ইকেবানা’র সাতটি সূত্র
মুম রহমান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:16 Mar 2016 02:34:37 PM Wednesday

ইকেবানা করতে গেলে ফুল, ফুল রাখার পাত্র, ডাল, পাতা ইত্যাদি সব কিছুর রঙ, আকৃতি, সামঞ্জস্য ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। এমনকি ইকেবানা পদ্ধতিতে ফুল সজ্জার একাধিক ব্যাকরণ বা নিয়ম-রীতি আছে। ইকেবানা স্কুল বা ঘরাণাও আছে। তবে সকল ঘরাণার ক্ষেত্রেই সাতটি বিষয় মাথায় রেখে ইকেবানা তৈরি করা হয়। আসুন জানা যাক, স্বার্থক ইকেবানা তৈরির মৌলিক এই সাতটি শর্ত :
১. স্তব্ধতার গান শোনো : ইকেবানার মূল কথা হলো এটি দর্শকের মনে শান্তি এনে দেবে। ইকেবানা শিল্পীর প্রথম কাজই প্রকৃতিকে আস্বাদন করা, পর্যবেক্ষণ করা। প্রকৃতির শান্ত, মধুর স্নিগ্ধতা একাগ্রতার সঙ্গে অনুসরণ করা। তাই ইকেবানা মুখর ভাষা নয়, মৌন ভাষা। ইকেবানা স্তব্ধতার গান শোনাবে। প্রতিটি ইকেবানায় প্রশান্তি তুলে ধরবে নীরবে। উচ্চকিত ও জোরালো প্রকাশভঙ্গি ইকেবানায় বেমানান। অনেক ভিড় নয়, শূন্যতা- অনেক শব্দ নয়, স্তব্ধতাই ইকেবানার মূল ভাষা।
২. অল্পই তো বেশি : ইংরেজিতে যেমন বলে, তেমনি ইকেবানাতেও যতো কম উপাদান ব্যবহার করা যায় ততোই ভালো। বুদ্ধের নূন্যতম জিনিসের ব্যবহারের দর্শন দ্বারা ইকেবানা তৈরি হয়। বাহুল্য বা অপ্রয়োজনীয় জাঁকজমক ইকেবানায় একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। স্বল্পই সুন্দর, অল্পতেই তুষ্টি- ইকেবানার মূল দর্শন।
৩. আকার ও রেখার চিত্রায়ণ : ইকেবানা যদি চিত্রকলার সাথে তুলনা করি তাহলে বলতে হবে ফুল, ফল, লতা-পাতা, ডালপালা এইসব কিছুই হলো এই চিত্রকর্মের উপাদান। প্রতিটি ফুল, ফল, লতা-পাতা, ডাল-পালার নিজস্ব আকার-আকৃতি আছে, রৈখিক বৈশিষ্ট আছে। ইকেবানা সেগুলো স্বার্থকভাবে তুলে ধরে। আকার বা আকৃতির ব্যবহার হতে হবে নূন্যতম এবং রেখা হতে হবে শক্তিশালী, অর্থপূর্ণ।
৪. গঠনের গৌরব : ইকেবানার গঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আগে থেকে সুপরিকল্পিত নয়। বরং প্রকৃতির কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তার গঠনটিই সগৌরবে তুলে ধরা ইকেবানা শিল্পীর কাজ। ইকেবানা শিল্পী দূর দূরান্ত থেকে ফুল বা অন্য উপাদান আনে না, বরং যা হাতের কাছে পাওয়া যায় তা-ই দিয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করে।
৫. মানবিক শিল্পকর্ম : প্রকৃতির সঙ্গে মানবিক সম্পর্কের প্রকাশ ঘটে ইকেবানার মাধ্যমেই। ইকেবানা মানবিক শিল্পকর্ম। শিল্পীর মনের আবেগ-অনুভূতি ফুটে ওঠে ইকেবানাতে।
৬. নন্দন কানন : ইকেবানা যেন পাত্রের মাঝে সৃষ্টি এক নন্দন কানন। জাপানি নন্দনতত্ত্বের চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা যায় ইকেবানার মাধ্যমে।
৭. ত্রিভূবন : তিনটি প্রধান বিন্দুকে প্রকাশ করা ইকেবানা শিল্পীর অন্যতম কাজ। ইকেবানা রীতির ফুলসজ্জায় ত্রিভূজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই ত্রিভূজ বা তিনটি বিন্দু হলো প্রতীকি অর্থে স্বর্গ, পৃথিবী ও মানবিকতার প্রকাশ। সাধারণত শাখা-প্রশাখা বা ডাল-পালা দিয়ে এই তিনটি বিন্দু তুলে ধরা হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মার্চ ২০১৬/তারা
No comments:
Post a Comment