খুলনার অ্যালুমিনিয়াম শিল্পে সম্ভাবনার হাতছানি
মুহাম্মদ/নূরুজ্জামান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:01 May 2016 06:46:56 PM Sunday

খুলনার বিভিন্ন অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা
এসব সামগ্রী তৈরির জন্য নগরীতে গড়ে উঠেছে ১৪/১৫টি কারখানা। এসব কারখানায় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ধীরে ধীরে এর চাহিদা এবং ব্যাপকতাও বাড়ছে। ফলে প্লাস্টিক ও দস্তার দৌড়ে পিছিয়ে থাকা অ্যালুমিনিয়াম শিল্প সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
তবে শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ, শিল্প স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। সেই সঙ্গে খুলনার আরও কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে গেছে, শিল্পনগরী খুলনায় অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি, পাতিল, কড়াই, কলস, ঢাকনা, বাটি, গ্লাস, বালতি, জগসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরির জন্য প্রায় ১৪-১৫টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে শতাধিক মানুষ কাজ করছেন। এর সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা মিলিয়ে আরও ৫ শতাধিক মানুষ সম্পৃক্ত আছেন। নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা উৎপাদন সাপেক্ষে আড়াইশ’ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনার বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্য জেলার দাকোপ, কয়রা, তেরখাদা, চুকনগর, দিঘলিয়া, রূপসা, পাইকগাছা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।
সাধারণ পাইকার, ফেরিওয়ালা ও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মালামাল সংগ্রহ করেন। ফেরিওয়ালারা গ্রাম-গঞ্জে পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে বা নগদ টাকায় এ পণ্য বিক্রি করে থাকেন।
নতুন অ্যালুমিনিয়াম ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে ব্যবসায়ীরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা লাভে বিক্রি করেন। তবে ফেরিওয়ালারা পুরনো অ্যালুমিনিয়াম ১৮০ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে কিনেও নতুন পণ্য বিক্রি করেন।
খুলনা মহানগরীর গল্লামারী এলাকার আলাউদ্দিন মেটালের মালিক মোশারেফ খান বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছি। কিন্তু ব্যবসার জন্য যে ধরনের পুঁজি ও মেশিনারিজ প্রয়োজন তা বিনিয়োগ করা কষ্টসাধ্য।
অ্যালুমিনায়ামের গৃহস্থালি সামগ্রি তৈরিতে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। ঠিকমত ব্যাংকঋণ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জায়গা না হলে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই এ শিল্পের জন্য সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। পাশাপাশি নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারতেন।
একই অভিমত ব্যক্ত করেন মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক মো. আসিফ। তিনি বলেন, বিদ্যমান সমস্যা উত্তরণ করা গেলে এ শিল্পে নতুন ধারা সৃষ্টি হবে।
অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের শ্রমিক মালেকা বেগম বলেন, এ শিল্পের কাজ কষ্টসাধ্য। প্রচুর শ্রম দিতে হয়। কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদনের পর তা পালিশ ও পরবর্তীতে পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হয়। প্রতিটি স্তরেই তাই সতর্ক থাকতে হয়। একটু ভুল হলে মান খারাপ হতে পারে। এখানে ভালো কাজ করতে পারলে মজুরিও ভালো।
পাইকারি ক্রেতা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকরি গ্রামের মো. মনির হোসেন বলেন, খুলনার অ্যালুমিনিয়ামের মান ভালো। এখান থেকে পণ্য নিয়ে আমরা ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জে ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের দেই। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এ শিল্প আরও প্রসার পেত।
একই অভিমত প্রকাশ করেন মাদারীপুরের ব্যবসায়ী সেলিম খান।
রাইজিংবিডি/খুলনা/১ মে ২০১৬/মুহাম্মদ/নূরুজ্জামান/রিশিত
No comments:
Post a Comment