বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য জব্বারের বলীখেলা
রেজাউল : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:13 Apr 2016 04:40:14 PM Wednesday || Updated:14 Apr 2016 08:20:13 AM Thursday

জব্বারের বলীখেলা
এবার বাংলা নববর্ষকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বরণ করতে চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলার ১০৭ তম আসর বসতে যাচ্ছে নগরীর লালদিঘী ময়দানে।
আবদুল জব্বারের বলীখেলা চট্টগ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি নিদর্শন। শতাব্দী বছর পুরনো এই খেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। চট্টগ্রামের বর্তমান কোতোয়ালি থানার আওতাধীন আন্দরকিল্লা বক্সিরহাটের তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবদুল জব্বার একক উদ্যোগে নগরীর লালদিঘী ময়দানে বলীখেলার সূচনা করেন।
এ বলীখেলা আয়োজনের পেছনে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি কাজ করেছিল একটি মহৎ উদ্দেশ্য। যে উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল দেশপ্রেম, ন্যায্য অধিকার আর খাঁচার বাঁধন ছিড়ে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ার আকাঙ্খা থেকেই আবদুল জব্বার এই বলীখেলার সূচনা করেছিলেন। মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলতে বলীখেলার সূচনা করেছিলেন আবদুল জাব্বার।
বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন কৌসুলি সংগঠক হিসেবে আবদুল জাব্বারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ১৯০৯ সাল থেকে শুরু এই জব্বারের বলীখেলা চলছে যুগ যুগ ধরে। নগর-বন্দর কিংবা গ্রামাঞ্চল থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকলেও শুধুমাত্র চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলা এখনো টিকে আছে স্বগৌরবে। হয়েছে আরও উৎসবমুখর, বর্ণিল।
এই উৎসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও নানা আনন্দ আয়োজন। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে জব্বারের বলীখেলা এদেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯০৯ সাল থেকেই জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবছরের ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদিঘীর মাঠে জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এক সময় এই খেলা শুধু চট্টগ্রামের মানুষের কাছে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমান আধুনিক তথ্য ও সম্প্রচার প্রযুক্তির কারণে এর খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও। জব্বারের বলীখেলা বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়া সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে এই খেলা এখন সারা বিশ্বেই ব্যাপক পরিচিত লোকজ উৎসব।
বাংলা নববর্ষের নির্দিষ্ট একটি দিন লাখো মানুষের অংশগ্রহণে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হলেও এই নির্দিষ্ট দিনের আগে ও পড়ে সপ্তাহজুড়ে নগরীর লালদীঘি মাঠ ছাড়িয়ে প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
চট্টগ্রামের বলীখেলা যেমন করে ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, একইভাবে বলীখেলায় অংশগ্রহণকারী এবং বিজয়ী অনেক বলীও পৌঁছে গেছেন খ্যাতির শীর্ষে। সর্বশেষ ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলার দিদার বলী এখন সারা বিশ্বেই একটি পরিচিত মুখ। এই ১২ বছর ধরে কেউ দিদার বলীকে হারাতে পারেনি। এবারের বলীখেলায়ও দিদার বলী যথারীতি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দিদার বলীর মতো অনেক বলীর নাম জানা যায়। যারা ছিলেন তাদের সময়কালে রীতিমত হিরো। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন পটিয়ার হিলাল বলী, একই উপজেলার হাইদগাঁওয়ের অলি বলী, মুজাহিদ বলী, আশিয়ার আমানশাহ বলী, জিরির ইন্দবলী, ইশ্বরখাইন ধলঘাটের গণি বলী, শোভনদন্ডীর তোরপোচ বলী, হুলাইনের হিম বলী, বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়ার যুগী বলী, চন্দনাইশ উপজেলার বরকলের লাল মিয়া বলী, বরমার আহমদ ছফা বলী, আনোয়ারা চাতরীর চিকন বলী, সাতকানিয়া খাগরিয়ার চান্দ বলীর নাম খ্যাতি রয়েছে।
জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন বলীকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় গোল্ড মেডেল, ক্রেস্ট এবং নগদ ১৫ হাজার টাকা। রানার্সআপ বলী পেয়ে থাকেন ১০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট।
রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৩ এপ্রিল ২০১৬/রেজাউল/রিশিত
No comments:
Post a Comment