কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আসনে প্রার্থী মাগুরার খালিশ
মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:22 Nov 2016 10:47:26 AM Tuesday || Updated:22 Nov 2016 12:25:53 PM Tuesday

খালিশ আহমেদ
গত বছরের আগস্ট মাসে স্টিফেন হারপার হাউস অব কমন্স থেকে পদত্যাগ করলে ক্যালগেরি হেরিটেজ আসনটি শূন্য হয়ে যায়। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই আসনে নতুন নির্বাচন হতে হবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার রাজনীতিক খালিশ আহমেদের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে।
বাংলাদেশের নিভৃত গ্রাম থেকে কানাডার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালিশের প্রার্থী হওয়ার গল্প এখন মাগুরার মানুষের মুখে মুখে। প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণের কানাডার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ক্যালগেরি হেরিটেজ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে বিশিষ্ট জ্বালানি বিজ্ঞানী খালিশ আহমেদের মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই আসনটি কনজারভেটিভ পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত জাতীয় নির্বাচনে খালিশ আহমেদ ক্যালগেরি সিগন্যাল এলাকা থেকে এনডিপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে তিনি হেরে যান।
এবার মূলধারার মিডিয়া এবং জনগণের মধ্যে খালিশ আহমেদের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ায় স্টিফেন হারপারের ছেড়ে দেওয়া আসনে খালিশ আহমদের মনোনয়নের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করে সেখানের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এনডিপি। এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এনডিপির বিবেচনায় রয়েছেন।
এই ব্যাপারে খালিশ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রার্থিতার ব্যাপারে তিনি এনডিপির সবুজ সংকেত পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেড়ে দেওয়া আসন হিসেবে ক্যালগেরি হেরিটেজ আসনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগত কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মিডিয়ার বিশেষ গুরুত্ব থাকবে এই আসনের উপনির্বাচনের দিকে। ফলে এই আসনের প্রার্থীরা বড় ধরনের প্রচারণাও পাবেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত নির্বাচনে হেরে গেলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণের বক্তৃতা-কথাবার্তা আলবার্টাবাসীর বিশেষ নজর কাড়তে সমর্থ হয়। আলবার্টার মূলধারার মিডিয়াগুলোও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া তার ভাষণ স্থানীয় কয়েকটি টিভি চ্যানেল গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করায় তিনি নির্বাচনী আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। কনজারভেটিভ পার্টি এই আসনে ব্যবসায়ী বব বেনজেনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, খালিশ আহমেদ মহম্মদপুর উপজেলা সদরের হরেকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। সেখান থেকে উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী আরএসকেএইচ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। তার বাবা আফছার উদ্দিন আহমেদ এই প্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। মাতা খুরশিদা পারভীন গৃহিণী।
১৯৮৮ সালে এসএসসি পাস করার পর নানাবাড়ির এলাকা রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূ-তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পিএইচডি করতে নরওয়ে যান। সেখানে আরেক দফা এমএ ডিগ্রি নিয়ে চলে আসেন কানাডার ক্যালগেরিতে। সেখানে তেল কোম্পানিতে ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।
ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি কানাডায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। একসময় মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রী হামিদা নাসরিন, এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় বাস করেন খালিশ আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা হামিদা নাসরিন কানাডার একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চার্টার্ড প্রফেশনাল অ্যাকাউনটেন্ট পদে কর্মরত আছেন।
খালিশ আহমেদের গর্বিত পিতা আফছার উদ্দিন আহমেদ ও মা খুরশিদা পারভীন বলেন, কানাডার জাতীয় নির্বাচনে আমার ছেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে- এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। বিজয়ী হয়ে মহম্মদপুর তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা। এ জন্য দেশবাসী ও কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চান তারা।
খালিশ আহমেদ জানান, নির্বাচনে জয়ী হলে নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করবেন এবং নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনা কাজে লাগাবেন। পাশাপাশি নিজের জন্মভূমির জন্য কাজ করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
রাইজিংবিডি/মাগুরা/২২ নভেম্বর ২০১৬/আনোয়ার শাহীন/টিপু/এএন
No comments:
Post a Comment