Wednesday, 4 January 2017

Time boam under us

টাইম বোমার ওপর ঢাকা, ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল

হাসান মাহামুদ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:05 Jan 2017   09:13:10 AM   Thursday   ||   Updated:05 Jan 2017   12:57:57 PM   Thursday
টাইম বোমার ওপর ঢাকা, ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল
হাসান মাহামুদ : ভারত, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার- তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।

ভূতাত্ত্বিক এই অবস্থানের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশে। দেশের দুই দিকের ভূগঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত-মিয়ানমারের সংযোগস্থলের ভূগর্ভে বিশাল ফাটলের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, একটি টাইম বোমার ওপর রয়েছে ঢাকা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের ভূমিকম্প। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকায়।

বিশেষ করে নেপাল এবং ভারতের অস্থিতিশীল প্রভাবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যেই বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার কেন্দ্রস্থল হতে পারে বাংলাদেশের খুব নিকটে। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এমন আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা নেই। রয়েছে সিলেট এবং চট্টগ্রামে। কিন্তু এই স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা। কারণ ঢাকার ভূগর্ভস্থ স্তর অনেকটাই ফাঁপা।

মূলত টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ এ ধরনের তিনটি প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। এ ছাড়া দেশের মধ্যে থাকা চ্যুতি বা ফল্ট লাইনগুলো যেকোনো সময় ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি, যা ঢাকা থেকে ১৭৬ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পে ঢাকার বাইরে দুজন মারাও গেছেন।

ভূতাত্ত্বিকরা বলছেন, দেশের মধ্যে থাকা চ্যুতি বা ফল্ট লাইনগুলোও যেকোনো সময় ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকা শহরে। ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘এককথায়, ঢাকা একটি টাইম বোমার ওপর রয়েছে। বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর কাছে ভূমিকম্প হলে তা সাম্প্রতিক বিপর্যয়কে ম্লান করে দেবে।’

এদিকে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটেও বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগজনক তথ্য উপস্থাপন করা রয়েছে। বাংলাদেশের গভীর তলদেশে সক্রিয় হচ্ছে বহুপূর্বে সমাহিত হওয়া ‘ফল্টস’।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেরও। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও পরমাণু বিজ্ঞানী মেহরান কেশে কয়েকদিন আগেই বলেছেন, ‘সম্ভবত নতুন বছরেই বিশ্বে এক ভয়াবহ মহাভূমিকম্প ঘটতে চলেছে। যে ভূমিকম্পে মৃত্যু হবে চার কোটি মানুষের। বিভক্ত হবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। মহাকম্পনের জেরে সৃষ্ট একাধিক সুনামি এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে আছড়ে পড়বে, যার জেরে অন্তত চার কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। ভূমিকম্প প্রথম হবে দক্ষিণ আমেরিকায়। কিছু কিছু অঞ্চলে রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ১০ থেকে ১৬ থাকবে, কয়েকটি অঞ্চলে তা ২০ থেকে ২৪-ও হতে পারে। আগামী কয়েক মাসে উত্তর চীনে একাধিক ভূমিকম্প হবে। মহাভূমিকম্পের আঘাতে মেক্সিকো ও মেক্সিকো উপকূল সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে। তার জেরে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়বে চীন, জাপান ও ক্যারিবিয়ান সমুদ্রতটে।’

কেশে অবশ্য এও জানিয়েছেন, এই পূর্বাভাস একান্ত তার নিজস্ব।

তবে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে যে হারে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়ছে, তাতে তার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১২ জুন ‘ভূমিকম্প সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালন করতে চায় সরকার। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভারতে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আকারের এবং ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। বিষয়টিকে স্মরণ করে এই পদক্ষেপ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৭/হাসান/সাইফুল/এএন

No comments:

Post a Comment