World surprise city :
পৃথিবীর বিস্ময়কর শহরগুলো (পর্ব-১)
সাদিয়া ইসলাম : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:09 Dec 2015 12:47:38 AM Wednesday || Updated:09 Dec 2015 02:11:58 AM Wednesday

ছবির কোলাজ
কালে কালে কতই না শহর গড়ে উঠেছে পৃথিবীতে। কোনো শহর তৈরি হয়েছে ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। আবার সামাজিক অথবা ধর্মীয় কারণেও শহর নির্মিত হয়েছে। তবে এমন কিছু শহর রয়েছে যার কথা অনেকের কাছেই অজানা। এই শহরগুলো মোটেও আপনার নিজের পরিচিত শহরটির মতো নয়।
শহরগুলোর বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। এমন কিছু বিস্ময়কর শহরের পরিচিতি তুলে ধরছি। আসুন জেনে নিন পৃথিবীর বিস্ময়কর কয়েকটি শহর সম্পর্কে।
১. সার্কাসের শহর
সার্কাস তো প্রায় সব শহরেই দেখা যায়। কোনো উৎসববে কেন্দ্র করে সার্কাসের দল তাদের খেলা দেখায়। সার্কাসের দল নানা শহরে ঘুরে ঘুরে নিজেদের ক্রীড়াশৈলি দেখায়। তবে এমন একটি শহর রয়েছে যেখানে পুরো শহরজুড়ে থাকেন সার্কাসের দল। আর তাই পুরো শহরকেই সার্কাসের শহর নামে অভিহিত করা হয়।
গিবসটন নামের আমেরিকার এই শহরটিতে অবসরপ্রাপ্ত সব সার্কাসের মানুষদের বসবাস। আমেরিকার নানাপ্রান্ত থেকে সার্কাসে কাজ করা আর সার্কাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই বাস করেন এ শহরে। তারা প্রদর্শন করেন নানা রকমের খেলা। শুধু তাই নয়, নিজেরা সারা বছরই নানা উৎসবের আয়োজন করেন এখানে। আর রং মেখে সং সেজে সবসময়েই উৎবের মেজাজে থাকেন তারা। এই শোটাউনে কেবল আমেরিকার সার্কাস কর্মিরাই নন, সব স্থানের সার্কাস কর্মিদের থাকবার অধিকার রয়েছে। তাদের দেখতে প্রতি বছরই বহু সংখ্যক পর্যটক ভিড় করেন শহরটিতে।
২. গুহার শহর
এই যুগে আবার গুহায় বসবাস করে নাকি কেউ? এর উত্তর জানতে আপনাকে যেতে হবে সেটেনিল ডি লাস বোডেগাস নামের শহরে। পুরো শহরটি দুটি স্তরে বিভক্ত। প্রথম স্তরটি পাহাড়ের নীচে গুহায় ভিতরে। আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হবে যেনো আস্ত একটি শহর পাথুরে পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য যে পাহাড় না কেটে গুহার খাঁজে খাঁজে তৈরি করা হয়েছে শহরটির নিচের অংশ। আর উপরের স্তরটি পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে।
এই শহরটি আরো একটি কারণে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। সেটি হচ্ছে, এই স্থানে প্রচুর খাদ্যশস্য জন্মায়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের নানারকম শস্য উৎপন্ন হয় এখানে। বিস্ময়কর গঠন ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে পৃথিবীতে আকর্ষণীয় শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
৩. একজনের শহর
ভৌগলিকভাবে শহরটি অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম নেব্রাস্কাতে। এর নাম মনোওয়ি। ১৯৩০ সালে এ শহরটির জনসংখ্যা ছিল মোট ১৫০ জন। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই সংখ্যা এসে দাড়ায় মাত্র ২ জনে। তারা হলেন এলসি এলার আর তার স্বামী। অসংখ্য প্রতিকূলতার পরও তারা তাদের প্রিয় শহরটি ছেড়ে যাননি। তবে ২০০৪ সালে এলসির স্বামী রুডিও মারা যান। এর পর থেকে এ শহরের একমাত্র বাসিন্দা এলসি!
১৯০২ সালে একটি পোস্ট অফিসকে স্থাপিত হয় এখানে। এর পর ধীরে ধীরে পোস্ট অফিসটিকে কেন্দ্র করে শহরটি গড়ে ওঠে। ক্রমান্বয়ে বাড়তে এর অধিবাসীর সংখ্যাও। ১৯৩০ সালে এর জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০ জনে। এটিই ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর পর নানা কারণে এ সংখ্যা কমতে থাকে। এখন এই শহরে ৭৭ বছর বয়সি এলসি এলারই একমাত্র বাসিন্দা।
আপনি হয়তো ভাবছেন এলসি একা একা কী করে সময় কাটান এ শহরটিতে? চিন্তার কিছু নেই। একটা শহরের কি কম কাজ? কষ্ট করে হলেও শহরের পাঠাগার থেকে শুরু করে সবকিছুরই দেখভাল করেন এই বয়স্ক নারী। খানিকটা ভেঙে পড়া, খানিকটা ঘাস-পাতায় ঢাকা পড়া শহরটির মেয়রও যে তিনি!
৪. মানুষ ভর্তি শহর
শহর থাকলে মানুষ তো থাকবেই! তবে হংকংয়ের কাউলুন ওয়াল্র্ড শহরের মানুষগুলোর কথা ভিন্ন। খুব একটা বড় নয় শহরটি। তবে পৃথিবীর যেকোন স্থানের চেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরটির ৬.৫ একর জায়গায় রয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ! ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশরা চীনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সে সময়ে সামরিক দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত এ স্থানটি। এরপর চীন সেটাকে পুনরায় নিজেদের বলে দাবি করলে হাজার হাজার মানুষ এখানে জড়ো হয়। তবে পরবর্তী সময়ে চীনও এই শহরটিকে নিয়ে উৎসাহ হারায়। এর পর ধীরে ধীরে মাদকের আখড়ায় পরিণত হয় এ স্থানটি।
ব্রিটেন বা চীন নয়, সন্ত্রাসী আর মাদকসম্রাট ও সম্রাজ্ঞীরাই চালিয়ে যেতে থাকে এ শহরটির সব কাজ। ৭০ এর দশকে এখানে দালান-কোঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। তবে কিছুদিনের ভেতরেই চীন এ শহরটিকে বসবাসের অযোগ্য বলে ধরে নেয়। আর এর দালানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। সেই থেকে এটি কাউলুন ওয়াল্র্ড সিটি পার্ক নামে পরিচিত হয়ে আসছে।
৫. ভীনগ্রহবাসীদের শহর
যদিও সত্যিকারের ভীনগ্রহবাসীরা থাকে না এই শহরে। তবে আমেরিকার নিউ মেক্সিকোতে গড়ে ওঠা এই ছোট্ট শহরটির সব মানুষের বিশ্বাস ১৯৪০ সালে এখানে একটি ইউএফও বা ভীনগ্রহবাসীদের যান ধ্বংস হয়েছিল। এর পর থেকে সেই স্থানে ধীরে ধীরে আজব এক শহর গড়ে ওঠে।
যদিও এর কোনো ভিত্তি নেই তবুও পৃথিবীর বুকে এটিই একমাত্র স্থান যাকে ধারণা করা ভীনগ্রহবাসীদের শহর। সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখানে গড়ে উঠেছে ভীনগ্রহবাসীদের কাল্পনিক ইউএফও। এ ছাড়া তাদের ব্যবহৃত বিচিত্র জিনিস নিয়ে গড়ে উঠেছে জাদুঘর। পর্যটকদের জন্যও বেশ আকর্ষণীয় এ শহরটি। প্রতি বছর গরমের ছুটিতে ইউএফও উৎসবও অনুষ্ঠিত হয় এখানে।
৬. ময়লার শহর
ভাবুন তো একবার, রোজ সকালে উঠে যদি দেখেন আপনার বাড়ির সামনে কেউ ময়লা ফেলে রেখে গেছে, কেমন লাগবে? আর এই ঘটনাটা টানা ৭০ বছর ধরে চলে এসেছে মিশরের মানশিয়াত নাসেরের তৈরি শহরে।
তুরস্কের বস্তি নগরী মানশিয়াত নাসেরের এ শহরকে যে কেউ দেখলে ভাবতে পারেন এখানে কোনো একটা প্রকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে। কেননা এর প্রতিটি ইঞ্চিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। এর অবস্থান কায়রোর পাশেই। এই শহরে প্রায় ৬০ হাজার লোকের বসবাস। তারা রোজই এখানে ফেলা কায়রো নগরীর আবর্জনাকে পরিষ্কার করতেন।
তাদের প্রতিদিনের কাজ ছিল কায়রো শহরের বর্জগুলোকে ঠিকঠাক রাখা। এ জন্য তারা এতটুকু অখুশি ছিলেন। জাব্বালিনরা খুশিমনেই পরিষ্কার করতেন সেগুলো। তবে ২০০৩ সালে কায়রোর শাষক বেসরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানকে এই ময়লা পরিষ্কারের ভার দেয়। শুধু তাইই নয় সরকার জাব্বালিনদের তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার শুকোরকে মেরে ফেলে। এতে থেমে যায় পুরো শহরের মানুষে রুটি-রুজি।
৭. মৃতদের শহর (নীরব শহর)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়া অঙ্গরাজ্যের কোলমা শহরের যত্রযত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য সমাধি। এ কারণে শহরটিকে ‘সিটি অব দ্য সাইলেন্ট’ নামে অভিহিত করা হয়। নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে কী কারণে পুরো একটি শহর পরিণত হল নীরব শহরে। শুনুন সেই কাহিনি।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এই শহরে বেশ কিছু মানুষের বসতি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এ ছাড়া রেলওয়ে, বেশ কিছু গির্জাও ছিল। সে সময় সান ফ্রান্সিসকোর অভিজাতদের কবর দেওয়া হত এখানে। তবে ১৯১২ সালে শহরের একটি নির্দিষ্ট স্থানকে কবরস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সমাধির সংখ্যা। এক সময় আবাসিক এলাকা ও ব্যবসাকেন্দ্রগুলোকে শহরের উত্তরের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সে সময় এর নামকরণ করা হয় লনডালি। তবে ১৯৪২ সালে পূণরায় এর নাম রাখা হয় কোলমা।
এখন এই শহরটির পুরোটাই প্রায় সমাধি দিয়ে পরিপূর্ণ। আর যারা এখানে বসাবাস করেন তাদের অধিকাংশই মৃতদের সমাহিত করার কাজে নিয়োজিত।
আগামী পর্বে পড়ুন : বৃদ্ধদের শহর, নকল শহর, দাবার শহর, সুবিধাবাদী শহর, সালফারের শহর, বামনদের শহর, ভূগর্ভস্থ শহর, এক দালানের শহর- এর গল্প।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৫/রাশেদ শাওন/রহমান
No comments:
Post a Comment