কড়াইল বস্তিতে পিপিপিভিত্তিক আবাসিক প্রকল্প
হাসান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:18 Apr 2016 09:12:45 AM Monday || Updated:18 Apr 2016 12:48:22 PM Monday
কড়াইল বস্তি
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্প গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। পরিকল্পনা অনুসারে এটি হবে সরকারের পিপিপিভিত্তিক দ্বিতীয় আবাসিক প্রকল্প।
রাজধানীতে অন্যায়-অপরাধ, দখল-খুন-চাঁদাবাজির অন্যতম অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত মহাখালী কড়াইল বস্তি। সর্বমোট ১৭০ একর আয়তনের এই বিশাল বস্তিতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের বসবাস। অথচ পুরো লোকালয়টি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে।
১৯৫৬ সালে তৎকালীন টিঅ্যান্ডটির নামে পাকিস্তান সরকার ১৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর মাত্র ১০ একরের মতো জায়গা বর্তমান টিঅ্যান্ডটি বা বিটিসিএলের দখলে রয়েছে। বাকিটা বেদখল। যদিও দুই দফায় গণপূর্ত ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ৮০ একর জমি দেওয়া হয়েছিল স্থাপনা নির্মাণের জন্য কিন্তু সেটাও এখন বেদখল।
বিশাল এই আয়তনের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে থাকা প্রায় ৪৩ একর জমির ওপর আবাসিক প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে ৩০ তলার ১৭টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে বসবাসের সুযোগ পাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবার। এখনো পুরো বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
৪৫০ বিঘা নিয়ে ‘মিরপুরে উপশহর’ নির্মাণ প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পটিও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বা পিপিপি ভিত্তিতে করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরিপূর্ণ একটি আধুনিক শহরের আদলেই মধ্যবিত্তের জন্য স্বপ্নের ঠিকানা হবে এই প্রকল্প। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, পরামর্শক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হবে।
তবে অবশ্যই এর আগে বস্তিবাসীকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।
রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা আগেও এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যেহেতু এ ধরনের প্রকল্পে সরকারের অর্থ ব্যয় হয় না, তাই আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই প্রকল্প শুরু করা যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারব।’
ঢাকা শহরের বর্তমান জনসংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ঢাকা প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। জাতিসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে এ দেশের জনসংখ্যা ২৫ কোটিতে পৌঁছাবে, এ থেকেই ঢাকা শহরের ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার একটি চিত্র পাওয়া যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে নতুন বাসস্থানের। তাই ঢাকা শহরে বাসস্থান বেড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুতগতিতে। জনসংখ্যা যত বাড়ছে, বাড়ির সংখ্যা তত বাড়ছে। তাই এর গুণগত মান সঠিক রাখার দিকে মনোযোগী হয়ে উঠছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, আবাসন খাতে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ আবাসিক খাতকে আরো গতিশীল করতে পারে। এতে মধ্যবিত্তের জন্য তুলনামূলক কম খরচে রাজধানীতে পর্যাপ্ত স্থায়ী আবাসন নিশ্চিত করা যাবে।
উন্নয়ন বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেখানে জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটানো যায়। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে অপচয় ও দুর্নীতির বিষয়টি সব সময় উপেক্ষা করা যায় না।
ফলে আশা করা যায়, পিপিপির মাধ্যমে এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে স্বচ্ছতা যেমন থাকবে, তেমনি প্রকৃতই নাগরিক সুবিধা বাড়বে।
এর আগে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মিরপুরের কালশীতে প্রথম আবাসন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিশাল ওই আবাসন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তদারকি ও রিহ্যাবের উদ্যোগে।
‘আধুনিক আবাসিক শহর’ প্রকল্পের পিপিপি প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে রিহ্যাব এর ব্যবস্থাপনা অংশীদারের ভূমিকা পালন করবে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আকার ধরা হয়েছে ১৩৯৮ বর্গফুট। একটি সমন্বিত নীতির মাধ্যমে রিহ্যাবের প্রায় ৪০০ সদস্য প্রাথমিক অবস্থায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশ নেবে।
কড়াইলের পরিকল্পিত প্রকল্পটিও এই আদলে করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৬/হাসান/এসএন/এএন
No comments:
Post a Comment