Wednesday, 22 February 2017

bangla alphabet info

‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’

শাহেদ হোসেন : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ৮:৪৩:৩১ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ৮:৫১:৫৫ এএম

শাহেদ হোসেন : চার্বাক দর্শণে বলা হয়েছে- ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ।’ অর্থাৎ ঋণ করে হলেও ঘি খাও, যতদিন বাঁচো সুখে বাঁচো।

হাল জামানায় ব্যাংকগুলো বেশ ভালোভাবেই এ তত্ত্ব জনসাধারণকে গেলাতে সক্ষম হয়েছে। ঋণ নিন গাড়ি কিনুন, ঋণ নিন বাড়ি কিনুন, ঋণ নিন অমুক কিনুন তমুক কিনুন। অর্থাৎ টাকা নেই তো কী হয়েছে? ব্যাংকের কাছে আসুন। ঋণ নিন, সুদের টাকায় আমাকে ঋদ্ধ করুন। আর ফাঁকে আপনি জীবনকে উপভোগ করুন। তবে মহাভারতে বকরূপী ধর্মকে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, দিনান্তে যে পরম নিশ্চিন্তে শাক-ভাত খায়, সে-ই সুখী। অর্থাৎ, না আছে ঋণ-না আছে সুদ গোনার ঝক্কি । অল্পতে সন্তুষ্টিই আসল কথা।

স্বরবর্ণমালার সপ্তম বর্ণ ‘ঋ’। এর উচ্চারণ স্থান মূর্দ্ধা। এটি  স্বরধ্বনির মধ্যে স্থান পেলেও আসলে খাঁটি স্বরধ্বনি নয়। কারণ, এটি উচ্চারণকালে জিহ্বাগ্রা প্রায় মূর্দ্ধা স্পর্শ করে। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী  বলেছেন, ‘সংস্কৃত বর্ণমালায় ‘ঋ’ ও ৯ এই দুইটি বর্ণ স্থান পায়। উহারা স্বরবর্ণমধ্যে গণিত হইলেও খাঁটি স্বর নহে। ‘ঋ’ উচ্চারণের সময় জিহ্বাগ্র প্রায় মুর্দ্ধা স্পর্শ করে; ‘৯’ উচ্চারণের সময় জিহ্বাগ্র প্রায় উপর পাটীর দাঁত স্পর্শ করে। প্রায় করে,-একটু ফাঁক থাকিয়া যায়; হাওয়া সেই ফাঁক দিয়া বাহিরে আসে। হাওয়াটা একেবারে আটকায় না বলিয়া উহাদিগকে ব্যঞ্জন মধ্যে না ফেলিয়া স্বরের মধ্যে ফেলা হইয়াছে। সংস্কৃত ভাষায় ঋকারের হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় প্রয়োগই আছে; তবে দীর্ঘ প্রয়োগের দৃষ্টান্ত অধিক নাই।’ (শব্দ-কথা)।

ধ্বনিবিজ্ঞান অনুসারে বাংলা ঋ-এর উচ্চারণ (১) শব্দের প্রথমে কোনো বর্ণের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ‘রি’ (ঋণ, ঋষি); অন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে ঋ-এর  উচ্চারণ হয় র-ফলা (হৃদয়)।ঋ ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে ‍ৃ কার হয়। যেমন -ক+ ঋ = কৃ।

আগের ‘ঋ’ আদি বাংলায় ‘উ’-তে পরিণত হয়ে যেত ।  ‘ঋজু’ শব্দটি  ‘চর্যাপদ’-এ হয়ে গেছে ‘উজু’। কবি সরহ বলেছেন, ‘বটা উজুবাট ভাইলা’; অর্থাৎ ‘বাবা, সোজা পথ দেখা গেলো’।

জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তার বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে ‘ঋ’ দিয়ে প্রায় ৮৩টি শব্দ যুক্ত করেছিলেন। তবে প্রায় শত বছরের ব্যবধানে ‘ঋ’ দিয়ে শব্দের সংখ্যা অনেক কমেছে। আমাদের বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধানে এ সংখ্যা অনধিক ২৫-এ এসে ঠেকেছে।

সীতানাথ বসাক তার আদর্শ লিপিতে ঋ-তে লিখেছিলেন-ঋষিবাক্য শিরোধার্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও ঋ-দিয়ে ঋষি লিখেছেন। অর্থাৎ শিশুমনে ঋষির মতো শান্ত-সৌম্য চেহারার ধারণা এবং তেমনি চরিত্র গঠনে হয়তো উৎসাহ দিতে চেয়েছিলেন। স্মৃতিশাস্ত্রে বলা হয়েছে, যিনি পরমার্থে সম্যক দৃষ্টি স্থাপন করে সর্বোতভাবে পরোপকার করেন তিনিই ঋষি। তবে যুগ পাল্টেছে, আমাদের চরিত্রের ধরণও পাল্টেছে। ঋষি চরিত্রটি তপোবনে চলে গেছে। সেই তপোবন আবার ঋক্ষ (ভালুক) চরিত্রের বনদস্যুরা কেটে সাফ করে দিয়েছে। সুতরাং ঋষিও গত, ঋজু চরিত্রের মানুষও সেই গত হওয়ার পথে আছেন। বন কেটে সাফ করায়, ঋতুধর্মও পাল্টে গেছে।

চাণক্য বহু আগে বলে গিয়েছিলেন- ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিণী/ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্রঃ শত্রুরপণ্ডিতঃ । অর্থাৎ পরিবারিক জীবনে চার ধরণের শত্রু রয়েছে- ঋণী পিতা, পতির প্রতি অবিশ্বাসী মা, খুব সুন্দরী স্ত্রী এবং অজ্ঞ ও বোকা পুত্র। বদলাবদলির এই যুগে এখন এগুলো সবই আমাদের সমাজে বিদ্যমান।

তথ্যসূত্র :
বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
বাঙ্গালা ভাষার অভিধান : শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস
কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী : হুমায়ুন আজাদ
ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব - মুহম্মদ আবদুল হাই
রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী : শব্দ-কথা


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ

10 reason for headack

১০ ধরনের মাথাব্যথার কারণ

সার্জিন শরীফ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ৮:৪০:২৫ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ১১:০৫:৪৬ এএম
প্রতীকী ছবি
সার্জিন শরীফ : সময়ে-অসময়ে সব মানুষের মধ্যেই সাধারণ একটি উপসর্গ হিসেবে মাথাব্যথা হতে দেখা যায় এবং প্রত্যেকের কাছেই ব্যাপারটা বিরক্তিকর। কখনো কখনো পুরো মাথা জুড়ে বা মাথার অংশবিশেষ জুড়ে প্রায়ই অনুভূত ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, মাথাব্যথার রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং সেই সঙ্গে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু কারণ। মাথাব্যথার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে- মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা এবং ক্লাস্টার হেডেক। এছাড়া অসুস্থতা, আঘাত কিংবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।

আজকে আমরা আলোচনা করব মাথাব্যথার ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কারণ নিয়ে। কারণগুলো জানা থাকলে অভ্যাস এবং খাবার-দাবারে পরিবর্তন এনে সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

১. অ্যালার্জি : মাথাব্যথার প্রধানতম কারণ অ্যালার্জি। অ্যালার্জির কারণে স্নায়ুতন্ত্রে ব্লকেজ এর সৃষ্টি হয় ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী অ্যান্টি-হিস্টামিন সেবন করা যেতে পারে।

২. সাইনোসাইটিস : সাইনোসাইটিস জনিত মাথাব্যথা সাধারণত কপাল জুড়ে, চোখের চারপাশে এবং গালে অনুভূত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্প্রে জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৩. অ্যালার্ম  : প্রচন্ড মানসিক চাপের মূহূর্তগুলোতে আমাদের কপালে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যালার্ম’। উত্তেজনা কিংবা মানসিক কষ্টের কারণেও এমন হতে পারে। এ ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত চাপ সামলে নিতে শেখা। ‘ব্রিদিং (শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া) এক্সারসাইজ’ এর বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমেও এ ধরনের ব্যথা দূর করা সম্ভব।

৪. ক্লাস্টার পেইন : প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ী এই ব্যথা সাধারণত চোখের চারপাশ জুড়ে অনুভূত হয়। এর কারণে চোখে পানি চলে আসা কিংবা নাকের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। চিকিৎসকেরা এখনো এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারলেও বলে থাকেন সাধারণত অ্যালকোহল এবং ধূমপানের প্রভাবে এমনটা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৫. ক্যাফেইন এর প্রভাব :  প্রচুর কফিপানের অভ্যাস থাকলে সময় মতো কফি না পান করতে পারলে এক ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। এমন অবস্থা দেখা দিলে ধীরে ধীরে কফি পান ত্যাগ করা উচিত। কারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইন আসলে এক ধরনের নেশা উদ্রেককারী বস্তু।

৬. মাইগ্রেন : এটি আসলে এক ধরনের বিশেষ বংশানুক্রমিক রোগ। পরিবারের কোনো সদস্যের মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এটি পরবর্তী প্রজন্মে ছড়ায়। এক্ষেত্রে মাথার যেকোনো একপাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমন হলে আক্রান্ত ব্যক্তির বমি বমি ভাব কিংবা বমি এবং আলো ও শব্দে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। সঠিক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৭. মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা : মানসিক চাপজনিত কারণে মাথাব্যথা একটি সাধারণ ব্যাধি। সাধারণত পুরো মাথা জুড়ে, কপালের পার্শ্বদেশ এবং ঘাড়ের নিচে এই ব্যথা অনুভূত হয়। মাংসপেশীতে অধিক চাপ, অধিক শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রমের কারণে এই ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা এবং পরিমিত বিশ্রামের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

৮. টিএমজে : টেমপোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (টিএমজে) একটি মারাত্মক মাথাব্যথার উপসর্গ। কপাল এবং চোয়ালের পেশীতে সংকোচনের কারণে এই ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়। পরিমিত বিশ্রামের মাধ্যমে এ ব্যথা দূর করা সম্ভব।

৯. হজমে গন্ডগোলজনিত মাথাব্যথা : হজমে গন্ডগোলের কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় গ্রহণ করা খাবারের প্রভাবে এমন হয়। আবার বিপরীতভাবে ক্ষুধার কারণেও মাথায় ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া, ফুড অ্যালার্জির কারণেও এমন মাথাব্যথা হতে পারে। প্রায়ই এমন উপসর্গ দেখা দিলে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা উচিত।

১০. জায়ান্ট সেল আথ্রাইটিস : ধমনীতে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহের কারণে অনুভূত মাথাব্যথাকে ‘জায়ান্ট সেল আথ্রাইটিস’ নামে অভিহিত করা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। এটি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ায়। এমন অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র : লিফটার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সার্জিন/ফিরোজ

Green advanced city

সবুজে এগিয়ে যে শহর

মনিরুল হক ফিরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ১০:৩৫:৪০ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ১০:৪০:৪৭ এএম

সাতসতেরো ডেস্ক : বর্তমানে বিশ্বের সব দেশেই উৎসাহিত করা হচ্ছে, শহরগুলোতে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য এবং পার্কের পরিকল্পনা করার জন্য।

কিন্তু কোন শহরটি আজ সবচেয়ে সবুজ শহর হিসেবে পরিচিত, তা কি জানেন?

এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে মাস্যাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র সেনসিবল ল্যাব এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেছে ‘ট্রিপেডিয়া’ (http://senseable.mit.edu/treepedia) নামক ওয়েবসাইট। এই সাইটটি সারা বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর গাছের ঘনত্বের পরিমান ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপের সাহায্যে প্রদর্শন করে।

এক্ষেত্রে গবেষকরা গুগল স্ট্রিট ভিউ থেকে তথ্য ব্যবহার করে ‘গ্রিন ভিউ ইনডেস্ক’ নির্ধারণ করেছেন। স্যাটেলাইট ছবির সাহায্যে প্রতিটি শহরের কত শতাংশ সবুজে আচ্ছাদিত, তা সংখ্যায় রেটিং করা হয়েছে।

২০১৬ ট্রিপেডিয়া ওয়েবসাইটটি ১০টি শহরের তথ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এবং বর্তমানে এতে ১৭টি শহরের তথ্য অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ট্রিপেডিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে, নগর পরিকল্পনার পথ সুগম করা।

যা হোক, ট্রিপেডিয়ার তথ্যানুসারে জেনে নিন, কোন শহরটি সবচেয়ে বেশি শতাংশে সবুজ।

১২. লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালির্ফোনিয়া - ১৫.২ শতাংশ

১১. তেল আবিব, ইসরায়েল - ১৭.৫ শতাংশ

১০. বস্টন, ম্যাসাচুসেটস - ১৮.২ শতাংশ

৯. মিয়ামি, ফ্লোরিডা - ১৯.৪ শতাংশ

৮. টরন্টো, কানাডা - ১৯.৫ শতাংশ

৭. সিয়াটেল, ওয়াশিংটন - ২০ শতাংশ

৬. আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড - ২০.৬ শতাংশ

৫. জেনেভা, সুইজারল্যান্ড - ২১.৪ শতাংশ

৪. ফ্রাংকফুর্ট, জার্মানি - ২১.৫ শতাংশ

৩. স্ক্যারামেন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া - ২৩.৬ শতাংশ

২. ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা - ২৫.৯ শতাংশ

১. সিঙ্গাপুর - ২৯.৩ শতাংশ

সিঙ্গাপুর সুউচ্চ ভবন এবং প্লাজার পাশাপাশি গাছের ওপর গুরুত্বারোপের জন্য পরিচিত। ২০৩০ সালের মধ্যে শহরটির সবুজ অংশ আরো প্রসারিত করার প্রত্যাশা রয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, শহরটির ৮৫ শতাংশ অধিবাসী যেন একটি পার্ক থেকে ৪০০ মিটারের মধ্যে বসবাস করতে পারে- ২০১৩ সালে একটি ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ 

wake up 6am benefit for all

সকাল ৬টায় জেগে ওঠার ছয় কারণ

আসিয়া আফরিন চৌধুরী : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ৮:৪১:১১ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ১০:১৬:১৬ এএম
প্রতীকী ছবি
আসিয়া আফরিন চৌধুরী : অনেকেই জীবনের উন্নতির সঙ্গে সকালে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টিকে উল্লেখ করেন।

ব্লগার এগহোসা আহহাই দুই বছর ধরে সকাল ৬টায় বিছানা ছাড়েন এবং তিনি দাবি করেন, এই অভ্যাস তার জীবন বদলে দিয়েছে।

এগহোসা ছয়টি কারণ দেখিয়ে সকালে জেগে ওঠার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। সুফল সম্পর্কে জেনে আপনিও হতে পারেন ভোরের পাখি।

* লুকানো নিজেকে আবিষ্কারের সময় পাওয়া যায় : অনেকেই নিজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের কেন্দ্রবিন্দু ঠিক করতে পারেন না বলে তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন না। আপনি সহজেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবেন যদি না আপনি দ্রুত চিন্তা করতে না পারেন যে, জরুরিভাবে কোনটি আপনার আগে করা প্রয়োজন।

এটা সবারই জানা যে, মানুষের মস্তিষ্ক দিনের প্রথম ভাগে বেশি কাজ করে। তাই এই সময়টা ব্যবহার করুন আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণে নিতে।

* দিনের কর্মসূচি তৈরির সময় পাওয়া যায় : ভোরের পাখিরা কাজে যাওয়ার আগেই দিনের পরিকল্পনা করার সুযোগ পায়। যত আগে আপনার দিনের কর্মসূচি তৈরি হয়ে যাবে, আপনি তত কার্যকরভাবে এবং লাভজনকভাবে দিনটি পার করতে পারবেন। আগামী দিন আপনি কী করবেন, তা যদি বিকেলে নির্ধারণ করেন তাহলে তা খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না। কারণ দিনের শেষ ভাগে মস্তিষ্ক থাকে ক্লান্ত, যা বিশ্রামই নিতে চাইবে।

* আত্মোন্নতির জন্য সকালটাই উত্তম : কে বলেছে সকালে উঠেই অফিসের জন্য আপনাকে দৌড়ঝাঁপ করতে? অনেকেই বলেন তাদের কাছে পরিবার, বিনোদন, ব্যায়াম করার জন্য সময় নেই। কিন্তু আপনি যদি সকাল ৬টায় বিছানার মায়া ত্যাগ করতে পারেন তাহলে দিনের কাজ শুরু করার আগে ব্যায়াম করে নিতে পারেন। যখন আপনি সকালে ব্যায়াম করবেন তখন আপনার শরীর সারা দিন ঝরঝরে থাকবে।

* সকালে নাশতা করার সুযোগ পাবেন : আপনি আপনার জীবনে অনেকবারই শুনেছেন যে, সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যদি কাজে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে আপনি নাশতা করার সুযোগ পাবেন।

জন হপকিন ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে সঠিকভাবে নাশতা খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক। গাড়ির জন্য যেমন গ্যাস তেমনি শরীরের জন্য খাদ্য, বিশেষ করে সকালের।

* সফল ব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই এটি রপ্ত করেছেন : নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনের একটি আর্টিকেলে টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি বলেন, তার দিন শুরু হয় সকাল ৫.৩০ এ। কর্মজীবন শুরু করার আগের এই সময়টা তিনি ব্যবহার করেন মেডিটেশন ও ১০ কিলোমিটার হেঁটে। অ্যাপলের সিইও টিম কুক, তার দিন শুরু হয় ৪. ৩০ এ। ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্যারেন্সন। তার দিন শুরু হয় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। ‘বিজনেস ইনসাইডার’ এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন ৫.৪৫ এ তিনি ঘুম থেকে ওঠেন।

* আপনি সবার চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকবেন : গবেষকরা দেখিয়েছেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আপনার সৃষ্টিশীল ক্ষমতাকে ছড়িয়ে দেবে। তা ছাড়া এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আপনি তখন কাজ শুরু করবেন যখন আপনার প্রতিপক্ষ ঘুমাচ্ছে।

ব্লগার এগহোসা আহহাই বলেন, ‘আগে আমি সকাল ৮টা পর্যন্ত ঘুমাতাম। এখন আমি আমার নতুন অভ্যাসে অনেক এনার্জি পাই এবং সারা দিন পর মনে হয় আমি আমার কাজ সঠিকভাবে করতে পেরেছি।’

আপনি যদি আপনার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে ওঠার প্রশিক্ষণ নিজেকে দেন তাহলে আপনি প্রতিদিন ১৫০ মিনিট বেশি পাবেন। এবং সপ্তাহে সাড়ে ১৭ ঘণ্টা, মাসে ৭০ ঘণ্টার বেশি ও বছরে ৮৪০ ঘণ্টা বেশি পাবেন। এখন পছন্দ আপনার।

তথ্যসূত্র : লিফটার


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আসিয়া/ফিরোজ/এএন

how bangla beautiful

ভাসা ভাসা ভাষা

নাজমুল হুদা ও আরিফ রহমান : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২২ ১০:০০:৫৮ পিএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২২ ১০:০০:৫৮ পিএম

নাজমুল হুদা ও আরিফ রহমান : ইতিহাস লেখার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। চাইলে সংক্ষেপে সাধারণ জ্ঞানের মত করে লেখা যায় আবার বিস্তৃত করেও লেখা যায়। ইতিহাস পাঠে আমাদের আগ্রহ বরাবরই কম। আর এই কম আগ্রহের কারণেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আমরা আম জনতা দুটো লাইনই কেবল জানি। একটা হচ্ছে তমুদ্দিন মজলিশ আরেকটা হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম-বরকত-রফিকদের ওপরে গুলি বর্ষণ।

ঘটনা পরম্পরা আমরা জানতে চাই না। আর আমাদের এই না জানতে চাওয়ার ফাঁক গলে স্বাধীনতা বিরোধীরা ভাষা সৈনিক সেজে বসার সুযোগ পায়। আজ তাই ইতিহাসের অলিতে গলিতে খানিক আলোক বর্ষণ করতে হচ্ছে নিজেদের তাগিদেই।

সত্যি বলতে, শুরুটা ৪৭ এর জুলাই মাসে (জি হ্যা পাঠক, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হবার আগেই)। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমদ হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা গ্রহণের অনুরূপ পদক্ষেপ হিসেবে ঊর্দুকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব রেখে বক্তব্য পেশ করেন।

আর এর পরেই প্রথম প্রতিবাদটি আসে এবং সবার অবগতির জন্য বলতে হয় কোন প্রতিবাদী ছাত্র নয়, কোন বিপ্লবী নেতা নয় প্রকৃত অর্থেই এই প্রতিবাদ করেন বাংলা ভাষার প্রাণ প্রণেতা ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ‘পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে ঊর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে বাঙালিদের জন্য তা 'রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর' হবে। পরে একই প্রবন্ধ তিনি আগস্টের তিন তারিখে ভারতের সাপ্তাহিক পত্রিকা 'কমরেড'-এ ইংরেজীতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। যেখানে শিরোনাম ছিল ‘The language problem in Pakistan!’

ড: মুহম্মদ শহীদুল্লার এই প্রতিবাদ তৎকালীন পুর্ববাংলার বাঙালি সমাজকে দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করে। তাই ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে ভাষা আন্দোলনের উৎস পুরুষ বলা হলে খুব ভুল হবে না! অথচ আজ ঠিক কতজন এই সত্য জানেন?

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেই সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানে রাজনৈতিক একটা শুন্যতা ছিল। কারণ, তখন পাকিস্তান মাত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আবুল হাশিম সাহেবের মত নেতারা তখনও পুরোপুরি পূর্ব পাকিস্তানে আসেননি।

সে সময়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৭ দিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে 'তমুদ্দিন মজলিস' নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামসুল আলম, এ কে এম আহসান, কবি মোফাখখারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হুদা প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খা, আবুল মনসুর আহম্মদ, ড: কাজী মোতাহার হোসেন, কবি ফররুক আহম্মেদ প্রমুখ তমুদ্দিন মজলিশ’কে সাহায্য সহযোগিতা করেন।

প্রথমে ৭ সেপ্টেম্বর ১৯ নম্বর আজিমপুরে একটি কক্ষ নিয়ে ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে হওয়ায় ১ম নভেম্বরে অফিস বদল করে রশিদ বিল্ডিং এ স্থানান্তর করা হয় যেটি তৎকালীন আমতলা হিসেবে বহুল পরিচিত আর বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের পূর্ব পাশে অবস্থিত।  ২০ জানুয়ারি এই অফিস একদল সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। ফলে অফিস বদল জরুরি হয়ে ওঠে।

তখন মুহাম্মদ তোয়াহা ফজলুল হক হলের ভি পি এবং তমুদ্দিন মজলিশ নেতা। তিনি তমুদ্দিন মজলিসের মুল অফিসটি রশিদ বিল্ডিং থেকে আজিমপুরে আবুল কাসেম সাহেবের বাড়ীতে পুন:স্থানান্তর করেন আর ভাষা আন্দোলনের একটি উপকমিটি গঠন করে সেটাকে ফজলুল হক হলে স্থানান্তর করেন। এর মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে জড়াতে শুরু করে।

ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র রচিত হয় যার নাম দেয়া হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না ঊর্দু।’ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয় আজিমপুরে ভাষা আন্দোলন অফিসে। এখানে তিনটি নিবন্ধ স্থান পায়-

১. অধ্যাপক আবুল কাসেমের 'আমাদের প্রস্তাব'
২. কাজী মোতাহার হোসেনের 'রাষ্ট্র ভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা'
এবং ৩. আবুল মনসুর আহম্মেদের 'বাংলাই আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হবে'!

ফজলুল হক হল অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন শুরুর প্রাক্কালে ১৯৪৭ সালে ১৪ নভেম্বর তমুদ্দিন মজলিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে প্রথম স্মারকলিপি দেয়। এরপর ৫ ডিসেম্বর খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে তার বাসায় আবুল কাসেম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক মিলে বৈঠক করেন। সেই সময় মাওলানা আকরাম খাঁও তমুদ্দিন মজলিশের সাথে একাত্মতা ঘোষণা  করেন। তখন আবু জাফর শামছুদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।

সেই সময়ের একটা ঘটনা উল্লেখ করার মত। ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর একদল লোক পুলিশ ব্যারাকে হামলা চালায়। তাদের মিছিলে স্লোগান ছিল ...

‘রাষ্ট্র ভাষা ঊর্দু চাই
ঊর্দু ভাষার বিরোধীরা কাফের
এই কাফেরদের শায়েস্তা করতে হবে।’

প্রায় ৪০ জন লোক এই হামলা চালায়। তাদের হামলায় আহত হয় প্রায় ১৭ জন। তার মধ্যে নওয়াব আলী (ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দারোয়ান) এবং সাইয়েদ আহম্মেদ (১ম বর্ষ)- এর অবস্থা ছিল শোচনীয়। হামলাকারীদের প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিপি নুরুল হুদা। তিনি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের লাইসেন্স করা পিস্তল উঁচিয়ে হামলাকারীদের দিকে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এই হামলার প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের সকল সরকারি অফিসে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। ভাষা নিয়ে সরকারি অফিসে ধর্মঘট এটাই ছিল প্রথম।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদ সদস্য আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি পেশ করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি আলোচনায় আসে। তবে স্পিকার সেটাকে নাকচ করে দেন। এর প্রতিবাদে তমুদ্দিন মজলিশ এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ একত্রে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা ধর্মঘট পালন করে। এই ধর্মঘট চলাকালে ছাত্রদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে ১১ মার্চ প্রদেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়া হয়।

একটি বিবৃতি তৈরি করা হয় ১ মার্চে যাতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম (তমুদ্দিন মজলিশ), শেখ মুজিবুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ), নইমুদ্দীন আহম্মদ (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক) এবং আব্দুর রহমান চৌধুরী (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় যুব সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্য)। এরপর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর তমুদ্দিন মজলিশ মিলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। ১১ মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাতে শেখ মুজিব ও তার সঙ্গীরা কাজ ভাগ করে দিলেন সকালে কে কোথায় থাকবেন আর কে কোথায় পিকেটিং করবেন।

১১ মার্চ ভোর বেলায় শতশত ছাত্র-কর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিস ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং করেন। শামছুল হক সাহেব আগেই ধরা পড়েছেন, কিছুক্ষণ পরে শেখ মুজিবুর রহমানও ধরা পড়েন। আরো ধরা পড়েন অলি আহাদ। কিন্তু তাজউদ্দিন আহম্মেদ আর মোহাম্মদ তোয়াহাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি!

মুজিবুর রহমান-শামছুল হক সাহেবরা জেলে, পাশেই আছে মুসলিম গার্লস স্কুল। সেখানে ছোট ছোট মেয়েরা মিছিল করে ...

‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই
বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই
পুলিশি জুলুম চলবে না’

১৫ মার্চ সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। ১১ মার্চের এই হরতালই ছিলো মায়ের ভাষার দাবিতে প্রথম হরতাল।

১৯ মার্চ আসবেন পাকিস্তান অধিপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার সামনে দাবিগুলো তুলে ধরা হবে- এই আশায় তমুদ্দিন মজলিশের সভাপতি আবুল কাশেমকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন কামরুদ্দীন আহম্মেদ, নইমুদ্দিন আহম্মেদ, আজিজ আহম্মেদ, শামসুল আলম, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মাদ তোয়াহা, আব্দুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল মতিন খান।

জিন্নাহ সাহেব এলেন, ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় ভাষণ দিলেন। বললেন, ঊর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হবে! ছাত্ররা হাত তুলে জানিয়ে দিলেন ‘মানি না’! ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কার্জন হলে জিন্নাহ সাহেব আবারো বললেন ‘Urdu urdu shall be the state language of Pakistan’. তখন ছাত্ররা তার সামনেই হাত উঁচু করে ‘না না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। জিন্নাহ সাহেব পাঁচ মিনিট চুপ করে থাকতে বাধ্য হন।

ঐ দিনই জিন্নাহ ছাত্র নেতাদের ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামসুল হক, অলি আহাদ, মূহাম্মদ তোয়াহা, নইমুদ্দিন আহম্মদ, নুরুল হক ভুইয়া, কামরুদ্দিন আহম্মদ, আজিজ আহম্মদ, তাজউদ্দিন আহম্মদ, নুরুল হুদা আর একমাত্র মহিলা ছিলেন লিলি খান। কিন্তু জিন্নাহ’র  একগুয়ে মনোভাব আর একদেশদর্শিতার কারণে আলোচনায় ঐক্যমত হয়নি।

শেখ মুজিবুর রহমান ঐ বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন না। কিন্তু জিন্নাহ চলে যাওয়ার কয়দিন পর ফজলুল হক হলের সামনে এক ছাত্রনেতা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন ‘জিন্নাহ যা বলবেন আমাদের তাই মানতে হবে। তিনি যখন ঊর্দুই রাষ্ট্রভাষা বলেছেন তখন ঊর্দুই হবে।’ পরে শেখ মজিবুর রহমান তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে বলেন ‘কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে!’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী- পৃষ্ঠা ৯৯/১০০)।

এরপর ২৬ জানুয়ারি ১৯৫২ সাল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করলেন ‘একমাত্র ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা।’

তার এই ঘোষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন। পরদিন ২৭ জানুয়ারি ঢাবির কলাভবনের আমতলায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্ররা তীব্র ভাষায় নিন্দা জানায়। এই সভায় হাবিবুর রহমান শেলী সর্বপ্রথম এম এ জিন্নার আটচল্লিশের উক্তি, লিয়াকত আলীর হুশিয়ারি, খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলেন।

উল্লেখ্য, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থিত নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর সরকারবিরোধী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। তখনো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হয়নি। তবে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগ (এরা খানিক বাম ঘেষা; অলি আহাদ তখন এই দলের নেতা) এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কমরেড আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে একটা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ আর সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিলিত শক্তি ভাষার জন্য আন্দোলনকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। এদেরই ডাকে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহের খালেক নেওয়াজ খান। আবারো পূর্ব বাংলা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেখ মুজিব তখন বিনা বিচারে জেলে।

মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন :

১৯৫২ এর ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় বার লাইব্রেরিতে তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন আহ্বান করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী। এ ছাড়াও ঐ সম্মেলনে আবুল হাশিম সাহেবের ‘খেলাফত রাব্বানী পার্টি’, তমুদ্দিন মজলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে ভাসানীকে চেয়ারম্যান আর আওয়ামী লীগের গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে 'সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ' গঠিত হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেষন শুরু হবে। তাই ভাসানী ২১ তারিখকে 'ভাষা দিবস' ঘোষণা করলেন আর নির্দেশ দিলেন প্রস্তুতি গ্রহণ করার! মুজিব তখন জেলে।

৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ : (গাজীউল হকের স্মৃতিচারণ) সভাস্থলে চেয়ার এসে পৌঁছানোর আগেই টেবিলের উপর লাফিয়ে  উঠে এমআর আক্তার মুকুল সভাপতি হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি যখন সভাপতির নাম প্রস্তাব করছেন তার মতলব বুঝে সৈয়দ নুরুল আলম, মুকুলের প্যান্ট ধরে টেনে নামানোর চেষ্টা করেন। এই টানা হেচড়ায় মুকুলের প্যান্টের কয়েকটি বোতামই ছিড়ে যায়। এরপর ছয় ফুট লম্বা কমরুদ্দিন শহুদ আঙুলের উপরে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে হেরে গলায় আমার নাম প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। মুকুল টেবিল থেকে নেমে পড়ার সাথে সাথে আমি সভাপতির আসন নিলাম। সেদিন প্রায় দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী সেখানে উপস্থিত হয়, মিছিল করে ঢাকা নগরী প্রদক্ষিণ করে। প্রদেশব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটকে সফল করার আহবান জানানো হয়!’

১৮ ফেব্রুয়ারি: ভোরে জেলখানা থেকে একটি গোপন চিঠি বেরিয়ে আসে। চিঠির লেখক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ২৭ মাস বিনা বিচারে বন্দি। তাকে অলি আহাদ, মো: তোয়াহা জানিয়ে এসেছেন ২১ তারিখে মাওলানা সাহেব 'ভাষা দিবস' ঘোষণা করে সাধারন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়, মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেব অনশন শুরু করেছেন। ঐ চিঠিতে মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন।

২০ ফেব্রুয়ারি: বিকেল ৩টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে গাজিউল হকেরা মিটিং করছিলেন আর স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরি করছিলেন। এমন সময় মাইকে ঘোষণা আসে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারী থাকবে, কোন প্রকার মিছিল-মিটিং বন্ধ। সাথে সাথেই ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা: সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে জনাব ফকির শাহাবুদ্দিন আহমদের (পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা, বাংলাদেশের প্রথম এডভোকেট জেনারেল) সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ‘১৪৪ ধারা মানা হবে না।’ ঠিক একইভাবে ফজলুল হক হলেও একটি মিটিং হয় আব্দুল মোমিনের (পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের খাদ্যমন্ত্রী) নেতৃত্বে। ফজলুল হক হলের তখন ভিপি ছিলেন শামসুল আলম এবং জি এস আনোয়ারুল হক খান (পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রথম সচিব)। এই সভাতেও সিদ্ধান্ত হয় ‘১৪৪ ধারা মেনে নেয়া চলবে না।’

২০ তারিখ সন্ধ্যার পর: নবাবপুরে আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে মিটিং। সভাপতি আবুল হাশিম, অলি আহাদ, মেডিক্যাল কলেজের ভিপি গোলাম মওলা, আব্দুল মতিন এতে ১৪৪ ধারা ভাঙার ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তাদেরকে সমর্থন করেন ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিয়নের ভিপি শামসুল আলম। মোহাম্মদ তোয়াহা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে বক্তব্য দেন কিন্তু ভোটাভুটির সময় তিনি ভোট দানে বিরত থাকেন। ফলে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ' ১১-৪ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয় ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে। এরপর অলি আহাদ তীব্র কণ্ঠে বলেন 'এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না এবং আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র সভা হবে সে সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয় তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।

অলি আহাদের বক্তব্যের জবাবে আবুল হাশিম রাগতঃস্বরে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসভা হবে সে সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের পক্ষে শামসুল হক (আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সা: সম্পাদক) কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত  ছাত্রদের জানিয়ে দেবেন এবং বক্তব্য পেশ করবেন। যদি তারপরও ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙে তবে স্বাভাবিকভাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বিলুপ্তি ঘটবে!’ আবুল হাশিমের এই বক্তব্য প্রস্তাবাকারে গৃহীত হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত: ঢাকা হলের পূর্ব পাশের সিড়িতে খুব গোপন একটা বৈঠক হবে। এখানে এসেছিলেন এমন কিছু তরুণ যারা সর্বদলীয় কর্মপরিষদের সদস্য নন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব প্রভাবশালী। এরা হাশিম সাহেবের নির্দেশ মানতে নারাজ। এদের কেউ কেউ আবার আগেই ফজলুল হক হলের কামরায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে আর ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করা হবে। রাত ১২টার পর আস্তে আস্তে পুকুর পাড়ে তারা চলে এলেন...

গাজীউল হক
হাবিবুর রহমান শেলী
মোহাম্মদ সুলতান
এম আর আক্তার মুকুল
জিল্লুর রহমান
আব্দুল মোমিন
এস এ বারী এটি
সৈয়দ কমরুদ্দীন শহুদ
আনোয়ারুল হক খান
মঞ্জুর হোসেন
আনোয়ার হোসেন

সভায় সিদ্ধান্ত হল ২১ তারিখের মিটিংয়ে  সভাপতিত্ব করবেন গাজীউল হক। তিনি  গ্রেফতার হলে সভাপতিত্ব করবেন এম আর আক্তার মুকুল। মুকুল যদি গ্রেফতার হন  সভাপতিত্ব করবেন কমরুদ্দিন শহুদ। সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরদিনের সভায় প্রথমে বক্তৃতা দেবেন শামসুল হক, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আব্দুল মতিন বক্তৃতা দেবেন ১৪৪ ধারা না ভাঙার  পক্ষে। এরপর সভাপতি হিসেবে গাজীউল হক বক্তৃতা দেবেন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে। মিটিং শেষে সবাই চলে যাওয়ার পর স্বল্পভাষী মোমেন  বললেন মুকুলকে, ‘কাল সকালে ভার্সিটিতে গেলে চলবে না, তুমি খুব ভোরে গোপনে ভার্সিটিতে যাবে।’

২১ ফেব্রুয়ারি :

সকাল সাড়ে আটটা :

শহরতলী (কামরাঙ্গীরচর/টংগী) থেকে মিছিল আসতে থাকে কলা ভবনের দিকে।

সকাল সাড়ে নয়টা :

আশপাশের কলেজ থেকে মিছিল আসতে থাকে। বিশেষত ঢাকা মেডিক্যালের মিছিল ছিল সবচে বড়। ইডেন কলেজ থেকে মেয়েদের একটা মিছিল আসে।

সকাল সাড়ে দশটা :

ঢাবি আর আশপাশ ভরে যায় মিছিলে স্লোগানে- ‘১৪৪ ধারা মানি না, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’ পুলিশ কিংকর্তব্যবিমুঢ়, কি করবে ভেবে পায় না, ওরা অপেক্ষায় নাজিমুদ্দিন কি বলে।’

সকাল এগারোটা : কালো শেরোয়ানী আর জিন্নাহ টুপি পরিহিত শামসুল হক সাহেব আসলেন আর তিনি বললেন, ‘আমরা আন্দোলন করব। ১৪৪ ধারা ভাঙা যাবে না, শান্ত-শিষ্ট মিছিল হবে!’

একজন বলে উঠল- ‘ট্রেইটর!’

ছেলেটির নাম হাসান হাফিজুর রহমান (পরবর্তী সময়ে প্রথিতযশা কবি)। সে শামসুল হক সাহেবের টুপি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলেন আর বললেন ‘You have no right to speak, get out!’

গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল মধ্যরাতের সেই আশ্বারোহীরা।

প্রথম মিছিলের অগ্রভাগে হাবিবুর রহমান শেলী, তার সাথে দশ জন।

২য় দলের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, তার সাথে দশজন।

৩য় দলের কাণ্ডারী আনোয়ারুল হক খান আর আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, তাদের পেছনে দশজন।..... এভাবে প্রত্যেকের পেছনে দশজন করে।

এটাই সেই বিখ্যাত 'দশজনি' মিছিল আর তার উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান শেলী।

বিশ্ববিদ্যালয় মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত। দাবি একটাই ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’

১৪৪ ধারা ভেঙে ফেললো ছাত্ররা, সাধারন ছাত্ররা। পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়লো। ছাত্ররা শুরু করলো ইট নিক্ষেপ। কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে লাগলো গাজীউল হকের সরাসরি বুকে। তাকে এম আর আক্তার মুকুল আর জুলমত আলী খান (পরবর্তিতে বি এন পি নেতা) নিয়ে রেখে  এলেন মেয়েদের কমন রুমে।

বেলা তিনটা দশ : পুলিশ লাঠিপেটা করে আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছাত্রদের থামাতে পারেনি। সকাল থেকেই ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। বেলা তিনটা দশে প্রথম গুলি চললো। মেডিক্যাল হোস্টেলের উল্টো দিক থেকে একদল সশস্ত্র পুলিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরেশীর নির্দেশে দৌড়ে এসে পজিশন নিয়ে 'ওয়ালী ফায়ার' করল।

বরকত ছিলো ঢাবির ছাত্র। সে গুলিতে প্রাণ দেয়। মানিকগঞ্জের ছেলে রফিক এসেছিল ঢাকায় বিয়ে করার সওদা করতে। পুলিশের গুলি তার প্রাণ কেড়ে নেয়। আরো প্রাণ দেন সালাম।

আজকের জগন্নাথ হলটি ছিল সেদিনের পূর্ববঙ্গ  ব্যবস্থাপক পরিষদ। সেদিন রক্তের হোলি খেলার পরপরই বসে অধিবেশন, যদিও অধিবেশন বসতে বেশ খানিক দেরি হয়। কারণ, তেলাওয়াতের পর বিরোধী দলীয় নেতা খয়রাত হোসেন (রংপুর)  গুলিবর্ষন জনিত পরিস্থিতি উল্লেখ করে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করলে তুমুল বাদানুবাদের সৃষ্টি  হয়। স্পিকার বারবার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এ সময় বিরোধীদলের কংগ্রেসী সদস্যরা ছাড়া মাত্র চারজন মুসলিম লীগ সদস্য ছিলেন। এরা হলেন রংপুরের খয়রাত হোসেন, ঢাকার আনোয়ারা খাতুন, যশোরের শামছুদ্দিন, কুমিল্লার আলী আহম্মদ। আর ছিলেন মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্য (পাবনা থেকে নির্বাচিত) মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ। তার সাথে স্পিকারের তীব্র বাদানুবাদ হয়। সংসদ ১৫ মিনিটের জন্য মুলতবী হয় এবং পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

গুলিবর্ষণের ঘটনার পর হাসপাতাল পরিদর্শনে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে নেতা আসেন তিনি হলেন তদানীন্তন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। এর পরেই আসেন ঢাবি'র অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন প্রধান ও আদিতে তামিলনাড়ু  নিবাসী ডক্টর  আয়ার এবং ব্যবস্থাপক পরিষদ কক্ষ ত্যাগকারী এম এল এ।

বাঙালি জাতির উৎসমূলে রয়েছে এই বাংলা ভাষা। পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকেই এই যে জাতিসত্তা আর ভাষা সত্তার বৈপরীত্য নিয়ে এ জাতির আন্দোলন সেটাই বাংলা নামের দেশটাকে স্বাধীনতার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের বড় বড় ঘটনাগুলোকে ছোট ছোট করে আলোচনা করলাম উপরে, যদিও ঘটনাগুলো তাৎপর্যের বিবেচনায় বড় আলোচনার দাবি রাখে। আমরা যারা ইতিহাস পাঠে আগ্রহ খুঁজে পেতে চাই তারা যেন ঘটনাগুলোকে একটু একটু করে ছুঁয়ে দেখতে পারি তারই একটা প্রচেষ্টা।

(এই লেখাটি প্রস্তুত করার জন্য একাধিক পুস্তিকা এবং ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া হয়েছে)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ

open !

যে ১০ শহরে নগ্নতা বৈধ

রাশিদা নূর : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ৮:৩৪:৪৯ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ১২:৪০:৫৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাশিদা নূর: পৃথিবীতে সভ্যতার সূচনার আগে মানুষ নগ্ন জীবন-যাপন করত। ধীরে ধীরে মানুষ সভ্যতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। নানা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষ এই পৃথিবীকে করে তোলে আধুনিক থেকে আধুনিকতর এক আবাসস্থল।

পোশাক পরিধানকে সভ্যতার একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই নগ্নতা এখন ‘নিষিদ্ধ’ একটি বিষয়। কিন্তু বিশ্বে এখনো এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে প্রকাশ্যে বা জনসম্মুখে নগ্নতা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বৈধ। এমন ১০টি উল্লেখযোগ্য শহর নিয়ে এই প্রতিবেদন।

পোর্টল্যান্ড ও ইউজেন, যুক্তরাষ্ট্র: পোর্টল্যান্ড ও ইউজেন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের দুটি শহর। উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই শহর দুটিতে প্রকাশ্যে নগ্নতা বৈধ। সেখানে একবার রাস্তায় নগ্ন হয়ে সাইকেল চালিয়ে গোটা বিশ্বকে তাদের নগ্নতা সম্পর্কে জানিয়েছে শহর দুটির বাসিন্দারা।

কেপ ডি’আগডে, ফ্রান্স: এটি ফ্রান্সের আগডে শহরের সমুদ্রতীরবর্তী একটি রিসোর্ট। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় নগ্ন রিসোর্ট এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় নগ্ন শহর হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। তবে এখানে প্রকাশ্যে নগ্নতা বৈধ হলেও জনসম্মুখে যৌনমিলনে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

মিউনিখ, জার্মানি: জার্মানির মিউনিখ শহরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশ্যে নগ্নতাকে বৈধতা দেওয়া হয়। তবে এজন্য শহরের ৬টি এলাকাকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে দেশটির সরকার। এসব স্থানে যে কেউ নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতে ও সুর্যস্নান করতে পারবে।

অস্টিন, টেক্সাস; যুক্তরাষ্ট্র: অস্টিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি শহর। যেখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত একমাত্র ক্লোদিং অপশনাল পার্ক রয়েছে, যা ‘হিপ্পি হলো’ নামে পরিচিত। অস্টিন শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লেক ট্রাভিস এলাকায় একশ একরজুড়ে এই হিপ্পি হলো পার্ক। এখানে শরীরে কাপড় পরা না পরা একটি ঐচ্ছিক বিষয়। কেউ চাইলে কাপড় পরতে পারে, আবার নাও পরতে পারে।

লন্ডন, ইংল্যান্ড: ইংল্যান্ডের লন্ডনের ওয়েলস নগরীতেও প্রকাশ্যে নগ্নতা বৈধ। তবে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা হচ্ছে কাউকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে কিংবা কারো ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে নগ্ন হওয়া এখানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। নগ্নতার এই বৈধতার ফলেই সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নগ্ন রেস্টুরেন্ট, ব্যায়ামাগার ও কবিতা পাঠের আসরসহ নানা ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ নিয়র্ক সিটিতে প্রকাশ্যে নগ্নতা বৈধ, তবে পুলিশ চাইলে নগ্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। একই সঙ্গে নগ্ন নারী অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের অনুমতিও আছে সেখানে।

হনলুলু, হাওয়াই; যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হনলুলু শহরে প্রকাশ্যে টপলেস (অর্ধ নগ্ন) আইনত বৈধ। শহরে কিংবা সমুদ্র সৈকতে ওপরের অংশ কাপড়বিহীন রাখার বৈধতা রয়েছে। তবে এখানে যৌনাঙ্গ প্রকাশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেও টপলেস বৈধ। এখানে ‘টপলেস ডে’ নামে একটি দিবসও পালন করা হয়। তবে নিউ ইয়র্কের মতো এখানেও বটম ফ্রিডম নেই অর্থাৎ যৌনাঙ্গ প্রকাশে এখানেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি কোনো নারী নগ্ন হয়ে অন্যের সঙ্গে অসংলগ্ন কোনো আচরণ করলে তার বিরুদ্ধেও পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

বুল্ডার, কলোরাডো; যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের কলরাডোর এই শহরটিতেও জনসম্মুখে টপলেস হওয়ার অনুমতি রয়েছে, পূর্ণ নগ্নতায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

সূত্র: মিড ডে




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ

mental fresh exercise

বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলতে কবরে শুয়ে ধ্যান!

আহমেদ শরীফ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২৩ ১০:১৫:২৪ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২৩ ১০:২২:১৩ এএম
বিবাহবিচ্ছেদের দুঃখ ভুলতে কবরে শুয়ে ধ্যান করেন চীনের নারীরা
আহমেদ শরীফ : স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর জীবনটা নতুনভাবে ফিরে পেতে চান চীনের নারীরা। আর তাই নিজেদের তৈরি কবরে শুয়ে ধ্যান করছেন অনেকে।

চংকিং সিটিতে কয়েকজন নারীর এই অদ্ভুত রীতি দেশটিতে বেশ আলোচিত হচ্ছে এখন। কবরে শুয়ে ধ্যান করার এই অভিনব রীতি বিবাহবিচ্ছেদ ৩০ বছর বয়সি লিউ তাইজের মাথায় প্রথম আসে। তিনি এখন অন্য নারীদের ভালোবাসায় বিচ্ছেদের পর মন নিয়ন্ত্রণের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। ১৯ বছরে বিয়ে করার পর ২০১৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তার। এক সন্তান নিয়ে ওই সময় খুব খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলেন তিনি। নিজের ব্যবসাও শুরু করতে পারছিলেন না। তবে পরে নিজেকে বেশ ভালোভাবে সামলে নিতে পেরেছিলেন। তাই অন্য নারী যাদের বিয়ে বিচ্ছেদ বা সম্পর্কের তিক্ত অবসান হয়েছে, তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। সেসব মন ভাঙ্গা নারীদের সুন্দর জীবন উপভোগ করতে সহায়তা করছেন তিনি।

লুই বলেছেন- ‘আমি জানি বিবাহবিচ্ছেদ  হওয়ার পর একটা মেয়ে মনে কতটা কষ্ট বয়ে বেড়ায়। বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর আমি আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলাম।’ তবে কবরে শুয়ে ধ্যান করলে, এক ধরনের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা পেয়ে সে ধরনের চিন্তা অন্য কোনো নারীর মনে যাতে না আসে, ওই শিক্ষাই দিচ্ছেন লুই।

বলেছেন-‘এই অভিজ্ঞতা হতাশ নারীদের বুঝতে শেখায় তাদের জীবনে এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে। অতীত ভুলে এগিয়ে যাওয়া শিখে তারা। ব্যর্থতা ভয়ের কিছু নয়। আমি চাই বিবাহবিচ্ছেদ  হওয়া নারীরা নিজেদের জীবন উপভোগ করুক ও নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করুক।’

চীন ও এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এ ধরনের ‘মৃত্যু চিকিৎসা’ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হতাশ মানুষদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অথবা থিম পার্কে নতুন সংযোজন হিসেবে এই রীতি দেখা যাচ্ছে অনেক এলাকায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আহমেদ শরীফ/সাইফ

Sunday, 19 February 2017

pet value $m info

কোটি টাকার পোষা প্রাণী (প্রথম পর্ব)

শাহিদুল ইসলাম : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-০৯ ৮:১০:৩৯ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-১৯ ৯:৩১:৫০ পিএম

শাহিদুল ইসলাম : প্রতিটি মানুষেরই শখ থাকে। অনেকের শখ প্রাণী পোষা। যারা শখ করে প্রাণী পুষে তাদের কাছে দাম কোনো ব্যাপারই নয়।

শখের বশে তারা কিছু কিছু প্রাণী এমন সব দামে কিনে নেয় যা শুনলে সত্যিই অবাক হতে হয়। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১৫টি পোষা প্রাণী নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে থাকছে ৮টি প্রাণীর তথ্য।


গ্রিন মানকি :
নাম শুনে নিশ্চয় মনে করেছিলেন যে, এটি সবুজ রঙয়ের বানর। না, এটি বানর নয়। এটি একটি আমেরিকান রেসের ঘোড়া। প্রাণী জগতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রির রেকর্ড গড়েছে এই ঘোড়া। ২০০৬ সালে দুই বছর বয়সী এই ঘোড়া নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৬ মিলিয়ন ইউএস ডলারে। বার্বাডোজের গ্রিন মানকি গলফ কোর্সের মালিক কিনেছেন এটি। সে কারণেই ঘোড়া হয়েও এটির নাম হয়েছে গ্রিন মানকি। সিএনবিসি এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রিন মানকি যখন প্রথমবার রেসে নেমেছিল তখন এটি এক মাইলের আট ভাগের এক ভাগ দৌড়েছিল মাত্র ৯.৮ সেকেন্ডে! তবে দুর্ভাগ্যবশত পরবর্তে ইনজুরিতে পড়ার পর ঘোড়াটি এই গতিতে আর দৌড়াতে পারেনি।


মিস মিসি :
মিস মিসি হোলস্টেন জাতের গাভী। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক শোতে এটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জানতে চান এটি কি পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে? সাধারণ গাভী থেকে এটি প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি দুধ দেয়। মিস মিসির আনুমানিক মূল্য ১২ লাখ ডলার।


স্যার ল্যান্সেলট এনকোর :
প্রিয় ল্যাব্রাডোর কুকুর ক্যানসারে হঠাৎ মারা যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পত্তি এতটাই শোকাহত হয়ে পড়ে যে, তারা কুকুরটির ক্লোন তৈরিতে ব্যয় করে ১ লাখ ৫৫ হাজার ডলার। দীর্ঘ দিনের সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে জন্ম নেয় স্যার ল্যান্সেলট এনকোর। এটি পৃথিবীর প্রথম ক্লোন কুকুর। ফলে এর দামও যে আকাশ চুম্বী হবে সেটাই স্বাভাবিক। আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।


তিব্বতীয়ান ম্যাসটিফ :
তিব্বতের এই কুকুরগুলো শুধু যে আকারে বড় তা নয়, এগুলো সিংহের ন্যায় হিংস্র। এই জাতের কুকুরগুলোকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গবাদি পশু বা কোনো সংরক্ষিত স্থান পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত তিব্বতিয়ান ম্যাসটিফ কুকুর বিশ্বে বিরল। আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ ৮২ হাজার ডলার। ২০১১ সালে একটি তিব্বতিয়ান ম্যাসটিফ ১.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।


সাদা সিংহ শাবক :
সাদা সিংহ পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ প্রাণী। আপাদমস্তক সাদা পশমে আবৃত এই সিংহ সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে দেখা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সংরক্ষিত বনাঞ্চাল তিম্বাভাতিতে এই সিংহ এখনো কিছুটা দেখা যায়। প্রতিটি সাদা সিংহ শাবকের আনূমানিক দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার।


অ্যারাবিয়ান ঘোড়া :
অ্যারাবিয়ান হর্স পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত ঘোড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। দারুন অ্যাথলেটিক বডি, চিজল্ড গলা ও লম্বা লেজের এই ঘোড়াগুলোর আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ডলার।


স্টেগ বিটল :
স্টেগ বিটল হচ্ছে এক ধরনের গুবরে পোকা। তবে গুবরে পোকা বলে কেউ অবহেলা করবেন না। কারণ ৭ বছর আয়ুষ্কালের এই পোকাটিকে কেউ যদি নিজের কাছে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখতে চান তবে আপনাকে আনুমানিক ৮৯ হাজার ডলার খরচ করতে হবে।


সাভানহা বিড়াল :
বড় বড় পা ফেলে সাভানহা জাতের বিড়াল যখন হাটে তখন সেটা হয় দেখার মতো দৃশ্য। আফ্রিকান সার্ভাল জাতের সংকরের মাধ্যমে এই বিড়ালের জন্ম দেওয়া হয়। অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই জাতের বিড়ালেরা অন্যান্য জাতের বিড়াল থেকে অধিক বন্ধুসুলভ হয়। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অন্য বিড়ালেরা যেখানে পানি দেখে ভয়ে পালায় সেখানে সাভানহা জাতের বিড়ালেরা পানি নিয়েই খেলতে ভালোবাসে। আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার ডলার আপনাকে ব্যয় করতে হবে এই জাতের বিড়াল কিনতে চাইলে।


তথ্যসূত্র: স্কুপহুপ
http://www.risingbd.com/feature-news/214451


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

drinking water info

রাতের রেখে দেওয়া পানি পান স্বাস্থ্যসম্মত?

আসিয়া আফরিন চৌধুরী : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২০ ৮:১৪:০৫ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২০ ১০:১৫:০৯ এএম
প্রতীকী ছবি
আসিয়া আফরিন চৌধুরী : সারা রাতে আপনার পানি পিপাসা পেতেই পারে। এটি বিরল নয় যে, আপনার পানির তৃষ্ণায় ঘুম ভেঙে গেছে।

কিন্তু যদি আপনি এক চুমুক পানি খেয়ে পানির গ্লাস বিছানার পাশে নাইট স্ট্যান্ডে রাখেন তাহলে তা পরবর্তী সময়ে পান কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত?

আপনি হয়তোবা জানেন যে, পানি খেয়ে পানির গ্লাস ঢেকে না রাখা অস্বাস্থ্যকর। ময়লা, ধূলিকণা এমনকি মশার ডিম বা মশা ইত্যাদি সারা রাত আপনার গ্লাসে পড়তে পারে, যদি আপনার গ্লাসটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়। এমনকি বন্ধ কন্টেইনার যেমন বোতল, পানির পাত্র থেকেও জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। কারণ, আমাদের ত্বকে ঘাম, ময়লা, ধুলা, মরা কোষ, এমনকি নাকের শ্লেষ্মা লেগে থাকে। একবার যখন আমরা বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি পান করি তাহলে তা পুনরায় বোতলটি ধোয়া উচিত, এর মূল কারণ হলো দূষণ।

আমাদের মুখের লালাও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বহন করে।মুখ লাগিয়ে পানি পান করার পর যদি আপনি তা রেখে দেন তাহলে বোতলে থাকা পানি দূষিত হতেই থাকবে। আপনি তাই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন- এমনটাই জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের মারসি মেডিক্যাল সেন্টারের এমডি ও প্রাইমারি কেয়ার স্পেশালিস্ট মার্ক লিভে।

যদি আপনি বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি পান করেন তাহলে তা আপনাকে একবারে শেষ করতে হবে বা বাকিটুকু ফেলে দিতে হবে।

কিন্তু সত্যিটা হলো, এটি যখন আপনার নিজের ব্যাকটেরিয়া এটি অসম্ভাব্য যে, আপনি অসুস্থ হবেন। অনেকে আছেন যারা ব্যবহারকৃত গ্লাস, মগ, বোতল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু নিজে তা দ্বারা আক্রান্ত হন না। তবে নিজের গ্লাস, মগ, বোতল অন্য কারোর সঙ্গে ভাগাভাগি না করাই ভালো। কারণ, আপনার অজ্ঞাতসারে ছোঁয়াচে রোগীর জীবাণু যেমন এইচআইভি বা এইডস আপনার দেহে প্রবেশ করতে পারে।

ট্যাপ বা বোতলের পানিতে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু মনে করা হয় যে, বোতলের পানি ট্যাপের পানির চেয়ে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ। কিন্তু দুটোই একই স্বাস্থ্যমানের। বরং ২৫ ভাগের বেশি বোতলের পানি ট্যাপ থেকেই ভর্তি করা হয়।

আপনি আপনার গাড়িতে পানি রাখেন? সূর্যের আলোতে পানিকে যদি গরম করেন, তাহলে তা হবে ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারের উপযুক্ত স্থান। বিশেষ করে আপনি যদি আগে থেকেই মুখ লাগিয়ে পানি পান করে থাকেন। আপনার বোতলটিকে শীতল স্থানে রাখুন, এতে ব্যাকটেরিয়া ধীরে বংশবিস্তার করবে।

কিছু প্লাস্টিকের বোতল আছে যাতে বিপিএ বা এই ধরনের কিছু রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা সূর্যের আলোতে বিক্রিয়া ঘটায়। গবেষকদের মতে বিপিএ স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি দ্বারা আপনার আচরণ ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই বিপিএমুক্ত বোতল ব্যবহার করাই শ্রেয়। আবার আপনি যদি ধাতুর তৈরি বোতল ব্যবহার করেন তাহলে পানি দ্রুত গরম হয়ে যাবে, ফলে জীবাণুরা দ্রুত বংশবিস্তার ঘটায়।

অবশ্যই জলীয়তা আমাদের দেহের জন্য আবশ্যক। তাই ডা. লিভেই সুপারিশ করেন যে, ‘বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি পান করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বোতলের ছিপি খুলুন ও মুখে পানি ঢালুন এবং তা লাগিয়ে রাখুন।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আসিয়া/ফিরোজ/এএন

Artificial intellengence info

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভয়াবহতার আগাম লক্ষণ? (ভিডিও)

স্বপ্নীল মাহফুজ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-১৯ ৫:৩১:৪৬ পিএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-১৯ ১০:১২:২৬ পিএম
প্রতীকী ছবি
স্বপ্নীল মাহফুজ : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, প্রমাণ মিলল গুগলের ডিপ মাইন্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রজেক্টে!

এইতো গত বছর বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি সতর্কবার্তাই দিলেন। স্টিফেন হকিং এর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য হয় খুবই কল্যাণকর অথবা ভয়ংকর হুমকি- যে কোনোটিই হতে পারে।

সম্প্রতি গুগল একটি গবেষণা চালায়। তাদের এই গবেষণায় ডিপ মাইন্ড এআই প্রোগ্রামের এক প্রজেক্টে দুইটি রোবটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। রোবট দুইটি তাদের গেম জিততে মরিয়া হয়ে উঠে। এই ফলাফল থেকে কিছুটা হলেও ধারণা করা যেতে পারে, পরবর্তীতে রোবট বানাতে হলে কত কিছু চিন্তা করতে হবে। এমনটাও হতে পারে নিজের বানানো রোবট-ই নিজের জন্য হুমকির কারণ।

গত বছর গুগলের এই প্রোগ্রামটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গো প্লেয়ারের মুখোমুখি হয়ে পাঁচটির মধ্যে চারটি গেইমই জিতে নেয়। শুধু তাই নয়, এতে যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিরও পরিচয় দেয় প্রোগ্রামটি।

গবেষক দল এখন দেখছেন ডিপমাইন্ড স্বেচ্ছায় অন্যদের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করে এবং এটি যখন বুঝবে সে হেরে যাচ্ছে তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়।

গুগল টিম ৪০ মিলিয়ন বার ‘ফ্রুট গ্যাদারিং’ নামের সাধারণ একটি কম্পিউটার গেইম চালায় এবং দুটি ডিপমাইন্ডকে একে অপরের বিরুদ্ধে গেইমটি খেলতে নির্দেশ দেয়। গেইমটিতে ভার্চুয়াল আপেল সংগ্রহ করতে হয়। গেইমটি স্বাভাবিকভাবেই চলছিল যতক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট আপেল ছিল সংগ্রহ করার মতো। কিন্তু যখন আপেল শেষ হয়ে আসতে থাকে তখন এই ডিপ মাইন্ড এজেন্ট দুইটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। একে অপরের দিকে লেজার বিম নিক্ষেপ করতে থাকে যেন প্রতিপক্ষ খেলা থেকে বেরিয়ে যায় এবং একাই সবগুলো আপেল সংগ্রহ করে নিতে পারে।

ভিডিওটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন এই ডিপ মাইন্ড এজেন্ট দুইটির আক্রমণাত্মক মনোভাব। ভিডিওতে লাল এবং নীল ডট হল ডিপ মাইন্ড এজেন্ট এবং সবুজ ডট হল আপেল। এবং হলুদ দাগ হল লেজার বিম।
মজার বিষয় হল, লেজার বিম নিক্ষেপ করলে কোনো অতিরিক্ত পয়েন্ট নেই কিন্তু কেউ যদি প্রতিপক্ষের গায়ে লেজার নিক্ষেপ করে তবে প্রতিপক্ষ কিছু সময়ের জন্য খেলা থেকে বেরিয়ে যাবে এই সুযোগে সফল এজেন্ট সব আপেল সংগ্রহ করে নিবে। এমনকি যদি তারা কোনো লেজার বিম ব্যবহার না করে তবে কিন্তু দুজনই সমান সংখ্যক আপেল সংগ্রহ করতে পারবে। যেমনটা করেছিল ডিপ মাইন্ড এর কম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট।

গুগল টিম যত বেশি জটিলভাবে ডিপ মাইন্ডকে তৈরি করছে ততই এটার মধ্যে লোভ এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব আসছে। গবেষকদের মতে, যত বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রোবটগুলোর মধ্যে সংযোজন করা হবে এটা ততই পরিবেশ থেকে শিখবে এবং আক্রমনাত্মক হয়ে উঠবে।

আরো একটি গেইম এর আয়োজন করা হয়। সেখানে ডিপ মাইন্ড এজেন্ট দুইটির পরিবর্তে তিনটি নেয়া হয়। এবং গেইমটিও পরিবর্তন করা হয়। গেইমটির নাম উলফপ্যাক। যেখানে দুইটি এজেন্ট উলফ অর্থাৎ নেকড়ে হিসেবে থাকে এবং অন্যটি শিকার হিসেবে। এখানে দুইটি নেকড়ে এক দলে থাকে। সেখানে অদ্ভুতভাবে ডিপ মাইন্ড এজেন্ট দুইটি যারা নেকড়ে হিসেবে ছিল তারা একই সঙ্গে কাজ করে এবং একে অপরকে সহযোগিতা করে। যা থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যে সমবায়ভাবে কাজ করলে সাফল্য আসবে তার প্রমাণ দেখায়।

যদিও গবেষণাটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এখনো গুগল টিম তাদের পেপার প্রকাশ করেনি তবুও এটা অনুমান করা যায় যে, আমরা কোনো একটা মেশিন বা রোবট তৈরি করেছি বলে যে তারা আমাদের কথা মতো চলবে, এমনটা নাও হতে পারে। তাই এখনই সময় এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির আগে চিন্তা করা, এটা আবার মানবজাতির জন্য হুমকির কারণ হবে না তো?

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
http://www.risingbd.com/scienceand-technology-news/214380


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

50000 years old cell

গুহায় পাওয়া গেল ৫০ হাজার বছরের পুরোনো অণুজীব

আহমেদ শরীফ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-২০ ৯:২৮:৪৯ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-২০ ৯:৪৮:৫৫ এএম

আহমেদ শরীফ : মেক্সিকোতে একটি প্রাচীন গুহায় হাজার হাজার বছর আগের অণুজীবের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ওই গুহার বরফে আটকে আছে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগের সব অণুজীব।

ক্রিস্টাল ওই গুহাটিকে একাধারে রূপকথার জগৎ ও ‘নরক’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন কেউ কেউ। কারণ সেখানে কখনো কখনো তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। তবে এরই মাঝে আলো ও অক্সিজেন ছাড়া ছোট ছোট জলাশয়ের মতো জায়গায় বরফে জমাট হয়ে যাওয়া ওই অণুজীবগুলো লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ পদার্থ থেকেই বেঁচে থাকার রসদ পাচ্ছিল।

বিজ্ঞানীদের কাছে সেসব অণুজীবের ৯০ শতাংশই অচেনা। বর্তমানে যেসব অণুজীব পরিচিত আছে, সেগুলোর সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই। অন্ততপক্ষে ১০০টি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নতুন অণুজীবগুলোর কোনোটি ব্যাকটেরিয়া ও কোনোটি আর্চিয়া গোত্রের অণুজীব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়াতে নেইকা খনির ৫টি গুহায় এই অণুজীবগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। গুহার বরফের তৈরি সাদা ক্রিস্টালে সেসব অণুজীব আটকে ছিল। ক্রিস্টালগুলোর কোনোটি ৫ মিটার লম্বা ও এক মিটার চওড়া। ২০০৮ সালে নাসার অ্যাসট্রোবায়োলজি ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক পেনেলোপ বোস্টন তার এক দল গবেষক নিয়ে প্রথম ওই গুহায় গবেষণা চালান। সে সময়কার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন- ‘সেটা ছিল অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা। সেখানে কাজ করা ছিল খুব কঠিন, এরপরও পরিবেশটা ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল কোনো পাথরের ফাটলে কাজ করছি আমরা।’

বিজ্ঞানীরা নিজেদের বৈরী পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে স্পেস স্যুট পরে গিয়েছিলেন। এরপর ৯ বছর ধরে গবেষণা করা হয় সেখান থেকে আনা অণুজীবগুলো নিয়ে। গেল শুক্রবার আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স কনফারেন্সে নতুন এই অণুজীবগুলো নিয়ে কথা বলেন প্রধান গবেষক পেনেলোপ বোস্টন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আহমেদ শরীফ/সাইফ/এএন

saroget chicken discover

এবার সারোগেট মুরগি!

মনিরুল হক ফিরোজ : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-১৯ ৩:৩২:২০ পিএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-১৯ ৩:৫১:১৭ পিএম

বিজ্ঞান-প্রযু্ক্তি ডেস্ক : সারোগেট মা- বিষয়টির সঙ্গে আমরা কম-বেশি অনেকেই পরিচিত। যেটাকে বলা হয়, অন্যের গর্ভে নিজের সন্তান জন্মদান।

সারোগেট বিষয়টি এতদিন মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বিজ্ঞানীরা এবার সারোগেট সুবিধার মুরগি তৈরি করেছেন! বিট্রিশ বিজ্ঞানীরা মুরগি জেনেটিক্যালি সংশোধন করেছেন, ফলে এই মুরগি বিভিন্ন প্রজাতির ডিম পাড়তে পারবে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে বার্ড ফ্লুর মতো বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ থেকে বিরল মুরগির জাত সংরক্ষণ করা। অথবা অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য যেমন চমৎকার মাংস মান।

বোস্টনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান সম্মেলনে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা জানান।

তারা জিন এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুরগির ডিডিএক্স৪ নামক জিন সম্পাদন করেছেন, যা পাখির উর্বরতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

এই সারোগেট মুরগি ইউরোপে উৎপাদিত প্রথম জিন-এডিটেড পাখি এবং বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো মুরগির জিন এডিট করে বিরল প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য রুপান্তরিত হয়েছে।

জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করা মুরগি নিজস্ব ডিম পাড়তে পারে না, তবে সারোগেট মা হিসেবে কাজ করতে পারবে।

অবিশ্বাস্যভাবে, এসব মুরগি তাদের শরীরে স্থাপিত স্টেম সেল থেকে ডিম পাড়তে সক্ষম হয়েছে, যা বিরল প্রজাতির ভ্রুণ থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিজ্ঞানী ডা. গ্রিউ বলেন, ‘এ ধরনের মুরগি তৈরি হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ, যা পোল্ট্রির বিরল জাতের মুরগি সংরক্ষণ ও রক্ষায় ভবিষ্যতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অর্থনৈতিক ও জলবায়ু চাপ থেকে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করবে।’

‘আমরা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, জিন এডিটিং টেকনোলজি ব্যবহার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন এডিট করে শুক্রাণু ও মুরগির ডিমের উন্নয়নের ক্ষেত্র।’

‘আমরা এমন মুরগি উৎপাদন করেছি, যার নিজস্ব কোনো ডিম নেই।’

‘এজন্য আমরা বাজা মুরগি ব্যবহার করেছি কারণ আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি স্টেম সেলে স্থাপন করার পর তা মুরগির মধ্যে শুক্রাণু অথবা ডিম তৈরি করে। তাই যেকোনো প্রজাতির মুরগির স্টেম সেল সংগ্রহ করে তা বাজা মুরগির মধ্যে স্থাপন করে বাজা মুরগি ওই প্রজাতির মুরগির ডিম ও বাচ্চা দিতে সক্ষম হবে।’

জেনেটিকালি উন্নয়ন করা মুরগি বিভিন্ন প্রজাতির থেকে ডিম পাড়তে পারে। এই প্রকল্প বিজ্ঞানীদের সাহায্য করেছে বিরল এবং বহিরাগত পাখি সংরক্ষণ করতে একটি ‘হিমায়িত পক্ষিশালা’ গঠনে।

ডা. গ্রিউ বলেন, ‘এটা অনেকটা বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রক্ষায় বীজ ব্যাংকের মতো। বীজ ব্যাংকে যেমন উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষণ করে রাখা হয় তেমনি পোল্ট্রির বিভিন্ন প্রজাতির স্টেম সেল হিমায়িত পক্ষিশালায় রাখা হবে, যা মুরগি দিয়ে শুরু। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মুরগির আদিম স্টেম সেল সংরক্ষণ করা হবে, ফলে পুরুষ অথবা নারী মুরগির অসময়ে ডিম ও বাচ্চা উদপাদন করা যাবে।’

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোজলিন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দলটি ২৫টি বিভিন্ন প্রজাতি থেকে ৫০০ এর বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব কোষ হিমাঙ্কের নিচে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কয়েক দশক করে টেকসই থাকবে।

ডা. ড্রিউ বলেন, আমরা হাঁস এবং কোয়েলের মতো অন্যান্য প্রজাতিও এভাবে সংরক্ষণ করতে পারবো বলে আশা করছি।

তথ্যসূত্র: মিরর




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

santa maria - a beautiful tourism

ছবির মতো দেশ || শান্তা মারিয়া

শান্তা মারিয়া : রাইজিংবিডি ডট কম
     
প্রকাশ: ২০১৭-০২-১৮ ১০:৫৯:১৫ এএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-১৮ ১১:০০:০২ এএম
দ্য হেগ শহরে সন্ধ্যা
(লক্ষ্মণরেখার বাইরে ৩য় পর্ব)
সবুজ ঘাসে ছাওয়া একটি মাঠ। তার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সাদা ফেনিল দুধের নদী। দেখে চমকে উঠতে হয়। তবে নেদারল্যান্ডসের খামারগুলোতে এটা বেশ পরিচিত দৃশ্য। দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য নেদারল্যান্ডসের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী।

বিশেষ করে পনির ও চকলেট তৈরিতে এই দেশের জুড়ি নেই। দুগ্ধখামারগুলোতে গরু রাখার ভবন আর দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণের ভবন আলাদা। এক ভবন থেকে অন্য ভবনে বিশালাকৃতির কাচের নলের ভিতর দিয়ে দুধ নেওয়া হয়। স্বচ্ছ কাচ দূর থেকে দেখা যায় না। বরং দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ মাঠের ভিতর দিয়ে দুধের নদী বয়ে যাচ্ছে।

নেদারল্যান্ডস সত্যিই ছবির মতো সাজানো দেশ। আমি যখন বেশ ছোট তখন আমাদের বাড়িতে একটি ক্যালেন্ডার ছিল। সেটি হল্যান্ডের কোনো  প্রতিষ্ঠানের হবে। সেই ক্যালেন্ডারের বারোটি পাতায় বারোটি সুন্দর ছবি ছিল। সবগুলো ছবিই হল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্যের। আমি মুগ্ধ হয়ে ছবিগুলো দেখতাম। মনে মনে কল্পনা করতাম যেন সেই সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডস গিয়ে দেখলাম সেই কবেকার ক্যালেন্ডারটির ছবিগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

                                                  লেখক ও নেদারল্যান্ডের বন্ধু ক্যারেন

দ্য হেগ থেকে যাচ্ছিলাম ইউট্র্যাক্ট বলে অন্য একটি শহরে। ট্রেনে চেপে। ইউরোপের ট্রেনে যারা চেপেছেন তারা জানেন এগুলো কত সুন্দর। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সাজানো গোছানো। ভিড়ভাট্টার বালাই নেই। ট্রেনে ভ্রমণ এখানে সত্যিই আনন্দদায়ক। আমি ও ঢাকায় অক্সফ্যাম জিবির কর্মী মৃগাঙ্ক শেখর ভট্টাচার্য গেছি বাংলাদেশ থেকে। সঙ্গে আছেন অক্সফ্যাম নভিবের কর্মী ক্যারেন। ক্যারেন বলল আগে ট্রেন, স্টেশন, সবকিছুই আরো সুন্দর ছিল। কিন্তু আলজেরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে অনেক শরণার্থী এসেছেন। তাদের কারণেই স্টেশন নাকি একটু নোংরা দেখা যাচ্ছে।

ট্রেনে চোখে পড়ল বেশ কজন যাত্রী যাদের চেহারা দেখলে আলজেরিয়ান বলে চেনা যায়। ট্রেনে চড়ে যাবার সময় দেখছিলাম হল্যান্ডের চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য। বিখ্যাত উইন্ডমিল। সবুজ মাঠ বা মিডো।

আমস্টারডাম শহরটাও দারুণ সুন্দর। বলতে গেলে ছবির মতোই সাজানো। প্রতিটি বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগান। যারা বহুতল বাড়িতে থাকেন তারাও ব্যালকনিতে একচিলতে বাগান করতে ভোলেন না। ফলে প্রতিটি ব্যালকনিতেই ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এমন পুষ্পপ্রেমিক শহর যে অন্যদিক থেকেও সাজানো হবে সেটা তো না বললেও চলে। টিউলিপ ওদের বিখ্যাত ফুল। ওরা টিউলিপ রপ্তানিও করে। নেদারল্যান্ডস এর বিখ্যাত ফ্লাওয়ার মার্কেটেও গেলাম। এখানে ছোট বড় অসংখ্য ফুলের দোকান। কোটি কোটি টাকার ফুল আমদানি রপ্তানি হয় এই মার্কেট থেকে। আমস্টারডামের ডামস্কোয়ারের কাছেই এই মার্কেট। এখানে ফুলের চারা, বীজ ইত্যাদিও বিক্রি হয় দেদারছে। টিউলিপ ফুলের বালব বা কন্দ বিক্রি হয়। এই কন্দ থেকেই নতুন ফুলের চারা উঁকি দেয় বসন্তে। এখানে সুভ্যেনিরের দোকানও রয়েছে। এই সব দোকানে বিক্রি হচ্ছে কলম, ছোট ছোট শোপিস। শিল্পী ভ্যান ঘগ, উইন্ডমিল, ফুলে ভরা ব্যালকনিসহ বাড়ি মোট কথা যে বা যা কিছু হল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী তারই ছোট ছবি, পেপার ওয়েট, শোপিস, পাওয়া যাচ্ছে। কোনটি আবার ম্যাগনেট দিয়ে আটকানো চলে ফ্রিজের গায়ে। কাঠের ক্লোগ বা চওড়া জুতা হল্যান্ড এর বিখ্যাত লোকজ শিল্প। এগুলোর আকৃতিতে কাঠ, সিরামিক, কাপড় বিভিন্ন কিছুতে তৈরি জুতার শোপিস পাওয়া যাচ্ছে। আমি কিনলাম সিরামিকের একটা জুতোর শোপিস। এটার ভিতরে রয়েছে টিউলিপের একটি বাল্ব। বাড়তি পাওনা বলা চলে। দেশে ফিরে টবে বুনে দিয়েছিলাম বাল্বটি। আমার দুভার্গ্যবশত কিছুই গজায়নি। তবে সিরামিকের সেই জুতাটি আজও আছে।

নেদারল্যান্ডস এর আমস্টারডাম শহরে লেখক

ছোটবেলায় শুনেছিলাম সাইকেল অথবা গরুর গাড়ি চাপা পড়লে নাকি ঢাকা ও কলকাতা শহর থেকে বের করে দেওয়া হয়। নেদারল্যান্ডস-এ এসে দেখি এখানে সাইকেল চাপা পড়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। শহরসুদ্ধ মানুষ সাইকেল চড়ে ঘোরে এখানে। নবীন প্রবীণ, শিশু, যুবক, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, রোগা কেউই সাইকেল চড়ায় পিছিয়ে নেই। ছোট্ট শিশুকে সাইকেলের সামনে কিংবা পেছনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে দিব্যি চলছেন মা-বাবা। অধিকাংশ লোকই   অফিসে যান সাইকেলে চড়ে। স্টেশনেও রাখা আছে প্রচুর সাইকেল। হয়তো শহরতলীতে থাকেন কেউ। বাড়ি থেকে সাইকেলে রেল স্টেশনে এলেন। সাইকেলটা রেখে দিলেন স্টেশনে। তারপর ট্রেনে চড়ে শহরে পৌঁছালেন। এখান থেকে আরেকটি সাইকেলে চড়ে চলে গেলেন গন্তব্যে। এমন নিয়মিত সাইকেল চালানোর কারণেই হয়তো এখানকার নারী-পুরুষ  শিশু, বৃদ্ধ সবাই দারুণ সুঠাম দেহের অধিকারী। আমাদের সঙ্গী ক্যারেনও দারুণ সুস্বাস্থ্যের নারী। দুই সন্তানের মা। কিন্তু দেহে বাড়তি মেদের ‘ম’ ও নেই। কত রকম যে সাইকেলের বাহার। ডবল সাইকেল, সিঙ্গেল সাইকেল, জোড়া লাগানো তিনধাপি সাইকেলসহ (যাতে তিনজন একসঙ্গে চড়তে পারেন) আরো কতরকম। শিশুরা সকালে দলবেঁধে সাইকেলে চেপে স্কুলে যায়। সাইকেল ভাড়াও পাওয়া যায় ঘণ্টা বা দিনচুক্তিতে। আরো আছে ডিজিটাল সাইকেল। এসব ডিজিটাল সাইকেল ভাড়া নিতে হলে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। নির্দিষ্ট ঘণ্টার পর সাইকেলটি আপনি বন্ধ হয়ে যায়।

নেদারল্যান্ডস এ শুধু ফুলের মার্কেটই নয়, আছে পনিরের ও হীরার মার্কেটও। পনির আমার দারুণ প্রিয় খাদ্য। যদিও অ্যালার্জির কারণে খুব অল্পই খেতে পারি। পুরানো ঢাকার সাদা পনির খেয়ে বড় হয়েছি। হল্যান্ডের পনিরের মার্কেটে এত ধরনের পনির রয়েছে যে হিসেব করে শেষ করা যায় না।

আমার মতো হালকা মানিব্যাগের মানুষের হীরার মার্কেটে যাওয়ার যদিও কোনো অর্থ হয় না তবু চোখের সুখ বলেও একটা কথা আছে। আমস্টারডাম হীরা কাটিং এবং হীরার গয়না তৈরির জন্য বিশ্বে প্রচুর খ্যাতির অধিকারী। এখানকার হীরার মার্কেট, অলংকারের দোকানে চোখ ধাঁধানো গয়নার বাহার দেখলে মাথা সত্যিই ঘুরে যায়। তবে দেখেই শান্তি। কেনার কথা কল্পনাও করি না। হীরা কেনার জন্য মন যখন আকুলি বিকুলি করছে তখন নিজেকেই বললাম, আমি এমন কোনো সম্রাট শাহজাহান নই যে হীরা রত্ম সংগ্রহ করতে হবে।

দ্য হেগ শহরের চাকচিক্যও কম নয়। হোটেলের জানালা দিয়ে ভোরবেলা চোখে পড়ে রাস্তা পরিষ্কারের জন্য অটোমেটিক ঘুরন্ত ব্রাশ লাগানো গাড়ি চলছে। রাস্তায় একটা ধুলাও পড়ে থাকছে না। শুধু তাই নয়। বহুতল ভবনগুলোও ধোঁয়া মোছা হচ্ছে সিড়ি লাগানো গাড়ির মাধ্যমে। আমি যখন এই শহরে যাই তখন লেট অটাম। গাছের পাতা ঝরে পড়ছে লাল, হলুদ কত বর্ণে বর্ণিল হয়ে। মনে হচ্ছিল ভ্যান ঘগের আঁকা কোনো ছবির মধ্যেই যেন ঢুকে পড়েছি। ঝরা পাতার মন কেমন করা দৃশ্য আর বাতাসে শীতের আগমনী সুর। একটু একটু বৃষ্টিও ঝরছে মাঝে মধ্যে। নেদারল্যান্ডসের সেই কটি দিন যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি হয়েই ঠাঁই করে নিয়েছে স্মৃতির ফোল্ডারে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মারিয়া/সাইফ

Saturday, 18 February 2017

drone by passengers



এই গ্রীষ্মেই উড়বে প্যাসেঞ্জার ড্রোন (ভিডিও)
মো. রায়হান কবির : রাইজিংবিডি ডট কম
 
   
প্রকাশ: ২০১৭-০২-১৫ ১২:৫৯:৩০ পিএম     ||     আপডেট: ২০১৭-০২-১৫ ১২:৫৯:৩০ পিএম
http://www.risingbd.com/media/imgAll/2017February/bg/Drone20170215125930.jpg
মো. রায়হান কবির : ড্রোন দিয়ে ছবি তোলা, সেলফি তোলা কিংবা কফি আনা নেয়া করা, কতো কিছুই তো হচ্ছে। বিখ্যাত অনলাইন শপ অ্যামাজন ড্রোন দিয়ে পণ্য সরবরাহও করছে।

এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেট লীগে (পিএসএলে) ড্রোন ক্যাম ব্যবহৃত হচ্ছে হালের স্পাইডার ক্যামের বদলে। তাহলে বাকি থাকলো কি? বাকি ছিল ড্রোনে চড়ে আকাশে ভ্রমণ। সেটাই বা বাদ যাবে কেন। জুলাই আগস্টের দিকে যদি আপনার দুবাই যাওয়ার প্ল্যান থাকে তবে সে শখও পূরণ হবে আপনার।

দুবাইর এভিয়েশন অথোরিটি ইতিমধ্যেই জুলাই মাসে পরীক্ষামূলকভাবে প্যাসেঞ্জার ড্রোন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। হ্যাং ১৮৪ নামের এক প্যাসেঞ্জার বিশিষ্ট এই ড্রোনের ওজন ৫০০ পাউন্ড আর এটা বহন করতে পারবে ২২০ পাউন্ড বা ১০০ কেজি ওজন। এখানে এক রুমের যাত্রী কামরা এবং একটি স্যুটকেস বা ব্যাগ রাখার জন্যে ছোট আরো একটি কক্ষ বা প্রকোস্ট রয়েছে।

হ্যাং ১৮৪ গত সিইএস প্রদর্শনীতে এর সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাছাড়া লাসভেগাসেও এর টেস্ট উড়ান হয়েছে। এবার এর বাস্তব পথচলা বা উড়া। চীনের তৈরি ইহ্যাং ১৮৪ ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে উড়তে পারে। আর এক চার্জে যেতে পারে একবারে ৩১ মাইল। এটা ফোরজি মোবাইল ইন্টারনেট দিয়েই পরিচালিত হবে। এর নির্দিষ্ট ছাড়ার স্থান থাকবে। আর পরিচালনার জন্যে থাকবেরিমোট কমান্ড সেন্টার

দুবাই ট্যাক্সি সার্ভিস অথোরিটি জানায় এটা ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরত্বে ৬২ মাইল বা ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চলাচল করবে।

উল্লেখ্য, এয়ারবাস নামের আরো একটি প্যাসেঞ্জার ড্রোন আসছে। এটা বছরের শেষ দিকে আসার কথা তবে ২০২০ সাল নাগাদ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে থাকবে। ট্রান্সপোর্ট সেবা প্রতিষ্ঠানউবার বিষয়ে কাজ করছে। তারা নাসা এবং গুগলের সাবেক কিছু ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে একটি টিম গঠন করেছে বিষয়ে প্ল্যান করার জন্য। সুতরাং জ্যাম! এক সময় হয়তো গুগলে খুঁজতে হবে, গাড়ির ট্র্যাফিক জ্যাম কি?

http://www.risingbd.com/scienceand-technology-news/213828

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ