Saturday, 19 March 2016

Express of LOVE

দেশে দেশে ভালোবাসা প্রকাশের রীতি

কাজী আশরাফ : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:20 Mar 2016   12:00:27 AM   Sunday   ||   Updated:20 Mar 2016   12:31:26 AM   Sunday
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কাজী আশরাফ : বিশ্বজুড়ে ভালোবাসার মধ্যে যে রোমান্স, তার যে ভাষা বা প্রকাশভঙ্গী তা আর গোপন থাকছে না। এখন এটি অনেক বেশি খোলামেলা আর উন্মুক্ত। এর অন্যতম একটি কারণ পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব। এবং এর হাত ধরে পাওয়া ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আমরাও এর মধ্যে আটকে গেছি। নইলে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। সেখানে আছে ভালোবাসা প্রকাশের নিজস্ব রীতি। এখন অবশ্য সব রীতিই আটকে গেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মায়াজালে। পাঠক চলুন জেনে নেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেমিক-প্রেমিকারা কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে সেই গল্প।


চীন : ভালোবাসা উদযাপনের দিক থেকে চীন প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী দেশ। তাদের আছে ভালোবাসা প্রকাশের দুটি বিশেষ দিন। প্রথমটি কি কিয়াও জাই বা চায়নিজ ভালোবাসার দিন। চীনা বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাসের সপ্তম দিন এটি পালন করা হয়। একটি কিংবদন্তি থেকে এই উৎসবের সূচনা। ঘটনাটি হলো দুই প্রেমিক-প্রেমিকার গল্প, পুরুষটি কারখানার ফোরম্যান আর নারী একজন তাঁতশিল্পী। বছরের কেবল একদিন তাদের দেখা হয়, পাখিদের তৈরি একটা সেতুর ওপর। আর এ দিনটিই কি কিয়াও জাই। অপর উৎসবটির নাম শাং উয়ান জি বা দ্যান জাই। এটিই আসলে চীনাদের ভালোবাসার দিবস। চীনা প্রথম মাসের ১৫তম দিনে এটি উদযাপিত হয়। এ দিন ঘর ছেড়ে বাইরে আসে কুমারীরা। এখনও কিছু কিছু লোক দ্যান জাই পালন করে।


আমেরিকা : প্রতি চারজনের তিনজন আমেরিকান দিনটি উদযাপন করে। নিজস্ব ঢঙে এটা করে তারা। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা বিনিময় করে ১৬ কোটি কার্ড, আর এই এক দিনে আমেরিকাবাসী কিনে ১০০ কোটি ডলারের চকোলেট ও ১৩ কোটি গোলাপ। কেউ কেউ বাসায় ডিনার করতে পছন্দ করলেও তিনজনের একজন আমেরিকান ফেব্রুয়ারি ১৪ তারিখ বাইরে কোনো রেস্তোরাঁ বা হোটেলে খেতেই পছন্দ করে। ভালোবাসার এই উচ্ছ্বাস যে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা নয়। সাম্প্র্রতিক বছরগুলোতে বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনকে কার্ড পাঠানোর প্রবণতা অনেক বেড়েছে বলে রিপোর্ট করেছে শুভেচ্ছা কার্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হলমার্ক।


পর্তুগাল : উত্তর পর্তুগাল থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রেম বিনোদনের প্রাচীন রীতিতে প্রেমিকাদের নিতে হয় তাঁতির ভূমিকা। এখানে ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে রুমাল। ভালোবাসার মানুষটির কাছে পাঠানোর আগে এই রুমালে নকশা তৈরি করে হৃদয়ের সব ভালোবাসা উজাড় করে দেয় প্রেমিকা। যার যেদিন নকশার কাজ শেষ হবে, সেদিনই তার ভালোবাসার দিন। ফলে প্রতিটি তরুণীর ভালোবাসার দিন আলাদা। রুমালটি পাঠানোর ঠিক পরের রোববার ভালোবাসার মানুষ যদি রুমালটা গলায় ঝুলায় তবে বুঝতে হবে প্রেমের স্বীকৃতি দিয়েছে তরুণ। আর মেয়েটাকে যদি সে না চায়, তবে রুমালটা তাকে ফিরিয়ে দেবে।


থাইল্যান্ড : উত্তর থাইল্যান্ডের প্রচলিত রীতি অনুসারে তরুণীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির রৌদ্রলোকিত সামনের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মেয়েটির পরিবারকে অসন্তুষ্ট না করে এখানে পাণিপ্রার্থী যুবক নিজের পরিচয় তুলে ধরে। একজন বা দুজন পুরুষ বন্ধুসহ যুবক ধীরে ধীরে বারান্দার দিকে এগিয়ে আসে। মেয়েটির পরিবার যদি ছেলেটির প্রতি সন্তুষ্ট হয়, তবে তাকে মেয়েটির সম্মানে একটি গান গাইতে বলবে তারা। পাণিপ্রার্থী কোনোভাবেই মেয়েটাকে স্পর্শ করতে পারবে না। যদি সে এই ভুল করেই বসে, তবে সাত দিন পার হওয়ার আগেই ফুল কিংবা মোমবাতি উপহার পাঠিয়ে অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদি সে এটা না করে তবে তা বাড়ির বাসিন্দা ও পূর্বপুরুষদের আত্মার জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বাস করা হয়, এর ফলে পরিবারের সব সদস্য চরম মন্দভাগ্যের শিকার হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বিবাহের প্রস্তাব গ্রহণ কর হবে, না ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবে মেয়ের বাবা। তবে আধুনিক জামানায় থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী এই রীতি আর ব্যবহৃত হয় না।

মেক্সিকো : অসাধারণ স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনো টিকে আছে মেক্সিকান কিছু রোমান্টিক ঐতিহ্য। কোনো কোনো অঞ্চলে ‘কনে’ চুরি করে আনার বিচিত্র রীতি চালু আছে। প্রেমের চূড়ান্ত পর্যায়ে যদি বাদ সাথে পরিবার, তখন এই রীতি নিয়ে মাঠে নামে প্রেমিকপ্রবর। রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে রওনা হয় সে মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তরুণ আশা করে প্রেমিকাকে নিয়েই সে পালাতে সফল হবে। আর একবার তা করা গেলে যত দ্রুত সম্ভব সর্বসম্মতিতে তাদের বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কনের পরিবারের আর কোনো বিকল্প থাকে না।


মেক্সিকোতে রোমান্সের আরও কিছু মিষ্টি ও মধুর রীতি প্রচলিত আছে। ভালোবাসার মানুষকে গান শোনানোর ঐতিহ্য মেক্সিকান সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে গেছে। বেশ কয়েকজন শিল্পীসহ পাণিপ্রার্থী হাজির হয় তার পছন্দের মেয়েটির বাড়ির সামনে। প্রেমিক পুরুষটিকে গ্রহণ করতে তরুণীটি এগিয়ে আসার আগ পর্যন্ত শিল্পীরা গাইতে থাকে ভালোবাসার গান। আর যদি শেষ পর্যন্ত মেয়েটি না-ই আসে, তবে ধরে নিতে হবে, হতভাগ্য প্রেমিককে প্রত্যাখ্যান করেছে সে।


ব্রিটেন : প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি উপহারের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ব্রিটেনে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে অনেকে এটা কাজে লাগিয়ে রীতিমতো জমজমাট ব্যবসা করে। শুধু ২০০১ সালেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে ব্রিটিশরা কিনেছে ৬০ লাখ লাল গোলাপ, আর ২ কোটি ২০টি কার্ড। এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ভালোবাসা দিবসে বিশেষ মূল্যে বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করে। এতে প্রেমিকযুগলের জন্য থাকে বিলাসবহুল আর বৈচিত্রময় এক ডিনারের ব্যবস্থা। ডিনারের শেষে থাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে সক্ষম আশ্চর্য কথা বলা ডেজার্ট।
তবে এতসব কিছুর পরও কেউ বলতে পারে না, ব্রিটিশদের ভালোবাসা দিবস কেবল উহার দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারিতে হাজার হাজার মানুষ তাদের ভালোবাসা দিবসের কার্ড পাঠাতে হাজির হয়ে যায় লাভার শহরের ডাকঘরে। যেন তাদের ভালোবাসার উপহারের গায়ে শোভা পায় সেখানকার বিশেষ ছাপ।

স্পেন : ত্রয়োদশ শতাব্দীর স্প্যানিশ ট্যুনসরা (আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্র) পানশালাগুলোতে গান পরিবেশন করে নিজেদের খরচ মেটাত। রাতে নিজেদের সুরের জাদুতে কুমারীদের মন জয়ের চেষ্টা করতে তারা। এই রীতি তখন প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি কিছুটা অদল-বদল হয়ে এটি দক্ষিণ আমেরিকার স্প্যানিশ কলোনিগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। স্পেনে এখনও ট্যুনসদের অল্প কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দল অবশিষ্ট রয়েছে। এসব তরুণ গান ভালোবাসে, পছন্দ করে রাতের জীবন আর অনুভূতি প্রকাশের এতিহ্যবাহী রীতি। গিটার হাতে প্রেমে নিবেদনের জন্য রাস্তায় রাস্তায় তারা খোঁজ করে তরুণীদের আর গান গেয়ে বেড়ায় পানশালাগুলোতে। তবে ভালোবাসা প্রকাশের এমন রোমান্টিক রীতি এখন চোখে পড়ে কালেভদ্রে। যেমন কম বয়স্ক স্পেনীয়দের কথাই ধরা যাক। ‘আমি তোমার প্রেমে পড়েছি’ বলার চেয়ে সরাসরি ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি উচ্চারণ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তারা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মার্চ ২০১৬/তারা

No comments:

Post a Comment