জর্জ মাইকেলের বিখ্যাত ২০ গান (ভিডিও)
সার্জিন শরীফ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:27 Dec 2016 08:07:35 AM Tuesday || Updated:27 Dec 2016 10:25:32 AM Tuesday

আশির দশকের শুরুর দিকে তার গান ‘ওয়েক মি আপ বিফোর ইউ গো’ মুক্তি পাওয়ার পর পরই জর্জ মাইকেল রাতারাতি একজন সাধারণ বালক থেকে রীতিমতো বিখ্যাত পপ তারকায় পরিণত হয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে জর্জ বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি গানটির কথা আসলে গানের ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ তিনি মনে করতেন একাডেমিক ডিগ্রি নিয়ে সফল হওয়ার থেকে গান গেয়ে সাফল্য লাভ করা সহজ। নিন্দুকেরা এবং চারপাশের পরিচিতজনেরা অনেকেই তার সঙ্গে একমত ছিলেন না।
কিন্তু স্বীয় গুণে গুণান্বিত এই সংগীতশিল্পী অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তায় বিখ্যাত শিল্পী অ্যারেথা ফ্র্যাংকলিন এবং এলটন জন- এর পাশে নিজের নাম লেখান। গানের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছিলেন মানুষের মনের কথা এবং সোচ্চার হয়েছিলেন সামাজিক অনাচার, কুপ্রথার বিরুদ্ধে।

১৯৮১ সালে জর্জ মাইকেল ও আরেক সংগীতশিল্পী অ্যান্ড্রু রিজলি গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘হোয়াম!’। ১৯৮৬ সালে হোয়াম ভেঙে যাওয়ার পর একক ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন জর্জ মাইকেল।
জর্জ মাইকেল এর গাওয়া অজস্র গানের মধ্যে থেকে কালজয়ী ২০টি গান নিয়ে এ প্রতিবেদন।
হোয়াম!, ‘ওয়েক মি আপ বিফোর ইউ গো’ (১৯৮৪): জর্জ মাইকেল আর তার ব্যান্ডের সহশিল্পী অ্যান্ড্রু রিজলি-র বিখ্যাত চারটি অ্যালবাম আর ২০টির বেশি বিখ্যাত একক জনপ্রিয় গান রয়েছে। কিন্তু এই গানটি দিয়েই তাদের পথচলা শুরু। মাইকেল গানটির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন রিজলির লেখা একটি নোটের মাধ্যমে যার মধ্যে মজা করে ‘গো গো’ লেখা ছিল। আর এই গানেরও সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত শব্দও ‘গো গো’।
‘কেয়ারলেস হুইসপার’ (১৯৮৪): এই গানটিও মাইকেল লিখেছিলেন বন্ধু রিজলির সঙ্গে। ‘হোয়াম!’ বন্ধ করে দেয়ার আগেই তিনি এমন একটি গান করেছিলেন। গানটি আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয়তার তালিকায় এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছিল। ২০০৯ সালে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মাইকেল বলেন, ‘ভক্তদের মধ্যে এই গানটির ব্যাপক প্রভাব দেখে আমি এখনও হতভম্ব হয়ে পড়ি।’
হোয়াম!, ‘এভরিথিং সি ওয়ান্টস’ (১৯৮৪): গানটি খুবই নিগূঢ় অর্থ বহন করে। হুয়াম! ব্যান্ডের তৃতীয় বিখ্যাত গান এটি। মাইকেলের ব্যান্ডের ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস পোর্টার বলেন, ‘মাইকেল একবার টানা চারদিন ধরে গানটির সারকথা আমাদের সামনে ব্যাখা করে শেষ করেছিলেন।’ এই গানটি প্রমাণ করে স্বল্প সময়ে মাইকেলের সাফল্য আসলে কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ছিল না।
হোয়াম! ‘লাস্ট ক্রিস্মাস’ (১৯৮৫): ক্রিস্মাস ডে নিয়ে পপ ঘরানার শিল্পীরা খুব বেশি গান করেন না। কারণ পপ গানের রীতি সাধারণত ক্রিস্মাসের মতো ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে ঠিক সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণেই এ জাতীয় পপ গান খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায় না। কিন্তু ‘লাস্ট ক্রিস্মাস’ গানটি এর ব্যতিক্রম। ক্রিসমাসের দিনে যদি কারো প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় আর গানের মধ্যে সেই কথা উঠে আসলে, সেটা অবশ্যই মানুষের হৃদয় ছুঁয়েই যায়।
হোয়াম! ‘দ্য এজ অব হেভেন’ (১৯৮৬): মাইকেল আর রিজলি একদিন ঘোষণা করে বসলেন যে তারা ‘হোয়্যাম!’ বন্ধ করে দিচ্ছেন। আর ‘দ্য এজ অব হেভেন’ গানটি হবে এই ব্যান্ডের শেষ গান। গানটির কথা আসলে যৌনতার ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে প্রথম প্যারা- ‘আমি ততক্ষণ তোমাকে আঘাত করতে চাই না, যতক্ষণ না তুমি সেটা চাও...’। ১৯৮৬ সালে যখন ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মাইকেল গানটি গেয়েছিলেন তখন সেখানে ৭২০০০ দর্শকের সমাগম ঘটেছিল।
‘অ্যা ডিফারেন্ট কর্ণার’ (১৯৮৬): ‘কেয়ারলেস হুইসপার’-এর পরে মাইকেলের গাওয়া অন্যতম একক গান এটি। ‘মিউজিক ফর্ম দ্য এজ অব হেভেন’- অ্যালবামে গাওয়া গানটির রয়েছে এক অনন্য রেকর্ড। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এটিই ছিল কোনো ব্যক্তির নিজের লেখা, সুর করা এবং গাওয়া প্রথম গান, যা যুক্তরাজ্যে গানের তালিকায় প্রথমবারের মতো জনপ্রিয়তায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের টপ ১০ চার্টে স্থান করে নিয়েছিল গানটি।
‘আই নো ইউ ওয়্যার ওয়েটিং (ফর মি)’ (১৯৮৭): অ্যারেথা ফ্র্যাংকলিন এর সঙ্গে এই ডুয়েট গানটির জন্য জর্জ মাইকেল ‘গ্র্যামি’ পুরস্কার জিতে নেন।
‘আই ওয়ান্ট ইওর সেক্স’ (১৯৮৭): গানটি মানুষের শালীনতাবোধে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু মাইকেল মনে করতেন ‘গণমাধ্যমগুলো ভালবাসা এবং সঙ্গমকে অবিশ্বাস্যভাবে আলাদা করে দিয়েছে।’ গানটি মূলত ভালোবেসে সঙ্গমকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং অনিরাপদ মিলন পরিহার করে একজন সঙ্গীকে বেছে নেয়ার কথা বলছে।
‘ফেইথ’ (১৯৮৭): ‘হোয়্যাম!’ ব্যান্ড শেষ হবার পরে ভক্তরা সবাই জল্পনা-কল্পনা করছিলেন, কি হতে পারে মাইকেলের পরবর্তী কাজ? ২৪ বছর বয়সে তিনি নিজের লেখা এবং প্রযোজনায় ‘ফেইথ’ নামক ক্ল্যাসিক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। যার মধ্যে সবচেয়ে সমাদৃত গানের নামও ‘ফেইথ’।
‘ফাদার ফিগার (১৯৮৮): গানটিতে ভালোবাসার মানুষের প্রতি অঙ্গীকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে।
‘ওয়ান মোর ট্রাই’ (১৯৮৮): ১৯৮৮ সালে মাইকেলের গাওয়া এই একক গানটি বিলবোর্ড এর ‘হট ১০০ তালিকা’ এবং ‘হট ব্ল্যাক সিঙ্গেলস’ তালিকায় সে বছর প্রথম স্থান অধিকার করেছিল।
‘প্রেয়িং ফর টাইম’ (১৯৯০): ‘লিসেন উইথআউট প্রিজুডিস’ অ্যালবামের এই গানটিতে অসাম্য এবং ক্রমান্বয়ে আশাহত হয়ে পড়া একজন মানুষের গল্প বলা হয়েছে। ২৬ বছর আগে মুক্তি পাওয়া এই গানটি যেন এখনও শ্রোতার মনে এক নতুন অনুভূতির সৃষ্টি করে।
‘ফ্রিডম! ৯০’ (১৯৯০): ১৯৯০ সালের দিকে মাইকেল নিজের পপ তারকার খ্যাতি থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাইতেন। তিনি গেয়েছিলেন, ‘আমার গভীরে আরেক স্বত্তা আছে। কেউ একজন আছে যাকে ভুলে গেছি আমি...’
‘ডোন্ট লেট দ্য সান গো ডাউন অন মি’ (১৯৯১): গানটি মূলত আরেকজন বিখ্যাত কালজয়ী শিল্পী এলটন জন-এর গাওয়া। ১৯৭৫ সালে এলটন গানটি গেয়েছিলেন। ১৬ বছর পর ১৯৯১ সালে এইডস, শিক্ষা এবং শিশুদের জন্য তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে এই দুই মহারথী গানটির ডুয়েট গান। ফলশ্রুতিতে গানটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের টপ লিস্টে চলে আসে এবং ‘গ্র্যামি’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়।
‘টু ফাংকি’ (১৯৯২): ১৯৯২ সালে এইচআইভি/এইডস এর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গানটি গাওয়া হয়েছিল। গানটিতে শরীরের রহস্যময় তাড়না অবদমনের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
‘সামবডি টু লাভ’ (১৯৯২): ১৯৯২ সালে এইড্স এর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এক বিশাল কনসার্টের আয়োজন করা হয়। বিখ্যাত সব পপতারকাদের সঙ্গে একই স্টেজে জর্জ মাইকেল এই গানটি সরাসরি গেয়েছিলেন।
‘জেসাস টু অ্যা চাইল্ড’ (১৯৯৬): নিজের প্রিয়তমা আনসেলমো ফেলেপ্পা-কে নিয়ে গাওয়া এই গানটি যেন ভালোবাসার মানুষের জন্য এক মর্মস্পর্শী সম্মান। তিনি গেয়েছিলেন, ‘তুমি ছিলে স্বর্গের উপহার/স্বর্গেই আবার ফিরে গেলে/তুমি আমার দিকে চেয়ে হেসেছিলে/যেন যীশু হেসেছিলেন এক শিশুর পানে ...’। উল্লেখ্য, ফেলেপ্পা এর কয়েক বছর আগেই এইডস সম্পর্কিত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান।
‘ফাস্টলাভ’ (১৯৯৬): এই গানটি যখন গেয়েছিলেন তখন মাইকেলের আসলে দুর্দিন চলছিল। প্রেয়সী ফেলেপ্পার মৃত্যু আর স্পন্সর সনি’র সঙ্গে মামলায় তার অবস্থা বিধ্বস্তপ্রায়। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ বা এক রাতের সম্পর্ক নিয়ে গানটি সাজানো হয়েছে। সেই বছর গানটি যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার তালিকায় প্রথম দশটির মধ্যে এবং যুক্তরাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল।
‘আউটসাইড’ (১৯৯৮): ১৯৯৮ সালে এই বিখ্যাত শিল্পীকে পাবলিক টয়লেটে ব্যভিচারের দায়ে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি এই গানটি লিখেন এবং এর মিউজিক ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে দর্শক-শ্রোতাকে জানান দেয়ার চেষ্টা করেন।
‘অ্যামাইজিং’ (২০০৪): আমেরিকান টপচার্টে মাইকেলের গাওয়া শেষ বিখ্যাত গান। গানটির মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ভালোবাসা কিভাবে একজন শিল্পীর জীবনকে পরিবর্তন করে। এটা আসলে তার এবং নব্বই দশকের মধ্য সময় থেকে তার প্রেয়সী কেনি গস এর মধ্যকার সম্পর্কের কাহিনি নিয়ে রচিত।
তথ্যসূত্র: রোলিংস্টোন
http://www.risingbd.com/%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B2-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A7%A8%E0%A7%A6-%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%93/219411
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ
No comments:
Post a Comment