Wednesday, 23 March 2016

Head and hair

টাক ঢাকতে রাজা-রানীর কৌশল

মিলন আশরাফ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:22 Mar 2016   06:15:04 PM   Tuesday   
টাক ঢাকতে রাজা-রানীর কৌশল
মিলন আশরাফ : ‘টাক, ঢেকে যাক!’ এমন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড প্রায়শ চোখে পড়ে আজকাল। ঢাকা শহরে এর মাত্রা আরও বেশি। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওয়াসা’র পানি বিশুদ্ধকরণে যেসব মেডিসিন ব্যবহার করা হয় তা চুলের জন্য ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় গবেষকরা জানাচ্ছেন, আগামী ১০ বছরে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষের মাথার চুল অস্বাভাবিক হারে কমে যাবে। অর্থাৎ শহরের মানুষের টেকো মাথা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তবে টাক সমস্যা যে, আমাদের দেশেই আছে তা কিন্তু নয়। এ সমস্যা বিশ্বজুড়ে। বেশ পুরনোও টাকমাথার কাহিনি। আবার এ সমস্যা মানুষ বুঝে হয় না; যে কারো হতে পারে- রাজা-রানী থেকে ফুটপাতের ভিখারি পর্যন্ত। প্রিয় পাঠক, এ লেখায় পৃথিবীর বিখ্যাত ৪ রাজা-রানীর টাক মাথার কথা বলা হলো।

রানী প্রথম এলিজাবেথ: তিনি একাধিক রঙের নকল চুল পরতেন। এর মধ্যে নীল সিল্কের চুল সবার নজর কেড়েছিল। আয়নার সামনে তিনি কখনো যেতেন না। পরিচারিকার মাধ্যমে নকল চুল পরতেন তিনি। তখনকার দিনে রাজদরবারের অন্দরমহলে বিশেষ অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারতেন না। দরবারে কেন এতো বিভিন্ন রঙের চুল আনা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করতে সাহস হতো না কারও। রাজ দরবারে অনেক কিছুই রানী ও রাজার খেয়াল খুশি মতো চলতো। এসব বিষয়ে প্রশ্ন দুঃসাহসের নামাত্তর। এবার আসল কথাটি বলি, রানী প্রথম এলিজাবেথ মাঝ বয়সে এসে তার সাধের চুল হারান। এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি টাক মাথা নিয়েই কাটিয়েছেন। মজার ব্যাপার হল, এ খবর ব্যক্তিগত চাকরানি ছাড়া কেউ জানতে পারেনি তাঁর জীবদ্দশায়।

মেরি আর্জেন্টাইন: সম্রাট পঞ্চদশ লুইয়ের স্ত্রী ছিলেন রানী মেরি। তিনি সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। সময়টাও ভালো যাচ্ছিল না। ফরাসি বিপ্লব প্রায় আসন্ন। রানী একদিন সকালে উঠে দেখলেন তাঁর মাথার চুল কমে যাচ্ছে। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ টাকমাথা হয়ে গেলেন। শুরু করলেন নকল চুল ব্যবহার। নকল চুল ব্যবহার করাতে সবাই ভেবেছিল এটা বোধ হয় ফ্যাশন। তাই এসব বিষয়ে রাজ্যের সভাসদরা তেমন প্রশ্ন তুলতেন না। এরপর শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। রানীকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। এ সময় তাঁর নকল চুল কেড়ে নেওয়া হয়। তখন ফাঁস হয় তাঁর টাক রহস্য। গিলোটিনে চড়ানোর সময় তিনি তাঁকে যেন একটা ক্যাপ দেওয়া হয়, এই ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন। তাঁর এই ফরিয়াদ মঞ্জুর করা হয়েছিল।

মেরি কুইন: ১৮ বছর কারাগারে ছিলেন মেরি কুইন। রানী এলিজাবেথ তাঁর শিরচ্ছেদের আদেশ দেন। জল্লাদ এক কোপে ধড় থেকে তাঁর মাথা আলাদা করে ফেলেন। মাথাটা মাটিতে পড়ার পর চুল খসে পড়ে পুরো টাক বের হয়ে যায়। এই ১৮ বছর জেল জীবনে কেউ জানতে পারেনি মেরি কুইনের মাথায় চুল ছিল না। অর্থাৎ তিনি নকল চুল পরতেন। বাইরের সাধারণ লোকও ঘুণাক্ষরে জানতে পারেনি এ কথা।

পঞ্চদশ লুই: আগেই বলেছি, সম্রাট পঞ্চদশ লুইয়ের স্ত্রী ছিলেন রানী মেরি। স্ত্রীর মতো লুইয়েরও মাথার সব চুল পড়ে গিয়েছিল। চুল পড়ার পর সম্রাট বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। রানী তো যাহোক অন্দরমহলে সারাক্ষণ থাকতে পারেন কিন্তু রাজা পড়লেন মহা ভাবনায়। এরপর প্রতিজ্ঞা করলেন, এ টাক মাথা তিনি কাউকে দেখাবেন না। ডাকলেন নাপিতকে। বললেন, প্রতিদিন গোসল করার পর সে যেন তাঁর মাথায় নকল চুল পরিয়ে দেয়। নাপিত সম্রাটের কথা মতো প্রতিদিন গোসলের পর পঞ্চদশ লুইকে নকল চুল পরিয়ে দিতেন। কিন্তু নাপিতের জন্যও ছিল একটা শর্ত। সে কাউকে এ বিষয়ে বলতে পারবে না। সেজন্য তাকে পর্দার আড়াল থেকে নকল চুল পরিয়ে দিতে হতো। দেশের জনগণও কখনো জানতে পারেনি তাদের সম্রাট একেবারে টাকমাথা!




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৬/তারা

No comments:

Post a Comment