Sunday, 24 January 2016

be careful in life

সিরিয়াল কিলারদের অজানা গল্প

মিলন আশরাফ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:25 Jan 2016   12:27:20 AM   Monday   ||   Updated:25 Jan 2016   12:07:12 PM   Monday
ছবির কোলাজ

ছবির কোলাজ

মিলন আশরাফ : সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি হয়েই আসছে। কিন্তু এসব খুনের ভেতর কিছু হত্যাকাণ্ড সত্যিই ভয়াবহ ও নৃশংস। পৃথিবীর বুকে এ রকম নৃশংস খুনের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। সেসব খুনের বর্ণনা দেওয়া লোমহর্ষক ব্যাপার। পাঠকরাও থরথর করে কাঁপবে সেইসব খুনের বর্ণনা শুনে। শুধু একটা নয়, খুনিরা একের পর এক খুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে। খবর জানাই এ রকম কিছু সিরিয়াল কিলারের, যারা যুগে যুগে ঘৃণিত হয়ে আছে তাদের জঘন্য এসব কাজের জন্য।

জন জর্জ হাই
‘অ্যাসিড গোসলের হত্যাকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিল সে। হত্যার পর সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে লাশটিকে ডুবিয়ে রাখত পচে যাওয়ার জন্য। অ্যাসিডে ঝলসে দিয়ে সেটাকে প্যাকেটবন্দি করে ফেলে দিত। তার সব সময় একথা মনে হতো যে, পুলিশ তাকে কখনো ধরতে পারবে না। লাশকে সে এমনভাবে গুম করে ফেলত যে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ বা অভিযোগ আনা বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো ব্যক্তিকে খুন করার পর সে তার সমস্ত সম্পত্তি ভোগদখল করত। সম্পদ দখলের এই আইডিয়া তার মাথায় আসে ১৯৪৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ওই সময়ে সে কাজ করত লন্ডনের গুলিসিস্তার সড়কে কিংস্টনের সম্পদশালী ব্যক্তি উইলিয়াম ম্যাক শোয়ানের বাড়িতে। ম্যাকের মা-বাবাকে দেখাশোনা করার কাজ ছিল তার। এরপর উল্লেখ্য তারিখে জর্জ শোয়ানের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে ড্রামের ভেতর ৪০ গ্যালন সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে তার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিল। দুদিন পরে লাশটাকে উঠিয়ে ম্যানহোলে ফেলে দেয় সে। ইংল্যান্ডের অলিতেগলিতে তার পাশবিক নির্যাতন চালনা করতে থাকে সে। অবশেষে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারকার্য চালনা করে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয় ১৯৪৯ সালের ১০ আগস্ট। বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে ৬ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হলেও মূলত সে হত্যা করেছিল ৯ জনকে। ইতিহাসের জঘন্যতম এই সিরিয়াল কিলারের জন্ম ১৯০৯ সালের ২৪ জুলাই, ইংল্যান্ডে।

জ্যাক দ্য রিপার
পরপর ১১টা খুন করে সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লেখান জ্যাক দ্য রিপার। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের চারপাশ জুড়ে তার এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হয় ১৮৮৮ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত। লোকচক্ষুর আড়ালে, প্রশাসনের চোখকে উপেক্ষা করে আজীবন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একের পর এক খুন করে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে সবাইকে। সর্বশেষ মিডিয়ায় তোলপাড় তোলে তার স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠির মাধ্যমে। লন্ডনের সেন্ট্রাল নিউজের কাছে সব খুনের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে এই চিঠি পাঠায় সে। চিঠি দিলেও কেউ তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে ইতিহাস বলে, সেই সময়ের চিফ কনস্টেবল ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন। তার মধ্যে প্রথম জন, এম. জে ডরুয়িট। প্রথম জীবনে তিনি ব্যারিস্টার ছিলেন, পরে শিক্ষক। তালিকায় দ্বিতীয় জন হলেন অ্যারন কসমিনিস্কি নামের এক সাধারণ ইহুদি। তৃতীয় জন হিসেবে যার নাম প্রকাশ পায়, তিনি হলেন একজন উন্মাদ লোক, নাম মাইকেল ওস্ট্রং। কিন্তু এ সন্দেহ নিছকই সন্দেহ-ই থেকে গিয়েছিল কারণ কোনোটার পক্ষেই জোরালো প্রমাণ ছিল না। তুখোড় ডিটেকটিভ ফেডারিক এভারলিনও সন্দেহ করেছিলেন সেভেরাইন ক্লোসোস্কি এলিস জিওর্গি চেপম্যানকে। সেটাও কোনো কাজের হয়নি। অমূলক সন্দেহ। এরপর সন্দেহের তির একাধিক ব্যক্তির দিকে নিক্ষেপ হলেও সবই ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। সুতরাং চিরটাকালই জ্যাক দ্যা রিপার বন্দি রইল বই ও সিনেমার রুপালি পর্দায়। তাকে ও তার খুনগুলোকে নিয়ে তৈরি হয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা এমনকি ভিডিও গেমস। পূর্ব লন্ডনের সেসব খুন করা স্থান এখনো দর্শানার্থীরা ভিড় করে দেখার জন্য।

জানা যায়, রিপার যাদের হত্যা করেছিল তারা বেশির ভাগ পতিতা। যৌনকর্ম করার সময় শ্বাসরোধ করে হত্যা করাই ছিল তার নেশা। ঠিক কতজনকে রিপার হত্যা করেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান আজও অপ্রকাশিত।

পেদ্রো লোপেজ
৮ অক্টোবর, ১৯৪৮। ইকুয়েডরে জন্ম নিল এক ভয়ংকর কিলার। পেদ্রো লোপেজ তার নাম। ধারণা মতে ১১০-৩০০ ব্যক্তিকে খুন করা এই খুনি প্রথম মিডিয়ার আলোচনায় আসে ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ। অগণিত ধর্ষণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর ভিকটিমকে জবাই করত সে। এরপর রক্ত দিয়ে ধুতো হাত। লন লেইটন্যার নামের এক ফ্রিল্যান্সার স্থানীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এসব খবর জানান দেন। সেটা ছিল ১৩ জুলাই, ১৯৮০, রোববার। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর ষোল বছর জেল হয় তার। তবে কর্তৃপক্ষ তার ভালো আচরণের জন্য দুই বছর সাজা মাফ করে দেয়।

লুইস গারাভিতো
কলম্বিয়াতে পশু নামে পরিচিত সে। প্রায় ৪০০ খুনের মধ্যে অধিকাংশ ছিল পথশিশু। তবে আদালতে প্রমাণিত ভিকটিম সংখ্যা ১৩৮। জানা যায়, বেশির ভাগ খুন ১৯৯০ সালে ঘটায় সে। ধরা পড়ার পর কলম্বিয়া আদালত তাকে ৩০ বছর সাজা দেয়। তবে লাশ শনাক্তকরণে সাহায্য করাতে তাকে সাজা কমিয়ে ২২ বছর করা হয়। এতে করে সাধারণ জনগণ খেপে গিয়ে আলাদা প্রসিকিউশন দাবি করে। গণমাধ্যমগুলোও চাপ দিতে থাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আগের সাজাই বলবৎ থাকে। কলম্বিয়ার পশু নামে খ্যাত গারাভিতো ১৯৫৭ সালে ২৫ জানুয়ারি কলম্বিয়াতে জন্মগ্রহণ করে।

জিল দ্য রাই
১৪০৪ সালে ফ্রান্সে জন্ম নেয় এই খুনি। আধুনিক সিরিয়াল কিলারদের গুরু বলা হয় তাকে। বালক শিশু, ব্লন্ড চুল ও নীল চোখ দেখলেই তাদের খুন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত সে। সে নিজেও ছোট থেকে ব্লন্ড চুল ও নীল চোখে অধিকারী ছিল। শিশুদের সঙ্গে যৌন অত্যাচার করে সে হত্যা করত তাদের। হত্যা করার পর সেটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলত। পরিসংখ্যান বলে প্রায় ৮০-২২০টির মতো খুন করেছে জিল। এর মধ্যে নিজ হাতে করেছে ১০০টির মতো। শিশুদের বয়স ছিল ৬-১৬ এর মধ্যে। শিশুদের তার কাছে ধরে নিয়ে আসত চাকর হ্যানরিয়েট। প্রথমে তাদের ওপর  যৌন অত্যাচার করে এরপর একটি রুমে নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করা হতো। আরো ভয়ংকর খবর হলো জিল এসব শিশুদের রক্ত দিয়ে গোসল করত। হ্যানরিয়েট যখন বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার করত জিল সেটা শুনে আনন্দে অট্টহাসি দিত। একের পর এক শিশুকে হত্যা করে রক্তমাখা জামা-কাপড় পুড়িয়ে শান্তি পেত তারা। ফিনকি দিয়ে যখন বাচ্চাদের শরীর থেকে রক্ত বের হতো, জিল তখন সেই রক্ত গায়ে মেখে উল্লাসে ফেটে পড়ত। সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লেখানোর আগে সে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিল। অবশেষে জিলকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪৪০ সালে ২৬ অক্টোবর রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তখন তার বয়স ৩৬।

রিচার্ড ট্রেটন সেচ
খুনের পর রক্ত ও মাংস খেত ট্রেটন। এই কারণে তাকে ‘ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো’ নামে পরিচিতি লাভ করে সে। ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৫১ বছর বয়সি ইঞ্জিনিয়ার এমরোস গ্রিফিনকে দিয়ে শুরু করে তার হত্যাকাণ্ডের জীবন। তার দ্বিতীয় শিকার টেরেসা ওয়ালিন নামক এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তাকে হত্যা করার পর তার সঙ্গে নাকি যৌনকাজে লিপ্ত হয়েছিল সে। এমনকি রক্ত দিয়ে গোসলও করে রিচার্ড। এরপর তার নিকটতম প্রতিবেশী ৩৮ বছর বয়সি ইভেলিন মিরোথকে গুলি করে হত্যা করে। মেরিডিটথ ও তার পুরো পরিবারকে গুলি করে মেরে তাদের রক্ত ও মাংস খায় রিচার্ড। এর মধ্যে ছিল, মেরিডিটথের ৬ বছরের পুত্র জেসন, ২২ বছর বয়সি ভাগ্নে ডেভিড। বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পাশে চার্চে ফেলা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি দেখে ফেলে। সেই তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেয়। ওই ব্যক্তির স্বাক্ষর ও রিচার্ডের আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে ১৯৮০ সালের ৮ মে তাকে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের  নির্দিষ্ট তারিখের আগে ২৬ ডিসেম্বর তাকে মৃত অবস্থায় সেলে পাওয়া যায়। ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায়, অতিরিক্ত নেশাজাতীয় ওষুধ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে। কুখ্যাত এই খুনি ১৯৫০ সালের ২৩ মে আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করে।

জেফরি ডামার
১৮ বছর বয়সে ১৯ বছর বয়সি স্টিভেন হিকসকে হত্যার মাধ্যমে সে সিরিয়াল কিলারের দলে হাতেখড়ি দেয়। ১৯৬০ সালে জন্ম নেওয়া জেফরি ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটায়। তবে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল এই বছর সে তার প্রধান বিভীষিকাময় হত্যাগুলো একের পর এক ঘটাতে থাকে। তার প্রথম জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ঘটে ১৯৮৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। তখন তার বয়স ১৩। অভিযোগ যৌন হয়রানি। বিচারে তার এক বছরের সাজা ও তাকে মেন্টালি থেরাপি নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তী ৫ বছর কোনো রকম অসন্তোষ আচরণ করবে না এই মর্মে তাকে প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। সে আবারও হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। ১৯৯১ সালে ২৭ মে সিনথাসোমফোন নামের এক ১৪ বছরের বালক নগ্ন ও ক্ষতচিহ্ন অবস্থায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ডামারের নাম জানতে পারে। ডামারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় তাদের মধ্যে মদ খাওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। পুলিশ ডামারের কথা বিশ্বাস করে বালকটিকে তার কাছ থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু সেই রাতেই ডামার সিনথাসোমফোনকে খুন করে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আলাদা করে ফেলে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৯১ সাল থেকে সে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একজন করে হত্যা করেছিল। ওই বছর ২২ জুলাই ট্রেসি অ্যাডওয়ার্ড নামের এক ব্যক্তিকে প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় নিয়ে আসে জেফরি ডামার। এরপর তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরাতে যায় হত্যার উদ্দেশ্যে, কিন্তু হ্যান্ডকাফ পরানো কালে তাদের মধ্যে ধ্স্তাধস্তি শুরু হয়। ফাঁক পেয়ে অ্যাডওয়ার্ড পুলিশকে ফোন করে। পুলিশ এসে দেখে তখনো অ্যাডওয়ার্ডের এক হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো আছে। ডামারকে গ্রেফতার করার পর, তার বাসা থেকে আনো অদ্ভুত ও ভয়ংকর জিনিস উদ্ধার করে পুলিশ। তার ঘর থেকে অ্যাসিড ভেজানো পানিতে পাওয়া যায় অনেকগুলো লাশ। ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করা হয় কাটা মুন্ডু। এ ছাড়াও মোমবাতির বেদি থেকে অনেকগুলো মাথার খুলি আবিষ্কার করে পুলিশ। ১৭টারও বেশি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয় বিচারকাষ্ঠে। বিচারে তাকে ৯৩৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু জেফরি কারাবাসের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করে আদালতের কাছে। আদালত সে আবেদন নাকচ করে দেয়। এরপর ১৯৯৪ সালে জিমে কর্মরত অবস্থায় ক্রিস্টোফার স্কেভার নামক এক কয়েদির সঙ্গে ঝগড়া ও মারামারি বাধলে জেফরি ডামার মারাত্মকভাবে আহত হয়। হাসপাতাল পর্যন্ত সে আর পৌঁছাতে পারে না। অ্যাম্বুলেসের মধ্যেই মারা পড়ে ইতিহাসের অন্যতম প্রধান সিরিয়াল কিলার জেফরি ডামার।

জাভেদ ইকবাল মুঘল
পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া জাভেদ পুরো উপমহাদেশের খুনিদের সম্রাট। ১৯৫৬ সালে ৮ অক্টোবর পৃথিবীকে কলুষিত করার জন্যই এই ঘৃণ্য ব্যক্তির আগমন ঘটে। নৃশংস এই খুনির হাতে প্রায় ১০০ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। শুধু হত্যা নয়, সে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নও চালাত। মানুষ হত্যায় তার রুচি ছিল বিকৃত। ১৯৯৮ সালে দুজন বালককে যৌন হয়রানি অভিযোগে সে প্রথম গ্রেফতার হয়। কিন্তু প্রশাসন তাকে কিছুই করতে পারেনি। আইনের দেয়াল টপকে সে ঠিকই বের হয়ে আসে। তখনো পর্যন্ত তার ভয়াবহের খবর পৌঁছায় মানুষের কানে। জেল থেকে বের হয়ে সে নিজের কুকর্মগুলো চালাতে থাকে দেদার। সহজে মানুষকে পটাতে সে ছিল ওস্তাদ। মিশুক প্রকৃতির এই খুনির ভাষা ছিল খুব মিষ্টি। তার কথার জালে আটকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করত সে। হত্যার পর সে লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করে কাটত। খণ্ডাংশগুলো ফেলে না দিয়ে হাইড্রোলিক অ্যাসিডভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে সেটাকে গলিয়ে তরল বানিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন অথবা নদীতে ফেলে দিত। পুলিশ যখন তার বাড়িতে রেট দেয়, তখন সেখান থেকে উদ্ধার করে ভয়ংকর সব জিনিসপত্র। ঘরের ভেতরে পাওয়া যায় অপরাধে ব্যবহৃত ব্যাগ, ছুরি, অনেকগুলো ছবি, রক্তাক্ত জিনিসপত্র ও অ্যাসিডের বোতল। তার ঘরের সমস্ত দেয়াল জুড়ে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, ‘আমি জাভেদ ইকবাল। ১০০ শিশুর হত্যাকারী। এই পৃথিবীকে আমি ঘৃণা করি। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। এসব কাজের জন্যে আমি মোটেই লজ্জিত কিংবা অনুশোচনায় ভুগছি না।’ জাভেদের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে এসব খুন ও যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ আছে। বিচারে তাকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। এবং এইসব বিভীষিকাময় খুনের বর্ণনা শুনে বিচারক জানায়, ফাঁসির রায় তার জন্যে কমই হয়। এর সঙ্গে তাকে ১০০ বার ছুরিকাঘাত ও তার লাশকে ১০০ টুকরো করে অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখতে বলেন তাকে। কিন্তু ফাঁসির রায় কার্যকর হবার আগেই কারাগারে ছুরিকাহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সে আত্মহত্যা করেছিল। সালটা ২০০১। দিনটা ছিল ৭ অক্টোবর।

এরশাদ শিকদার
বাংলাদেশের ইতিহাসে সিরিয়াল কিলারদের ভেতর তার নাম স্মরণাতীত। তার জন্মভিটে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রাম। পরবর্তীতে ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে সে খুলনায় চলে আসে জীবিকার সন্ধানে। প্রথম দিকে সে কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এরপর আস্তে আস্তে ছোটখাটো চুরিচামারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় রাঙ্গা চোরা নামে ডাকতে থাকে সবাই। চুরি করতে করতে একসময় যোগ দেয় খুনিদের সঙ্গে। একের পর এক খুন করতে থাকে সে। রাজসাক্ষী হয়ে আদালতকে নূরে আলম জানায়, কমপক্ষে ৬০টি খুন করেছে সে। আদালতের কাছে সে ২৪টির হুবহু বর্ণনা তুলে ধরে। এরশাদ শিকদারের ছয়টি বিয়ের কথা জানা যায়। বহু নারীর নির্যাতনের খবরও দেয় নূরে আলম। সে জানায়, কৌশলে মিষ্টি ব্যবহার করে নারীদের তার আস্তানায় এনে নির্যাতন চালাত এরশাদ শিকদার। ১৯৯৯ সালে যখন সে গ্রেফতার হয়, তখন তার নামে মামলা ছিল ৩টি। এরপর তার নামে আরো ৪৩টি মামলা দায়ের করা হয়। সাতটি মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয় নিম্ন আদালতে। চারটি মামলায় হয় যাবজ্জীবন। খুলনা জেলা আদালতে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৬/সাইফ/এএন

No comments:

Post a Comment