Thursday, 26 May 2016

Poet kazi Nazrul Islam evergreen in history

এই সময় এবং কবি নজরুল

সাইফ বরকতুল্লাহ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:25 May 2016   08:25:49 AM   Wednesday   ||   Updated:25 May 2016   10:41:02 AM   Wednesday
এই সময় এবং কবি নজরুল
সাইফ বরকতুল্লাহ :  তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/ সেকি মোর অপরাধ?/ চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী/ বলে না তো কিছু চাঁদ, কিংবা চেয়ো না সু নয়না আর চেয়ো না/ এ নয়ন পানে/ জানিতে নাহিকো বাকি সই ও আঁখি/ কি যাদু জানে, অথবা মোর প্রিয়া হবে এস রানী/ দেব খোঁপায় তারার ফুল- এ গানগুলো শুনে আপনি নিশ্চয়ই ভাববেন কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। রোমান্টিক কবি।

আবার বিদ্রোহী কবিতা পড়ে তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তবে বিদ্রোহী কিংবা প্রেমের কবি যাই বলি না কেন, তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। গভীরভাবে তার লেখা গান, ছোটগল্প, কবিতা বিশ্লেষণ করলে মাটি ও মানুষের জীবনচিত্রই পাওয়া যায়। নজরুল শুধু মাটির কাছাকাছি ছিলেন না, নজরুল লেটোর দলে গান গাইতেন। পালা রচনা করতেন।

নজরুল দেখিয়েছেন বাঙালির সংস্কৃতিতে সবাই এক। বিশেষ করে হিন্দু-মুসলিম। বাঙালির ভেতরে যে পৌরাণিক পুরাণ ও যে লৌকিক পুরাণ বিদ্যমান, তা নিয়ে তিনি একত্র করতে চেয়েছেন। তিনি একসঙ্গে হিন্দু-মুসলিম মিলে যে পুরাণের সৃষ্টি করেছেন, তা আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনন্য উদাহরণ। আধুনিক বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবি। একমাত্র নজরুলের কবিতায়ই ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের একটি সুনির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মুসলমান কবিদের মধ্যে নজরুলই প্রথম শ্যামা সংগীত রচনা করেন। তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারায় ভাষার মাধ্যমে কবিতা-গানে তিনি যে বিদ্রোহ ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বাংলা সাহিত্যে বিরল।

নজরুলের বিচিত্র সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে গভীর বিস্ময়-উদ্রেকী ঘটনা। নজরুলকে চেনার মধ্য দিয়ে আমরা মূলত বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী সৃষ্টিকে অনুধাবন করতে সক্ষম হই। আবেগকে শিল্পের মধ্য দিয়ে কী করে সমষ্টির অঙ্গীকারে রূপান্তর করা সম্ভব, সাহিত্যে নজরুল ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে জনগণমনচিত্তকে প্রবলভাবে আলোড়িত করার ক্ষেত্রে নজরুলের অবদান বিস্ময়ের জন্ম দেয়। যেমনটি আমার ‘কৈফিয়ত’ কবিতায় কবি নিজেই উচ্চারণ করেছেন, ‘প্রার্থনা করো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস/ যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ!’  

নজরুল বৈপ্লবিক উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদী-উপনিবেশবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনমানুষের সংগ্রামকে কবিতা, গদ্য ও গানে ভাস্বর করেছেন অখণ্ড মানবতার প্রতি গভীর বিশ্বাস, ভালোবাসা ও শিল্পিত অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। ‘জাতের বজ্জাতি’ কবিতায় বলেছেন- ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাল জালিয়াত খেলছ জুয়া/ ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া/ হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি, ভাবলি এতেই জাতির জান/ তাই তো বেকুব করলি তোরা এক জাতিকে একশ খান।’  

অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। নজরুল বলেছেন, ‘আমি আমার জন্মক্ষণ থেকে আমার অস্তিত্বকে খুঁজে ফিরছি। যখন আমি বালক, তখন ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার কান্না আসত- বুকের মধ্যে বায়ু যেন রুদ্ধ হয়ে আসত।… অই আকাশটা যেন ঝুড়ি, আমি যেন পাখির বাচ্চা, আমি অই ঝুড়ি চাপা থাকব না- আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ আজ এই সময়ে আমরা এমন অবস্থার মধ্যে বিরাজমান, যেখানে নজরুলের এই অভিভাষণ যেন তারই স্পষ্ট উচ্চারণ।

এ জন্যই হয়তো কবি তরুণ সমাজকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই আমাদের সময়ে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানেই অন্যায় হচ্ছে, সেখানেই নজরুল প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্যই নজরুল প্রাসঙ্গিক। কেননা তিনি তো নিজেই বলেছেন- ‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নাহি কিছু মহিয়ান।’ কিংবা ‘আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম বনভূমি রণিবেনা।’

তবে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ‘বাংলাদেশ’ কবিতায় বলেছেন, ‘এই দেশের মাটি-জল ও ফুলে-ফলে যে রস, যে সুধা নাহি ভূমণ্ডলে। এই মাটির বুকে হেসে খেলে সুখে ঘুমাবো এই বুকে স্বপ্নাতুর’। এ জন্যই বলা যায়, এই সময়ে নজরুল প্রাসঙ্গিক।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৬/সাইফ বরকতুল্লাহ/এএন

No comments:

Post a Comment