Monday, 25 December 2017

wild life and familly

পশুদের নিয়েই তাদের সংসার

আমিনুর রহমান হৃদয় : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-১২-২৬ ৮:১৭:০১ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-১২-২৬ ৮:১৭:৩৮ এএম

আমিনুর রহমান হৃদয়: সার্কাসের শিল্পীরা নানা ধরনের শারীরিক কসরত দেখিয়ে যতটা মুগ্ধ করেন দর্শকদের, তাদের দলে থাকা পশুরাও খেলা দেখিয়ে কম আনন্দ দেয় না। ছোট থেকে বড়- সবাই খেলা দেখে মুগ্ধ হয়। বলা যায় সার্কাসের এই পশুগুলো অন্য এক মাত্রা যোগ করে।

চারপায়ী একটি ভালুক যখন দুই পা দিয়ে মানুষের মতো হেঁটে হেঁটে খেলা দেখায় তখন দর্শক সারিতে হাততালি যেন থামতেই চায় না। চিড়িয়াখানায় গিয়ে ভালুকের দেখা পেলেও তারা কিন্তু দুই পা দিয়ে মানুষের মতো হেঁটে খেলা দেখায় না। অথচ সার্কাসে এই দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক। শুধু কি ভালুকের খেলা সেখানে দেখানো হয়? না। বিলেতি কুকুর, বানর, হাতি এমনকি এক সময় বাঘও সার্কাসে খেলা দেখাত। যদিও শেষের এই পশুকে এখন আর দেখা যায় না। সুন্দরবনেও যে বাঘ বিলুপ্তপ্রায়!

সার্কাসে পশুদের খেলা দেখানোর আগে রীতিমত প্রশিক্ষণ দিতে হয়। এখানে কাজটি করেন মোহাম্মদ রিপন (৪৪)। দ্য গ্রেট রওশন সার্কাসে পশুদের নিয়ে খেলা দেখান তিনি। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ওরস মেলায় কথা হয় তার সঙ্গে।



রিপনের বাড়ি কুষ্টিয়ার মেহেরপুর। যখন ৭ বছর বয়স তখন থেকেই মামা রহিম বাদশাহর কাছে পশুদের পোষ মানিয়ে খেলা শেখানোর কৌশল শেখেন। ৩৬ বছর ধরে এই কাজ করছেন। রিপন বলেন, ‘বর্তমানে যে ভালুক দুই পায়ে মানুষের মতো হেঁটে খেলা দেখায় এটি ৬ মাস বয়সে আনা হয়েছিল। ধীরে ধীরে পোষ মানিয়ে তারপর খেলা শিখিয়েছি। এটাই নিয়ম। এখন ভালুকটির বয়স ১০ বছর।’

পোষ মানাতে গিয়ে কখনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওরা এখন আমাকে ছাড়া কাউকে চেনে না। আমি ওদের খাবার দেই। মঞ্চে নিয়ে গিয়ে খেলা দেখাই। আল্লাহর রহমতে কখনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রথম দিকে যখন ভালুকটিকে আনা হয়, তখন রহিম মামার পায়ে কামড় দিয়ে মাংস উঠিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আমাকে ওরা ভালোবাসে। সত্যি বলতে ওদের নিয়েই আছি। আমিও ওদের ভালোবাসি। ওদের নিয়েই আমার সংসার।’

৪৪ বছর বয়সেও বিয়ে করেননি রিপন। কেন করেননি প্রশ্ন করতেই লাজুক হাসি দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। তারপর একটি বানরের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন। সার্কাসে বানরটি সাইকেল চালায়। একটি বিলেতি কুকুর আছে। কুকুরটি ড্রাম নিয়ে খেলা দেখায়। রিংয়ের মধ্যে দিয়ে লাফ দেয়। হাতি তিন পায়ে হাঁটে, আবার কখনো ফুটবল খেলে, কখনো কখনো মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা কীভাবে যুদ্ধ করেছিল অভিনয় করে দেখায়। এই হাতির মালিক ও প্রশিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি জানালেন, গত ৮ বছর ধরে দুটি হাতির দেখভাল করছেন এবং পোষ মানিয়ে সার্কাসে খেলা দেখাচ্ছেন। এ জন্য সার্কাসের মালিক দিনপ্রতি তাকে ২৫০০ টাকা দেয়। কিন্তু যখন সার্কাস বন্ধ থাকে তখন তাদের কষ্টের সীমা থাকে না।



হাতি গম, ভুষি ও কলাগাছ খায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাতি প্রচুর খায়! সার্কাস বন্ধ থাকলে সাহায্য তুলে এবং হাতির পিঠে মানুষ চড়িয়ে টাকা আয় করে হাতির খাবার কিনি। তখন এমন অবস্থা হয় যে, হাতির খাবার কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। নিজের খাবার কেনার আর টাকা থাকে না।’

এখন পর্যন্ত খেলা দেখানোর সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ/তারা

No comments:

Post a Comment