Monday, 1 February 2016

Tree man diseases

Tree man diseases 

যেভাবে ট্রি-ম্যানের রোগের সূচনা

উজ্জল জিসান : রাইজিংবিডি ডট কম
Published:01 Feb 2016   06:02:05 PM   Monday   ||   Updated:01 Feb 2016   08:39:07 PM   Monday
যেভাবে ট্রি-ম্যানের রোগের সূচনা
উজ্জল জিসান : আবুল হোসেন বাজনদার। পিতা মানিক বাজনদার। মায়ের নাম আমেনা বেগম। বাপ-দাদারা ঢাক-ঢোল বাজাতেন। ছোটকালে তিনিও তাদের সঙ্গী হতেন। সেই সূত্রেই আবুল হোসেনের নামের শেষে ‘বাজনদার’ উপাধি। গরিব পরিবারে জন্ম নেয় আবুল হোসেন। তার ৩ ভাই ও ৪ বোন।

২০০৫ সালে যখন তার বয়স ১৫ বছর তখন তিনি সংসারের চাহিদা মেটাতে রিকশা চালানো শুরু করেন। সেসময় তাদের এলাকায় হাঁটু পানি ছিল। সেই পানির মধ্যেই রিকশা টানতে হতো তার। হঠাৎ একদিন তিনি দেখলেন পায়ে ও হাতে আঁচিলের মতো কি যেন উঠছে। সেটিকে তিনি পাত্তাই দেননি। বরং ওই অবস্থায় কাজ কর্ম চালিয়ে গেছেন।

স্থানীয়দের পরামর্শে খুলনার পাইকগাছা বাজারের এক হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ওই হোমিও চিকিৎসক তাকে জানান, এটা কোনো ব্যাপার না। ওষুধ খেলেই এটা সেরে উঠবে। দুই বছর ধরে তিনি ওই চিকিৎসকের ওষুধ খান। কিন্তু উন্নতির পরিবর্তে দিন-দিন ওই আঁচিলগুলি বড় হতে থাকে।
 
বাজনদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হাত-পা ভিজলে আঁচিলগুলো নরম হয়ে যেত। গোড়ায় চুলকানো শুরু করতো। মাঝে মধ্যে ব্লেড দিয়ে আঁচিলের আগার দিকে কেটে দিতাম। কাটার ফলে তখন কোনো সমস্যা হয়নি। এমনকি ব্যথাও অনুভূত হয়নি। এভাবে ৫ বছর কেটে যায়। আসে বিয়ের পালা। শুরু হয় মেয়ে দেখা। কেউ রাজি হয় না আমাকে বিয়ে করতে। অবশেষে হালিমা নামের এক মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়। ঘর সংসার হয়। গত পাঁচ বছরে সংসারে তাহেরা নামে একটি কন্যা সন্তানও জন্ম নিয়েছে। এখন তাহেরার বয়স ৩ বছর।`

বাজনদার জানান, তার হাতে ও পায়ে এ ধরনের শিকড় থাকায় শরীরের অন্যান্য অংশে কোনো সমস্যা হয়নি। তার শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজ কর্মের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। আর এ জন্যেই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে তার। এটি সারাতে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে গেছেন। টাকা সংগ্রহ করে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। সেখানে হোমিও এবং অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে। তবেই সে ভালো হয়ে উঠবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় কলকাতা থেকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ততদিনে হাতের শিকড় ৫/৭ ইঞ্চি লম্বা হয়ে ঝোপ-ঝাড়ে পরিণত হয়েছে।
 
কিছুদিন আগে বাজনদারের হাতের শিকড়গুলোতে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। চুলকানো শুরু করে। এ অবস্থায় তিনি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন খবর পেয়ে বাজনদারকে চিকিৎসা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারই হাত ধরে বাজনদার পাড়ি জমান ঢামেকের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। সেখানে তিনি ৫১৫ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাজনদার মনে করছেন, আঁচিল থেকেই তার হাতের শিকড় এখন অনেক বড় হয়েছে। প্রথমে এটাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় আজ এ অবস্থা তার। শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করালে হয়তো এমনটা হতো না।

এরই মধ্যে ঢামেক হাসপাতালের পক্ষ থেকে রোববার দুপুরে বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আবুল কালামকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের অন্যান্য চিকিৎসক হলেন, ডা. সামন্ত লাল সেন, ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, ডা. রায়হানা আওয়াল, ডা. খান আবুল কালাম আজাদ এবং ডা. ইমদাদুল হক।

সোমবার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা চিকিৎসা শুরু করার আগে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডা. সামন্ত লাল সেন রাইজিংবিডিকে জানান, তার শরীরে ক্যান্সার আছে কিনা তা দেখা হবে। আর কি সমস্যা রয়েছে তাও দেখা হবে। এরপর তার চিকিৎসা শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এই রোগ ঠিক কি থেকে হয়েছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। পেপোরিয়াস ভাইরাসের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে এটি হিউম্যান ট্রি-ম্যান নামে পরিচিত। এর আগে ইন্দোনেশিয়া ও রোমানিয়ায় এ ধরনের আরো দুজন রোগীর সন্ধান মেলে।

বাজনদারের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত মাসুদ নামের একজন চিকিৎসক জানান, তাকে দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় বেড়েই চলছে। এটা ঠেকাতে তার কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি মানসিক ট্রমায় পড়তে পারেন- এই আশঙ্কায় এক্স-রে মেশিন তার কক্ষে নিয়ে এসে এক্স-রে করা হয়েছে।

 * ডাক্তার জানেন না আবুলের রোগের নাম
http://www.risingbd.com/%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE/145459

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/জিসান/শাহনেওয়াজ/তারা

No comments:

Post a Comment