জিকার বিস্তারের কতটা ভূমিকা রাখে তা এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
আক্রান্ত ব্যক্তির শুধু রক্তেই নয়, শুক্রাণুতেও পাওয়া যায় ভাইরাসটি। ফলে যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ফয়। সেনেগালে ২০০৮ সালে গবেষণার কাজে গিয়ে তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীও এতে আক্রান্ত হন, যার কারণ যৌন সংস্পর্শ বলে ধারণা করছেন ফয়। কেননা এডিস মশা ক্যালিফোর্নিয়াতে পাওয়া যায় না।

বিস্তার ও প্রাদুর্ভাব
উগান্ডায় চিহ্নিত হওয়ার পর জিকা আফ্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানুষের দেহে জিকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে এর বিস্তার ঘটে এশিয়াতেও। ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জিকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাদুর্ভাব দেখা না যাওয়ায় এ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি, আলোচনায়ও আসেনি জিকা। তবে এ ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয় ইয়াপ দ্বীপে। প্রশান্ত মহাসগারের এ দ্বীপটিতে ২০০৭ সালে বিস্ফোরণের মতো বিস্তার লাভ করে জিকা। দ্বীপবাসীর শতকরা ৭৫ জনই এতে আক্রান্ত হয়।

২০১৩-১৪ সালে প্রশান্ত মহাসাগরের ফরাসি কলোনি পলিনেশিায় জিকা চিহ্নিত হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে জিকা ভাইরাস চিহ্নিত হয়। সে বছর প্রশান্ত মহাসাগরে চিলির আওতাধীন ইস্টার আইল্যান্ডে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।

২০১৫ সালের মে মাসে ব্রাজিল সরকার জানায়, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দেশটিতে চার হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হয়ে। এদের মধ্যে ৪৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওইসব শিশুর মধ্যে পাঁচজনের শরীরে জিকার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ব্রাজিলে ৫-১৫ লাখ মানুষ জিকা আক্রান্ত হয়েছে। এদের ৬৬ ভাগই পারনামবুকো এলাকার অধিবাসী।



জিকার জালে যেসব দেশ
২৩ জানুয়ারি ২০১৬, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, আমেরিকায় জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো হচ্ছে: মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, পানামা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল, গায়ানা, ফ্রেঞ্চ গায়ানা, সুরিনাম, ভেনিজুয়েলা, হন্ডুরাস, হাইতি, ডোমিনিকান রিপাবলিক, পুয়োর্ত রিকো, সেন্ট মার্টিন, গুয়াদিলুপ, মার্টিনিক, বার্বাডোজ।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কে বিদেশফেরত পর্যটকের শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ডব্লিউএইচও আশঙ্কা করছে, এ বছর শেষ নাগাদ আমেরিকা (উত্তর-মধ্য-দক্ষিণ) অঞ্চলে ৩০-৪০ লাখ লোক জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন), ডব্লিউএইচও (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন), পিএএইচও (প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন)

লেখক : শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

 http://www.risingbd.com/%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0/145210
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ

No comments:

Post a Comment