Wednesday, 24 August 2016

A dynamic hero Abul fazal pm to King Akbar


আবুল ফজলও খুন হয়েছিলেন!
 
 

শাহ মতিন টিপু : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:22 Aug 2016   01:44:06 PM   Monday   ||   Updated:23 Aug 2016   04:37:29 PM   Tuesday
শেখ আবুল ফজল আল্লামির পোট্রেট

শেখ আবুল ফজল আল্লামির পোট্রেট

শাহ মতিন টিপু : আবুল ফজল। ইনি সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী। অসাধারণ মেধাবী ছিলেন এই আবুল ফজল। বলা যায়, সর্বগুণের অধিকারী একজন মানুষ। যার তুলনা কেবল তিনি নিজেই। একাধারে রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা, ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, লেখক, অনুবাদক ও কবি। আর এই সবগুলো গুণেই আলাদা খ্যাতিসম্পন্ন তিনি। সম্রাট আকবরের রাজকার্যে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে স্বীকৃত হতো। তিনি সম্রাট আকবরের একজন গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুও ছিলেন।

এই অসাধারণ আবুল ফজলও ভুল বোঝাবুঝির কারণে যুবরাজ জাহাঙ্গীরের নির্দেশে নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন। যুবরাজ জাহাঙ্গীর প্রচ- শ্রদ্ধা করতেন আবুল ফজলকে। মহলের নর্তকী আনারকলিকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তিনি আবুল ফজলের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেন। এ সময় তার বিশ্বস্ত সেনাপতি বীর সিংহ বুন্দেলার মাধ্যমে ১৬০২ সালের ২২ আগস্ট আবুল ফজলকে খুন করেন। তিনি তখন দাক্ষিণাত্য থেকে রাজধানীতে ফিরছিলেন। মৃত্যুর আগে আবুল ফজল বলেন যান যে, ‘তিনি নির্দোষ। ইলিয়াস খানই আনারকলিকে সম্রাট আকবরের বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন।’ 

যদিও এস ওয়াজেদ আলী ‘ধর্ম ও সমাজ’ বইতে লিখেন, ‘আবুল ফজল ‘দীনে এলাহির’ মন্ত্র বাদশাকে শিখিয়ে ছিলেন বলে বাদশার জীবদ্দশাতেই শাহজাদা সেলিম (এই সেলিমই পরে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন)  তার শিরশ্চেদ করেন এবং সেই মূল্যবান মস্তকটি পায়খানার গর্তে নিক্ষেপ করেন। আকবরের মৃত্যুর পর দীনে এলাহির নাম আর ভারতবর্ষে শোনা যায় না।’ (ধর্ম ও সমাজ-পৃঃ ৫৪, নবযুগ সংস্করণ-২০১২)

পুরো নাম শেখ আবুল ফজল আল্লামি। বলা হয়, আবুল ফজল আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠতম চিন্তাবিদ। তার জীবনকাল ১৫৫১-১৬০২। 

আবুল ফজলের ধর্ম ছিল মানবতা। হিন্দু, মুসলমান, পারসি, খ্রিস্টান সকলেই তার কাছে সমান ছিল। তার উদার চিন্তাভাবনা, সমাজভাবনা ও ধর্মচিন্তা বিচার করে তাকে চিরায়ত আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী বলা যায়। আবুল ফজল যদি  কেবল নিজের লিখনী চালিয়েও যেতেন, তবুও তিনি একজন অমর সাহিত্যিক হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। ‘আকবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’ তার বিস্ময়কর অবিস্মরণীয় বই। 

আবুল ফজল ছিলেন অসাধারণ সহজাত মেধার অধিকারী, অল্প বয়সেই তিনি বয়সের তুলনায় অধিক বোধশক্তির পরিচয় দেন। তার পিতা ছিলেন সে যুগের সবচেয়ে কৃতী বিদ্বানদের অন্যতম। শেখ মোবারক ছিলেন শেখ আবুল ফজলের বাবা। সমকালে তিনি ছিলেন মহান প্রজ্ঞাবান প-িত। তার পিতার কাছেই আবুল ফজল শিক্ষালাভ করেন।

১৫৫১ সালের ১৪ জানুয়ারি আগ্রায় আবুল ফজলের জন্ম। শৈশব ও কৈশোরে তার অসাধারণ পা-িত্যের খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। স্বয়ং সম্রাট আকবর তার বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেন আবুল ফজলের দিকে। ফলে ১৫৭৫ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মোগল রাজদরবারে যোগদান করেন সরাসরি মন্ত্রী হিসেবে। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। 

১৫৭৬ খৃষ্টাব্দে বাংলা মুঘল শাসনের অধীনস্থ হয়, দিল্লীর মসনদে তখন ক্ষমতায় সম্রাট আকবর। সে সময় প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষে কৃষি ও ভূমি কর বা খাজনা আদায় হতো হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে। বাংলাতেও তাই। অথচ কৃষিকাজ সম্পাদিত হয় সৌরবর্ষ তথা সৌরমাসের হিসেবে। কিন্তু হিজরী সন নির্ভরশীল হলো চাঁদের উপর, সঙ্গত কারণেই কর আদায় আর কৃষি ফলনের সময় সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছিল না। আকবরের মন্ত্রী এবং বিজ্ঞ সভাসদ আবুল ফজল একদিন সম্রাটকে একান্তে এই বাস্তবতা বোঝালেন। সম্রাট আকবর বিষয়টি অনুধাবন করলেন এবং এই গরমিল থেকে সরে আসার জন্য প্রাচীন বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। সেই সূত্র ধরেই বাংলা সনের প্রবর্তণ।

আবুল ফজলের বড়ভাই মহাকবি ফৈজিও দরবারের প্রভাবশালী আমাত্য ছিলেন। সম্রাটের নবরতœ সভার প্রভাবশালী দুই সদস্য ছিলেন এই সহোদর। আবুল ফজলের মতো বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি।

আবুল ফজল আল্লামীর অমর সৃষ্টি ‘আকবরনামা’। ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জি সম্বলিত এই ফার্সি গ্রন্থটি ভারত উপমহাদেশে ইতিহাস সম্পর্কিত রচনার সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সর্বোত্তম বলে গণ্য। আকবরনামা তিন খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ডে রয়েছে তিমুর বংশের ইতিহাস, বাবর ও হুমায়ুনের রাজত্বকাল এবং দিল্লির শূর বংশের সুলতানদের বিবরণ; দ্বিতীয় খন্ডে আকবরের রাজত্বের ছেচল্লিশতম বছর পর্যন্ত ঘটনাবলির বিস্তৃত বিবরণ এবং তৃতীয় খন্ডে আকবরের সাম্রাজ্যে প্রচলিত বিধিবিধান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি বর্ণিত আছে। এ শেষ খন্ডের নাম আইন-ই-আকবরী।

আকবরনামায় মোগলদের বংশ পরিচয়, রাজ্য শাসন, বিচার ব্যবস্থা, রাজস্ব আদায়, বণ্টন, সামরিক বিষয়াদি, যুদ্ধযাত্রা, যুদ্ধ জয়, কূটনৈতিক বিষয়সমূহ কী নেই এতে? এত নিখুঁতভাবে সব কিছু বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রতিটি অক্ষরের মধ্যে সম্রাট আকবর যেন জীবন্ত হয়ে আছেন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৬/টিপু

No comments:

Post a Comment