বামন পরিবারের জীবন যেমন
মনিরুল হক ফিরোজ
: রাইজিংবিডি ডট কম
প্রকাশ: ২০১৭-০২-১২ ১১:৩০:৩৮ এএম || আপডেট: ২০১৭-০২-১২ ১:৩০:২৩ পিএম
![]() |
সাতসতেরো ডেস্ক : একটি বিরল জেনেটিক অবস্থা এক পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে ৯ জনকেই বামন করেছে।
রাম রাজের এই পরিবার একসময় ২১ সদস্যের ছিল, যাদের মধ্যে ১৮ জনই ভুক্তভোগী হয়েছে অ্যাকোন্ড্রাপ্লাসিয়া নামক জিনগত শারীরিক সমস্যার কারণে। শরীর ও হাত-পায়ের আকৃতি ক্ষুদ্রাকৃতির করার জন্য পরিচিত রোগ অ্যাকোন্ড্রাপ্লাসিয়া। তার সাত বোন এবং চার ভাইয়ের মধ্যে আটজনই এই সমস্যায় আক্রান্ত। ইতিমধ্যে তার বড় ভাই পৃথ্বি রাজসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।
বর্তমানে ৫২ বছর বয়সি রাম রাজ তার ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে ভারতের হায়দ্রাবাদের ওল্ড সিটিতে বসবাস করছেন। এবং ৯ জনই বামন হওয়ায়, তারা শহরটির সবচেয়ে বড় বামন পরিবার হিসেবে পরিচিত।
তাদের এই অবস্থা অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ ও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যার বেশির ভাগই অপ্রত্যাশিত।
রাম রাজ বলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই লোকজনের ভিড় লেগে যায় আমাদেরকে ঘিরে। তারা নানা ধরনের প্রশ্ন করে। যেমন, কেন আমরা এতটা খাটো হলাম? কোথা থেকে এসেছি? প্রত্যেকেই আমাদের উপহাস করে।’
মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি এখানে স্বাস্থ্য ইস্যুও রয়েছে। যেহেতু পায়ের আকৃতি ছোট, তাই হাঁটাচলায় সমস্যা হয়। রাম রাজ বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পরে পা দুর্বল হয়ে পড়ে। আমি আমার দাদা এবং বাবাকে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে দেখেছি, কিন্তু তারা তা ম্যানেজ করে হাঁটাচলা করেছে।’
‘কিন্তু আমি হাঁটায় অসুবিধা ভোগ করছি এবং আমার ছোট ভাই সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে না। আমার দুই বোনেরও একই অবস্থা।’
রাম রাজ ‘বিবাহ অভ্যর্থনাকারী’ হিসেবে কাজ করে। সেখানে সে নির্দিষ্ট পোশাক পরে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে থাকেন কিন্তু কর্মসংস্থান খোঁজা তার পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাকে চাকরি দিতে রাজি ছিল না। আমাকে অনেক ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে কারণ মানুষজন আমার দিকে তাকায় আর বলে, তুমি কীভাবে চাকরি করবে?’
‘বিয়ের কাজ যখন থাকে না, তখন আমি এক আত্মীয়ের মুদির দোকানে কাজ করি।’
তার ২৭ বছর বয়সি মেয়ে অম্বিকা অ্যাকাউন্টেন্ট হতে চায়, কিন্তু সেও একই সমস্যায় ভুগছে; তাই চাকরি পাচ্ছে না। অম্বিকা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই কিন্তু এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমাকে কেউ চাকরিতে নেবে। মানুষজন আমাকে বামন বলে, তাই চাকরি পেতে অসমর্থ হচ্ছি।’
রাম রাজের ভাই ও বোনেরাসহ পরিবারের অন্য যেসব সদস্য বামন, তাদের পক্ষে কোনো কাজ পাওয়াটা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একটি টেলিফোন বুথে কাজ করে এবং আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী দর্জির কাজ করে। আমরা এভাবেই ম্যানেজ করে চলছি।’
রাম রাজের মতে, তার পরিবারের বিশেষ করে নারীদের জন্য জীবন অনেক কঠিন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা নিয়ে পুরুষ সদস্যরা মোটামুটি চলতে পারে। কিন্তু আমাদের পরিবারে যেসব নারী এই সমস্যায় রয়েছে, তাদের কী হবে? জীবন তাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন।’
রাম রাজের স্ত্রী স্বাভাবিক উচ্চতার ছিলেন এবং তিন সন্তানের জননী ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক যে ১৯৯৩ সালে তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
রাম রাজ জানান, মানুষজন তাদের দেখে পরিহাস করে, তাদের এই শারীরিক আকার চলাফেরা, সংসার করা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অনেক কঠিন কিন্তু তার পরিবার বিশ্বাস করে, সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে এমনটা বানিয়েছেন কারণ তারা বিশেষ কিছু। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একবার বলেছিলেন যে, সৃষ্টিকর্তা আমাদের বামন করেছে, মানুষজন হাসতে পারে কিন্তু এতে আমাদের মন খারাপ করাটা উচিত নয়।’
‘সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের উপহাস করে। কিন্তু যখন কারো মন খারাপ থাকে এবং আমাদের দেখতে পেয়ে হাসে, তার মানে এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা যে, আমরা অন্যদের হাসাই।’
‘আমার দুই মেয়ে রয়েছে। এবং আমি তাদের বোঝাই যে, এটাই আমাদের কর্তব্য। এভাবে কাজ করলেই, সৃষ্টিকর্তা পাশে থাকবে।’- রাম রাজ বলেন।
তথ্যসূত্র: দ্য সান
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/এএন
রাম রাজের এই পরিবার একসময় ২১ সদস্যের ছিল, যাদের মধ্যে ১৮ জনই ভুক্তভোগী হয়েছে অ্যাকোন্ড্রাপ্লাসিয়া নামক জিনগত শারীরিক সমস্যার কারণে। শরীর ও হাত-পায়ের আকৃতি ক্ষুদ্রাকৃতির করার জন্য পরিচিত রোগ অ্যাকোন্ড্রাপ্লাসিয়া। তার সাত বোন এবং চার ভাইয়ের মধ্যে আটজনই এই সমস্যায় আক্রান্ত। ইতিমধ্যে তার বড় ভাই পৃথ্বি রাজসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।
বর্তমানে ৫২ বছর বয়সি রাম রাজ তার ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে ভারতের হায়দ্রাবাদের ওল্ড সিটিতে বসবাস করছেন। এবং ৯ জনই বামন হওয়ায়, তারা শহরটির সবচেয়ে বড় বামন পরিবার হিসেবে পরিচিত।
তাদের এই অবস্থা অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ ও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যার বেশির ভাগই অপ্রত্যাশিত।
রাম রাজ বলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই লোকজনের ভিড় লেগে যায় আমাদেরকে ঘিরে। তারা নানা ধরনের প্রশ্ন করে। যেমন, কেন আমরা এতটা খাটো হলাম? কোথা থেকে এসেছি? প্রত্যেকেই আমাদের উপহাস করে।’
মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি এখানে স্বাস্থ্য ইস্যুও রয়েছে। যেহেতু পায়ের আকৃতি ছোট, তাই হাঁটাচলায় সমস্যা হয়। রাম রাজ বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পরে পা দুর্বল হয়ে পড়ে। আমি আমার দাদা এবং বাবাকে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে দেখেছি, কিন্তু তারা তা ম্যানেজ করে হাঁটাচলা করেছে।’
‘কিন্তু আমি হাঁটায় অসুবিধা ভোগ করছি এবং আমার ছোট ভাই সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারে না। আমার দুই বোনেরও একই অবস্থা।’
রাম রাজ ‘বিবাহ অভ্যর্থনাকারী’ হিসেবে কাজ করে। সেখানে সে নির্দিষ্ট পোশাক পরে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে থাকেন কিন্তু কর্মসংস্থান খোঁজা তার পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাকে চাকরি দিতে রাজি ছিল না। আমাকে অনেক ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে কারণ মানুষজন আমার দিকে তাকায় আর বলে, তুমি কীভাবে চাকরি করবে?’
‘বিয়ের কাজ যখন থাকে না, তখন আমি এক আত্মীয়ের মুদির দোকানে কাজ করি।’
তার ২৭ বছর বয়সি মেয়ে অম্বিকা অ্যাকাউন্টেন্ট হতে চায়, কিন্তু সেও একই সমস্যায় ভুগছে; তাই চাকরি পাচ্ছে না। অম্বিকা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই কিন্তু এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমাকে কেউ চাকরিতে নেবে। মানুষজন আমাকে বামন বলে, তাই চাকরি পেতে অসমর্থ হচ্ছি।’
রাম রাজের ভাই ও বোনেরাসহ পরিবারের অন্য যেসব সদস্য বামন, তাদের পক্ষে কোনো কাজ পাওয়াটা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একটি টেলিফোন বুথে কাজ করে এবং আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী দর্জির কাজ করে। আমরা এভাবেই ম্যানেজ করে চলছি।’
রাম রাজের মতে, তার পরিবারের বিশেষ করে নারীদের জন্য জীবন অনেক কঠিন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা নিয়ে পুরুষ সদস্যরা মোটামুটি চলতে পারে। কিন্তু আমাদের পরিবারে যেসব নারী এই সমস্যায় রয়েছে, তাদের কী হবে? জীবন তাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন।’
রাম রাজের স্ত্রী স্বাভাবিক উচ্চতার ছিলেন এবং তিন সন্তানের জননী ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক যে ১৯৯৩ সালে তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
রাম রাজ জানান, মানুষজন তাদের দেখে পরিহাস করে, তাদের এই শারীরিক আকার চলাফেরা, সংসার করা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অনেক কঠিন কিন্তু তার পরিবার বিশ্বাস করে, সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে এমনটা বানিয়েছেন কারণ তারা বিশেষ কিছু। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একবার বলেছিলেন যে, সৃষ্টিকর্তা আমাদের বামন করেছে, মানুষজন হাসতে পারে কিন্তু এতে আমাদের মন খারাপ করাটা উচিত নয়।’
‘সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের উপহাস করে। কিন্তু যখন কারো মন খারাপ থাকে এবং আমাদের দেখতে পেয়ে হাসে, তার মানে এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা যে, আমরা অন্যদের হাসাই।’
‘আমার দুই মেয়ে রয়েছে। এবং আমি তাদের বোঝাই যে, এটাই আমাদের কর্তব্য। এভাবে কাজ করলেই, সৃষ্টিকর্তা পাশে থাকবে।’- রাম রাজ বলেন।
তথ্যসূত্র: দ্য সান
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/এএন
No comments:
Post a Comment