ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই
সাইফুল : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 11:33:37 AM Saturday || Updated:26 Nov 2016 12:09:36 PM Saturday

ফিদেল কাস্ত্রো
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা যান বলে কিউবার রাষ্ট্রীয় টিভির এক ঘোষণায় বলা হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছর এক দলীয় রাষ্ট্র বা সাম্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে কিউবা শাসন করেন। এরপর ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে সরে পড়েন।
‘কিউবাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন’ এমন একজন নেতা হিসেবে কাস্ত্রোর প্রশংসা করতেন তার সমর্থকরা। তবে তার বিরোধীরা ‘কঠোরভাবে বিরোধীদের দমনের অভিযোগ’ এনেছেন তার বিরুদ্ধে।
গত এপ্রিলে কিউবার সামবাদী দলের এক সমাবেশের সমাপনী দিনে শেষ বক্তৃতা করেন।
সেখানে নিজের বার্ধক্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কিউবার সাম্যবাদ এখনো বৈধ এবং ্কিউবার জনগণই জয়ী হবে।’
ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/সাইফুল
এক নজরে ফিদেল কাস্ত্রো
সাইফুল আহমেদ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 12:26:28 PM Saturday || Updated:26 Nov 2016 12:43:37 PM Saturday

ফিদেল কাস্ত্রো
ফিদেল কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে কিউবা শাসন করেন। এরপর ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে সরে পড়েন।
কাস্ত্রোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অগাস্টিন ডায়াজ কারটে বলেন, ‘ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন তৃতীয় বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষী দৈত্য। তৃতীয় বিশ্বের জন্য তিনি যা করেছেন অন্য কেউ তা করতে পারেনি।’
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী।
১৯২৬ : কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব ওরিয়েন্তে প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো
১৯৫৩ : বাতিস্তার শাসনের বিরুদ্ধে গণ-অভূত্থানের দায়ে কারাদণ্ড
১৯৫৫ : সাধারণ ক্ষমার অধীনে কারাগার থেকে মুক্তি
১৯৫৬ : চে গুয়েভারাকে সঙ্গে নিয়ে কিউবার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ
১৯৫৯ : বাতিস্তাকে পরাজিত করে কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন
১৯৬০ : যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মদদপুষ্ট ‘বে অব পিগস’ নামের কিউবার নির্বাসিত বিরোধীদের লড়াইয়ে পরাজিত করেন
১৯৬২ : তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সমঝোতার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে আলোচিত ‘কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট’ এর জন্ম দেন
১৯৭৬ : কিউবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন
১৯৯২ : কিউবার শরণার্থীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পোঁছান
২০০৮ : স্বাস্থ্যগত কারণে কিউবার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান
২০১৬ : এপ্রিল মাসে শেষবারের মতো জনসম্মুখে ভাষণ দেন
২০১৬ : ২৫ নভেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/সাইফুল
ফিদেল কাস্ত্রো আর নেই
সাইফুল : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 11:33:37 AM Saturday || Updated:26 Nov 2016 12:09:36 PM Saturday

ফিদেল কাস্ত্রো
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা যান বলে কিউবার রাষ্ট্রীয় টিভির এক ঘোষণায় বলা হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছর এক দলীয় রাষ্ট্র বা সাম্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে কিউবা শাসন করেন। এরপর ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে সরে পড়েন।
‘কিউবাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন’ এমন একজন নেতা হিসেবে কাস্ত্রোর প্রশংসা করতেন তার সমর্থকরা। তবে তার বিরোধীরা ‘কঠোরভাবে বিরোধীদের দমনের অভিযোগ’ এনেছেন তার বিরুদ্ধে।
গত এপ্রিলে কিউবার সামবাদী দলের এক সমাবেশের সমাপনী দিনে শেষ বক্তৃতা করেন।
সেখানে নিজের বার্ধক্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কিউবার সাম্যবাদ এখনো বৈধ এবং ্কিউবার জনগণই জয়ী হবে।’
ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/সাইফুল
এক নজরে ফিদেল কাস্ত্রো
সাইফুল আহমেদ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 12:26:28 PM Saturday || Updated:26 Nov 2016 12:43:37 PM Saturday

ফিদেল কাস্ত্রো
ফিদেল কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে কিউবা শাসন করেন। এরপর ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে সরে পড়েন।
কাস্ত্রোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অগাস্টিন ডায়াজ কারটে বলেন, ‘ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন তৃতীয় বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষী দৈত্য। তৃতীয় বিশ্বের জন্য তিনি যা করেছেন অন্য কেউ তা করতে পারেনি।’
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী।
১৯২৬ : কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব ওরিয়েন্তে প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো
১৯৫৩ : বাতিস্তার শাসনের বিরুদ্ধে গণ-অভূত্থানের দায়ে কারাদণ্ড
১৯৫৫ : সাধারণ ক্ষমার অধীনে কারাগার থেকে মুক্তি
১৯৫৬ : চে গুয়েভারাকে সঙ্গে নিয়ে কিউবার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ
১৯৫৯ : বাতিস্তাকে পরাজিত করে কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন
১৯৬০ : যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মদদপুষ্ট ‘বে অব পিগস’ নামের কিউবার নির্বাসিত বিরোধীদের লড়াইয়ে পরাজিত করেন
১৯৬২ : তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সমঝোতার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে আলোচিত ‘কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট’ এর জন্ম দেন
১৯৭৬ : কিউবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দ্বারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন
১৯৯২ : কিউবার শরণার্থীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পোঁছান
২০০৮ : স্বাস্থ্যগত কারণে কিউবার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান
২০১৬ : এপ্রিল মাসে শেষবারের মতো জনসম্মুখে ভাষণ দেন
২০১৬ : ২৫ নভেম্বর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/সাইফুল
যে কারণে তিনি বাংলাদেশের চিরচেনা
শাহ মতিন টিপু : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 01:39:11 PM Saturday || Updated:26 Nov 2016 02:14:38 PM Saturday

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফিদেল কাস্ত্রো
অবশ্য শিগগিরই মারা যাবেন- এমন ইঙ্গিত দিয়ে কিউবার জনগণ ও তার অনুসারীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। গত বছর কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ৮৯ বছর বয়সি এই নেতা বলেন, তিনি হয়তো শিগগিরই মারা যাবেন। কিন্তু বিপ্লব নিয়ে তার পরিকল্পনাগুলো বেঁচে থাকবে।
নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফিদেল কাস্ত্রো বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই আমার বয়স ৯০ বছর হয়ে যাবে। তখন আমিও অন্যদের মতো হয়ে (মারা) যাব।’
বর্ষীয়ান এই বিপ্লবী বলেন, ‘শেষ সময়টা আমাদের সবার জীবনেই আসবে। কিন্তু কিউবার কমিউনিস্ট দলের ধারণা, এই পৃথিবীতে আজীবন রয়ে যাবে। বিশ্ববাসী জানবে, যদি তারা সততার সঙ্গে কাজ করে, তাহলে তারা মানবসভ্যতার জন্য ভালো জিনিস ও সংস্কৃতি তৈরি করতে পারবে। আর এসবের জন্য আমাদের ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পরপর কিউবায় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত থাকেন দলের বড় বড় সব নেতা। এই কংগ্রেসে থেকে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন ফিদেল কাস্ত্রোর ছোট ভাই ও দেশটির বর্তমান প্রধান রাউল কাস্ত্রো (৮৪)। ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।
কংগ্রেসের উদ্বোধন করে ফিদেল কাস্ত্রো জানিয়েছিলেন, এর পর থেকে ৭০ বছর বয়সেই অবসরে যাবেন দলের নেতারা। আগামী ২০২১ সালে পরবর্তী কংগ্রেসের ঘোষণাও দেন তিনি। সেই কংগ্রেসকে নতুন প্রজন্মের নেতারা নেতৃত্ব দেবেন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবারের কংগ্রেসই হচ্ছে ঐতিহাসিক প্রজন্মের শেষ কংগ্রেস।
সম্প্রতি কিউবা সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দীর্ঘ ৮৮ বছর পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশটি সফর করেন। তবে সফরে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হয়নি তার। ওবামা চলে যাওয়ার পর এক বিবৃতিতে ফিদেল কাস্ত্রো বলেন, কিউবার মার্কিন সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এখানে কমিউনিস্ট আদর্শের সঙ্গে দেশ চলবে।
এরপর কিউবার বিপ্লবী এই নেতা নিজের ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। হাভানার কার্ল মার্কস থিয়েটারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিবিসি জানায়, ফিদেল কাস্ত্রোর জন্মদিন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তার ভাই ও কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। অনুষ্ঠানে দুই নেতার মাঝখানে বসে ছিলেন তিনি। বিদায় নেওয়ার দীর্ঘ কয়েক মাস পর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসমক্ষে আসেন ফিদেল কাস্ত্রো। অনুষ্ঠানে ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত এবং ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সমর্থিত হামলার বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
এই মহান নেতার পুরো নাম ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। জন্ম ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট। ১৯৫৯ সালে তিনি মার্কিন সমর্থিত একনায়ক ফুলগেন্সিও বাতিস্তার সরকারকে উৎখাত করেন। বাতিস্তা সরকারকে উচ্ছেদের পর ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
বাংলাদেশের জনগণের মাঝে এই নেতা সম্পর্কে আছে একটি ভালোবাসার দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তার একটি উক্তি। যে উক্তিটি ফিদেল কাস্ত্রোকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অমর করে রাখবে।
১৯৭৩ সালের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সভায় আলজেরিয়ায় কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক হয় বঙ্গবন্ধুর। বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ একজন মহান নেতাকে প্রথমবার দেখে আরেক মহান নেতার এই ছিল উক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতারও সমর্থক ছিলেন তিনি।
পৃথিবীর বাঁক পরিবর্তনের এক ঐতিহাসিক সময়ে ফিদেল কাস্ত্রোসহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াসির আরাফাতসহ বেশ কিছু অবিসংবাদিত নেতা। যাদের প্রজ্ঞা, মেধা এবং অকল্পনীয় দেশাত্মবোধ মানুষকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে চেনার মধ্য দিয়ে আজ সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছেই চিরচেনা হয়ে থাকলেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/টিপু/এএন
মহানায়কের মহাযাত্রা
রাসেল পারভেজ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:26 Nov 2016 12:22:10 PM Saturday || Updated:26 Nov 2016 02:21:31 PM Saturday

ফিদেল কাস্ত্রো
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী আগ্রাসনের বিপরীতে ১৯৫৯ সালে সমাজতান্ত্রিক কিউবার গোড়াপত্তনের মধ্য দিয়ে মহানায়কের আসনে চলে আসেন ফিদেল কাস্ত্রো।
যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট কিউবার একনায়ক ফুলগেন্সিও বাতিস্তাকে সরিয়ে সমাজতান্ত্রিক শাসনকাঠামো গড়ে তোলেন ফিদেল কাস্ত্রো। স্নায়ুযুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের আগ্রাসী বিস্তারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে অটল রাখেন ইতিহাসের প্রবাদপুরুষ ফিদেল কাস্ত্রো।
কিউবায় মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কখনো মেনে নিতে পারেনি বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। কিউবাবিরোধী নানা অপতৎপরতায় জড়িত ছিল মার্কিন মুল্লুকের নেতারা। সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে টিকে ছিলেন কাস্ত্রো।
কিউবায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে অর্ধশতাব্দী কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন দেশটির বিরুদ্ধে বহু অপপ্রয়াস চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রগোষ্ঠী। তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১০ জন প্রেসিডেন্ট তাকে হত্যা অথবা উৎখাতের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাস্ত্রোর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কাছে সেসব অপচেষ্টা ভণ্ডুল হয়েছে। দীর্ঘদিন কিউবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ৮১ বছরে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি।
ফিদেল কাস্ত্রোর সংগ্রামী জীবন
১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে বিরান জেলায় স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এক অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো। পুরো নাম ফিদেল আলসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। তবে তিনি ফিদেল কাস্ত্রো বা শুধু কাস্ত্রো নামেই বেশি পরিচিত। কাস্ত্রোর বাবা ছিলেন আখের খামারের মালিক।
ছোটবেলা থেকে ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন ডানপিটে। সব দিকেই ছিল তার প্রবল আকর্ষণ। জেসুইট বোর্ডিং স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন তিনি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে তার দারুণ আগ্রহ ছিল। ১৯৪৪ সালে কিউবার সেরা অলরাউন্ডার স্কুল অ্যাথলেট পুরস্কার পান তিনি। শিক্ষাজীবন শেষ করেন আইনে স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর।
আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন কাস্ত্রো। দরিদ্র মক্কেলদের পক্ষে লড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেন। পেশাগত স্বীকৃতি ও সুখ্যাতি তাকে রাজনীতির মাঠে পরিচিত করাতে ভূমিকা রাখে।
কাস্ত্রোর রাজনৈতিক জীবন
মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজের বাবার আখের খামারে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগঠিত করেন এবং একটি ধর্মঘটের ব্যবস্থা করেন।
১৯৪৭ সালে নবগঠিত কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন ফিদেল। মার্কিন ব্যবসায়ী শ্রেণি ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবিচার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিম্ন মজুরির অভিযোগ নিয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে তুখোড় বক্তা ফিদেল দলের তরুণ সদস্যদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৫২ সালে দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন ফিদেল। নির্বাচনে পিপলস পার্টির বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা দখল করলে নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।
বিপ্লবের মাধ্যমেই রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব- এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মাত্র ১২৩ জন নারী-পুরুষের একটি সশস্ত্র দল নিয়ে ১৯৫৩ সালে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন ফিদেল। সংঘর্ষে আটজন নিহত হলেও ফিদেলের দল পরাস্ত হয় এবং তার প্রায় ৮০ জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয় বাতিস্তার নির্দেশে।
ফিদেলকে আটককারী লেফটেন্যান্ট ‘বিদ্রোহীদের আটক করামাত্র হত্যা করার নির্দেশ’ উপেক্ষা করে তাকে বেসামরিক কারাগারে পাঠিয়ে দিলে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু কারাগারে তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এবার দায়িত্ব ছিল ক্যাপ্টেন পেলেতিয়ারের ওপর। তিনি দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বরং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। কোর্ট মার্শালে ফাঁসি দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন পেলেতিয়ারকে। কিন্তু বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে ফিদেলকে হত্যা না করে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা।
মনকাডা হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফিদেল যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তা পরে ‘হিস্ট্রি উইল অ্যাবসল্ভ মি’ বা ‘ইতিহাস আমার পাপমোচন করবে’ নামে একটি বই আকারে বের হয়। ওই দীর্ঘ বক্তৃতার মধ্য দিয়ে কিউবার রাজনৈতিক সংকট এবং তার সমাধানের পথ নির্দেশ করেন তিনি। এতে রাতারাতি দেশব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন এবং জননায়কে পরিণত হন ফিদেল। বিচারে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হলেও প্রবল জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপ্লবী দল গড়ার লক্ষ্যে মেক্সিকোয় পাড়ি জমান ফিদেল। সেখানে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে গুয়েভারা, জুয়ান আলমেইডা এবং অন্যদের মিলিয়ে প্রায় ৮০ জনের একটি বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন ফিদেল।
গ্রানমা নামের একটি ছোট নৌকায় করে ফিদেলের বিপ্লবী দল কিউবায় এসে ভেড়ে। ফিদেলের ওই দলের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড `জুলাই টোয়েন্টি সিক্স মুভমেন্ট` নামে পরিচিতি লাভ করে। ফিদেল যেদিন মনকাডা ব্যারাকে হামলা করেছিলেন সেই তারিখ অনুসারে ওই নামকরণ করা হয়।
সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বতে নিজেদের ঘাঁটি গাড়ার লক্ষ্যে এগোনোর সময়ই বাতিস্তার সেনাদের আক্রমণের মুখে পড়েন তারা। সম্মুখ সমরে নিহত হয় বেশির ভাগ গেরিলা। মাত্র ১২টি অস্ত্র আর ১৬ জন গেরিলা নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ঘাঁটি গাড়তে সক্ষম হন ফিদেল।
স্থানীয় দরিদ্র জনগণের আশ্রয় নিয়ে ধীরে ধীরে দল বাড়াতে থাকে আর সেনা চৌকিগুলোতে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করতে থাকে জুলাই টোয়েন্টি সিক্স মুভমেন্ট। বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ-যুবা-ছাত্র এ আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকে। অন্যদিকে গেরিলাদের ধরতে বাতিস্তার অভিযানে নিপীড়নের শিকার হয় অগণিত সাধারণ মানুষ এমনকি নারী ও শিশুরাও। এতে গেরিলাদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন আরো বাড়তে থাকে।
১৯৫৮ সালে এসে কিউবার মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও সমর্থন লাভ করেন ফিদেল। ওই বছর আইনজীবী, চিকিৎসক, স্থপতি, হিসাবরক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ৪৫টি পেশাজীবী সংগঠন যুক্তভাবে এক খোলা চিঠিতে জুলাই টোয়েন্টি সিক্স মুভমেন্টকে সমর্থন জানায়।
পেশাজীবীদের ওই খোলা চিঠির পর জেনারেল বাতিস্তা গেরিলা নিধন অভিযান আরো জোরদার করেন। এবারে ৩০০ বিশেষ সেনার নেতৃত্বে ১০ হাজার লোকের এক বিশাল বাহিনীকে পাঠানো হয় পার্বত্য অঞ্চলে। সংখ্যায় অনেক কম হলেও অসীম সাহসী গেরিলারা ধীরে ধীরে সম্মুখ সমরে জয়ী হতে থাকে এবং বহু সেনাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। বাতিস্তার সেনাদের মতো হত্যা বা নির্যাতন না করে গেরিলারা বন্দি সেনাদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহার করায় পলায়নপর সেনাদের মধ্যে আত্মসমর্পণের হার বাড়তে থাকে। অনেকে পক্ষ ত্যাগ করে গেরিলা দলে চলে আসে। এভাবে ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ সেনাদলের আকার নিতে শুরু করে জুলাই টোয়েন্টি সিক্স মুভমেন্টের গেরিলা দল।
ফিদেলের গেরিলারা এবার সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বত ছেড়ে একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। স্থানীয় জনতা গেরিলাদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় ১ হাজার সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হটানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু নাপাম বোমার মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও গেরিলাদের সঙ্গে বাতিস্তা পেরে না ওঠায় তাকে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৫৮ সালের মার্চে বাতিস্তা নির্বাচন দিলেও জনগণ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ৭৫ ভাগ থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও ৯৮ ভাগ মানুষই ভোটকেন্দ্রেই যায়নি। ফিদেলের সেনারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি নববর্ষের দিনে কিউবা ছেড়ে পালান জেনারেল বাতিস্তা।
সেনাবাহিনীর অন্য সিনিয়র জেনারেলরা আরেকটি সামরিক সরকারের চেষ্টা চালালে ফিদেল দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেন। কলকারখানা থেকে লাখ লাখ শ্রমিক আর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এলে স্তব্ধ হয়ে যায় কিউবা। জনস্রোতের কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। ১৯৫৯ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানী হাভানায় ঢুকে দেশের নিয়ন্ত্রণভার নিয়ে নেয় ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলারা।
হাভানা জয়ের পরপরই কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফিদেল। ১৯৬৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং কিউবাকে একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের কাজ শুরু করেন।
১৯৭৬ সালে কিউবার প্রেসিডেন্ট অব দ্য কাউন্সিল অব স্টেটস এবং কাউন্সিল অব দ্য মিনিস্টারস নির্বাচিত হন তিনি। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসেবেও দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
দীর্ঘদিন কিউবার নেতৃত্ব দিয়ে ২০০৮ সালে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল কাস্ত্রো। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় কিউবায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মহাপ্রয়াণে বিশ্বনেতারা শোক জ্ঞাপন করেছেন। প্রাণপ্রিয় কিউবায় তার জন্য চলছে মাতম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ/এএন
No comments:
Post a Comment