Monday, 2 May 2016

World Press freedom day


Walton BD 5% Discount

মুক্ত গণমাধ্যমই গণতন্ত্রের প্রকৃত বন্ধু

শাহ মতিন টিপু : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:03 May 2016   10:17:02 AM   Tuesday   ||   Updated:03 May 2016   10:18:11 AM   Tuesday
মুক্ত গণমাধ্যমই গণতন্ত্রের প্রকৃত বন্ধু
শাহ মতিন টিপু : আজ  ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে বা  বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ।  ফ্রিডম অব ইনফরমেশন এন্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩ মে এই দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির প্রাক্কালে সু খবর এই যে, ২০১৬ সালে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার দুই ধাপ এগিয়ে ১৪৪তম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৫ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬তম। এই সূচক তৈরি করেছে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। ১৮০টি দেশের গণমাধ্যম পর্যালোচনা করে এই সূচক করা হয়।

এবার বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কমার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে বলে দাবি করেছে ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠনটি। এই সংবাদ প্রকাশের দু’সপ্তাহের মধ্যে এলো ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উদযাপনের দিন। ১৯৯৩ সাল থেকে ‘৩ মে’ পালিত হয়ে আসছে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’। ১৯৯১ সালে নামিবিয়ার উইন্ডহকে অনুষ্ঠিত ‘ডিক্লারেশন অন প্রমোটিং ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড প্লুরালিস্টিক মিডিয়া’ শীর্ষক সেমিনারের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে এ দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল লক্ষ, বিশ্বব্যাপী স্বাধীন, অবাধ ও বহুমাত্রিক শক্তিশালী গণমাধ্যম ও তথ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রের অগ্রগতি ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা।

এবারে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে’ বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৪৫ দশমিক ৯৪, যা গত বছর ছিল ৪২ দশমিক ৯৫। ১৮০টি দেশের মধ্যে সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকের দেশ ইরিত্রিয়া। এর ঠিক উপরেই রয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার ওপরে রয়েছে চিন ও সিরিয়া।

অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ১০৫, ভারত ১৩৩, থাইল্যান্ড ১৩৬, ফিলিপাইন ১৩৮, শ্রীলঙ্কা ১৪১, মিয়ানমার ১৪৩, আফগানিস্তান ১২০, মালয়েশিয়া ১৪৬ ও পাকিস্তান ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪১তম, যা গত বছরে ছিল ৪৯তম। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল ২০তম। ভারত এবার ১৩৩তম, ২০১৫ সালে তারা ছিল ১৩৬তম। সবার ওপরে রয়েছে ফিনল্যান্ড। সূচকে টানা ছয় বছর ধরেই প্রথম স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। পরের অবস্থানে নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। সূচকে ফ্রান্স গত বছরের চেয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে ৪৫তম, জাপান ১১ ধাপ পিছিয়ে ৭২তম, অস্ট্রেলিয়া ২৫তম অবস্থান ধরে রেখেছে।

তবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো হলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সরকার ও ব্যবসায়ীদের চাপে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বেশি খর্ব হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করে অপপ্রচারের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

বর্তমান সরকার বহুল প্রত্যাশিত ‘তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ’কে আইনে পরিণত করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভালো হবে যদি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

মুক্ত গণমাধ্যমই গণতন্ত্রের প্রকৃত বন্ধু। গণতন্ত্র আর গণমাধ্যম একটি আরেকটির পরিপূরক। যেখানে গণমাধ্যম যতবেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্রও ততবেশি শক্তিশালী। পরমত সহিষ্ণুতাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কথা। আলোচনা, মতপ্রকাশ, ঐক্য, সংহতি হলো গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা গণতন্ত্রের একটি পূর্ব শর্ত। মৌলিক অধিকার হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই সেই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বলা যায় না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। পৃথিবীর সব সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে।

গণমাধ্যমই সর্বপ্রথম শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এ দেশের বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে দ্রুত বিচারের সক্ষমতা এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর সিলেটে শিশু রাজন ও খুলনায় শিশু রাকিবকে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে। রাজন হত্যার চার মাস এবং রাকিব হত্যার তিন মাস পাঁচ দিনের মাথায় ছয় আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার দুটি রায় এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় মামলার গতি ত্বরান্বিত হওয়ায় সব মহলই খুশি। গণমাধ্যমের কল্যাণেই এসব মামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন হচ্ছে। মিডিয়া ও বিচারব্যবস্থার প্রতিও মানুষের আস্থা বেড়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’ গণসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকৃত। স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বহুবিধ আইন, বিধিবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অন্যতম উৎস হলো গণমাধ্যম। বলা হয়ে থাকে গণমাধ্যম জনগণের মতামতকে ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ গণমাধ্যমের এজেন্ডা পাবলিক এজেন্ডায় পরিণত হয়। সমাজে নানা ঘটনার মধ্যে কোনটি বেশি আলোচিত হবে বা গুরুত্ব পাবে গণমাধ্যমই তা নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে সহজবোধ্য ও দ্রুততম তথ্য প্রাপ্তির উৎস হিসেবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এক ধাপ এগিয়ে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৬/টিপু

No comments:

Post a Comment