Saturday, 11 March 2017

gol wall a history



গল দুর্গ : ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক

ইয়াসিন : রাইজিংবিডি ডট কম
 
   
প্রকাশ: ২০১৭-০৩-১২ ১১:২১:২৬ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০৩-১২ ১১:২৯:৪৩ এএম
গল থেকে ইয়াসিন হাসান: টেস্ট ক্রিকেট, ইতিহাস, নীল আকাশ, বিস্তৃত জলরাশি উন্নতমানের ভালো খাবার; এক জায়গায় সব কিছু। জায়গাটি শ্রীলঙ্কার গল। ইতিহাসের পাতায় গল ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন অর্জনে, ঐতিহাসিক কারণে। গলের প্রাণকেন্দ্র গল দুর্গ।

বৃহস্পতিবার খুব ভোরে উঠে সমুদ্রস্নানে গেলাম। আমার হোটেল হ্যাপি বানানার সাথেই ওয়ানাটুনা বিচ। সৈকতে দেখা মিলল ইংরেজ দম্পত্তির। আমি একা, সাথে মোবাইল। কোথায় রাখব তা ভাবতেই মনে হল তাদের কাছে রাখা যায়। কাছে গিয়ে নাম বলে বাংলাদেশি পরিচয় দিলাম। ভদ্রলোকের নাম জ্যাক। হাফ প্যান্ট পড়ে বসেছিল, তার ওয়াইফ বিকিনি পড়ে সূর্যস্নান করছিল। জ্যাক সোফায় বসেই বলল, ‘রুবেল হোসেন্স কান্ট্রি।ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ায় বুঝতে বাকি রইল না ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা বলছে। যেবার বাংলাদেশ হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। আসলে হারায়নি ইংলিশদের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছিল।



আমি মাথা নেড়ে আগ্রহ নিয়ে বললাম হ্যাঁ, রুবেল হোসেন্স কান্ট্রি। বলল, ওয়াট ম্যা।শুরু হয়ে গেল আমার পছন্দের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা। এরপর অনেকক্ষণ কথা। বিষয় ওই একটাই ক্রিকেট। তামিমকে চেনে লর্ডসে সেঞ্চুরির জন্য। বাকিদের নাম জানে না। সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহর নামও বললাম। কিন্তু মনে করতে পারল না। বুঝলাম রুবেলেরই ওই বিধ্বংসী বোলিংয়ের কথাই মনে নিয়ে বসে আছে।



ওদিকে গোলাপী বিকিনি পড়ে সূর্যস্নান করা জ্যাকের বউ একা একা বিরক্ত হচ্ছে। বুঝে গল্পে আসর ভাঙলাম। জ্যাককে বললাম,‘মোবাইলটা ধরো। শরীরটা ভিজিয়ে আসি। বলল সিউর। আমি দৌড়ে গিয়ে একা একা ঝাঁপিয়ে, লাফিয়ে, ডুব দিয়ে উঠে এলাম। সময় অল্প বলে মোবাইল নিয়ে চলে এলাম রুমে। এরপর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম ইতিহাস সমৃদ্ধ গল দুর্গে। ওয়াটাটুনার থেকে ডুগডুগি নিয়ে গল দুর্গে গেলাম ৩০০ রূপিতে।



শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো থেকে ১১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে গল দুর্গের অবস্থান। সাগরে পাওয়া শহর গলের প্রধান আকর্ষণ গল দুর্গ। গল দুর্গ ১৫৮৮ খৃস্টাব্দে পর্তুগিজরা তৈরি করেছিল। ৫০ বছর পর্তুগিজদের শাসনে ছিল দুর্গ। এরপর ওলন্দাজরা এসে এটি দখল করে। তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ১৫৬ বছর। ১৭৯৬ সালে গল দুর্গ দখল করে বৃটিশরা।



পুরো দুর্গের আয়তন ৩৬ একর। উচুঁ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গল দুর্গের ঘড়ি। যেটা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন Samson D’ABREW RAJAPAKSE OF KOSCODA MDCCCLXXXII ৩৬০ ডিগ্রিতে চারপাশ থেকেই ঘড়িটি দূর থেকে দেখা যায়। ৪০০ বছরের গন্ডি পেরিয়ে আজও গল দুর্গকে মনে হয় নতুনের মতো। ইউনেস্কো ১৯৮৮ সালে 'World Heritage Site' হিসেবে ঘোষণা করে। স্থানীয় এক গাইডের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছিল প্রতিদিন গল দুর্গ দেখতে গড়ে দেশি-বিদেশি - হাজার পর্যটক হাজির হন।



পুরো দুর্গ দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভিতরে ছোট ছোট গুহা যেগুলো দেখলেই বুঝা যায় এতে জড়িয়ে আছে অতীত ঐতিহ্য। উপরে উঠলেই চোখে পড়বে পাঁচটি সেনা মূর্তি। দেখলে মনে হবে, এখনও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তার পাশেই ছোট্ট একটা ঘর। তালা দেওয়া। স্থানীয় একজন জানালেন, ওখান থেকে নাকি একবারে নিচের সুরঙ্গ পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ছিল একসময়। দুর্গের মাঝেই রয়েছে জাদুঘর। জাদুঘরে ঢুকতে দেওয়া হয় কিনা সেই বিষয়টি আমার অজানা। কারণ ওখানে যাওয়ার রাস্তাটাই আমি খুঁজে পাইনি। তবে ওই গাইডের থেকে জানা গেল জাদুঘরে মহামূল্যবান অনেক সামগ্রী সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। দুর্গে হাঁটার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন জায়গা উচুঁ-নিচু।ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথর। আবার সীমানাগুলোতে নেই কোনো রেলিং। সাবধানে, বুঝে উপরে উঠতে হবে।



গল দুর্গের ভেতরের কলোনিগুলোতে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে অতীতের ঐতিহ্যকে আজও লালন করছে তারা। সন্ধ্যার পর মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গল দুর্গের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, বাসা-বাড়ি। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য সে সময়ে তৈরি হয়। ডাচ কলোনিগুলোতে অনেকেই থাকছেন আবার অনেকে হোটেল তৈরি করেছেন। কেউ খুলেছেন রেস্টুরেন্ট, কেউ দিয়েছেন দোকান। রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে আমার প্রিয় ইন্ডিয়ান হাট। সিদ্ধ সাদা ভাত পাওয়া যায় বলে ভারতীয় মালিকের কাবাব হাট আমার প্রিয়। মেন্যুতে রয়েছে হরেক রকমের চিকেন, মাটন সামুদ্রিক মাছ। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, দোকান, ব্যাংক, লাইট হাউজ, বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে দুর্গের ভেতরে।



লাইট হাউস দুর্গের ভেতরে সুন্দর একটি জায়গা। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল উঠেছিল লাইট হাউজ হোটেলে। অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু টিম হোটেলের সামনে দেখা পাইনি একটি পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা কর্মীর। বাংলাদেশে হলে কত কিছু! লাইটহাউজটি দুর্গের পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে আছে। ১৮৪৮ সালে ডাচরা লাইটহাউজ নির্মাণ করেছিল। ১৯৩৬ সালে আগুনে পুড়ে যায় অনিন্দ্য সুন্দর লাইটহাউজটি। তবে ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করায় আজও চাকচিক্য ধরে রেখেছে।



দুর্গের ভিতরে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় পাওয়া গেল। মসজিদ, মন্দির গীর্জা দেখেছি। খু্বই সুন্দর। আমাদেরই এক সাংবাদিক ভাই শুক্রবার জুমআর নামাজ পড়তে গিয়ে জানাযার নামাজও পড়ে আসে দুর্গর মসজিদ থেকে। মসজিদটি ১৭৫০ সালে নির্মাণ করা হয়। শুনলে হয়ত অবাকও হবেন ১৮৯২ সালে এখানে মুসলিম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আরবি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন প্রতিনিয়ত চর্চা হচ্ছে, চলছে শিক্ষাদান।



রাইজিংবিডি/ গল (শ্রীলঙ্কা)/১২ মার্চ ২০১৭/ইয়াসিন/শাহ মতিন টিপু

No comments:

Post a Comment