Monday, 18 April 2016

Rangamati exclusive tourism zone

রাঙামাটিতে গড়ে উঠছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন

বিজয় ধর : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:16 Apr 2016   05:39:49 PM   Saturday   
রাঙামাটিতে গড়ে উঠছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন
বিজয় ধর, রাঙামাটি : চলতি মৌসুমেও রাঙামাটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটছে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি পর্যটন মোটেলে থাকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।

সরকারি পর্যটন করপোরেশনের রাঙামাটি পর্যটন মোটেল অ্যান্ড হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতার কারণে এবার মৌসুম শুরু থেকেই রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটছে।

এদিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোসহ পর্যটন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির উন্নয়নে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন। সম্প্রতি ‘লাভ পয়েন্ট’ নামে স্পটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এ ট্যুরিজম জোনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে উন্মোচিত হতে চলেছে নতুন দিগন্তের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটির স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটিসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে অসংখ্য পর্যটক রাঙামাটি পাড়ি জমাচ্ছেন। প্রতি শুক্র ও শনিবার গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে রাঙামাটিতে। সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সের বাইরেও বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও বিনোদন স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে। চলতি মৌসুমে গত বছর অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত পর্যটন খাতে এক কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আয় হয়েছে বলে জানান আলোক বিকাশ চাকমা।

তিনি বলেন, গত বছর দেশে লাগাতার অবরোধ, হরতাল, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখানকার পর্যটন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে পর্যটকদের আগমন ঘটতে পারেননি। যে কারণে গত বছর এখানকার পর্যটন খাতে যথেষ্ট লোকসান গুনতে হয়েছে।

অপর এক সরকারি সূত্র জানায়, পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ঘিরে পর্যটন শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প ব্যবস্থাপনায় একটি আলাদা নীতিমালাও প্রণয়ন করবে সরকার।

এ ব্যাপারে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গৃহীত মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত। ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। রাঙামাটিতে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পার্বত্য তিনটি জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। 



ইতিমধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদ পরিবেষ্টিত জেলা প্রশাসক বাংলোর কাছাকাছি জেলা পুলিশের ‘পলওয়েল’ পর্যটন স্পটে ‘রাঙামাটি লাভ পয়েন্ট’ নামে একটি পর্যটন স্পটের ভিতিপ্রস্তর স্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আলাউদ্দিন-লিমাসহ পৃথিবীর সব ভালোবাসাকে শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখতে দেশে এই প্রথম লাভ পয়েন্টটির নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি স্থানীয়সহ দেশি-বিদেশি সব পর্যটককে বিনোদনে আকর্ষিত করবে। স্পটটি সার্বক্ষণিক সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে সাংস্কৃতিক বিনোদনে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ ও মাছ শিকারের স্পট নির্মিত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বেড়াতে এসে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণে গিয়ে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে পলওয়েল পার্ক এলাকায় কাপ্তাই হ্রদে তলিয়ে মারা যান আমেরিকা প্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারি ও তার স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমা। আলাউদ্দিন পাটোয়ারি ও আইরিন সুলতানা লিমাসহ পৃথিবীর সব ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শনস্বরূপ রাঙামাটিতে নির্মিত হচ্ছে ‘লাভ পয়েন্ট’ স্পটটি।

পার্বত্য মন্ত্রণালয় সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা আরো বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় পর্যটন বিভাগকে পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, হ্রদ, ঝরনাধারার নৈসর্গিক আবেশকে তুলে ধরতে ও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোসহ পর্যটন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিনটি জেলায় রয়েছে বিশ্বের আধুনিক মানের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে পার্বত্য তিনটি জেলা পরিষদ আশু, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এসব কর্মকা-ে তত্ত্বাবধান করবে। এজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেবে সরকার।

সূত্রে বলা হয়, রাঙামাটিতে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন ছাড়াও সাজেকে একটি আধুনিক মানের পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবনায় রয়েছে- পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আশু, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন নতুন পর্যটন স্পট চিহ্নিতকরণ ও উন্নয়ন, রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের অবকাঠামোগত সুবিধাদি বাড়ানো, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান ট্যুরিস্ট স্পটগুলো (সুবলং ঝরনা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতিসৌধ, বালুখালী হর্টিকালচার সেন্টার) উন্নয়ন, পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে পর্যটন উন্নয়ন ও সংরক্ষণ খাতে বাজেট বরাদ্দ রাখা, পর্যটনবিষয়ক তথ্য সংবলিত বুকলেট, স্যুভেনির ছাপানো ও সহজলভ্যকরণ, সময়ে সময়ে তা হালনাগাদকরণ, পার্বত্য এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে সংশ্লি¬ষ্ট সবার মতামত সাপেক্ষে বিশেষজ্ঞ মাস্টারপ্ল¬্যান তৈরি, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, পর্যটন সেক্টরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য সময়ে সময়ে ট্যুরিজম মেলা বা হিল কার্নিভাল আয়োজন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে লিংকেজ স্থাপন, পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ সৃষ্টি। 




রাইজিংবিডি/রাঙামাটি/১৬ এপ্রিল ২০১৬/বিজয় ধর/মুশফিক

No comments:

Post a Comment