Wednesday, 20 April 2016

skin develop

স্ক্রিন!

মো. রায়হান কবির : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:20 Apr 2016   07:44:58 AM   Wednesday   ||   Updated:20 Apr 2016   11:57:35 AM   Wednesday
ই-স্কিন

ই-স্কিন

মো. রায়হান কবির : অনেক মানুষই একটা কমন ভুল বলে। আর সেটা হলো, স্কিন টাচ মোবাইল কিংবা টাচ স্কিন মোবাইল। আসলে এর প্রকৃত উচ্চারণ হলো টাচ স্ক্রিন মোবাইল। মানে স্ক্রিন টাচ করে যে মোবাইল অপারেট করা হয়। তবে এই প্রচলিত ভুলই এবার শুদ্ধ হতে চলেছে।

এবার সত্যি সত্যিই স্কিন টাচ করে হয়তো মোবাইলও অপারেট করা যাবে। বলা যায় বিজ্ঞানীরা এর দারপ্রান্তে চলে গেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব টোকিও’র কিছু গবেষক এবার এমন এক আবরণ আবিষ্কার করেছেন যা আমাদের চামড়াকে (স্কিনকে) দিতে পারে স্ক্রিনের রুপ! যদিও এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখা।

আমরা নানা প্যাথলজিক্যাল কাজে শরীরে অনেক ডিভাইস ব্যবহার করি। আবার আমাদের রক্তের চাপ বা রক্তে অক্সিজেনের সচলতার পরিমাণ দেখার জন্যেও ব্যবহার করি নানা রকম মেডিক্যাল ডিভাইস। কিন্তু এগুলো পরিধান করা যত কষ্টের তার চেয়ে এগুলো নিয়ে জীবনযাপন করাও কিন্তু অনেক কঠিন। কারণ কিছু কিছু ডিভাইস আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে পরে থাকতে হয়। তখন এগুলো অনেক বিরক্তির উদ্রেক করে।

তাই এবার গবেষকরা এমন এক আবরণ তৈরি করলেন যা খুবই পাতলা এবং আরামদায়ক। সবচেয়ে বড় কথা এই আবরণ শরীরের স্কিনে স্ক্রিন হিসেবে কাজ করবে। ফলে আপনার রক্তে অক্সিজেনের লেভেল কত তা আপনার হাতেই দেখা যাবে, তাও একেবারে ডিজিটাল। বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিকে ই-স্কিন নামে অভিহিত করছেন।

অনেক সময় অ্যাথলেটদের হার্টের পালস রেট মাপার প্রয়োজন হয়। আগে এসব ক্ষেত্রে ডিভাইস ব্যবহার করা হতো। এখন এই ই-স্কিনের সাহায্যেই দেখা যাবে অ্যাথলেটদের হার্টের পালস রেট। তাছাড়া এই ই-স্কিন কিন্তু খুবই ফ্লেক্সিবল। মানে এটা হাতে বা শরীরের যে অংশেই পরিধান করা হোকনা কেন, এটা আপনাকে কোনো রকম অস্বস্তি দেবেনা।

ইউনিভার্সিটি অব টোকিও’র গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রোফেসর ড. তাকাও সমেয়া এবং ড. তমোইউকির নেতৃত্বাধীন গবেষক দল জানাচ্ছে, এটি একটি উন্নত প্রযুক্তির প্রটেক্টিভ ফিল্ম (অনেকটা এক্সরে ফিল্মের মতো) যা কিনা দুই মাইক্রোমিটার পাতলা, খুবই নমনীয়, আরামে পরিধেয় এবং উচ্চ মানের পর্দা(ডিসপ্লে) বা ডিভাইস সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই সংরক্ষণশীল ফিল্ম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে অজৈব উপাদান (সিলিকন অক্সিনাইট্রাইট) এবং জৈব উপাদান (প্যারিলিন)। এই ফিল্মের বা আবরণের স্থায়িত্ব খুবই ভাল। যা এই ধরনের অন্য ডিভাইস থেকে খুবই উন্নতমানের।

গবেষকরা এই ফিল্মের লেয়ারে ট্রান্সপারেন্ট ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড (আইটিও) ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করায় একে ডিসপ্লেতে রুপ দিতে পেরেছেন যা অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) নামে পরিচিত। নতুন ধরনের এই ফিল্ম এবং আইটিও ইলেক্ট্রোড মিলে সৃষ্টি করেছে পলিমার লাইট ইমিটিং ডায়োড (পিএলইডি) এবং অর্গানিক ফটো ডিটেক্টর(ওপিডি)। এই পিএলইডি এবং ওপিডি আগের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা এবং ৬ গুণ বেশি কার্যকর।

ফলে বলা যায় যে মোবাইল প্রযুক্তি একদিন এর সুফল পাবে। কেননা বর্তমানের মোবাইল নির্মাতারা খুব বেশি নজর দিচ্ছেন এর ডিসপ্লের প্রতি। স্মার্ট ওয়াচ বা এ ধরনের প্রযুক্তি আনা হয়েছে মোবাইলের ওপর নির্ভরতা কমাতে। এখন এই আবিষ্কার হয়তো মোবাইল দুনিয়াকে দিতে পারে নতুন এক দিগন্ত। এমনও হতে পারে এই ডিসপ্লের সঙ্গে ব্লুটুথ কানেকশনের মাধ্যমে মোবাইলে যুক্ত হয়ে আপনি হাতের তালুতেই দেখতে পাবেন এইচডি মুভি! কিংবা অফিসে বা বাসার টেবিলে মোবাইল রেখে হাতের তালুতেই সারতে পারবেন ভিডিও কনফারেন্সিং।

ফলে ওই যে আমাদের প্রচলিত বহুল ব্যবহৃত ভুল শব্দ ‘স্কিন টাচ’ বা ‘টাচ স্কিন’ সেটা আর বেশি দূরে নয় প্রচলিত শুদ্ধ হতে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই আপনি আপনার স্কিনে টাচ করে কল রিসিভ করবেন কিংবা ফোন ডায়াল করবেন! কেউ আপনাকে এসে ভুল ধরিয়ে বলতে যাবেনা যে, স্কিন টাচ নয়, স্ক্রিন টাচ। কেননা ফোনের ডিসপ্লে তখন হয়তো হবে আসলে স্কিন টাচ-ই!

দেখুন: ই-স্কিন নিয়ে একটি প্রতিবেদনের ভিডিও
 http://www.risingbd.com/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A8/157104

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৬/ফিরোজ

No comments:

Post a Comment